এবং ঘোষণা দেওয়া আল্লাহ্ ও তার রসূলের পক্ষ থেকে সমস্ত মানুষের প্রতি মহান হজ্জের দিনে এ মর্মে যে, আল্লাহ্ অসন্তুষ্ট মুশরিকদের উপর এবং তার রসূলও; সুতরাং যদি তোমরা তাওবা করো, তবে তোমাদের কল্যাণ আর যদি মুখ ফেরাও, তবে জেনে রেখো যে, তোমরা আল্লাহ্কে ঠেকাতে পারবে না এবং কাফিরদেরকে সুসংবাদ শুনাও বেদনাদায়ক শাস্তির;
কিন্তু যেসব মুশরিকের সাথে তোমাদের চুক্তি ছিলো, অতঃপর তারা তোমাদের চুক্তির কোন রূপ ত্রুটি করে নি এবং তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকেও সাহায্য করেনি; সুতরাং তাদের সাথে নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত চুক্তি পালন করো।নিশ্চয় আল্লাহ্ খোদাভীরুদেরকে ভালবাসেন।
অতঃপর যখন সম্মানিত মাসগুলো অতিবাহিত হয়ে যাবে তখন মুশরিকদেরকে হত্যা করো যেখানে পাও এবং তাদেরকে পাকড়াও করো ও বন্দী করো আর প্রতিটি স্থানে তাদের জন্য ওঁত পেতে বসো; অতঃপর যদি তারা তাওবা করে এবং নামায ক্বায়েম রাখে ও যাকাত দেয়, তবে তাদেরকে তাদের পথে ছেড়ে দাও; নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, দয়ালু।
এবং হে মাহবূব!যদি কোন মুশরিক আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে তাকে আশ্রয় দিন, যাতে সে আল্লাহ্র বাণী শুনতে পায়, অতঃপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌছিয়ে দিন; এটা এ জন্য যে, তারা অজ্ঞ লো্ক।
মুশরিকদের জন্য আল্লাহ্ ও তার রসূলের নিকট কোন অঙ্গীকার কি করে বলবৎ থাকবে? কিন্তু ওই সব লোক, যাদের সাথে তোমাদের চুক্তি মসজিদে হারামের নিকট হয়েছে; সুতরাং যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাদের জন্য চুক্তিতে স্থির থাকবে তোমরাও তাদের জন্য স্থির থাকো। নিঃসন্দেহে, পরহেয্গারদেরকে আল্লাহ্ ভালবাসেন।
হহ্যাঁ, কীভাবে? তাদের অবস্থা তো এ ‘যে, তারা যদি তোমাদের উপর জয়ী হয়, তবে তারা না আত্নীয়তার প্রতি লক্ষ্য রাখবে, না চুক্তির প্রতি; নিজেদের মুখের কথা দিয়ে তোমাদেরকে সন্তুষ্ট করে এবং তাদের হৃদয়ের মধ্যে অস্বীকার রয়েছে। আর তাদের অধিকাংশই নির্দেশ অমান্যকারী।
আর যদি চুক্তি করে নিজেদের শপথসমূহ ভঙ্গ করে এবং তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে বিদ্রূপ করে, তবে কুফরের নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো! নিশ্চয়, তাদের শপথসমূহ কিছুই নয়; এ আশায় যে, হয়তো তারা ফিরে আসবে।
তোমরা কি ওই সম্প্রদায়ের সাথে যুদ্ধ করবে না, যারা নিজেদের শপথসমূহ ভঙ্গ করেছে এবং রসূলের নির্বাসনের জন্য সংকল্প করেছে? অথচ তাদেরই পক্ষ থেকে সূচনা হয়েছে। তোমরা কি তাদেরকে ভয় করছো? সুতরাং আল্লাহ্ এ কথারই অধিক উপযোগী যে, তাকে ভয় করবে যদি ঈমান রেখে থাকো।
কাজেই, তাদের সাথে যুদ্ধ করো। আল্লাহ্ তোমাদের হাতে তাদেরকে শাস্তি দেবেন এবং তাদেরকে লাঞ্ছিত করেবেন, আর তোমাদেরকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্য দেবেন এবং ঈমানদারদের মনকে প্রশান্ত করবেন।
তোমরা কি এই ধারণায় রয়েছো যে, তোমাদেরকে এমনি ছেড়ে দেওয়া হবে এবং এখনো আল্লাহ্হ পরিচয় করান নি ওই সব লোকের, যারা তোমাদের মধ্য হতে জিহাদ করবে আর আল্লাহ্, তার রসূল এবং মু’মিনগণ ব্যতীত অন্য কাউকেও অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে না? এবং আল্লাহ্ তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবহিত।
