তাদের অন্তরগুলোতেই ব্যাধি রয়েছে, অত:পর আল্লাহ্ তাদের ব্যাধি আরো বৃদ্ধি করে দিয়েছেন এবং তাদের জন্য অবধারিত রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি, তাদের মিথ্যার পরিণামে।
এবং যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘ঈমান আনো যেমন অপরাপর লোকেরা ঈমান এনেছে’ তখন তারা বলে, ‘নির্বোধদের মতো কি আমরাও বিশ্বাস (ঈমান) স্থাপন করবো?’ শুন্ছো! তারাই হলো নির্বোধ; কিন্তু তারা তা জানেনা।
এবং যখন ঈমানদারদের সাথে সাক্ষাৎ করে তখন বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি।’ আর যখন নিভৃতে তাদের শয়তানদের সাথে মিলিত হয় তখন বলে, ‘আমরা তোমাদের সাথে রয়েছি। আমরা তো এমনিতে তাদের সাথে ঠাট্টা-তামাশা করে থাকি।’
তাদের দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে আগুন প্রজ্জ্বলিত করেছে; অত:পর যখন তা দ্বারা আশেপাশে সবকিছু আলোকিত হয়ে উঠলো, তখন আল্লাহ্ তাদের জ্যোতি অপসারণ করে নিলেন এবং তাদেরকে (এমনভাবে) অন্ধকাররাশিতে ছেড়ে দিলেন যে, তারাকিছুই দেখতে পায় না। ।
কিংবা যেমন, আস্মান থেকে বর্ষণরত বৃষ্টি, যাতে রয়েছে অন্ধকাররাশি, বজ্র ও বিদ্যুৎ-চমক; (তারা) নিজেদের কানে আঙ্গুল প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছে বজ্র-ধ্বনির কারনে, মৃত্যুর ভয়ে; এবং আল্লাহ্ কাফিরদেরকে পরিবেষ্টন করে রয়েছেন।
বিদ্যুৎ-চমক এমনি মনে হয় যেন তাদের দৃষ্টি-শক্তি কেড়ে নিয়ে যাবে। যখনই সামান্য বিদ্যুতালোক (তাদের সম্মুখে) উদ্ভাসিত হলো তখন তাতে চলতে লাগলো এবংযখন অন্ধকারচ্ছন্ন হলো তখন তারা দাঁড়িয়ে রইলো। আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে তাদের কান ও চোখ নিয়ে যেতেন। নিঃসন্দেহে, আল্লাহ্ সব কিছু করতে সক্ষম।
এবং যিনি তোমাদের জন্য যমীনকে বিছানা এবং আস্মানকে ইমারত করেছেন এবং আস্মান থেকে পানি বর্ষন করেছেন। অতঃপর তা’দ্বারা কিছু ফল সৃষ্টি (উৎপন্ন) করেন তোমাদের আহারের জন্য। সুতরাং জেনে-বুঝে আল্লাহ্র জন্য সমকক্ষ দাঁড় করাবেনা।
এবং যদি তোমাদের কোন সন্দেহ হয় তাতে, যা আমি স্বীয় (এ খাস)বান্দার উপর নাযিল করেছি, তবে এর অনুরুপ একটা সূরা তো নিয়ে এসো এবং আল্লাহ্ ব্যতীত নিজেদের সকল সহায়তাকারীকে আহবান করো (সাহায্যের জন্য), যদি তোমরা সত্যবাদী হও!
অতঃপর যদি আনয়ন করতে না পারো, আর আমি চ্যালেন্জ করছি যে, কখনো আনতে পারবে না, তবে ভয় করো ঐ আগুনকে, যার ইন্ধন হচ্ছে মানুষ ও পাথর, (যা) তৈরী রাখা হয়েছে কাফিরদের জন্য।
এবং সুসংবাদ দিন তাদেরকে, যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে যে, তাদের জন্য বাগান (জান্নাত) রয়েছে, যার নিম্নদেশে নহরসমূহ প্রবাহমান। যখন তাদেরকে ঐ বাগানগুলো থেকে কোন ফল খেতে দেয়া হবে তখনই তারা (সেটার বাহ্যিক আকারদেখে) বলবে, ‘এতো সে-ই রিযক্ব, যা আমরা পূর্বে পেয়েছিলাম; এবং সেই ফল, যা (বাহ্যিক আকৃতিগতভাবে) পরষ্পর সাদৃশ্যময়, তাদেরকে দেয়া হবে এবং তাদের জন্য সে-ই বাগানগুলোতে (জান্নাতসমূহ) পবিত্র স্ত্রীগণ রয়েছে এবং তারা ওই গুলোর মধ্যে স্থায়ীভাবে থাকবে।
নিশ্চয় আল্লাহ্ যে কোন জিনিষের দৃষ্ঠান্ত বর্ণনা করতে লজ্জাবোধ করেননা-মশা হোক কিংবা তদপেক্ষা বড় কিছু। সুতরাং যারা ঈমান এনেছে তারা তো জানেযে, এটা তাদের রবের পক্ষ থেকে, সত্য। বাকী রইলো কাফিরগণ, তারা বলে, ‘এ ধরণের উপমায় আল্লাহ্র উদ্দেশ্য কি?’ আল্লাহ্ তা দ্বারা অনেককে গোমরাহ্ করেন এবং অনেককে হিদায়ত করেন, এবং তা দ্বারা তাদেরকেই পথভ্রষ্ট করেন, যারা অবাধ্য-
তারাই, যারা আল্লাহ্র অঙ্গীকার ভঙ্গ করে পাকাপোক্ত হবার পর এবং ছিন্ন করে ঐ সম্পর্ককে, যা জুড়ে রাখার জন্য আল্লাহ্ নির্দেশ দিয়েছেন এবংযমীনে ফ্যাসাদ ছড়িয়ে বেড়ায়; তারা ক্ষতির মধ্যে রয়েছে।
আশ্চর্য! তোমরা কিরুপে আল্লাহ্কে অস্বীকারকারী হবে? অথচ তোমরা মৃত ছিলে, তিনি তোমাদেরকে জীবিত করেন, আবার তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন, পুনরায় তোমাদেরকে জীবিত করবেন; আবার তাঁরই দিকে দিকে ফিরে যাবে।
তিনিই, যিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন যা কিছু পৃথিবীতে রয়েছে; অতঃপর তিনি আসমানের দিকে ‘ইস্তিওয়া’ (ইচ্ছা) করলেন, তখন ঠিক সপ্ত-আস্মান সৃষ্টি করলেন, এবং তিনি সবকিছু জানেন।
এবং (স্মরণ করুন!) যখন আপনার রব ফিরিশ্তাদেরকে বলেছিলেন, আমি পৃথিবীতে আপন প্রতিনিধি সৃষ্টিকারী।’ (তারা) বললো, ‘আপনি কি এমন কোন সৃষ্টিকে প্রতিনিধি করবেন, যে তাতে ফ্যাসাদ ছড়াবে ও তাতে রক্তপাত ঘটাবে? আর আমরা আপনার প্রশংসা পূর্বক আপনার তাস্বীহ (স্তূতিগান) করি এবং আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করি।’ তিনি বললেন, আমার জানা আছে যা তোমরা জানোনা।
এবং আল্লাহ্ তা’আলা আদমকে যাবতীয় (বস্তুর) নাম শিক্ষা দিলেন অতঃপর সমুদয় (বস্তু) ফিরিশ্তাদের সামনে উপস্থাপন করে এরশাদ করলেন, ‘সত্যবাদী হলে এসব বস্তুর নাম বলো তো!’
তিনি এরশাদ করলেন, ‘হে আদম! বলে দাও তাদেরকে সমুদয় (বস্তুর) নাম।’ যখন তিনি (অর্থাৎ আদম) তাদেরকে সমুদয় বস্তুর নাম বলে দিলো, এরশাদ করলেন, ‘আমি কি (একথা) বলছিলাম না যে, আমি জানি আস্মানসমূহ এবং যমীনের সমস্ত গোপন (অদৃশ্য) বস্তু সম্পর্কে এবং আমি জানি যা কিছু তোমরা প্রকাশ করছো এবং যা কিছু তোমরা গোপন করছো?’
এবং (স্মরণ করুন!) যখন আমি ফিরিশ্তাদেরকে নির্দেশ দিলাম, ‘তোমরা আদমকে সাজদা করো।’ তখন সবাই সাজদা করেছিলো, ইবলীস ব্যতীত; সে অমান্যকারী হলো ও অহংকার করলো এবং কাফির হয়ে গেলো।
এবং আমি এরশাদ করলাম, ‘হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী এই জান্নাতে অবস্থান করো এবং খাও এখানে কোন বাধা-বিঘ্ন ব্যাতিরেকেই, যেখানে তোমাদের মন চায়; কিন্তু এই গাছের নিকটে যেওনা! গেলে, (তোমরা) সীমা অতিক্রমকারীদের অন্তুর্ভূক্ত হয়ে যাবে।’
অতঃপর শয়তান জান্নাত থেকে তাদের পদস্খলন ঘটালো এবং যেখানে ছিলো সেখান থেকে তাঁদেরকে আলাদা করে দিলো। আর আমি এরশাদ করলাম, ‘(তোমরা) নীচে নেমে যাও! তোমরা পরষ্পর পরষ্পরের শত্রু; এবং তোমাদেরকে একটা (নির্দ্ধারিত) সময়সীমা পর্যন্ত পৃথিবীতে অবস্থান ও জীবিকা অবলম্বন করতে হবে।’
আমি এরশাদ করলাম, ‘তোমরা সবাই জান্নাত থেকে নেমে যাও! অতঃপর পরে যদি তোমাদের নিকট আমার পক্ষ থেকে কোন হিদায়ত আসে, তবে যে ব্যক্তি আমার সেই হিদায়তের অনুসারী হবে, তার জন্য
হে ইয়া’কুবের বংশধরগণ! (তোমরা) স্মরণ করো আমার ঐ অনুগ্রহকে, যা আমি তোমাদের উপর করেছি এবং আমার অঙ্গীকার পূরণ করো। আমি ও তোমাদের অঙ্গীকারপূরণ করবো এবং বিশেষ করে, আমারই ভয় (অন্তরে) রাখো।
এবং (তোমরা) ঈমান আনো সেটার উপর, যা আমি অবতীর্ণ করেছি সেটারই সত্যায়ন-কারীরুপে যা তোমাদের সাথে আছে এবং সর্বপ্রথম সেটার অস্বীকারকারী হয়ো না। আর আমার আয়াতগুলোর বিনিময়ে স্বল্পমূল্য গ্রহণ করো না এবং শুধু আমাকেই ভয় করো।
এবং ভয় করো ঐ দিনকে, যেদিন কোন আত্মা অন্য কারো বিনিময় হতে পারবেনা আর না কাফিরদের পক্ষে কোন সুপারিশ গ্রহণ করা হবে এবং না কোন কিছু নিয়ে (তার) আত্মাকে মুক্তি দেয়া হবে এবং না তারা কোন প্রকার সাহায্য পাবে।
এবং (স্মরণ করো)! যখন আমি তোমাদেরকে ফিরআউনি সম্প্রদায় থেকে নিষ্কৃতি দান করেছি, যারা তোমাদেরকে মর্মান্তিক যন্ত্রণা দিতো; তোমাদের পুত্রদেরকে যবেহ করতো আর তোমাদের কন্যাদেরকে জীবিত রাখতো; এবং এর মধ্যে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে এক মহা ‘বালা’ ছিলো (অথবা মহা পুরষ্কার)।
এবং যখন মুসা স্বীয় সম্প্রদায়ের লোকদেরকে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা গো-বাছুর তৈরী করে নিজেদের আত্মার উপর অবিচার করেছো। সুতরাং তোমরা আপন সৃষ্টিকর্তার দিকে ফিরে এসো। অতঃপর তোমরা একে অপরকে হত্যা করো। এটা তোমাদের স্রষ্টার নিকট তোমাদের জন্য শ্রেয়।’ অতঃপর তিনি তোমাদের তওবা কবুল করলেন। নিশ্চয় তিনিই হলেন অত্যন্ত তওবা কবুলকারী, দয়ালু।
এবং যখন তোমরা বলেছিলে,‘হে মুসা! আমরা কখনো আপনার কথা বিশ্বাস করবো না যতক্ষণ না আমরা আল্লাহ্কে প্রকাশ্যভাবে দেখে নিই।’তখন তোমাদেরকে বজ্রাঘাত পেয়ে বসলো আর তোমরা দেখতে পাচ্ছিলে।
এবং আমি তোমাদের উপর মেঘকে ছাউনি করেছি আর তোমাদের প্রতি‘মান্ন্’ও‘সাল্ওয়া’অবতরণ করেছি। খাও, আমার প্রদত্ত পবিত্র (হালাল) বস্তুগুলো। এবং তারা আমার কোন ক্ষতি করেনি; হাঁ, তবে তারা নিজেদের আত্মারই ক্ষতি সাধন করেছিলো।
এবং যখন আমি বললাম, ‘এ লোকালয়ে প্রবেশ করো। অতঃপর তাতে যেখানে ইচ্ছা কোন প্রকার বাধা-বিপত্তি ছাড়াই আহার করো এবং ‘দরজা’ দিয়ে সাজদারত অবস্থায় প্রবেশ করো আর বলো, ‘আমাদের গুনাহের ক্ষমা হোক!’ আমি তোমাদের অপরাধগুলো ক্ষমা করে দেবো এবং অনতিবিলম্বে আমি নেককার লোকদেরকে আরো বেশী দেবো।’’
অতঃপর যালিমগণ যা তাদেরকে বলা হয়েছিলো তা ব্যতীত অন্য বাক্য বদলে দিল, তারপর আমি আস্মান থেকে তাদের উপর আযাব নাযিল করেছি তাদের আদেশ অমান্য করার প্রতিফল স্বরুপ।
এবং যখন মুসা নিজ সম্প্রদায়ের জন্য পানি প্রার্থনা করলো তখন আমি বললাম, ‘এ পাথরের উপর তোমার লাঠি দ্বারা আঘাত করো।’ তৎক্ষণাৎ এর ভিতর থেকে বারটি প্রস্রবণ প্রবাহিত হলো। প্রত্যেক গোত্র নিজ নিজ ঘাট (পান-স্থান) চিনে নিলো। (তোমরা) খাও এবং পান করো খোদা প্রদত্ত রিযক্ব এবং পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে বেড়িয়ো না।
এবং যখন তোমরা বলেছো, ‘হে মুসা! একই খাদ্যের উপর তো আমাদের কখনো ধৈর্য হবে না। সুতরাং আপনি স্বীয় রবের নিকট দো’আ করুন যেন (তিনি) জমির উৎপন্ন দ্রব্য আমাদের জন্য উৎপাদন করেন- কিছু শাক-সব্জী, কাকুড়, গম, মসুর এবং পেঁয়াজ।’ এরশাদ ফরমালেন, ‘(তোমরা) কি নিকৃষ্টতর বস্তুকে উৎকৃষ্টতর বস্তুর পরিবর্তে চাচ্ছো? আচ্ছা! মিশর অথবা কোন এক শহরে অবতরণ করো! সেখানে তোমরা পাবে যা তোমরা চেয়েছো।’ এবং তাদের উপর অবধারিত করে দেয়া হলো লাঞ্ছনা ও দারিদ্র এবং (তারা) আল্লাহ্র ক্রোধের প্রতি ধাবিত হলো। এটা পরিণতি ছিলো এ কথারই যে, তারা আল্লাহ্র আয়াতগুলোকে অস্বীকার করতো এবং নবীগণকে অন্যায়ভাবে শহীদ করতো; এটা পরিণতি ছিলো তাদের অবাধ্যতাগুলো ও সীমালংঘনের।
নিশ্চয় ঈমানদারগণ, অনুরুপভাবে ইহুদী, খৃষ্টান ও তারকা-পূজারীদের মধ্যে যারা সত্য অন্তরে আল্লাহ্ ও শেষ দিনের উপর ঈমান এনেছে আর সৎ কাজ করে, তাদের প্রতিদান তাদের রবের নিকট রয়েছে এবং তাদের জন্য না কোন ভয়-ভীতি আছে, না কোন প্রকার দুঃখ।
এবং যখন আমি তোমাদের থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়েছি এবং তোমাদের উপর ‘তূর’(পাহাড়) তুলে ধরেছি; ‘গ্রহণ করে নাও যা কিছু আমি তোমাদেরকে প্রদান করেছি, শক্তভাবে এবং এর সারমর্মগুলো স্মরণ করো, এ আশায় যে, তোমাদের পরহেযগারী (খোদাভীতি) অর্জিত হবে।’
এবং নিশ্চয় নিশ্চয় তোমাদের জানা আছে- তোমাদের মধ্যকার ওই সব লোক সম্পর্কে, যারা শনিবারে সীমা লংঘন করেছে। অতঃপর আমি তাদের উদ্দেশ্যে বললাম,‘(তোমরা) হয়ে যাও ধিকৃত বানর!’
