আমি আস্মানসমূহ ও যমীন এবং যা কিছু এ দু’টিরমধ্যস্থিতরয়েছে, সত্য সহকারে এবং একটা নির্ধারিত মেয়াদকালের জন্যই সৃষ্টি করেছি। এবং কাফিরগণ ওই বিষয় থেকে, যে বিষয়ে সাবধান করা হয়েছে, মুখ ফিরিয়ে আছে।
আপনি বলুন, ‘ভালো, বলোতো! যেগুলোর তোমরা আল্লাহ্ ব্যতীত পূজা করছো, আমাকে দেখাও সেগুলো যমীনের কোন্ পরমাণুটা সৃষ্টি করেছে? কিংবা আসমানে সেগুলোর কোন অংশ আছে কিনা? এর পুর্বের কোন কিতাব অথবা অবশিষ্ট কোন জ্ঞান থাকলে আমার নিকট হাযির করো; যদি তোমরা সত্যবাদী হও।
এবং তার চাইতে বড় পথভ্রষ্ট আর কে, যে আল্লাহ্ ব্যতীত এমন সবের পূজা করে, যেগুলো ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাদের প্রার্থনা শুনবে না এবং সেগুলোর নিকট এদের পূজার খবরও নেই?
তারা কি বলে যে, ‘তিনি সেটাকে নিজ থেকে রচনা করেছেন?’ আপনি বলুন, ‘যদি আমি সেটা নিজ থেকে রচনা করে নিয়ে থাকি, তবে তোমরা আল্লাহ্র সামনে আমাকে রক্ষা করার কোন ক্ষমতা রাখোনা’। তিনি ভালোভাবে জানেন যেসব কথায় তোমরা রত আছো; এবং তিনি আমাদের ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষীরূপে যথেষ্ট। আর তিনিই ক্ষমাশীল, দয়ালু।
আপনি বলুন, ‘আমি কোন নতুন রসূল নই। এবং আমি জানিনা আমার সাথে এবং তোমাদের কি ব্যবহার করা হবে! আমিতো সেটারই অনুসরণ করি, যা আমার প্রতি ওহী করা হয় এবং আমিতো সুস্পষ্ট সতর্ককারীই’।
আপনি বলুন, ‘ভালো দেখোতো! যদি ওই ক্বোরআন আল্লাহ্র নিকট থেকে হয়, আর তোমরা তা অস্বীকার করো, আর বনী ইস্রাঈলের একজন সাক্ষী সেটার উপর সাক্ষ্য দিলো, অতঃপর সে ঈমান আনলো আর তোমরা করলে অহঙ্কার! নিশ্চয় আল্লাহ্ যালিমদেরকে পথ প্রদান করেন না’।
এবং কাফিরগণ মুসলমানদেরকে বললো, ‘যদি তাতে কিছু মঙ্গল থাকতো, তবে এরা আমাদের পূর্বে এ পর্যন্ত পৌঁছে যেতো না’। এবং যখন তারা সৎপথ প্রাপ্ত হলো না, তখন অবিলম্বে বলবে, ‘এটা পুরানো অপবাদ’।
এবং এর পূর্বে রয়েছে মূসার কিতাব পেশোয়া ও অনুগ্রহ স্বরূপ এবং এ কিতাব সত্যায়নকারী, আরবী ভাষায়, যাতে যালিমদেরকে সতর্ক করে; এবং সৎকর্মপরায়ণদের জন্য সুসংবাদ।
এবং আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি যেন আপন মাতা পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করে। তার মা তাকে গর্ভে রেখেছে কষ্ট সহ্য করে এবং তাকে প্রসব করেছে কষ্ট সহ্য করে। আর তাকে (গর্ভে) বহন করে চলাফেরা করা ও তার দুধ ছাড়ানো ত্রিশ মাসের মধ্যে; এ পর্যন্ত যে, যখন সে আপন শক্তি পর্যন্ত পৌঁছলো এবং চল্লিশ বছর বয়সে উপনীত হলো, তখন আরয করলো, ‘হে আমার রব! আমার অন্তরে নিক্ষেপ করো যেন আমি তোমার ওই অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, যা তুমি আমার উপর ও আমার মাতা পিতার উপর করেছো এবং আমি যেন ওই কাজ করি, যা তোমার নিকট পছন্দীয় আর আমার জন্য আমার সন্তানদের সৎকর্মপরায়ণ করো। আমি তোমার প্রতি প্রত্যাবর্তন করেছি এবং আমি হলাম মুসলমান।
এরা হচ্ছে, তারাই, যাদের সৎকর্মসমূহ আমি ক্ববূল করবো এবং তাদের ত্রুটি বিচ্যুতিগুলো ক্ষমা করবো তারা জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত। সত্য প্রতিশ্রুতি, যা তাদেরকে দেওয়া হতো।
এবং ওই ব্যক্তি যে আপন মাতা পিতাকে বলেছে, ‘উহ! তোমাদের দিক থেকে অন্তর বিরক্ত হয়ে গেছে। তোমরা কি আমাকে এ প্রতিশ্রুতি দিচ্ছো যে, আমি পুনরায় জীবিত হবো; অথচ আমার পূর্বে বহু সম্প্রদায় গত হয়েছে?’ আর তাদের উভয়ে আল্লাহ্র দরবারে ফরিয়াদ করে- ‘তোমার অনিষ্ট হোক! ঈমান আনো। নিশ্চয় আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি সত্য’। অতঃপর সে বলে, ‘এ’তো নয়, কিন্তু পূর্ববর্তীদের গল্প কাহিনী।