মমুশরিকদের জন্য শোভা পায় না যে, তারা আল্লাহ্র মসজিদসমূহ আবাদ করবে নিজেরাই নিজেদের কুফরের সাক্ষ্য দিয়ে; তাদের সমস্ত কৃতকর্ম বিনষ্ট হয়ে গেছে এবং তারা সর্বদা আগুনেই অবস্থান করবে।
আল্লাহ্র মসজিদসমূহ তারাই আবাদ করে,যারা আল্লাহ্ ও ক্বিয়ামতের উপর ঈমান আনে, নামায কায়েম রাখে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাউকেও ভয় করে না ; সুতরাং এটাই সন্নিকটে যে, এসব লোক সৎপথ প্রাপ্তদের অন্তুর্ভুক্ত হবে।
তোমরা কি হাজীদের পানি সরবরাহ এবং মসজিদে হারামের খেদমতকে তারই সমান স্থির করেছো, যে আল্লাহ্ ও ক্বিয়ামতের উপর ঈমান এনেছে ও আল্লাহ্র পথে জিহাদ করেছে? তারা আল্লাহ্র নিকট সমান নয় এবং আল্লাহ্ যালিমদেরকে সৎপথ প্রদান করেন না।
হে ঈমানদারগণ! আপন পিতা ও নিজ ভাইদেরকে অন্তরঙ্গ মনে করো না যদি তারা ঈমানের পরিবর্তে কুফরকেই পছন্দ করে; এবং তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ তাদেরকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করবে তবে তারাই যালিম।
আপনি বলুন, ‘যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের পুত্র, তোমাদের ভাই, তোমাদের পত্নী, তোমাদের স্বগোষ্ঠী তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ওই ব্যবসা-বাণিজ্য, যার ক্ষতি হবার তোমরা আশংকা করো এবং তোমাদের পছন্দের বাসস্থান এ সব বস্তু আল্লাহ্ ও তার রসূল এবং তার পথে যুদ্ধ করা অপেক্ষা তোমাদের নিকট প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা করো আল্লাহ্ তার নির্দেশ আনা পর্যন্ত। এবং আল্লাহ্ ফাসিক্বদেরকে সৎপথ প্রদান করে না।
নিশ্চয় আল্লাহ্ বহু ক্ষেত্রে তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন এবং হুনায়নের যুদ্ধের দিনে, যখন তোমরা নিজেদের সংখ্যাধিক্যের উপর অহংকারী হয়ে গিয়েছিলে, তখন তা তোমাদের কোন কাজে আসে নি, এবং পৃথিবী এতোই বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও তোমাদের জন্য সংকুচিত হয়ে গিয়েছিলো পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে ফিরে গিয়েছিলে।
অতঃপর আল্লাহ্ স্বীয় প্রশান্তি অবতীর্ণ করেছেন আপন রসূলের উপর এবং মুসলমানদের উপর এবং এমন সৈন্যবাহিনী অবতীর্ণ করেন, যা তোমরা দেখতে পাও নি, এবং কাফিরদের শাস্তি দিয়েছেন। আর অস্বীকারকারীদের শাস্তি এটাই।
হে ঈমানদারগণ! মুশরিকগণ নিরেট অপবিত্র; সুতরাং এ বছরের পর তারা যেন মসজিদে হারামের নিকটেও না আসতে পারে; আর যদি তোমরা দারিদ্রের আশংকা করো,তবে অবিলম্বে আল্লাহ্ তোমাদেরকে ধনী করে দেবেন আপন করুণা থেকে যদি ইচ্ছা করেন। নিশ্চয়, আল্লাহ্ জ্ঞান প্রজ্ঞাময়।
যুদ্ধ করো তাদের সাথে, যারা ঈমান আনে না আল্লাহ্র উপর ও ক্বিয়ামত দিবসের উপর এবং হারাম বলে মানে না ওই বস্তুকে, যাকে হারাম করেছেন আল্লাহ্ ও তার রসূল, এবং সত্যদ্বীনের অনুসারী হয় না; অর্থাৎ ওই সব লোক, যাদেরকে কিতাব প্রদান করা হয়েছে, যে পর্যন্ত নিজ হাতে জিযিয়া দেবে না লাঞ্ছিত হয়ে।
এবং ইহুদীরা বললো, ‘উযায়ের আল্লাহ্র পুত্র’ এবং খ্রীস্টানরা বললো, ‘মসীহ আল্লাহ্র পুত্র’ সব কথা তারা নিজেদের মুখে বকাবকি করে। পূর্ববর্তী কাফিরদের মতো কথা রচনা করে। আল্লাহ্ তাদেরকে ধ্বংস করুন! ওরা উল্টো দিকে কোথায় ফিরে যাচ্ছে?