এবং যখন মুসা আপন সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, ‘খোদা তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন- তোমরা একটা গরু যবেহ করো।’ বললো, ‘আপনি কি আমাদেরকে ঠাট্টার পাত্র বানাচ্ছেন?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ্র শরণ (এ থেকে) যে, আমি অজ্ঞদের অন্তর্ভূক্ত হই!’
(তারা) বললো, ‘আপন রবের নিকট প্রার্থনা করুন যেন তিনি আমাদেরকে বলে দেন- গরুটা কেমন!’ তিনি (হযরত মুসা) বললেন, তিনি (আল্লাহ্) এরশাদ করেছেন- সেটা এমন এক গাভী, যা না বৃদ্ধ, না অল্প বয়স্কা; বরং উভয়ের মাঝামাঝি (বয়সের)। সুতরাং পালন করো, তোমাদের প্রতি যা করার নির্দেশ হচ্ছে।’
(তারা) বললো, ‘আপন রবের নিকট প্রার্থনা করুন যেন তিনি আমাদেরকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, সেই গাভীটা কেমন! নিশ্চয় গাভীগুলো সম্পর্কে আমাদের সন্দেহ হয়ে গেছে এবং আল্লাহ্ যদি চান, তবে আমরা দিশা পেয়ে যাবো।’
(হযরত মুসা) বললেন, ‘তিনি (আল্লাহ্) এরশাদ করেছেন, তা এমন একটা গাভী, যা দ্বারা কোন খিদমত নেয়া হয় না, না সেটা জমি কর্ষণ করে, না ক্ষেতে পানি সেচন করে, নিখুঁত- যাতে কোন প্রকার দাগ নেই।’ (তারা) বললো, ‘এখনই আপনি সঠিক বর্ণনা এনেছেন।’ অতঃপর তারা তা যবেহ করেছিলো এবং তারা যে যবেহ করবে তা বুঝা যাচ্ছিলো না।
অতঃপর আমি বললাম, ‘এ নিহত ব্যক্তির গায়ে ওই গাভীর একটা টুকরো নিক্ষেপ করো।’ আল্লাহ্ এভাবেই মৃতকে জীবিত করবেন এবং তোমাদেরকে আপন (কুদরতের) নিদর্শনসমূহ দেখাচ্ছেন, যাতে তোমরা উপলব্ধি করতে পারো।
অতঃপর, এরপর তোমাদের হৃদয় কঠিন হয়ে গেলো। তখন তা পাথরগুলোর ন্যায় হয়; বরং তদপেক্ষাও কঠিনতর এবং পাথরগুলোর মধ্যে তো কিছু এমনও আছে, যেগুলো থেকে নদীসমূহ প্রবাহিত হয় এবং কতেক এমনও রয়েছে, যেগুলো ফেটে যায়- তখন সেগুলো থেকে পানি নির্গত হয়; এবং কতেক এমনও আছে, যেগুলো আল্লাহ্র ভয়ে গড়িয়ে পড়ে। এবং আল্লাহ্ তোমাদের কৃতকর্মগুলো সম্পর্কে অনবগত নন।
অতঃপর, হে মুসলমানগণ! তোমরা কি এ আশা পোষণ করো যে, এ ইহুদীগণ তোমাদেরকে বিশ্বাস করবে? আর তাদের মধ্যকার একদল এমনই ছিলো যে, তারা আল্লাহ্র কালাম (বাণী) শুনতো অতঃপর বুঝার পর সেটাকে জেনেশুনে বিকৃত করতো।
এবং যখন মুসলমানদের সাথে মিলতো তখন বলতো,‘আমরা ঈমান এনেছি।’আর যখন পরষ্পর আলাদাভাবে মিলিত হয় তখন বলে,‘ওই জ্ঞান, যা আল্লাহ্ তোমাদের উপর খুলে দিয়েছেন তা কি মুসলমানদেরকে বলে দিচ্ছো? এতে করে তারা তোমাদের রবের দরবারে তোমাদের বিরুদ্ধে দলিল পেশ করবে। তোমাদের কি বুঝ-শক্তি নেই?’
এবং তাদের মধ্যে এমন কিছু নিরক্ষর লোক রয়েছে, যারা কিতাব সম্পর্কে কোন জ্ঞান রাখে না, কিন্তু মৌখিকভাবে পড়তে জানে মাত্র কিংবা নিজেদের কিছু মনগড়া কথাবার্তা; আর তারা নিরেট কল্পনার মধ্যে রয়েছে।
সুতরাং দুর্ভোগ তাদের জন্যই যারা কিতাব নিজেদের হাতে রচনা করে, অতঃপর বলে বেড়ায়, ‘এটা আল্লাহ্র পক্ষ থেকে;’এ উদ্দেশ্যেই যে, এর পরিবর্তে তারা স্বল্প মূল্যই অর্জন করবে। সুতরাং দুর্ভোগ তাদের জন্যই, তাদের আপন হাতে (কিতাব) রচনার কারণে। আর দুর্ভোগ তাদের জন্যই, তাদের এ (অবৈধ) উপার্জনের দরুন।
এবং তারা (ইহুদীগণ) বললো, ‘আমাদেরকে তো আগুন স্পর্শ করবে না, কিস্তু মাত্র দিন কতেক।’ (হে হাবীব!) আপনি বলে দিন, ‘তোমরা কি আল্লাহ্র নিকট থেকে কোন অঙ্গীকার নিয়ে রেখেছো? তবে তো আল্লাহ্ তা’আলা আপন অঙ্গীকার কখনো ভঙ্গ করবেন না, কিংবা আল্লাহ্ সম্পর্কে এমন কিছূ উক্তি করেছো যা সম্পর্কে তোমাদের জ্ঞান নেই!’
এবং যখন আমি বনী ইস্রাঈল থেকে অঙ্গীকার নিয়েছি,‘আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করোআর আত্মীয়-স্বজনদের সাথে, এতিম ও মিসকিনদের সাথে এবং মানুষের সাথে সদালাপ করো, নামায কায়েম রাখো ও যাকাত দাও।’অতঃপর তোমরা ফিরে গিয়েছো, কিন্তু (ফিরে যায় নি) তোমাদের মধ্যে থেকে অল্প সংখ্যক লোক; এবং তোমরা বিমুখ।
এবং যখন আমি তোমাদের অঙ্গীকার নিয়েছি (এ মর্মে) যে, আপন লোকদেরকে খুন করবে না এবং আপন লোকদেরকে তাদের বস্তিগুলো থেকে তাড়িয়ে দেবেনা। অতঃপর তোমরা তা স্বীকার করেছো এবং তোমরা সাক্ষী রয়েছো।
অতঃপর, এই যে তোমরা! আপন লোকদেরকে হত্যা করতে আরম্ভ করেছো এবং আপন লোকদের মধ্যে থেকে একটা দলকে তাদের মাতৃভূমি থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছো, তাদের বিরুদ্ধে (তাদের প্রতিপক্ষকে) গুনাহ ও সীমালংঘনে সাহায্য করছো। আর যদি তারা বন্দী হয়ে তোমাদের নিকট আসে, তবে তোমরা বিনিময় (মুক্তিপণ) দিয়ে (তাদেরকে) মুক্ত করে নিয়ে থাকো এবং তাদেরকে তাড়িয়ে দেয়া তোমাদের উপর হারাম। তবে কি খোদার কিছু সংখ্যক নির্দেশের উপর ঈমান আনছো এবং কিছু সংখ্যক নির্দেশকে অস্বীকার করছো? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এরূপ করে তার প্রতিফল কি? কিন্তু দুনিয়াতে অপমানিত হওয়াই এবং ক্বিয়ামতে কঠিনতম শাস্তির দিকে ধাবিত করা হবে; এবং আল্লাহ্ তোমাদের কার্যাদি সম্পর্কে অনবগত নন।
এবং নিশ্চয়ই আমি মুসাকে কিতাব দান করেছি, এবং তারপর একের পর এক রসূল প্রেরণ করেছি এবং আমি মারয়ামের পুত্র ঈসাকে স্পষ্ট নির্দশনসমূহ দান করেছি এবং ‘পবিত্র রূহ’ দ্বারা তাকে সাহায্য করেছি। তবে কি যখনকোন রসূল তোমাদের নিকট এমন কিছু (বিধান) নিয়ে আসেন, যা তোমাদের মনঃপূত হয় না, (তখনই তোমরা) অহংকার করো? অতঃপর ওই সব (নবী)-এর মধ্য থেকে এক দলকে তোমরা অস্বীকার করছো এবং একদলকে শহীদ করছো?
এবং ইহুদিগণ বললো, ‘আমাদের হৃদয়গুলোর উপর পর্দা (আচ্ছাদান) পড়েছে’ বরং আল্লাহ্ তা’আলা তাদের উপর তাদের কুফরের কারণে অভিশাপ করেছেন। সুতরাং তাদের মধ্যে অল্পসংখ্যক লোকই ঈমান আনে।
এবং যখন তাদের নিকট আল্লাহ্ তা’আলার ওই কিতাব (ক্বোরআন) এসেছে, যা তাদের সাথে রয়েছে এমন কিতাব (তাওরীত) এর সত্যায়ন করে এবং এর পূর্বেতারা ওই নবীর ‘ওসীলা’ ধরে কাফিরদের উপর বিজয় প্রার্থনা করতো; অতঃপর যখন তাদের নিকট সেই পরিচিত সত্তা তাশরীফ আনলেন তখন তাঁকে অস্বীকারকারী হয়ে বসলো। অতএব, অস্বীকারকারীদের উপর আল্লাহ্র লা’নত।
কতোই নিকৃষ্ট বিনিময়ে তারা আপন আত্মাগুলোকে খরিদ করেছে! (তা’হলো) আল্লাহ্র নাযিলকৃত কিতাবকে (তারা) অস্বীকার করেছে মনের এ যাতনায় যে, আল্লাহ্ আপন অনুগ্রহে স্বীয় যে বান্দার উপর ইচ্ছা করেন ‘ওহী’ নাযিল করেন। সুতরাং (তারা) ক্রোধের উপর ক্রোধের উপযোগী হয়েছে। আর কাফিরদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনার শাস্তি।
এবং যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ্র নাযিলকৃতের (কিতাব) উপর ঈমান আনো, তখন বলে, ‘যা আমাদের উপর নাযিল হয়েছে, আমরা তার উপর ঈমান রাখি; এবং বাকীগুলোকে তারা অস্বীকার করে; অথচ তা সত্য, তাদের নিকট যা আছে তার সত্যায়নকারী। (হে হাবীব) আপনি বলে দিন, ‘অতঃপর তোমরা পূর্ববর্তী নবীগণকে কেন শহীদ করেছো, যদি তোমাদের আপন কিতাবের উপর ঈমান ছিলো?’