এবং যে দিন কাফিরদেরকে আগুনের উপর পেশ করা হবে, (সেদিন তাদেরকে বলা হবে) ‘তোমরা আপন অংশের পবিত্র বস্তুগুলো আপন পার্থিব জীবনেই নিশ্চিহ্ন করে বসেছো এবং সেগুলো ভোগ করেছো সুতরাং আজ তোমাদেরকে বিনিময়ে লাঞ্ছনার শাস্তি দেওয়া হবে, শাস্তি তাঁরই, যা তোমরা পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে অহঙ্কার করতে এবং শাস্তি এরই যে, তোমরা নির্দেশে অমান্য করতে।
এবং স্মরণ করুন, ‘আদের সম-গোত্রীয় লোককে, যখন সে তাদেরকে আহক্বাফ ভূমিতে সতর্ক করেছে এবং নিশ্চয়তার পূর্বেও সতর্ককারীগণ গত হয়েছে এবং তারপরেও এসেছে (এবলে) যে, ‘আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করো না। নিশ্চয় আমি তোমাদের উপর এক মহা দিবসের শাস্তির আশঙ্কা করছি।
তারা বললো, ‘তুমি কি এজন্য এসেছো যে, আমাদেরকে আমাদের উপাস্যগুলো থেকে নিবৃত্ত করবে? সুতরাং আমাদের উপর তা আনো যেটার প্রতিশ্রুতি আমাদেরকে দিচ্ছো, যদি তুমি সত্যবাদী হও’।
অতঃপর যখন তারা শাস্তি দেখতে পেলো-মেঘের মতো আসমানের পার্শ্বদেশের ঘনীভূত হয়ে আছে, তাদের উপত্যকার দিকে আসছে, তখন তারা বললো, ‘এটা মেঘ, যা আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করবে’। বরং এতো তা-ই যার জন্য তোমরা ত্বরা করছিলে- এক ঝড়, যার মধ্যে রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি;
যা প্রত্যেক বস্তুকে ধ্বংস করে ফেলে রবের নির্দেশে। অতঃপর তারা সকালে এমতাবস্থায় রয়ে গেলো যে, তাদের (ধ্বংসপ্রাপ্ত) বাসস্থানগুলো ছাড়া আর কিছুই দৃষ্টিগোচর হচ্ছিলো না। আমি এভাবেই শাস্তি দিই অপরাধীদেরকে।
এবং নিশ্চয় আমি তাদেরকে ওই শক্তি সামর্থ্য দিয়েছিলাম, যা তোমাদেরকে দিই নি; আর তাদের জন্য কান, চোখ ও হৃদয় সৃষ্টি করেছি; সুতরাং তাদের কান, চোখ ও হৃদয়গুলো তাদের কোন কাজে আসে নি যখন তারা আল্লাহ্র আয়াতগুলোকে অস্বীকার করতো; এবং তাদেরকে পরিবেষ্টন করে নিলো ওই শাস্তি, যা নিয়ে তারা বিদ্রূপ করতো।
অতঃপর তাদেরকে কেন সাহায্য করে নি ওইগুলো, যেগুলোকে তারা আল্লাহ্ ব্যতীত নৈকট্য লাভের নিমিত্ত খোদা স্থির করে রেখেছিলো? বরং তারা তাদের থেকে হারিয়ে গেছে। এবং এটা তাদের অপবাদ ও মনগড়া কথা মাত্র।
এবং যখন আমি আপনার প্রতি কতগুলো জিনকে ফেরালাম যারা কান লাগিয়ে ক্বোরআন শুনছিলো; অতঃপর যখন সেখানে হাযির হলো তখন পরস্পরের মধ্যে বললো, ‘চুপ থাকো!’ অতঃপর যখন পাঠ করা সমাপ্ত হলো, তখন আপন সম্প্রদায়ের দিকে সতর্ককারী হয়ে ফিরে গেলো।
হে আমাদের সম্প্রদায়! আল্লাহ্র আহ্বানকারীর কথা মেনে নাও এবং তার প্রতি ঈমান আনো, তিনি (আল্লাহ্) তোমাদের কিছুপাপ ক্ষমা করবেন এবং তোমাদেরকে বেদনাদায়ক শাস্তি থেকে রক্ষা করবেন।
এবং যে আল্লাহ্র আহ্বানকারীর কথা অমান্য করে সে পৃথিবীতে আয়ত্ত্ব থেকে বের হয়ে যেতে পারে না এবং আল্লাহ্র সম্মুখে তার কোন সাহায্যকারী নেই, তারা সুস্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছে।
তারা কি জানে নি যে, ওই আল্লাহ্, যিনি আস্মান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং সেগুলো সৃষ্টি করতে ক্লান্ত হন নি, মৃতকে জীবিত করতে সক্ষম। কেন নন? নিশ্চয় তিনি সবকিছু করতে পারেন।
এবং যে দিন কাফিরদেরকে আগুনের উপর পেশ করা হবে, তখন তাদেরকে বলা হবে, ‘এটা কি সত্য নয়?’ তারা বলবে, ‘কেন নয়? আমাদের রবের শপথ!’ বলা হবে, ‘সুতরাং শাস্তি আস্বাদন করো- আপন কুফরের প্রতিফল স্বরূপ’।
সুতরাং আপনি ধৈর্যধারণ করুন যেমনিভাবে সাহসী রসূলগণ ধৈর্যধারণ করেছেন এবং তাদের জন্য ত্বরা করবেন না; যেদিন তারা তা দেখতে পাবে, যার প্রতিশ্রুতি তাদেরকে দেওয়া হচ্ছে, সেদিন (তাদের মনে হবে) তারা যেন দিনের এক ঘন্টার বেশী দুনিয়ায় অবস্থান করে নি। এটা একটা প্রচার। সুতরাং কে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে? কিন্তু নির্দেশ অমান্যকারী লোকেরাই।