তারা আল্লাহ্ ব্যতীত তাদের পাদ্রী ও সংসারবিরাগীদেরকে খোদারূপে গ্রহণ করে নিয়েছে এবং মরিয়ম তনয় মসীহকেও; কিন্তু তারা একমাত্র আল্লাহ্র ইবাদত করার জন্য আদিষ্ট হয়েছিলো; তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত নেই। তিনি পবিত্র তাদের শির্ক থেকে।
তারা তাদের মুখের ফুঁৎকারে আল্লাহ্র জ্যোতিকে নির্বাপিত করতে চায়; এবং আল্লাহ্ আপন জ্যোতির পূর্ণ উদ্ভাসন ব্যতীত অন্য কিছু মানবেন না, যদিও অপছন্দ করে কাফির।
হে, ঈমানদারগণ! নিশ্চয় বহু পাদ্রী ও সংসারবিরাগী মানুষের ধন অন্যায়ভাবে খেয়ে বসে এবং আল্লাহ্র পথ থেকে নিবৃত্ত করে আর ওই সব লোক, যারা সঞ্চিত করে রাখে স্বর্ণ ও রৌপ্য এবং তা আল্লাহ্র পথে ব্যয় করে না; তাদেরকে সুসংবাদ শুনিয়ে দিন বেদনাদায়ক শাস্তির;
যে দিন উত্তপ্ত করা হবে জাহান্নামের আগুনের মধ্যে, অতঃপর তা দ্বারা দাগ দেওয়া হবে তাদের ললাটগুলোতে এবং পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশগুলোতে, ‘এটা হচ্ছে তাই, যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করে রেখেছিলে, এখন স্বাদ গ্রহণ করো এ পুঞ্জীভূত করার’।
নিশ্চয় মাসগুলোর সংখ্যা আল্লাহ্র নিকট বার মাস, আল্লাহ্র কিতাবের মধ্যে, যখন থেকে তিনি আসমান যমীন সৃষ্টি করেছেন। তন্মধ্যে চারটা সম্মানিত। এটা সোজা দ্বীন। সুতরাং এ মাসগুলোর মধ্যে নিজেদের আত্নাগুলোর উপর যুলুম করো না এবং মুশরিকদের বিরুদ্ধে সর্বদা যুদ্ধ করো, যেমনিভাবে তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বদা যুদ্ধ করে এবং জেনে রেখো যে, আল্লাহ্ খোদাভীরুদের সাথে আছেন।
তাদের মাসকে পিছিয়ে দেওয়া নয়, বরং কুফরের মধ্যে আরো এগিয়ে যাওয়া; এটা দ্বারা কাফিরদেরকে বিভ্রান্ত করা হয়। এক বছর সেটাকে বৈধ সাব্যস্ত করে এবং আরেক বছর সেটাকে অবৈধ মানে, যাতে ওই গণনার সমান হয়ে যায়, যা আল্লাহ্ নিষিদ্ধ করেছেন এবং আল্লাহ্র নিষিদ্ধকৃতকে হালাল করে নেয়। তাদের মন্দ কাজগুলো তাদের চোখে ভাল লাগে; এবং আল্লাহ্ কাফিরদেরকে সৎপথ প্রদান করেন না।
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কী হলো যখন তোমাদেরকে বলা হয়- ‘আল্লাহ্র পথে অভিযানে বের হও’! তখন তোমরা ভারাক্রান্ত হয়ে যমীনের উপর বসে পড়ো? তোমরা কি পার্থিব জীবনকে আখিরাতের বিনিময়ে পছন্দ করে নিয়েছো? এবং পার্থিব জীবনের সামগ্রীগুলো আখিরাতের তুলনায় নয়, কিন্তু সামান্য।
যদি তোমরা অভিযানে বের না হও, তবে তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি দেবেন এবং তোমাদের স্থলে অন্য লোকদেরকে নিয়ে আসবেন আর তোমরা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না; এবং আল্লাহ্ সব কিছু করতে পারেন।