এবং স্মরণ করো যখন আমি তোমাদের থেকে অঙ্গীকার নিয়েছি এবং ‘তুর পাহাড়’কে তোমাদের মাথার উপর তুলে ধরেছি। ‘দৃঢ়ভাবে গ্রহণ করো যা আমি তোমাদেরকে দিচ্ছি এবং শুনো!’ (তারা) বললো ‘আমরা শুনেছি ও অমান্য করেছি।’ আর তাদের কুফরের কারণে তাদের হৃদয়গুলোতে গো-বাছুর সিঞ্চিত হয়েছিলো। (হে হাবীব!) আপনি বলে দিন, ‘তোমাদেরকে তোমাদের ঈমান কী নিকৃষ্ট নির্দেশ দিচ্ছে, যদি (তোমরা) ঈমান রাখো!’
(হে হাবীব!) আপনি বলে দিন, ‘যদি পরকালীন নিবাস আল্লাহ্র নিকট শুধু তোমাদের জন্যই নির্দিষ্ট হয়, না অন্যকারো জন্য, তবে তো ভালো, মৃত্যু কামনা করো, যদি সত্যবাদী হও!’
এবং নিঃসন্দেহে, আপনি অবশ্যই তাদেরকে এমনই পাবেন যে, তারা সব লোকের চেয়েও অধিকাল জীবিত থাকার একান্ত কামনা রাখে এবং মুশরিকদের মধ্যে এক (দল) এর কামনা হচ্ছে যেন হাজার বছর বেঁচে থাকে এবং তার এ দীর্ঘায়ু প্রদত্ত হওয়া তাকে আযাব থেকে মুক্তি দেবে না। আর আল্লাহ্ তাদের কৃতকর্ম দেখছেন।
(হে হাবীব!) আপনি বলে দিন, ‘যে কেউ জিব্রাঈলের শত্রু হয়, তবে সে (জিব্রাঈল) তো আপনারই হৃদয়ের উপর আল্লাহ্র নির্দেশে এ ক্বোরআন নাযিল করেছেন, পূর্ববর্তী কিতাবগুলোর প্রত্যায়নকারী হিসেবে এবং সঠিক পথ-প্রদর্শন ও সুসংবাদ (হিসেবে) মুসলমানদের জন্য।
এবং যখন তাদের নিকট তাশরীফ আনলেন আল্লাহ্র নিকট থেকে একজন রসূল, তাদের কিতাবগুলোর সমর্থকরুপে, তখন কিতাবীদের একটা দল আল্লাহ্র কিতাবকে তাদের পৃষ্ঠ-পেছনে নিক্ষেপ করেছে, যেন তারা কোন জ্ঞানই রাখে না।
আর (তারা) তারই অনুসারী হয়েছে, যা শয়তান পাঠ করতো সুলায়মানের রাজত্বকালে; এবং সুলায়মান কুফর করেনি। হাঁ, কাফির হয়েছে শয়তান-গণ; (তারা) মানুষকে যাদু শিক্ষা দেয় আর ওই যাদুও, যা ‘বাবেল’ শহরে দু’জন ফিরিশ্তা- হারূত ও মারূতের উপর অবতীর্ণ হয়েছে। আর তারা দু’জন কাউকে কিছু শিক্ষা দিত না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা এ কথা বলে দিতো না, ‘আমরা তো নিছক পরীক্ষা। কাজেই, নিজ ঈমান হারিয়ে বসোনা।’ অতঃপর (তারা) তাদের নিকট থেকে তাই শিখতো, যা বিরোধ বিচ্ছেদ সৃষ্টি করতো পুরুষ এবং তার স্ত্রীর মধ্যে। আর তা দ্বারা কারো ক্ষতি সাধন করতে পারতো না, আল্লাহ্রই নির্দেশে ব্যতীত। এবং তারা তাই শিক্ষা করে, যা তাদের ক্ষতিসাধন করবে, উপকার করবে না এবং নিশ্চয় নিশ্চয় তাদের জানা আছে যে, যে ব্যক্তি এ সওদা ক্রয় করেছে পরকালে তার কোন অংশ নেই; এবং নিশ্চয় তা কতোই নিকৃষ্ট বস্তু, যার বিনিময়ে তারা নিজেদের আত্মাসমূহ বিক্রি করেছে! যদি কোন রকমের তাদের জ্ঞান হতো!
হে ঈমানদারগণ!‘রা-ইনা’ বলো না এবং এভাবে আরয করো,‘হুযুর, আমাদের প্রতি কৃপাদৃষ্টি রাখুন!’এবং প্রথম থেকেই মনোযোগ সহকারে শুনো। আর কাফিরদের জন্য বেদনাদায়ক শাস্তি অবধারিত।
তারাই, যারা কাফির, কিতাবী কিংবা মুশরিক, তারা চায় না যে, তোমাদের উপর কোন কল্যাণ অবতীর্ণ হোক তোমাদের রবের নিকট থেকে এবং আল্লাহ্ স্বীয় রহমত দ্বারা বিশেষভাবে মনোনিত করেন যাকে চান, এবং আল্লাহ্ মহা অনুগ্রহশীল।
যখন আমি কোন আয়াতকে রহিত করে দিই কিংবা বিস্মৃত করে দিই তখন এরচেয়ে উত্তম কিংবা এর মতো (কোন আয়াত) নিয়ে আসবো। তোমার কি খবর নেই যে, আল্লাহ্ সব কিছু করতে পারেন?
তোমরা কি এটাই চাও যে, তোমাদের রসূলকে সেরূপই প্রশ্ন করবে, যেরূপ মুসার সাথে পূর্বে সংঘটিত হয়েছিলো? আর যে ব্যক্তি ঈমানের পরিবর্তে কুফর গ্রহণ করে, সে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে।
বহু কিতাবী কামনা করেছে,‘তারা যদি তোমাদেরকে (তোমাদের) ঈমান আনার পর কুফরের দিকে ফিরিয়ে দিতে পারতো!’তাদের অন্তরগুলোর বিদ্বেষবশতঃ এর পর যে, তাদের নিকট সত্য অতিমাত্রায় প্রকাশিত হয়েছে। সুতরাং তোমরা ছেড়ে দাও ও এড়িয়ে যাও যতক্ষণ না আল্লাহ্ নিজ হুকুম প্রদান করেন। নিশ্চয়, আল্লাহ্ প্রত্যেক কিছুর উপর শক্তিমান।
এবং নামায কায়েম রাখো ও যাকাত দাও। আর নিজেদের আত্মাগুলোর জন্যযে উত্তম কাজ পূর্বে প্রেরণ করবে তা আল্লাহ্র নিকট পাবে। নিশ্চয় আল্লাহ্ আমাদের কাজ প্রত্যক্ষ করেছেন।
এবং কিতাবীরা বলল, ‘নিশ্চয় জান্নাতে যাবে না, কিন্তু সেই-ব্যক্তি, যে ইহুদী কিংবা খৃষ্টান হবে।’এটা তাদের কল্পনাপ্রসুত আশা মাত্র। (হে হাবীব!) আপনি বলুন,‘(তোমরা) পেশ করো স্বীয় প্রমাণ যদি সত্যবাদী হও।’
হাঁ, কেন (এমন) নয়? যে ব্যক্তি আপন চেহারা ঝুঁকিয়েছে আল্লাহ্র জন্য এবং সে হয় সৎকর্মপরায়ণ, তবে তার প্রতিদান তাঁর রবের নিকট রয়েছে এবং তাদের না আছে কোন শংকা এবং না আছে কোন দুঃখ।
এবং ইহুদীরা বললো, ‘খৃষ্টান কিছুই নয়।’ আর খৃষ্টান বললো, ‘ইহুদী কিছুই নয়।’ অথচ তারা কিতাব পাঠ করে। এভাবে মূর্খরা তাদের মতো কথা বলেছে। সুতরাং আল্লাহ্ তা’আলা ক্বিয়ামত-দিবসে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেবেন যে বিষয়ে তারা ঝগড়া করছে।
এবং তার চেয়ে অধিক যালিম কে, যে আল্লাহ্র মসজিদগুলোতে বাধা দেয় সেগুলোতে আল্লাহ্র নামের চর্চা হওয়া থেকে, এবং সেগুলোর ধ্বংস সাধনে প্রয়াসী হয়? তাদের জন্য ভয়-বিহ্বল না হয়ে মসজিদে প্রবেশ করা সঙ্গত ছিলো না যে,তাদের জন্য পৃথিবীতে লাঞ্ছনা রয়েছে এবং তাদের জন্য রয়েছে পরকালের মহাশাস্তি।
এবং (তারা) বললো, আল্লাহ্ নিজের জন্য সন্তান রেখেছেন। পবিত্রতা তাঁরই বরং তাঁরই মালিকানাধীন যা কিছু আস্মানসমূহ এবং যমীনে রয়েছে। সবাই তাঁর সামনে গর্দান অবনতকারী।
(আল্লাহ্) নতুন (নমুনা ছাড়া) সৃষ্টিকারী আস্মান সমূহের ও যমীনের এবং যখন কোন কিছুর নির্দেশ দেন তখন তিনি তাকে এটাই বলেন, ‘হয়ে যাও!’ তা সাথে সাথে হয়ে যায়।
এবং মূর্খরা বললো, ‘আল্লাহ্ আমাদের সাথে কেন কথা বলেন না? কিংবা যদি আমাদের কোন নিদর্শনও মিলতো!’ তাদের পূর্ববর্তীরাও এরুপই বলেছে- তাদের মতো কথা। এদের ও ওদের অন্তরগুলো একই ধরণের। নিশ্চয়ই আমি নিদর্শনাবলী স্পষ্টভাবে বিবৃত করেছি- দৃঢ় বিশ্বাসীদের জন্য।
এবং কখনো আপনার উপর ইহুদী ও খৃষ্টানগণ সন্তুষ্ট হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করবেন না। (হে হাবীব!) আপনি বলে দিন, ‘আল্লাহ্র হিদায়তই প্রকৃত হিদায়ত।’এবং (হে শ্রোতা, যেই হও!) যদি তুমি তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করো তোমার নিকট জ্ঞান আসার পর, তবে আল্লাহ্ থেকে কেউ না তোমার রক্ষাকারী হবে এবং না সাহায্যকারী।
এবং ভয় করো সেদিনকে, যেদিন কোন প্রাণ অন্য প্রাণের বিনিময় হবে না এবং না তাকে কিছু বিনিময় নিয়ে ছেড়ে দেয়া হবে আর না কাফিরদেরকে কোন সুপারিশ উপকার করবে এবং না তাদেরকে সাহায্য করা হবে।
এবং যখন ইব্রাহীমকে তাঁর রব কতিপয় কথা দ্বারা পরীক্ষা করেছেন; অতঃপর তিনি সেগুলোকে পূর্ণ করে দেখিয়েছেন। (আল্লাহ্) এরশাদ করেন, ‘আমি তোমাকে মানুষের ইমাম সাব্যস্তকারী হই।’ আরয করলেন, ‘এবং আমার বংশধরদের মধ্যে থেকেও।’ এরশাদ করলো, ‘আমার প্রতিশ্রুতি অত্যাচারীদের ভাগ্যে জোটে না।’
এবং (স্মরণ করুন,) যখন আমি এ ঘরকে মানবজাতির জন্য আশ্রয়স্থল ও নিরাপদ স্থান করেছি আর (বললাম,) ‘ইব্রাহীমের দাঁড়াবার স্থানকে নামাযের স্থানরূপে গ্রহণ করো।’ আমি ইব্রাহীম ও ইসমাঈলকে তাগিদ দিয়েছি, ‘আমার ঘরকে খুব পবিত্র করো- তাওয়াফকারী, ই’তিকাফকারী এবং রুকু’ ও সাজদাকারীদের জন্য।’
এবং যখন ইব্রাহীম আরয করলেন, ‘হে আমার রব! এ শহরকে নিরাপদ করে দাও! আর এর অধিবাসীদেরকে বিভিন্ন ধরণের ফল থেকে জীবিকা দান করো! যারা তাদের মধ্যে আল্লাহ্ ও পরকালের উপর ঈমান আনবে।’ এরশাদ করলেন, ‘এবং যারা কাফির হবে তাদেরকেও এর সামান্য ভোগ করার জন্য দেবো। অতঃপর তাদেরকে দোযখের কঠিন শাস্তিরদিকে (ধাবিত হতে) বাধ্য করবো এবং তা অত্যন্ত নিকৃষ্ট স্থান ফিরে যাবার।’
এবং যখন ইব্রাহীম এ ঘরের ভিত্তিগুলো উঠাচ্ছিলো এবং ইসমাঈল, এ প্রার্থনারত অবস্থায়-‘হে আমাদের রব! আমাদের পক্ষ থেকে গ্রহণ করো। নিশ্চয় তুমিই শ্রোতা, জ্ঞাতা।
হে রব আমাদের! এবং আমাদেরকে তোমারই সামনে গর্দান অবতনকারী করো এবং আমাদের বংশধরদের মধ্য থেকে একটা উম্মতকে তোমারই অনুগত করো। আর আমাদেরকে আমাদের ইবাদতের নিয়ম-কানুন বলে দাও এবং আমাদের প্রতি স্বীয় অনুগ্রহ সহকারে দৃষ্টিপাত করো। নিশ্চয় তুমিই অত্যন্ত তাওবা কবূলকারী, দয়ালু।
হে রব আমাদের! এবং তাদের মধ্যে তাদেরই থেকে একজন রসূলপ্রেরণ করো, যিনি তোমার আয়াতসমূহ তাদের নিকট তেলাওয়াত করবেন এবং তাদেরকে তোমার কিতাব ও পরিপক্ক জ্ঞান শিক্ষা দেবেন এবং তাদেরকে অতি পবিত্র করবেন। নিশ্চয়, তুমিই পরাত্রুমশালী, প্রজ্ঞাময়।
এবং ইব্রাহীমের দ্বীন থেকে কে বিমুখ হবে ওই ব্যক্তি ছাড়া, যে অন্তরের (দিক দিয়ে) নির্বোধ? আর নিশ্চয় নিশ্চয় আমি পৃথিবীতে তাকে মনোনীত করে নিয়েছি; এবং নিশ্চয় সে পরকালে আমার খাস নৈকট্যের উপযোগীদের অন্তভূক্ত।
এবং ইব্রাহীম তার পুত্রদেরকে ওই দ্বীন সম্পর্কে ওসীয়ত করলো এবং ইয়া‘কূবও-‘হে আমার পুত্রগণ! নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের জন্য এ দ্বীনকে মনোনিত করে দিয়েছেন। সুতরাং মৃত্যুবরণ করো না, কিন্তু মুসলমান হয়ে।’
বরং তোমাদের মধ্যে থেকে (তোমরা) নিজেরাই উপস্থিত ছিলে যখন ইয়া’কুবের নিকট মৃত্যু আসলো; যখন সে আপন পুত্রদেরকে বললো, ‘আমার পরে কার ইবাদত করবে?’ (তারা) আরয করলো, ‘আমরা ইবাদত করবো তাঁরই, যিনি খোদা হন আপনার এবং আপনার পিতামহ ইব্রাহীম, ইসমাঈল এবং ইসহাক্বের, একমাত্র খোদা; এবং আমরা তাঁরই সামনে গর্দান রেখেছি।
এ এক উম্মত; যারা গত হয়েছে, তাদের জন্য রয়েছে যা তারা অর্জন করেছে; এবং তোমাদের জন্য রয়েছে যা তোমরা অর্জন করবে; এবং তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে তোমাদেরকে কোন প্রশ্ন করা হবে না।
এবং কিতাবীরা বললো, ‘ইহুদী কিংবা খৃষ্টান হয়ে যাও, ঠিক পথ পাবে!’ (হে হাবীব!) আপনি বলুন, ‘বরং আমরা তো ইব্রাহীমের দ্বীনকেই গ্রহণ করছি, যিনি সব রকমের বাতিল থেকে মুক্ত ছিলেন এবং মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না।’
এভাবে আরয করো, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহ্র উপর এবং সেটারই উপর, যা আমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, আর যা অবতারণ করা হয়েছে ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক্ব, ইয়া‘কূব এবং তাঁরই বংশধরদের উপর। আর (সেটারই উপর) যা দান করা হয়েছে মুসা ও ঈসাকে এবং যা দান করা হয়েছে অন্যান্য নবীগণকে তাঁদের রবের পক্ষ থেকে। আমরা তাঁদের কারো উপর ঈমান আনার ক্ষেত্রে পার্থক্য করি না এবং আমরা আল্লাহ্র সামনে গর্দান রেখেছি।
অতঃপর তারাও যদি এভাবে ঈমান আনতো, যেমন তোমরা এনেছো, তবেই তো তারা হিদায়ত পেয়ে যেতো। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তারা নিরেট একগুঁয়েমীর মধ্যে রয়েছে। তবে হে মাহবুব! অদূর ভবিষ্যতে আল্লাহ্ তাদের দিক থেকে আপনার জন্য যথেষ্ট হবেন এবং তিনিই শ্রোতা, জ্ঞাতা।
(হে হাবীব!) আপনি বলুন, ‘আল্লাহ্ সম্পর্কে (আমাদের সাথে) কি (তোমরা) বিতর্ক করছো? অথচ তিনি আমাদেরও মালিক এবং তোমাদেরও; এবং আমাদের কর্ম আমাদের সাথে আর তোমাদের কর্ম তোমাদের সাথে; এবং আমরা শুধু তাঁরই;
বরং তোমরা এটাই বলে থাকো যে, ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক্ব, ইয়া‘কূব এবং তাঁদের পুত্রগণ ইহুদী কিংবা খৃষ্টান ছিলেন। (হে হাবীব!) আপনি বলুন, ‘জ্ঞান কি আমাদের বেশী, না আল্লাহ্র? এবং তার চেয়ে অধিক অত্যাচারী কে, যার নিকট রয়েছে আল্লাহ্র পক্ষে সাক্ষ্য, আর সে তা গোপন করে? এবং খোদা তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অনবগত নন।’
সেই একটা জনগোষ্ঠী, যারা গত হয়েছে। তাদের জন্য তাদের অর্জিত বস্তুআর তোমাদের জন্য তোমাদের অর্জিত বস্তু। আর তাদের কর্মসমূহ সম্পর্কে তোমাদেরকে প্রশ্ন করা হবে না।
এখন বলবে নির্বোধ লোকেরা, ‘কে ফিরিয়ে দিলো মুসলমানদেরকে তাদের সেই ক্বিবলা থেকে, যার উপর (তারা) ছিলো?’ আপনি বলে দিন, ‘পূর্ব-পশ্চিম সব আল্লাহ্রই। তিনি যাকে চান সোজা পথে পরিচালিত করেন।’
এবং কথা হলো এরূপই যে, আমি তোমাদেরকে সব উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ করেছি, যাতে তোমরা মানবজাতির উপর সাক্ষী হও। আর এ রসূল তোমাদের রক্ষক ও সাক্ষী; এবং হে মাহবুব! আপনি ইতিপূর্বে যে ক্বিবলার উপর ছিলেন, আমি সেটাকে এজন্যই নির্দ্ধারণ করেছিলাম যেন দেখি- কে রসূলের অনুসরণ করছে (আর) কে উল্টো পায়ে ফিরে যাচ্ছে। এবং নিশ্চয় এটা কঠিন ছিলো, কিন্তু তাদের উপর কঠিন ছিলো না যাদেরকে আল্লাহ্ হিদায়ত করেছেন। আর আল্লাহ্র জন্য এটা শোভা পায়না যে, তিনি তোমাদের ঈমানকে ব্যর্থ করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ মানুষের উপর অত্যন্ত দয়ার্দ্র, দয়ালু।
আমি লক্ষ্য করছি বারবার আপনার আসমানের দিকে তাকানো। সুতরাং অবশ্যই আমি আপনাকে ফিরিয়ে দেবো সেই ক্বিবলার দিকে, যাতে আপনার সন্তুষ্টি রয়েছে। এখনই আপন মুখ ফিরিয়ে নিন মসজিদে হারামের দিকে; এবং হে মুসলমানগণ! তোমরা যেখানেই থাকোস্বীয় মুখ সেটার দিকে ফিরাও। আর ওই সব লোক, যারা কিতাব প্রাপ্ত হয়েছে, তারা নিশ্চয় জানেযে, এটা তাদের রবের পক্ষ থেকে সত্য এবং আল্লাহ্ তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অনবগত নন।
এবং যদি আপনি সেই কিতাবীদের নিকট সমস্ত নির্দশন নিয়ে আসেন, (তবুও) তারা আপনার ক্বিবলার অনুসরণ করবেনা এবং না আপনি তাদের ক্বিবলার অনুসরণ করবেন- এবং তারা পরষ্পরের মধ্যেও একে অপরের ক্বিবলার অনুসারী নয়; এবং (ওহে শ্রোতা! যেই হওনা কেন) যদি তুমি তাদের খেয়াল-খুশির উপর চলো, এর পরে যে, তোমার নিকট জ্ঞান আসার পর, তবে তখন তুমি অবশ্যই যালিম হবে।
এবং প্রত্যেকের জন্য মুখ করার একটা দিক রয়েছে যেদিকে সে মুখ করে। সুতরাং এটা চাও যে, সৎ কার্যাবলীতে অন্যদের থেকে এগিয়ে চলে যাবে। তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, আল্লাহ্ তোমাদের সবাইকে একত্রিত করে আনবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ যা চান, করেন।
এবং হে মাহবুব! আপনি যেখান থেকেই আসুন না কেন আপনার মুখ মসজিদে হারামের দিকে ফিরান। এবং হে মুসলমানগণ! তোমরা যেখানে থাকো না কেন, আপন মুখ সেটারই দিকে করো, যাতে তোমাদের বিরুদ্ধে লোকদের কোন বিতর্ক না থাকে; কিন্তু তাদের মধ্যে যারা অবিচার করে, তবে তাদেরকে ভয় করো না এবং আমাকেই ভয় করো। আর এটাএ জন্যই যে, আমি আমার অনুগ্রহ তোমাদের উপর পূর্ণ করবো এবং কোন প্রকারে তোমরা সঠিক পথের দিশা পাও।
যেমন আমি তোমাদের মধ্যে প্রেরণ করেছি একজন রসূল তোমাদের মধ্য থেকে, যিনি তোমাদের উপর আমার আয়াতগুলো তেলাওয়াত করেন, তোমাদেরকে পবিত্র করেন এবং কিতাবও পরিপক্ক জ্ঞান শিক্ষা দেন। আর তোমাদের ওই শিক্ষা দান করেন, যার জ্ঞান তোমাদের ছিলো না।
নিশ্চয় ‘সাফা’ও ‘মারওয়া’ আল্লাহ্র নিদর্শনগুলোর অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং যে কেউ এ ঘরের হজ্জ্ কিংবা ওমরাহ সম্পন্ন করে, তার উপর কোন গুনাহ নেই-এ দু’টি প্রদক্ষিণ করায়; এবং যে কেউ কোন সৎকর্ম স্বতঃস্ফূর্তভাবে করবে, তবে আল্লাহ্ সৎকর্মের পুরষ্কারদাতা, সর্বজ্ঞ।
নিশ্চয় ওই সব লোক, যারা আমার নাযিলকৃত সুস্পষ্ট বার্তাগুলো ও হিদায়তকে গোপন করে এর পরে যে, মানুষের জন্য আমি সেটা কিতাবের মধ্যে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছি, তাদের উপর আল্লাহ্র অভিশাপ রয়েছে এবং অভিশম্পাতকারীদের অভিশম্পাতও।
নিশ্চয় আস্মানগুলো ও যমীনের সৃষ্টি, রাত ও দিনের নিয়মিত পরিবর্তন, জলযান- যা সমুদ্রের মানুষের উপকার নিয়ে বিচরণ করে এবংআল্লাহ্ তা’আলা আস্মান থেকে যেই পানি বর্ষন করেন তা দ্বারা মৃত যমীনকে পুনর্জীবিত করেছেন ও যমীনে প্রত্যেক প্রকারের জীবজন্তু বিস্তার করেছেন, বিভিন্ন বায়ুর দিক পরিবর্তন এবং সে-ই মেঘ যা আস্মান ও যমীনের মাঝখানে হুকুমের নিয়ন্ত্রনাধীন - এ সবের মধ্যে জ্ঞানবান লোকদের জন্য অবশ্যই সমূহ নির্দশন রয়েছে।
এবং কিছু লোক আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য উপাস্য সাব্যস্ত করে নেয়, যাদেরকে (তারা) আল্লাহ্র মতো ভালবাসে এবং ঈমানদারদের অন্তরে আল্লাহ্র ন্যায় কারো ভালবাসা নেই। আর কেমন (অবস্থা) হবে যদি যালিমগণ দেখে ওই সময়, যখন আযাব তাদের চোখের সামনেই এসে পড়বে?এ জন্যই যে, সমস্ত শক্তি আল্লাহ্রই এবং এজন্যই যে, আল্লাহ্র শাস্তি অত্যন্ত কঠিন।
এবং অনুসারীরা বলবে, ‘যদি আমাদের পুনরায় ফিরে যাওয়া (সম্ভব) হতো, তবে আমরাও তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতাম-যেমন তারা আমাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। এভাবেই আল্লাহ্ তাদেরকে দেখাবেন তাদের কার্যাবলী তাদের পরিতাপরুপে আর তারা দোযখ থেকে কখনো বের হবার নয়।
এবং যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘আল্লাহ্র অবতীর্ণ (নির্দেশ) এর অনুসরণ করো!’ তখন (তারা) বলে, ‘বরং আমরা তারই অনুসরণ করবো, যার উপর আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে পেয়েছি।’ যদিও কি তাদের পিতৃপুরুষরা না কোন বিবেক রাখে, না হিদায়ত?