যদি তোমরা ‘মাহ্বূব’কে সাহায্য না করো, তবে নিশ্চয়আল্লাহ্ তাকে সাহায্য করেছেন যখন কাফিরদের ষড়যন্ত্রের কারণে তাকে বাইরে তাশরীফ নিয়ে যেতে হয়েছে শুধু দু’জন থেকে (একজন হলেন তিনি) যখন তারা উভয়ই গুহার মধ্যে ছিলেন, যখন আপন সঙ্গীকে ফরমাচ্ছিলেন, ‘দুঃখিত হয়োনা, নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ আমাদের সাথে আছেন’। অতঃপর আল্লাহ্ তার উপর আপন প্রশান্তি অবতীর্ণ করেন এবং তাকে এমন এক সৈন্যবাহিনী দ্বারা সাহায্য করেছেন, যা তোমরা দেখো নি এবং তিনি কাফিরদের কথা নিচে নিক্ষেপ করেছেন; আল্লাহ্র কথাই সর্বোপরি; এবং আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
যদি কোন নিকটবর্তী সম্পদ কিংবা মধ্যম ধরণের সফর হতো, তবে তারা অবশ্যই আপনার সাথে যেতো; কিন্তু তাদের উপর তো কষ্টের পথ সুদীর্ঘ মনে হলো; এবং এখন আল্লাহ্র নামে শপথ করে বলবে, ‘আমাদের পক্ষে সম্ভব হলে অবশ্যই তোমাদের সাথে চলতাম’। তারা নিজেদের আত্নাগুলোকে ধ্বংস করছে এবং আল্লাহ্ জানেন যে, তারা নিশ্চয় নিশ্চয় মিথ্যাবাদী।
এবং ওই সব লোক, যারা আল্লাহ্ ও ক্বিয়ামত দিবসের উপর ঈমান রাখে, তারা আপনার নিকট নিজেদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা জিহাদ থেকে অব্যাহতি পাবার জন্য ছুটি প্রার্থনা করবে না; এবং আল্লাহ্ খুব ভালভাবে জানেন পরহেয্গারদেরকে।
আপনার নিকট এ ছুটি প্রার্থনা করছে তারাই, যারা আল্লাহ্ ও ক্বিয়ামতের উপর ঈমান রাখে না এবং যাদের অন্তর সংশয়ে পড়েছে। সুতরাং তারা তো আপন সংশয়ে দ্বিধাগ্রস্ত।
যদি তাদের বের হবার ইচ্ছা থাকতো, তবে তজ্জন্য সরঞ্জাম প্রস্তুত করতো। কিন্তু আল্লাহ্রই নিকট তাদের অভিযাত্রা মনঃপূত হলো না; সুতরাং তাদের মধ্যে অলসতা ভর্তি করে দিলেন এবং বলা হলো, ‘যারা বসে রয়েছে তাদের সাথে বসে থাকো’।
যদি তারা তোমাদের মধ্যে বের হতো, তবে তাদের দ্বারা ক্ষতি ব্যতীত তোমাদের কিছুই বৃদ্ধি পেতো না এবং তোমাদের মধ্যে ফিত্না সৃষ্টি উদ্দেশ্যে তোমাদের মাঝে ছুটাছুটি করতো; আর তোমাদের মধ্যে তাদের গুপ্তচর রয়েছে এবং আল্লাহ্ খুব জানেন যালিমদেরকে।
নিঃসন্দেহে তারা প্রথমেই ফিত্না চেয়েছিলো এবং হে মাহবূব! আপনার জন্য তারা কার্যপ্রণালীকে ওলট পালট করে ফেলেছে, শেষ পর্যন্ত সত্য এলো এবং আল্লাহ্র হুকুম প্রকাশ পেলো আর (তা) তাদের অপছন্দনীয় ছিলো।
এবং তাদের মধ্যে কেউ আপনার নিকট এভাবে আরয করে, ‘আমাকে অব্যাহতি দিন এবং ফিত্নায় ফেলবেন না!’ শুনে নাও! তারা ফিত্নারই মধ্যে পড়েছে; এবং নিশ্চয় জাহান্নাম বেষ্টন করে আছে কাফিরদেরকে।
যদি আপনার মঙ্গল হয়, তবে তাদের খারাপ লাগে, আর যদি আপনার কোন বিপদ ঘটে, তবে তারা বলে, ‘আমরা আমাদের কাজ পূর্বাহ্নেই ঠিক করে নিয়েছিলাম। এবং তারা খুশী প্রকাশ করতে করতে ফিরে যায়।