তিনি এ সবই তোমাদের উপর হারাম করেছেন- মড়া, রক্ত, শূকরের মাংস, এবং ওই পশু, যাকে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো নাম দিয়ে যবেহ করা হয়েছে; সুতরাং যে ব্যক্তি অনন্যোপায় হয়, না এমন যে, একান্ত কামনার বশবর্তী হয়ে আহার করে, আর এমনও নয় যে, প্রয়োজনের সীমা লংঘন করে, তবে তার গুনাহ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, দয়ালু।
ঐসব লোক, যারা গোপন করে আল্লাহ্র অবতীর্ণ কিতাবকে এবং এর পরিবর্তে হীন বিনিময় গ্রহণ করে, তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করে; এবং আল্লাহ্ ক্বিয়ামতের দিন না তাদের সাথে কথা বলবেন এবং না তাদেরকে পবিত্র করবেন; আর তাদের জন্য কষ্টদায়ক শাস্তি (অবধারিত)।।
এটা এজন্যই যে, আল্লাহ্ কিতাবকে সত্য সহকারে নাযিল করেছেন; এবং নিঃসন্দেহে যে সব লোক কিতাব সম্বন্ধে বিরোধ সৃষ্টি করছে, নিশ্চয়ই তারা চূড়ান্ত পর্যায়ের ঝগড়াটে।
কোন মৌলিক পূণ্য এ নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ করবে; হাঁ, মৌলিক পূণ্য হলো এ যে, ঈমান আনবে- আল্লাহ্, ক্বিয়ামত-দিবস, ফিরিশ্তাগণ, কিতাব ও নবীগণের উপর এবং আল্লাহ্র প্রেমে আপন প্রিয় সম্পদ দান করবে আত্মীয়-স্বজন, এতিমগণ, মিসকীনগণ, মুসাফিরও সাহায্য প্রার্থীদেরকে আর গর্দানসমূহ (গোলাম ও বন্দীদের) মুক্তকরণে; এবং নামায কায়েম রাখবে ও যাকাত প্রদানকরবে। আর আপন প্রতিশ্রুতি পূরণকারীরা যখন অঙ্গীকার করে এবংবিপদে, সংকটে এবং জিহাদের সময় ধৈর্যধারণকারীরা। এরাই হচ্ছে- ওই সব লোক, যারা আপন কথা সত্য প্রমাণ করেছে এবং এরাই হচ্ছে খোদাভীরু।
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর ফরয যে, যাদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে তাদের খুনের বদলা নেবে- আযাদের বদলে আযাদ, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস এবং নারীর বদলে নারী। সুতরাং যার প্রতি তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে কিছু ক্ষমা (প্রদর্শন করা) হয়েছে, তাহলে উত্তমভাবে তলব করাএবং সুন্দরভাবে আদায় করা বিধেয়। এটা হচ্ছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের বোঝা হাল্কা করা এবং তোমাদের উপর দয়া। অতঃপর, এর পরে যে সীমা লংঘন করবে তার জন্য বেদানাদায়ক শাস্তি রয়েছে।
তোমাদের উপর ফরয করা হয়েছে যে, যখন তোমাদের মধ্যে কারো নিকটমৃত্যু উপস্থিত হয়, যদি সে কোন ধন-সম্পদ রেখে যায়, তবে যেন ‘ওসীয়ত’ করে যায়-আপন পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের জন্য, প্রচলিত নিয়ম মোতাবেক। এটা অপরিহার্য খোদাভীরুদের জন্য।
তারপর যে ব্যক্তি এ আশংকা বোধ করে যে, ওসীয়তকারী কিছু অন্যায় কিংবা পাপ করেছে, অতঃপর সে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিলে, তার উপর কোন গুনাহ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, দয়ালু।
গণনাকৃত দিনসমূহ। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে কেউ রুগ্ন হও কিংবা সফরে থাকো, অতঃপর ততো সংখ্যক রোযা অন্যান্য দিন-সমূহে। আর যাদের মধ্যে এর সামর্থ্য না থাকে তারা এর বিনিময়ে (ফিদিয়া) দেবে একজন মিসকীনের খাবার। অতঃপর যে ব্যক্তি নিজ থেকে সৎকর্ম অধিক করবে তবে তা তার জন্য উত্তম এবং রোযা রাখা তোমাদের জন্য অধিক কল্যাণকর যদি তোমরা জানো।
রমযানের মাস, যাতে ক্বোরআন অবতীর্ণ হয়েছে, মানুষের জন্য হিদায়ত ও পথ নির্দেশ এবং মীমাংসার সুস্পষ্ট বাণীসমূহ। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাসপাবে, সে যেন অবশ্যই সেটার রোযা পালন করে। আর যে ব্যক্তি রুগ্ন হয় কিংবা সফরে থাকে, তবে ততো সংখ্যক রোযা অন্যান্য দিনসমূহে। আল্লাহ্ তোমাদের উপর সহজ চান এবং তোমাদের উপর ক্লেশ চান না; আর এ জন্য যে, তোমরা সংখ্যা পূরণ করবে এবং আল্লাহ্র মহিমা বর্ণনা করবে এর উপর যে, তিনি তোমাদেরকে হিদায়ত করেছেন। আর যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও।
এবং হে মাহবুব! যখন আপনাকে আমার বান্দাগণ আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে, আমি তো নিকটেই আছি; প্রার্থনা গ্রহণ করি আহ্বানকারীর যখন আমাকে আহ্বান করে। সুতরাং তাদের উচিৎ যেন আমার নির্দেশ মান্য করে এবং আমার উপর ঈমান আনে, যাতে পথের দিশা পায়।
রোযার রাতগুলোতে আপন স্ত্রীদের নিকটে যাওয়া তোমাদের জন্য হালাল হয়েছে; তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক। আল্লাহ্ জেনেছেন যে, তোমরা নিজেদের আত্মাগুলোকে অবিশ্বস্ততার মধ্যে ফেলেছিলে, অতঃপর তিনি তোমাদের তওবা কবুল করেছেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন। সুতরাং এখন তোমরা তাদের সাথে সঙ্গত হও; এবং তালাশ করো- আল্লাহ্ যা তোমাদের ভাগ্যে লিপিবদ্ধ করেছেন; এবং পানাহার করো এ পর্যন্ত যে, তোমাদের নিকট প্রকাশ পেয়ে যাবে শুভ্ররেখা কৃষ্ণরেখা থেকে, ভোর হয়ে; অতঃপর রাত আসা পর্যন্ত রোযাগুলো সম্পূর্ণ করো; এবং স্ত্রীদের গায়ে হাত লাগাবে না যখন তোমরা মসজিদগুলোতে ই’তিকাফরত থাকো। এগুলো আল্লাহ্র সীমারেখা, এগুলোর নিকটে যেওনা। আল্লাহ্ এভাবেই বর্ণনা করেন লোকদের জন্য আপন নির্দশনগুলো, যাতে তাদের পরহেয্গারী অর্জিত হয়।
এবং পরষ্পরের মধ্যে একে অপরের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং না বিচারকদের নিকট তাদের মুকাদ্দমা এজন্য পৌঁছাবে যে, লোকজনের কিছু ধন-সম্পদ অবৈধভাবে গ্রাস করে নেবে, জেনে-বুঝে।
(হে হাবীব!) আপনাকে নতুন চাঁদ সম্পর্কে (তারা) জিজ্ঞাসা করছে। আপনি বলে দিন, ‘সেটা সময়ের কতগুলো প্রতীক, মানবজাতি ও হজ্জে্র জন্য। আর এটা কোন পূণ্যময় কাজ নয় যে, গৃহগুলোর মধ্যে পেছনে দরজা কেটে আসবে। হাঁ, পূণ্য তো খোদাভীরুতাই; এবং ঘরগুলোতে দরজা দিয়েই প্রবেশ করো। আর আল্লাহ্কে ভয় করতে থাকোএ আশায় যে, সাফল্য অর্জন করবে।’
এবং কাফিরদেরকে যেখানে পাও হত্যা করো এবং তাদেরকে বের করে দাও যেখান থেকে তোমাদেরকে তারা বের করেছিলো। আর তাদের ফিৎনা তো হত্যা অপেক্ষাও প্রচণ্ডতর এবং মসজিদে হারামের নিকট তাদের সাথে যুদ্ধ করো না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাদের সাথে সেখানে যুদ্ধ না করে। আর যদি তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তবে তাদেরকে হত্যা করো। কাফিরদের এটাই শাস্তি।
পবিত্র মাসের পরিবর্তে পবিত্র মাস এবং আদবের পরিবর্তে আদব। যে তোমাদের উপর আক্রমণ করবে তাকে (তোমরা) আক্রমণ করো ততটুকুই, যতটুকু সে করেছে; এবং আল্লাহ্কে ভয় করতে থাকো। আর জেনে রেখো- আল্লাহ্ খোদাভীরুদের সাথে রয়েছেন।
এবং হজ্জ্ ও ওমরাহ্ আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে পূর্ণ করো। অতঃপর যদি তোমরা বাধাপ্রাপ্ত হও, তবে ক্বোরবানী প্রেরণ করো, যা সহজলভ্য হয় এবং আপন মস্তক মুণ্ডন করো না যতক্ষণ পর্যন্ত ক্বোরবানীর পশু আপন ঠিকানায় পৌঁছে না যায়। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি পীড়িত হয় কিংবা তার মাথায় কিছু ক্লেশ থাকে, তবে তার বিনিময় (ফিদিয়া) দেবে-রোযা কিংবা সাদ্ক্বাহ্ অথবা ক্বোরবানী। অতঃপর যখন তোমরা নিরাপদ থাকবে, তখন যে ব্যক্তি হজ্জে্র সাথে ওমরাহ্ মিলানোর ফায়দা উঠায় তার উপর ক্বোরবানী রয়েছে যেমনি সহজলভ্য হয়; অতঃপর যার জন্য সম্ভবপর না হয়, তবে সে তিনটা রোযা হজ্জে্র দিনগুলোতে রাখবে এবং সাতটা যখন আপন গৃহে ফিরে যাবে-এ পূর্ণ দশটা হলো। এ হুকুম তারই জন্য যে মক্কার বাসিন্দা নয়; আর আল্লাহ্কে ভয় করতে থাকো এবং জেনে রেখো যে, আল্লাহ্র শাস্তি কঠিন।
হজ্জের কতিপয় মাস রয়েছে, সুবিদিত, অতঃপর যে ব্যক্তি এগুলোতে হজ্জে্র নিয়ত করে, তবে না স্ত্রীদের সামনে সম্ভোগের আলোচনা করা হবে, না কোনগুনাহ্, না কারো সাথে ঝগড়া হজ্জে্র সময় পর্যন্ত এবং তোমরা যে-ই উত্তম কাজ করবে আল্লাহ্ সেটা জানেন; আর পাথেয় সঙ্গে নাও। যেহেতু সর্বাধিক উত্তম পাথেয় হচ্ছে- খোদাভীরুতা এবং আমাকে ভয় করতে থাকো, হে বিবেকবানগণ!
তোমাদের উপর কোন গুনাহ্ নেই যে, আপন রবের অনুগ্রহ সন্ধান করবে। কাজেই, যখন ‘আরাফাত’ থেকে প্রর্ত্যাবর্তন করবে তখন আল্লাহ্র স্মরণ করো ‘মাশ্‘আর-ই-হারাম’ (পবিত্র ও সম্মানিত স্থান) এর নিকটে আর তাঁকে স্মরণ করো যেভাবে তিনি তোমাদেরকে হিদায়ত করেছেন এবং নিশ্চয় এর পূর্বে তোমরা বিভ্রান্ত ছিলে।
অতঃপর কথা হচ্ছে হে ক্বোরাঈশীগণ! তোমরাও সেই স্থান থেকে প্রর্ত্যাবর্তন করো যে স্থান থেকে অন্যান্য লোক প্রর্ত্যাবর্তন করে এবং আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, দয়াবান।
অতঃপর যখন (তোমরা) আপন হজ্জে্র কাজ পূর্ণ করে নাও, তখন আল্লাহ্কে স্মরণ এমনভাবে করো, যেমন আপন পিতা ও পিতামহকে স্মরণ করছিলে; বরং তদপেক্ষাও বেশী; এবং কিছু লোক এভাবে বলে, ‘হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়াতে দাও।’ আর পরকালে তার কোন অংশ নেই।
এবং আল্লাহ্কে স্মরণ করো গণনাকৃত দিনগুলোতে। অতঃপর যে ব্যক্তি তাড়াতাড়ি করে দু’দিনের মধ্যে চলে যায়, তার উপর কোন গুনাহ নেই আর যে ব্যক্তি রয়ে যায়, তবে তারও গুনাহ নেই, খোদাভীরুর জন্য এবং আল্লাহ্কে ভয় করতে থাকো। আর জেনে রেখো যে, তোমাদেরকে তাঁরই দিকে উঠতে হবে।
এবং কোন মানুষ এমনও আছে যে, পার্থিব জীবনে তার কথাবার্তা তোমার নিকট ভালো লাগবে এবং সে আপন অন্তরের কথার উপর আল্লাহ্কে সাক্ষী আনে এবং সে সবচেয়ে বেশী ঝগড়াটে।
কিসের প্রতীক্ষায় রয়েছে? কিন্তু এরই যে, আল্লাহ্ তা’আলার শাস্তি আসবে ছেয়ে ফেলা মেঘের মধ্যে এবং ফিরিশ্তাগণ অবতীর্ণ হবে। আর কাজের ফয়সালা হয়ে গেছে এবং সমস্ত কাজের প্রর্ত্যাবর্তন আল্লাহ্রই দিকে।
বনী ইস্রাঈলকে জিজ্ঞাসা করো আমি কতগুলো সুস্পষ্ট নিদর্শনই তাদেরকে প্রদান করেছি! আর যে আল্লাহ্র আগত অনুগ্রহকে পরিবর্তন করেছে, তবে নিঃসন্দেহে আল্লাহ্র শাস্তি কঠিন।
কাফিরদের দৃষ্টিতে পার্থিব জীবনকে সুশোভিত করা হয়েছে এবং তারা মুসলমানদেরকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে আর খোদাভীতি সম্পন্নরা ক্বিয়ামত-দিবসে তাদের ঊর্দ্ধে থাকবে এবং আল্লাহ্ যাকে চান অগণিত দান করেন।
লোকেরা এই দ্বীনের উপর ছিলো; অতঃপর আল্লাহ্ নবীগণকে প্রেরণ করেছেন সুসংবাদদাতারুপে ও সতর্ককারীরুপে; আর তাঁদের সাথে সত্য কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যাতে তা লোকদের মধ্যেকার মতভেদগুলোর মীমাংসা করে দেয় এবং কিতাবের মধ্যে মতভেদ তারাই সৃষ্টি করেছে, যাদেরকে তা প্রদান করা হয়েছিলো এর পর যে, তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শন এসেছে পরষ্পরের অবাধ্যতার কারণে। অতঃপর আল্লাহ্ ঈমানদারগণকে ঐসত্য বিষয় দেখিয়ে দিয়েছেন, যা’তে তারা বিবাদ করছিলো, আপন নিদের্শে এবং আল্লাহ্ যাকে চান সরল পথ দেখান।
তোমরা কি এই ধারণায় রয়েছো যে, জান্নাতে চলে যাবে? আর এখনো তোমাদের উপর পূর্ববর্তীদের মতো রোয়েদাদ (অবস্থা) আসেনি। তাদেরকে স্পর্শ করেছে সংকট ও দুঃখ-কষ্ট এবং প্রকম্পিত করা হয়েছে, শেষ পর্যন্ত রসূলএবং তাঁর সঙ্গেকার ঈমানদারগণ বলে ওঠেছে, ‘কখন আসবে আল্লাহ্র সাহায্য’? শুনে নাও! ‘নিশ্চয় আল্লাহ্র সাহায্য সন্নিকটে।’
আপনাকে জিজ্ঞাসা করছে, ‘কি ব্যয় করবে?’ আপনি বলুন, ‘যা কিছু সম্পদসৎ কাজে ব্যয় করো, তবে তা মাতা-পিতা, নিকটাত্মীয়, এতিম, অভাবগ্রস্থ ও মুসাফিরদের জন্য; এবং যা সৎকর্ম করবে, নিশ্চয় আল্লাহ্ তা জানেন।
তোমাদের উপর ফরয হয়েছে আল্লাহ্র পথে জিহাদ করা আর তা তোমাদের নিকট অপছন্দনীয় এবং সম্ভবতঃ তোমাদের নিকট কোন বিষয় অপছন্দ হবে অথচ তা তোমাদের পক্ষে কল্যাণকর হয়; এবং সম্ভবতঃ কোন বিষয় তোমাদের পছন্দনীয় হবে অথচ তা তোমাদের পক্ষে অকল্যাণকর হয়। আর আল্লাহ্ জানেন এবং তোমরা জানো না।
আপনাকে জিজ্ঞাসা করছে সম্মানিত মাসে যুদ্ধ করার হুকুম সম্পর্কে। আপনি বলুন, ‘তাতে যুদ্ধ করা মহাপাপ এবং আল্লাহ্র পথে বাধা দেয়া, তাঁর উপর ঈমান না আনা, মসজিদে হারাম থেকে নিবৃত্ত রাখা এবং সেখানে বসবাসকারীদেরকে বের করে দেয়া-আল্লাহ্র নিকট এ গুনাহ্ তা অপেক্ষাও বড় এবং তাদের ফ্যাসাদ হত্যা অপেক্ষা ও ভীষণতর।’ আর (তারা) সর্বদা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে যতক্ষণ না তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দেবে, যদি সম্ভবপর হয়; এবং তোমাদের মধ্যে যে কেউ আপন দ্বীন থেকে ফিরে যায় অতঃপর কাফির হয়ে মৃত্যুবরণ করে, তবে ঐসব লোকের কর্ম নিস্ফল হয়েছে দুনিয়ায় ও আখিরাতে এবং তারা দোযখবাসী। তাতে তারা সর্বদা থাকবে।
ওই সব লোক, যারা ঈমান এনেছে এবং ওই সব লোক, যারা আল্লাহ্র জন্য আপন ঘরবাড়ী ত্যাগ করেছে ও আল্লাহ্র পথে জিহাদ করেছে, তারা আল্লাহ্র অনুগ্রহের প্রত্যাশী, আর আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, দয়াবান।
আপনাকে মদ ও জুয়ার বিধান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছে। আপনি বলুন, ‘ওই দুটিতে মহাপাপ রয়েছে এবং মানুষের জন্য কিছু পার্থিব উপকারও। এবং ওই দু’টির পাপওই দু’টির উপকার অপেক্ষা বড়।’ আর আপনাকে জিজ্ঞাসা করছে- কি ব্যয় করবে? আপনি বলুন, ‘যা উদ্বৃত্ত থাকে।’ অনুরুপভাবে, আল্লাহ্ তোমাদের নিকট নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা করে সম্পন্ন করো-
দুনিয়া ও আখিরাতের কাজ। আর আপনাকে এতিমদের মাস্আলা জিজ্ঞাসা করছে। আপনি বলুন, ‘তাদের কল্যাণ করা উত্তম’ এবং যদি নিজেদের ও তাদের ব্যয় একত্র করে নাও, তবে তারা তোমাদের ভাই; আর আল্লাহ্ খুব ভালভাবে জানেন অনিষ্টকারীকে হিতকারীদের থেকে; এবং আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে কষ্টে ফেলতেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
আর অংশীবাদীনী নারীদেরকে বিবাহ করো না যতক্ষণ পর্যন্ত না মুসলমানহয়ে যায় এবং নিশ্চয় মুসলমান ক্রীতদাসী অংশীবাদীনী নারী অপেক্ষা উত্তম যদিও সে তোমাদেরকে চমৎকৃত করে এবং মুশরিকদের বিবাহে দিও না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা ঈমান না আনে। আর নিশ্চয় মুসলমান ক্রীতদাস মুশরিক অপেক্ষা উত্তম যদিও সে তোমাদেরকে চমৎকৃত করে। তারা দোযখের দিকে আহ্বান করে এবং আল্লাহ্ জান্নাত ও ক্ষমার দিকে আহ্বান করেন স্বীয় নির্দেশে; আর আপন নিদর্শনসমূহ লোকদের জন্য বর্ণনা করেন, যাতে তারা উপদেশ মান্য করে।
এবং (হে হাবিব!) আপনাকে (লোকেরা) জিজ্ঞাসা করছে রজঃস্রাবের বিধান। আপনি বলুন, ‘সেটা অশুচিতা; সুতরাং (তোমরা) স্ত্রীদের নিকট থেকে পৃথক থাকো রজঃস্রাবের দিনগুলোতে এবং তাদের নিকটে যেওনা যতক্ষণ না পবিত্র হয়ে যায়। অতঃপর যখন পবিত্র হয়ে যায়, তখন তাদের নিকট যাও যেখান থেকে তোমাদেরকে আল্লাহ্ নির্দেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ পছন্দ করেন অধিক তাওবাকারীদেরকে এবং পছন্দ করেন পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকে।
তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য ক্ষেত স্বরুপ। অতএব, (তোমরা) এসো আপন আপন ক্ষেতসমূহে যেভাবে ইচ্ছা করো। এবং নিজেদের মঙ্গলের কাজ পূর্বাহ্নে করো। আর আল্লাহ্কে ভয় করতে থাকো এবং জেনে রেখো যে, তোমাদেরকে তাঁর সাথে মিলতে হবে। আর হে মাহবুব! সুসংবাদ দিন ঈমানদারদেরকে।
এবং আল্লাহ্কে তোমাদের শপথগুলোর (এ মর্মে) নিশানা (অজুহাত) বানিয়ে নিওনা যে, ‘সৎকর্ম, পরহেয্গারী এবং মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপন (না) করার শপথ করে নেবে। এবং আল্লাহ্ শ্রোতা, জ্ঞাতা।
আল্লাহ্ তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন না সেসব শপথের মধ্যে, যা অনিচ্ছাকৃতভাবে মুখ থেকে বের হযে যায়। হাঁ, সেটারই উপর পাকড়াও করেন, যে কাজ তোমাদের অন্তরসমূহ করেছে; এবং আল্লাহ্ ক্ষমাপরায়ণ, সহনশীল।
এএবং ওই সব লোক, যারা শপথ করে বসে আপন স্ত্রীদের নিকট যাবার (বেলায়), তাদের জন্য চার মাসের অবকাশ রয়েছে। অতঃপর যদি সেই মেয়াদের মধ্যে ফিরে আসে, তবে আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, দয়ালু।
এবং তালাক্বপ্রাপ্তারা আপন আত্মাগুলোকে সংযত করবে তিন রজঃস্রাবপর্যন্ত; আর তাদের জন্য হালাল নয় যে, তারা তা গোপন করবে যা আল্লাহ্ তাদের গর্ভাশয়ে সৃষ্টি করেছেন যদি আল্লাহ্ এবং ক্বিয়ামতের উপর ঈমান রেখে থাকে; এবং তাদের স্বামীদের উক্ত মেয়াদের মধ্যে তাদেরকে পুনঃগ্রহণ করার অধিকার থাকে যদি আপোষ-নিষ্পত্তি চায়। আর নারীদেরকেও হক তেমনিই রয়েছে যেমন রয়েছে তাদের উপর, শরীয়তানুযায়ী; এবং পুরুষদের তাদের (নারীগণ) উপর শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে; এবং আল্লাহ্ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
এ তালাক্ব দু’বার পর্যন্ত। অতঃপর উত্তম পন্থায় রেখে দেয়া অথবা সদয়ভাবে মুক্ত করে দেয়া। আর তোমাদের পক্ষে বৈধ নয় যে, যা কিছু স্ত্রীদেরকে দিয়েছো তা থেকে কিছু ফেরৎ নেবে, কিন্তু যখন উভয়ের আশংকা হয় যে, আল্লাহ্র সীমারেখাগুলোর কায়েম করবে না; অতঃপর যদি তোমাদের আশংকা হয় যে, তারা উভয়ে ঠিকভাবে সে সীমারেখাগুলোর উপর থাকবে না, তবে তাদের উপর কোন গুনাহ নেই এর মধ্যে যে, কিছু বিনিময় দিয়ে স্ত্রী নিষ্কৃতি গ্রহণ করবে। এগুলো আল্লাহ্র সীমারেখা; এগুলো থেকে অগ্রে অগ্রসর হয়ো না এবং যারা আল্লাহ্র সীমারেখাগুলোর থেকে আগে বাড়ে, তবে ওই সবলোকই যালিম।
অতঃপর যদি তাকে তৃতীয় তালাক্ব প্রদান করে, তবে তখন সেই স্ত্রী তার জন্য হালাল হবে না যতক্ষণ না অন্য স্বামীর নিকট থাকবে; অতঃপর অন্য স্বামী যদি তাকে তালাক্ব দিয়ে দেয়, তবে এতে তাদের উভয়ের উপর গুনাহ বর্তাবে না যে, তারা পরষ্পর পূর্নমিলিত হবে, যদি মনে করে যে, আল্লাহ্র সীমারেখাগুলো রক্ষা করতে সমর্থ হবে। আর এগুলো আল্লাহ্র সীমারেখা, যেগুলো স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন জ্ঞান সম্পন্নদের জন্য।
আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক্ব দাও এবং তাদের মেয়াদ (ইদ্দতপূর্তি) এসে পৌঁছে তখন হয়তো উত্তমরুপে রেখে দেবে; অথবা সদয়ভাবে মুক্ত করে দেবে এবং তাদেরকে ক্ষতি সাধনের জন্য আটক করে রাখবে না, যাতে সীমালংঘনকারী হয়ে যাও। আর যে এরূপ করে সে নিজেরেই ক্ষতি করে; এবং আল্লাহ্র আয়াতগুলোর ঠাট্টা-তামাশার বস্তু বানিয়ে নিও না; এবং স্মরণ করো আল্লাহ্র অনুগ্রহকে, যা তোমাদের উপর রয়েছে আর সেটাকে, যা তোমাদের উপর অবতীর্ণ করেছেন কিতাব ও হিকমত তোমাদেরকে উপদেশ দেয়ার জন্য এবং আল্লাহ্কে ভয় করতে থাকো ও জেনে রেখো যে, আল্লাহ্ সবকিছু জানেন।
এবং যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক্ব দাও এবং তাদের মেয়াদকাল পূর্ণ হয়ে যায়, তবে হে স্ত্রীদের অভিবাবকরা! তাদেরকে বাধা দিওনা এ থেকে যে, (তারা) আপন আপন স্বামীদের সাথে বিবাহ করে নেবে, যখন পরষ্পর শরীয়তের বিধিমতো রাজি হয়ে যায়। এ উপদেশ তাকেই দেয়া যায়, যে তোমাদের মধ্য থেকে আল্লাহ্ ও ক্বিয়ামতের উপর ঈমান রাখে। এটা তোমাদের জন্য অধিকতর পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র। আর আল্লাহ্ জানেন এবং তোমরা জানো না।
এবং জননীগণ স্ত্যন্যপান করাবে আপন সন্তানদেরকে পূর্ণ দু’বছর, তারই জন্য, যে স্তন্যপানকাল পূর্ণ করতে চায় এবং সন্তান যার তার উপর স্ত্রীদের ভরণ-পোষণ করা কর্তব্য, বিধি-মোতাবেক। কোন আত্মার উপর বোঝা রাখা হবে না, কিন্তু তার সাধ্য পরিমাণ, যেন জননীকে ক্ষতিগ্রস্থ না করা হয় তার সন্তান দ্বারা এবং না সন্তান যার তাকে তার সন্তান দ্বারা; [কিংবা জননী যেন কষ্ট না দেয় আপন সন্তানকে এবং না সন্তান যার, সে তার সন্তানকে] এবং যে পিতার স্থলাভিষিক্ত, তার উপরও অনুরুপই অপরিহার্য। অতঃপর যদি পিতা-মাতা উভয়ে পরষ্পরের সম্মতি ও পরামর্শক্রমে স্তন্যপান বন্ধ করতে চায়, তবে তাদের উপর গুনাহ বর্তাবে না। আর যদি তোমরা চাওযে, ধাত্রীদের দ্বারা আপন সন্তানদেরকে স্তন্যপান করাবে, তবুও তোমাদের অপরাধ নেই- যখন যা প্রদান করা সাব্যস্ত হয়েছিলো তা বিধিমত তাদেরকে অর্পণ করে দাও। আর আল্লাহ্কে ভয় করতে থাকো এবং জেনে রেখো যে, আল্লাহ্ তোমাদের কর্ম দেখছেন।