আপনি বলুন, ‘আমাদের নিকট পৌছবে না, কিন্তু তাই, যা আল্লাহ্ আমাদের জন্য লিবিবদ্ধ করে দিয়েছেন তিনি আমাদের মুনিব এবং আল্লাহ্র উপরই মুসলমানদের নির্ভর করা উচিত।
আপনি বলুন! ‘তোমরা আমাদের উপর কোন জিনিসের অপেক্ষা করছো? কিন্তু দু’টি মঙ্গলের মধ্য থেকে একটারই এবং আমরা তোমাদের উপর এ প্রতীক্ষায় রয়েছি যে, আল্লাহ্ তোমাদের উপর শাস্তি আপতিত করবেন তারই নিকট থেকে অথবা আমাদের হাতে। সুতরাং তোমরা এখন প্রতীক্ষা করো। আমরাও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষা করছি।
এবং তারা যা ব্যয় করে তা গ্রহন করা বন্ধ হয় নি, কিন্তু (বন্ধ হয়েছে) এজন্যই যে, তারা আল্লাহ্ ও রসূলকে অস্বীকার করেছে, এবং নামাযে আসে না কিন্তু অলসতার সাথে এবং খরচ করে না কিন্তু অনিচ্ছাকৃতভাবে।
সুতরাং তাদের সম্পদ ও সন্তান সন্ততি যেন আপনাকে বিস্মিত না করে। আল্লাহ্ এটাই চান যে, পার্থিব জীবনে ওই সব বস্তু দ্বারা তাদের উপর শাস্তি আপতিত করবেন এবং কুফরের উপরই তাদের শেষ নিঃশ্বাস বের হয়ে যাক।
এবং তাদের মধ্যে কেউ এমন আছে যে, সাদক্বাহ বণ্টনের ক্ষেত্রে আপনার সমালোচনা করে, সুতরাং যদি সেগুলো থেকে কিছু পায়, তবে সন্তুষ্ট হয়ে যায়, আর যদি না পায়, তবে তখনই তারা নারায হয়ে যায়।
এবং কতই ভাল হতো যদি তারা তাতেই সন্তুষ্ট হতো, যা আল্লাহ্ ও রসূল তাদেরকে দিয়েছেন এবং বলতো, ‘আল্লাহ্ই আমাদের জন্য যথেষ্ট, এখন আল্লাহ্ আমাদেরকে দিচ্ছেন আপন করুণা থেকে এবং আল্লাহ্র রসূল; আমরা আল্লাহ্রই প্রতি আসক্ত।
যাকাত তো এসব লোকেরই জন্য-যারা অভাবগ্রস্ত, নিতান্ত নিঃস্ব, যারা তা সংগ্রহগ করে আনে, যাদের অন্তরগুলোকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করা হয়, ক্রীতদাস-মুক্তির ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহ্র পথে এবং মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহ্র নির্ধারিত বিধান। আর আল্লাহ্ জ্ঞান ও প্রজ্ঞাময়।
এবং তাদের মধ্যে কিছু এমন লোক রয়েছে, যারা ওই অদৃশ্যের সংবাদদাতাকে কষ্ট দেয় আর বলে, ‘তিনি তো কান!’ আপনি বলুন, ‘তিনি তোমাদের মঙ্গলের জন্যই কান হন। আল্লাহ্র উপর ঈমান আনেন এবং মু’মিনদের কথায় বিশ্বাস করেন; আর তোমাদের মধ্যে যারা মুসলমান, তাদের জন্য রহমত’। এবং যারা আল্লাহ্র রসূলকে কষ্ট দেয় তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদয়ায়ক শাস্তি।
মুনাফিক্বরা ভয় করে-তাদের উপর এমন কোন সূরা নাযিল হয় কিনা, যা তাদের অন্তরের গোপন কথা ব্যক্ত করে দেবে! আপনি বলুন! ‘বিদ্রূপ করতে থাকো, আল্লাহ্ অবশ্যই প্রকাশ করবেন যার তোমাদের ভয় রয়েছে।
এবং হে মাহবূব! যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, তবে বলবে, ‘আমরা তো এমনি হাসি-খেলার মধ্যে ছিলাম’। আপনি বলুন, ‘তোমরা কি আল্লাহ্, তার নিদর্শনসমূহ এবং তার রসূলকে বিদ্রূপ করছিলে’?