আর তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করে এবং স্ত্রীদের রেখে যায়, তারা (স্ত্রীগণ) চার মাস দশ দিন নিজেদের বিরত করে রাখবে। অতঃপর যখন তাদের ‘ইদ্দত’ পূর্ণ হয়ে যাবে, তখন, হে অভিভাবকগণ! তোমাদের জবাবদিহি করতে হবে না ওই কাজে, যা স্ত্রীগণ নিজেদের মামলায় শরীয়ত মোতাবেক করবে এবং আল্লাহ্র নিকট তোমাদের কার্যাদির খবর রয়েছে।
এবং তোমাদের উপর পাপ নেই এ কথায় যে, পর্দার আড়ালে (ইঙ্গিতে) তোমরা স্ত্রী লোকদেরকে বিবাহের প্রস্তাব দেবে কিংবা আপন আপন অন্তরে গোপন রাখবে। আল্লাহ্ জানেন যে, এখন তোমরা তাদের স্মরণ (আলোচনা) করবে। হাঁ, তাদের সাথে গোপন অঙ্গীকার করে রেখোনা, কিন্তু এটা যে, শুধু এতটুকু কথা বলো যা শরীয়তের বিধি মোতাবেক হয় এবং বিবাহ-বন্ধন পাকাপোক্ত করো না, যতক্ষণ না লিপিবদ্ধ হুকুম (ইদ্দত) আপন মেয়াদকালে পৌঁছে যায় এবং জেনে রেখো যে, আল্লাহ্ তোমাদের অন্তরের কথা জানেন। সুতরাং তাঁকে ভয় করো এবং জেনে রেখো যে, আল্লাহ্ ক্ষমাপরায়ণ, সহনশীল।
তোমাদের উপর কোন দাবী নেই যদি তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক্ব দাও, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তাদেরকে স্পর্শ না করে থাকো, কিংবা কোন মহর নির্দ্ধারিত (না) করে থাকোএবং তাদেরকে কিছু সামগ্রী ভোগ করতে দাও। সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর তার সামর্থ্যনুযায়ী এবং দরিদ্রের উপর তার সামর্থ্যানুযায়ী বিধিমতো কিছু ভোগ করার বস্তু, এটা ওয়াজিব সত্যপরায়ণ ব্যক্তিদের উপর।
এবং যদি তোমরা স্ত্রীদের স্পর্শ করা ব্যতিরেকে তালাক্ব দিয়ে থাকো আর তাদের জন্য কিছু মহর নির্দ্ধারণ করেছিলে এমন হয়, তবে যে পরিমাণ নির্দ্ধারিত হয়েছিলো তার অর্ধেক ওয়াজিব হয়, কিন্তু এ’যে, যদি স্ত্রীগণ কিছু ছেড়ে দেয়; কিংবা সে বেশী দেয় যার হাতে বিবাহের বন্ধন রয়েছে এবং হে পুরুষগণ, তোমাদের বেশী দেওয়া পরহেয্গারীর নিকটতর এবং পরষ্পর একে অপরের উপর অনুগ্রহকে ভুলে যেও না। নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদেরকর্ম প্রত্যক্ষ করছেন।
অতঃপর যদি আশংকায় থাকো, তবে পদচারী অথবা আরোহী অবস্থায়, যেমনি সম্ভব হয়। অতঃপর যখন নিরাপদে থাকো, তখন আল্লাহ্কে স্মরণ করো-যেমন তিনি শিক্ষা দিয়েছেন যা তোমরা জানতে না।
এবং যারা তোমাদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করে আর স্ত্রীদের রেখে যায় তারা যেন তাদের স্ত্রীদের উদ্দেশ্যে ওসীয়ৎ করে যায় সারা বছর পর্যন্ত ভরণ-পোষণের, ঘর থেকে বের করা ব্যতিরেকে। অতঃপর যদি তারা নিজেরাই বের হয়ে যায়, তবে তোমাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে না ওই কাজের উপর যা তারা আপন আপন মামলায় বিধি মতো করেছে। আর আল্লাহ্ পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়।
হে মাহবুব! আপনি কি দেখেন নি তাদেরকে, যারা আপন ঘরগুলো থেকে বের হয়েছে মৃত্যুর ভয়ে এবং তারা ছিলো হাজার হাজার, তখন আল্লাহ্ তাদেরকে বলেছেন, ‘মরে যাও’! অতঃপর তাদেরকে জীবিত করেছেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ মানুষের উপর অনুগ্রহশীল, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ অকৃতজ্ঞ।
এমন কেউ আছো, যে আল্লাহ্কে ‘উত্তম কর্জ’ দেবে? তবে আল্লাহ্ তার জন্য অনেক গুণ বর্ধিত করে দেবেন এবং আল্লাহ্ সংকোচন ও প্রশস্ত করেন আর তোমাদেরকে তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে।
হে মাহবুব! আপনি কি দেখেন নি বনী ইস্রাইলের একটা দলকে, যা মুসার পরে সৃষ্ট হয়েছে? যখন (তারা) তাদের একজন পয়গাম্বরকে বলেছে, ‘আমাদের জন্য দাঁড় করান একজন বাদশাহ, যাতে আমরা আল্লাহ্র পথে যুদ্ধ করি।’ নবী বলেছেন, ‘তোমাদের অনুমান কি এমন যে, তোমোদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হবে অতঃপর (তোমরা) তা করবে না?’ বললো, ‘আমাদের কি হয়েছে যে আমরা আল্লাহ্র পথে যুদ্ধ করবো না? অথচ আমাদের বের করে দেয়া হয়েছে আমাদের জন্মভূমি থেকে এবং আপন সন্তানদের নিকট থেকে।’ অতঃপর যখন তাদের উপর ‘জিহাদ’ ফরয করা হলো (তখন তারা) মুখ ফিরিয়ে নিলো, কিন্তু তাদের মধ্যেকার অল্প সংখ্যক লোক এবং আল্লাহ্ ভালভাবে জানেন অত্যাচারীদেরকে।
এবং তাদেরকে তাদের নবী বললেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ্ তালূতকে তোমাদের বাদশাহ নিয়োজিত করে প্রেরণ করেছেন।’ (তারা) বললো, ‘আমাদের উপর তার বাদশাহী কিভাবে হবে এবং আমরা তার অপেক্ষা রাজত্বের জন্য অধিক উপযোগী আর তাকে আর্থিক প্রাচুর্যও প্রদান করা হয় নি।’ তিনি (নবী) বললেন, ‘তাকে আল্লাহ্ তোমাদের জন্য নির্বাচিত করেছেন এবং তাঁকে জ্ঞান ও শরীরের দিক দিয়ে অধিক প্রাচুর্য প্রদান করেছেন; আর আল্লাহ্ আপন রাজ্য যাকে চান প্রদান করেন; এবং আল্লাহ্ প্রাচুর্যময়, জ্ঞাতা।’
এবং তাদেরকে তাদের নবী বললেন, ‘তার বাদশাহীর নির্দশন এই যে, তোমাদের নিকট তাবূত আসবে, যার মধ্যে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে চিত্ত-প্রশান্তি রয়েছে এবং কিছু অবশিষ্ট বস্তু, সম্মানিত মূসা ও সম্মানিত হারুনের পরিত্যক্ত; সেটাকে ফিরিশ্তাগণ বহন করে আনবে।’ নিঃসন্দেহে, এর মধ্যে মহান নির্দশন রয়েছে তোমাদের জন্য যদি ঈমান রাখো।
অতঃপর যখন তালূত সৈন্যদের নিয়ে শহর থেকে পৃথক হলো, (তখন) বললো, ‘নিঃসন্দেহে, আল্লাহ্ তোমাদেরকে একটা নদী দ্বারা পরীক্ষাকারী। সুতরাং যে ব্যক্তিসেটার পানি পান করবে সে আমার নয়, আর যে পান করবে না সে আমার; কিন্তু ওই ব্যক্তি, যে এক অঞ্জলী পরিমাণ আপন হাতে নিয়ে নেবে (সেও আমার)।’ অতঃপর সবাই সেটা থেকে পান করলো, কিন্তু অল্প সংখ্যক লোক। অতঃপর যখন তালূত এবং তার সঙ্গেকার মুসলমান নদী পার হয়ে গেলো, তখন (তারা) বললো, ‘আমাদের মধ্যে আজ শক্তি নেই জালূত এবং তার সৈন্যদের (বিরুদ্ধে লড়ার)।’ ওই সব লোক বললো, যাদের মধ্যে আল্লাহ্র সাথে সাক্ষাতের দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো, ‘বহুবার ছোট দল বিজয়ী হয়েছে বৃহৎদলের উপর, আল্লাহ্র নির্দেশক্রমে’ এবং আল্লাহ্ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।
অতঃপর (তারা) যখন সম্মুখীন হলো জালূত ও তার সৈন্য বাহিনীর, তখন প্রার্থনা করলো, ‘হে আমাদের রব! আমাদের উপর ধৈর্য ঢেলে দাও এবং আমাদের পাগুলো অবিচলিত রাখো আর কাফিরদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করো।’
অতঃপর তারা তাদেরকে বিতাড়িত করলো আল্লাহ্র নির্দেশে এবং দাউদ জালূতকে হত্যা করলো এবং আল্লাহ্ তাকে বাদশাহী ও হিকমত দান করলেন এবং তাকে যা চেয়েছেন শিক্ষা দিয়েছেন। আর যদি আল্লাহ্ মানুষের মধ্য থেকে এককে অন্যের দ্বারা প্রতিহত না করেন, তবে অবশ্যই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে; কিন্তু আল্লাহ্ সমগ্র জাহানের উপর অনুগ্রহশীল।
এঁরা রসূল, আমি তাঁদের মধ্যে এককে অপরের উপর শ্রেষ্ঠ করেছি। তাঁদের মধ্যে কারো সাথে আল্লাহ্ কথা বলেছেন এবং কেউ এমনও আছেন, যাঁকে সবার উপর মর্যাদাসমূহে উন্নীত করেছেন। আর আমি মরিয়ম-তনয় ঈসাকে স্পষ্ট নির্দশনসমূহ প্রদান করেছি; এবং পবিত্র রূহ দ্বারা তাঁকে সাহায্য করেছি; আর আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে তাদের পরবর্তীগণ পরষ্পর যুদ্ধ করতো না এরপর যে, তাঁদের নিকট স্পষ্ট নির্দশনসমূহ এসেছে; কিন্তু তারা তো পরস্পর বিরোধকারী হয়ে গেছে। তাদের মধ্যে কেউ ঈমানের উপর রইলো এবং কেউ কাফির হয়ে গেলো; আর আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে তারা পরষ্পর যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত হতো না; কিন্তু আল্লাহ্ যা চান করে থাকেন।
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ্র পথে আমার প্রদত্ত (সম্পদ) থেকে ব্যয় করো ওই দিন আসার পূর্বে, যার মধ্যে না কোন বেচাকেনা থাকবে, না কাফিরদের জন্য বন্ধুত্ব এবং না শাফা’আত; এবং কাফিরগণ নিজেরাই অত্যাচারী।
আল্লাহ্ হন, যিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই। তিনি নিজে জীবিত এবং অন্যান্যাদের অধিষ্ঠিত রাখেন। তাঁকে না তন্দ্রা স্পর্শ করে, না নিদ্রা।তাঁরই, যা কিছু আস্মানসমূহে রয়েছে এবং যা কিছু যমীনে। সে কে, যে তাঁর সম্মুখে সুপারিশ করবে, তাঁর অনুমতি ব্যতিরেকে? (তিনি) জানেন যা কিছু তাদের সম্মুখে রয়েছে এবং যা কিছু তাদের পেছনে। আর তারা পায়না তাঁর জ্ঞান থেকে, কিন্তু যতটুকু তিনি চান। তাঁর ‘কুরসী’ আস্মানসমূহ ও যমীন ব্যাপী এবং তাঁর জন্য ভারী নয় এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ। আর তিনিই হন উচ্চ, মহা মর্যাদাসম্পন্ন।
কোন জোর জবরদস্তী নেই ধর্মের মধ্যে; নিশ্চয় খুবই স্পষ্ট হয়েছে সত্যপথ ভ্রান্তি থেকে। সুতরাং যে শয়তানকে অমান্য করে এবং আল্লাহ্র উপর ঈমান আনে, সেএমন এক মজবুত গ্রন্থি ধারণ করেছে, যা কখনো খুলে যাবার নয়; এবং আল্লাহ্ শ্রোতা, জ্ঞাতা।
আল্লাহ্ মুসলমানদের অভিবাবক, তাদেরকে অন্ধকার রাশি থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন এবং কাফিরদের সাহায্যকারী হচ্ছে শয়তান। তারা তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকার রাশির দিকে বের করে নেয়। এসব লোক দোযখবাসী। এদেরকে তা’তে স্থায়ীভাবে থাকতে হবে।/span>
হে মাহবুব! আপনি কি দেখেন নি তাকে, যে ইব্রাহীমের সাথে বিতর্ক করেছে তাঁর রব সম্পর্কে, এর উপর যে, আল্লাহ্ তাকে বাদশাহী দিয়েছেন? যখন ইব্রাহীম বললেন, ‘আমার রব তিনিই, যিনি জীবন দান করেন ও মৃতু ঘটান।’ সে বললো, ‘আমিও জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই।’ ইব্রাহীম বললেন, তাহলে, আল্লাহ্ সূর্য উদিত করেন পূর্ব দিক থেকে, তুমি সেটাকে পশ্চিম দিক থেকে নিয়ে এসো। অতঃপর হতবুদ্ধি হয়ে গেলো কাফির। এবং আল্লাহ্ সৎপথ দেখান না অত্যাচারীদেরকে।
অথবা ওই ব্যক্তির ন্যায়, যে অতিক্রম করলো একটা জনপদের উপর দিয়ে এবং তা ভেঙ্গে পড়েছিলো সেগুলোর ছাদগুলোর উপর। বললো, ‘আল্লাহ্ এটাকে কীভাবে জীবিত করবেন এটার মৃত্যুর পর?’ অতঃপর আল্লাহ্ তাঁকে মৃত রাখলেন একশ’ বছর। তারপর পূনর্জীবিত করে দিলেন। বললেন, ‘তুমি এখানে কতোকাল অবস্থান করলে?’ আরয করলো, ‘সম্ভবত: পূর্ণ দিন অথবা কিছু কম।’ তিনি বললেন, ‘না, বরং তোমার উপর একশ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে এবং আপন খাদ্য-পানীয়ের দিকে দেখো, এখনো পর্যন্ত দুর্গমন্ধময় হয়নি; এবং আপন গাধার প্রতি তাকাও, যার অস্থিগুলো পর্যন্ত সঠিক অবস্থায় থাকেনি! এবং এটা এজন্য যে, আমি তোমাকে মানুষের জন্য নিদর্শন করবো; এবং ওই অস্থিগুলোর দিকে দেখো, কিভাবে সেগুলোর উথান প্রদান করি, অতঃপর সেগুলোকে মাংসাবৃত করি।’ যখন এ ঘটনা তাঁর নিকট সুস্পষ্ট হয়ে গেলো, (তখন) বললেন, ‘আমি খুব ভালভাবে জানি যে, আল্লাহ্ সবকিছু করতে পারেন।’
এবং যখন আরয করলো ইব্রাহীম, ‘হে আমার রব! আমাকে দেখিয়ে দাও, তুমি কিভাবে মৃতকে জীবিত করবে।’ এরশাদ করলেন, ‘তোমার কি নিশ্চিত বিশ্বাস নেই?’ আরয করলো, ‘নিশ্চিত বিশ্বাস কেন থাকবে না? কিন্তু আমি এই চাই যে, আমার অন্তরে প্রশান্তি এসে যাক!’ এরশাদ করলেন, ‘তবে আচ্ছা! চারটা পাখী নিয়ে তোমার সাথে নেড়েচেড়ে নাও। অতঃপর সেগুলোর একেক খণ্ড প্রতিটি পাহাড়ের উপর রেখে দাও, অতঃপর সেগুলোকে আহ্বান করো, সেগুলো তোমার নিকট চলে আসবে নিজ পায়ে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে এবং জেনে রেখো যে, আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
তাদের উপমা, যারা আপন সম্পদ আল্লাহ্র পথে ব্যয় করে সেই শস্য বীজের মতো, যা উৎপাদন করে সাতটা শীষ। প্রত্যেক শীষে একশ’ শস্যকণা; এবং আল্লাহ্ তা থেকেও অধিক বৃদ্ধি করেন যার জন্য চান। আর আল্লাহ্ প্রাচুর্যময়, জ্ঞানময়।
ওই সব লোক যারা নিজ সম্পদ আল্লাহ্র পথে ব্যয় করে, অতঃপর ব্যয় করার পর না খোঁটা দেয়, না ক্লেশ দেয়, তাদের প্রতিদান তাদের রবের নিকট রয়েছে এবং তাদের না আছে কোন আশংকা না আছে কিছুদুঃখ।
হে ঈমানদারগণ! আপন দানকে নিষ্ফল করে দিওনা খোঁটা দিয়ে এবং ক্লেশ দিয়ে, ওই ব্যক্তির ন্যায়, যে আপন ধন লোক-দেখানোর জন্য ব্যয় করে এবং আল্লাহ্ ও ক্বিয়ামত-দিবসের উপর ঈমান রাখে না। সুতরাং তার উপমা তেমনই, যেমন একটা মসৃণ পাথরযার উপর মাটি রয়েছে, এখন সেটার উপর প্রবল বারিপাত হলো, যা সেটাকে নিরেট পাথর করে ছাড়লো। (তারা) আপন উপার্জন থেকে কোন জিনিষই (তাদের) আয়ত্বে পাবে না। আর আল্লাহ্ কাফিরদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।
এবং তাদের উপমা, যারা আপন সম্পদ আল্লাহ্র সন্তুষ্টির প্রত্যাশার মধ্যে এবং নিজেদের আত্মা দৃঢ় করার জন্য ব্যয় করে, ওই বাগানের ন্যায়, যা কোন উচ্চভূমির উপর (অবস্থিত), সেটার উপর প্রবল বারিপাত হলো, এর ফলে দ্বিগুণ ফলমূল জন্মালো। অতঃপর তাতে যদি প্রবল বারিপাত না হয় তবুও শিশিরই যথেষ্ট। এবং আল্লাহ্ তোমাদের কর্ম প্রত্যক্ষ করেছেন।
তোমাদের কেউ কি এটা পছন্দ করবে যে, তার নিকট একটা বাগান থাকবে খেজুর ও আঙ্গুরের, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত, যাতে তার জন্য সব ধরনের ফলমূল থাকে আরসে বার্ধক্যে উপনীত হয় এবং তার কর্মাক্ষম (দুর্বল) সন্তান-সন্ততি থাকে, তারপর আপতিত হলো এর উপর এক ঘূর্ণিঝড়, যার মধ্যে ছিলো আগুন, অতঃপর তা জ্বলে গেলো? এভাবেই আল্লাহ্ তোমাদের জন্য সুস্পষ্টরুপে ব্যক্ত করেন তাঁর নিদর্শনসমূহ, যাতে তোমরা ধ্যান দাও।
হে ঈমানদারগণ! নিজেদের পবিত্র উপার্জনগুলো থেকে কিছু দান করো এবং তা থেকে, যা আমি তোমাদের জন্য ভূমি থেকে উৎপাদন করেছি আর নিছক নিকৃষ্ট বস্তুরইচ্ছা করো না যে, প্রদান করলেতা থেকে করে থাকো, আর তোমরা পেলে গ্রহণ করবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তাতে চোখ বন্ধ করবে না। আর জেনে রেখো যে, আল্লাহ্ বেপরোয়া, প্রশংসিত।
শয়তান তোমাদেরকে ভয় দেখায় দারিদ্রের আর নির্দেশ দেয় লজ্জাহীনতার এবং আল্লাহ্ তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ক্ষমা ও অনুগ্রহের; আর আল্লাহ্ প্রাচুর্যময়, জ্ঞানময়।
যদি দান-খায়রাত প্রকাশ্যে করো তবে তা কতোই ভালো কথা আর যদি গোপনে অভাব গ্রস্থদেরকে দান করো তবে তা তোমাদের জন্য সবচেয়ে উত্তম। এবং এতে তোমাদের কিছু পাপ মোচন হবে। আর আল্লাহ্ তোমাদের কার্যাদি সম্পর্কে অবহিত।
তাদেরকে পথ প্রদান করা (হে হাবিব!) আপনার দায়িত্বে অপরিহার্য নয়। হ্যাঁ, আল্লাহ্ পথ প্রদান করেন যাকে চান। আর তোমরা যে উত্তম বস্তু দান করো, তা তোমাদেরই মঙ্গল এবং তোমাদের ব্যয় করা উচিত নয়, কিন্তু আল্লাহ্রই সন্তুষ্টি চাওয়ার উদ্দেশ্যে আর যে সম্পদ দেবে, তোমাদেরকে পুরোপুরি (বিনিময়) দেয়া হবে, কম দেয়া হবে না।
ওই দারিদ্র লোকদের জন্য যারা আল্লাহ্র পথে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে, ভূপৃষ্ঠে চলতে পারে না; অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে ধনী বুঝে থাকে (যাচ্ঞা করে থেকে) বিরত থাকার কারণে। তুমি তাদেরকে তাদের বাহ্যিক আকৃতি দেখে চিনে নেবে। (তারা) মানুষের নিকট যাচ্ঞা করে না যাতে অতি কাকুতি মিনতি করতে হয়। আর তোমরা যা দান করো আল্লাহ্ তা জানেন।
ওই সব লোক, যারা নিজেদের ধন সম্পদ দান করে রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে তাদের জন্য তাদের পূণ্যফল রয়েছে তাদের রবের নিকট। তাদের নাকোন আশংকা আছে, না কোন দুঃখ।
ওই সব লোক, যারা সুদ খায় ক্বিয়ামতের দিন (তারা) দাঁড়াবে না, কিন্তু যেমন দাঁড়ায় সেই ব্যক্তি যাকে শয়তান (জিন) স্পর্শ করে পাগল করে দিয়েছে। এটা এ জন্যযে, তারা বলেছে, ‘বেচাকেনাও তো সুদেরই মতো’। আর আল্লাহ্ হালাল করেছেন বেচাকেনাকে এবং হারাম করেছেন সুদকে। সুতরাং যার কাছে তার রবের নিকট থেকে উপদেশ এসেছে আর সে বিরত রয়েছে, তবে তার জন্য হালাল যা পূর্বে নিয়েছিলো; এবং তার কাজ আল্লাহ্রই সোপর্দকৃত। আর যে এখন এমন আচরণ করবে, তবে তারা দোযখবাসী, তারা সেখানে দীর্ঘস্থায়ী হবে।
নিশ্চয় ওই সব লোক, যারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে, নামায কায়েম করেছে এবং যাকাত দিয়েছে, তাদের পুরষ্কার তাদের রবের নিকট রয়েছে আর তাদের না কোন শংকা থাকবে, না কোন দুঃখ।
অতঃপর যদি তোমরা অনুরুপ না করতে পারো, তবে নিশ্চিত বিশ্বাস করে নাও, আল্লাহ্ ও আল্লাহ্র রসূলের সাথে যুদ্ধের এবং যদি তোমরা তাওবা করো, তবে নিজেদের মূলধন নিয়ে নাও। না তোমরা কারো ক্ষতি সাধন করবে, না তোমাদের ক্ষতি হবে।
হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা একটা নির্দ্ধারিত সময়সীমা পর্যন্ত কোন ঋণের লেনদেন করো, তখন তা লিখে নাও এবং উচিত যেন তোমাদের মধ্যে কোন লেখক ঠিক ঠিক লিখে আর লেখক যেন লিখতে অস্বীকার না করে যেমন তাকে আল্লাহ্ শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং তার সেটা লিখে দেয়া উচিত এবং যার উপর প্রাপ্য বর্তায় সে যেন লিখিয়ে যায় আর যেন আল্লাহ্কে ভয় করে, যিনি তার রব; এবং প্রাপ্য থেকে কিছু যেন না কমায়। অতঃপর যার উপর প্রাপ্য বর্তায় সে যদি নির্বোধ অথবা দূর্বল হয় কিংবা লিখতে না পারে, তবে তার অভিভাবক ন্যায্যভাবে লিখিয়ে দেবে এবং দু’জন সাক্ষী করে নাও নিজেদের পুরুষদের মধ্য হতে। অতঃপর যদি দু’জন পুরুষ না থাকে তবে একজন পুরুষ এবং দু’জন স্ত্রীলোক; এমন সাক্ষী যাদেরকে পছন্দ করো, যাতে স্ত্রীলোকদ্বয়ের মধ্যে একজন ভুলে গেলে সেই একজনকে অপরজন স্মরণ করিয়ে দেয় আর সাক্ষীদের যখন ডাকা হয় তখন আসতে যেন অস্বীকার না করে এবং এটাকে বিরক্তিবোধ মনে করো না যে, ঋণ ছোট হোক কিংবা বড়, সেটার মেয়াদ পর্যন্ত লিপিবদ্ধ করে নিতে। এটা আল্লাহ্র নিকট সঠিক ন্যায়ের কথা এর মধ্যে সাক্ষ্য খুব ঠিক থাকবে এবং এটা এ থেকে নিকটতর যে, তোমাদের সন্দেহের উদ্রেক হবে না; কিন্তু কোন নগদ ব্যবসা হাতে হাতে সম্পন্ন হলে তা না লিখার তোমাদের উপর গুনাহ্ নেই। আর যখন বেচাকেনা করো তখন সাক্ষী করে নাও, এবং না কোন লেখককে ক্ষতিগ্রস্থ করা হবে, না সাক্ষীকে (কিংবা না লেখক ক্ষতিগ্রস্থ করবে, না সাক্ষী) এবং তোমরা যারা এমন করো, তবে তোমাদের পাপ হবে আর আল্লাহ্কে ভয় করো এবং আল্লাহ্ তোমাদেরকে শিক্ষা দেন। আর আল্লাহ্ সব কিছু জানেন।
আর যদি তোমরা সফরে থাকো এবং লেখক না পাও, তবে বন্ধক থাকবে হাতে (অধিকারে) প্রদত্ত আর যদি তোমাদের মধ্যে একজনের উপর অপরের আস্থা থাকে, তবে যাকে সে আমানতদার মনে করেছিলো, সে যেন স্বীয় আমানত প্রর্ত্যার্পণ করে দেয় এবং (যেন) আল্লাহ্কে ভয় করে, যিনি তার রব। আর সাক্ষ্য গোপন করো না; এবং যে সাক্ষ্য গোপন করবে, তবে ভিতরের দিক থেকে তার অন্তর গুনাহ্গার; আর আল্লাহ্ তোমাদের কার্যাদি সম্পর্কে জানেন।
আল্লাহ্রই, যা কিছু আস্মানসমূহে রয়েছে, এবং যা কিছু যমীনে। আর যদি তোমরা প্রকাশ করো যা কিছু তোমাদের অন্তরে রয়েছে কিংবা গোপন করো, আল্লাহ্ তোমাদের থেকে সেটার হিসাব নেবেন। অতঃপর যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন আর যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেবেন। এবং আল্লাহ্ প্রত্যেক বস্তুর উপর শক্তিমান।
রসূল ঈমান এনেছেন সেটার উপর, যা তাঁর রবের নিকট থেকে তাঁর উপর অবতীর্ণ হয়েছে এবং মু’মিনগণও। সবাই মেনে নিয়েছে আল্লাহ্, তাঁর ফিরিশ্তাগণ, তাঁর কিতাবসমুহ এবং তাঁর রসূলগণকে এ কথা বলে যে, ‘আমরা তাঁর কোন রসুলের উপর ঈমান আনার মধ্যে তারতম্য করি না’ আর আরয করেছে- ‘আমরা শুনেছি ও মান্য করেছি। তোমার ক্ষমা হোক!’ হে আমাদের রব এবং তোমারই দিকে প্রর্ত্যাবর্তন করতে হবে।’
আল্লাহ্ কোন আত্মার উপর বোঝা অর্পন করেন না, কিন্তু তার সাধ্যপরিমাণ। তার জন্য কল্যাণ-যেই পুণ্য সে উপার্জন করেছে, আর তার জন্য ক্ষতি- যেই মন্দ সে উপার্জন করেছে। হে আমাদের রব! আমাদেরকে পাকড়াও করো না যদি আমরা বিস্মৃত হই কিংবা ভুল করি। হে আমাদের রব! এবং উপর ভারী বোঝা রেখোনা, যেমন তুমি আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর রেখেছিলে। হে আমাদের রব! এবং আমাদের উপর ঐ বোঝা অর্পণ করো না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই; আর আমাদের পাপ মোচন করো, আমাদেরকে ক্ষমা করো এবং আমাদের উপর দয়া করো। তুমি আমাদের মুনিব। সুতরাং কাফিরদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করো।