মিথ্যা অজুহাত রচনা করো না! তোমরা মুসলমান হয়ে কাফির হয়ে গেছো। যদি আমি তোমাদের মধ্যে কাউকে ক্ষমা করে দিই, তবে অন্যান্যদের শাস্তি দেবো; এ কারণে যে, তারা অপরাধী ছিলো।
মুনাফিক্ব নর ও মুনাফিক্ব নারীগণ এক থলের একই বস্তু, অসৎকর্মের নির্দেশ দেয় এবং সৎকর্মে নিষেধ করে আর নিজেদের মুষ্ঠি বন্ধ রাখে ও তারা আল্লাহ্কে ছেড়ে বসেছে; সুতরাং আল্লাহ্ও তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছেন। নিশ্চয় মুনাফিক্বরা ওই পাকা নির্দেশ অমান্যকারী।
আল্লাহ্ মুনাফিক্ব নর ও মুনাফিক্ব নারীগণ এবং কাফিরদেরকে জাহান্নামের আগুনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যার মধ্যে তারা স্থায়ীভাবে থাকবে;সেটা তাদের জন্য যথেষ্ট। আর তাদের উপর আল্লাহ্র অভিসম্পাত রয়েছে এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী শাস্তি।
যেমন ওই সব লোক, যারা তোমাদের পূর্ববর্তী যুগে ছিলো, তোমাদের চেয়ে শক্তিতে অধিক ছিলো এবং তাদের সম্পদ ও সন্তান সন্ততি তোমাদের চেয়ে বেশী ছিলো; সুতরাং তারা নিজেদের অংশ ভোগ করে গেছে, অতঃপর তোমরা তোমাদের অংশ ভোগ করেছো, যেমনিভবে তোমাদের পূর্ববর্তীগণ তাদের অংশ ভোগ করে গেছে। আর তোমরা অনর্থক আলাপ-আলোচনায় লিপ্ত হয়েছো, যেমন তারা লিপ্ত হয়েছিলো। তাদের কর্ম বিনিষ্ট হয়েছে- দুনিয়া ও আখিরাতে এবং ওই সব লোকই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে।
তাদের নিকট কি তাদের পূর্ববর্তীদের সংবাদ আসে নি-নূহের সম্প্রদায়, ‘আদ, সামূদ ও ইব্রাহীমের সম্প্রদায়, এবং মাদ্ইয়ানবাসীদের আর ওই বস্তিগুলোর, যেগুলোকে উল্টিয়ে দেওয়া হয়েছে? তাদের রসূলগণ তাদের নিয়ে এসেছিলেন। সুতরাং তাদের উপর যুলুম করা আল্লাহ্র শান ছিলো না, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের আত্নাগুলোর উপর অত্যাচারী ছিলো।
এবং মুসলমান নর ও মুসলমান নারীগণ একে অপরের বন্ধু; সৎকর্মের নির্দেশ দেয় এবং প্রতিটি অসৎকর্মে নিষেধ করে; নামায কায়েম রাখে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ্ ও (তার) রসূলের নির্দেশ মান্য করে। তারা ওই সব লোক, যাদের উপর আল্লাহ্ সমসা দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
আল্লাহ্ মুসলমান নর ও মুসলমান নারীদেরকে জান্নাতসমূহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যেগুলোর নিম্নদেশে নহরসমূহ প্রবহমান, যে গুলোর মধ্যে তারা স্থায়ী হবে; এবং বসবাস করার বাগানসমূহের মধ্যে পবিত্র স্থানগুলোর; এবং আল্লাহ্র সন্তুষ্টি সবচেয়ে বড়। এটাই হচ্ছে মহা সাফল্যলাভ।
হে অদৃশ্যের সংবাদদাতা (নবী)! জিহাদ করুন কাফির ও মুনাফিক্বদের বিরুদ্ধে এবং তাদের প্রতি কঠোর হোন। আর তাদের ঠিকানা দোযখ এবং তা কতোই নিকৃষ্ট স্থান প্রত্যাবর্তনের!
আল্লাহ্র শপথ করে যে, তারা বলে নি; এবং নিশ্চয় নিশ্চয় তারা কুফরের কথা বলেছে আর ইসলামের মধ্যে এসে কাফির হয়ে গেছে এবং তারা তাই চেয়েছিলো, যা তারা পায় নি; আর তাদের নিকট কি মন্দ লেগেছে? এ কথাই নয় কি যে, আল্লাহ্ ও রসূল তাদেরকে নিজ কৃপায় অভাবমুক্ত করে দিয়েছেন? সুতরাং তারা যদি তাওবা করে, তবে তাদের জন্য ভাল হবে। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে আল্লাহ্ তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেবেন- দুনিয়া ও আখিরাতে এবং পৃথিবীতে না তাদের কোন অভিভাবক থাকবে, না সাহায্যকারী।
এবং তাদের মধ্যে কিছু এমন লোক রয়েছে, যারা আল্লাহ্র সাথে অঙ্গীকার করেছিলো, ‘যদি তিনি আমাদেরকে আপন কৃপা থেকে দান করেন, তবে আমরা নিশ্চয় সাদক্বাহ দেবো এবং অবশ্যই ভাল মানুষ হয়ে যাবো’।
অতঃপর এর পেছনে আল্লাহ্ তাদের অন্তরে মুনাফিক্বী স্থাপন করলেন ওই দিন পর্যন্ত, যেটার সাথে তাদের সাক্ষাৎ হবে, পরিণাম এটার যে, তারা আল্লাহ্র সাথে অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে এবং পরিণাম এরই যে, তারা মিথ্যা বলতো।
ওই সব লোক, যারা দোষারোপ করে ওই সব মুসলমানকে, যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাদ্ক্বাহ দেয় এবং তাদেরকেও যারা কিছুই পায় না, কিন্তু নিজ পরিশ্রম দ্বারা, অতঃপর তারা তাদেরকে বিদ্রূপ করে। আল্লাহ্ তাদের বিদ্রূপের শাস্তি প্রদান করবেন এবং তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।
আপনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন কিংবা না-ই করুন, যদি আপনি তাদের জন্য সত্তরবার ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তবুও আল্লাহ্ তাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেন না। এটা এজন্য যে, তারা আল্লাহ্ ও তার রসূলকে অস্বীকার করেছে এবং আল্লাহ্ ফাসিক্বদেরকে সৎপথ প্রদান করেন না।
যারা পশ্চাতে রয়ে গেলো তারা এ কথার উপর খুশী হলো যে, তারা রসূলের পশ্চাতে বসে আছে এবং তাদের নিকট একথা পছন্দ হলো না যে, তারা নিজ সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহ্র পথে জিহাদ করবে; এবং বললো, ‘এ গরমের মধ্যে (অভিযানে) বের হয়ো না’ আপনি বলুন, ‘জাহান্নামের আগুন সর্বাপেক্ষা বেশি গরম’। যে কোন প্রকারে তাদের বুঝে আসতো।
অতঃপর হে মাহবূব! যদি আল্লাহ্ আপনাকে তাদের মধ্য থেকে কোন দলের দিকে ফেরত নিয়ে যান এবং তারা আপনার নিকট জিহাদে বের হবার অনুমতি প্রার্থনা করে, তবে আপনি বলে দিন, ‘তোমরা কখনো আমার সাথে বের হবে না এবং কখনো আমার সঙ্গে কোন শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে না। তোমরা প্রথমবার বসে থাকাই পছন্দ করেছো। সুতরাং বসে থাকো তাদেরই সাথে, যারা পেছনে বসে থাকে’।
এবং তাদের মধ্যে কারো মৃতের উপর কখনো (জানাযার) নামায পড়বেন না এবং না তার কবরের পাশে দাড়াবেন। নিশ্চয় তারা আল্লাহ্ ও রসূলকে অস্বীকার করেছে এবং নির্দেশ অমান্য করার (ফাসিক্বী) মধ্যেই তারা মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে।
এবং তাদের সম্পদ ও সন্তান সন্ততির উপর আশ্চর্যবোধ করবেন না। আল্লাহ্ এটাই চান যে, তা দ্বারা তাদেরকে পৃথিবীতে শাস্তি দেবেন এবং কুফরের উপরই তাদের শেষ নিঃশ্বাস বের হয়ে যাক।
এবং যখন কোন সূরা অবতীর্ণ হয় এ মর্মে যে, আল্লাহ্র উপর ঈমান আনো এবং তার রসূলের সঙ্গী হয়ে জিহাদ করো, তখন তাদের মধ্যে সামর্থ্যবান লোকেরা আপনার নিকট অব্যাহতি চায় এবং বলে, ‘আমাদেরকে রেহাই দিন যাতে আমরা, যারা বসে থাকে তাদের সাথী হয়ে যাই’।
এবং অজুহাত রচনাকারী মরুবাসীরা আসলো যেন তাদেরকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং বসে রইলো ওই সব লোক,যারা আল্লাহ্ ও রসূলের সাথে মিথ্যা বলেছে; অতি সত্ত্বর তাদের মধ্যেকার কাফিরদের নিকট বেদনাদায়ক শাস্তি পৌছবে।
দুর্বলদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই, না পীড়িতদের বিরুদ্ধে এবং না তাদের বিরুদ্ধে, যাদের ব্যয় করার সামর্থ্য নেই যখন তারা আল্লাহ্ ও রসূলের শুভাকাঙ্ক্ষী থাকবে। সৎকর্মপরায়ণদের বিরুদ্ধে কোন পথ নেই; এবং আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, দয়ালু।
এএবং না তাদের উপর, যারা আপনার দরবারে উপস্থিত হয় যেন আপনি তাদেরকে বাহন দান করেন, আপনার নিকট এ জবাব পেয়েছে যে, ‘আমার নিকট কোন কিছু মওজুদ নেই, যার উপর তোমাদেরকে আরোহণ করাবো’। ফলে, তারা এভাবে ফিরে যায় যে, তাদের চোখসমূহ থেকে অশ্রু বিগলিত হতে থাকে এ দুঃখে যে, তারা অর্থ ব্যয়ের সামর্থ্য পায় নি।
অভিযোগ তো তাদেরই বিরুদ্ধে যারা আপনার নিকট অব্যাহতি প্রার্থনা করে; অথচ তারা ধনবান। তাদের পছন্দ হলো যে, স্ত্রীলোকদের সাথী হয়ে পেছনে বসে থাকবে; এবং আল্লাহ্ তাদের অন্তরের উপর মোহর করে দিয়েছেন। ফলে তারা কিছুই জানে না।
তোমাদের নিকট অজুহাত বানিয়ে পেশ করবে যখন তোমরা তাদের দিকে ফিরে যাবে। আপনি বলুন, ‘অজুহাত বানিয়ে পেশ করো না, আমরা তোমাদেরকে কখনো বিশ্বাস করবো না। আল্লাহ্ আমাদেরকে তোমাদের খবর জানিয়ে দিয়েছেন এবং এখন আল্লাহ্ ও রসূল তোমাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করবেন। অতঃপর তোমরা তারই দিকে প্রত্যাবর্তন করে যাবে, যিনি গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছু জানেন। তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দেবেন যা কিছু তোমরা করছিলে’।
এখন তারা তোমাদের সামনে আল্লাহ্র শপথ করবে, যখন তোমরা তাদের দিকে ফিরে যাবে এ কারণে যে, তোমরা তাদের চিন্তা ভবনায় থাকবে না। তবে হ্যাঁ, তোমরা তাদের চিন্তা-ভাবনা ছেড়ে দাও। তারা তো নিরেট অপবিত্র এবং তাদের ঠিকানা জাহান্নাম; ফলস্বরূপ সেটারই, যা তারা উপার্জন করতো।
তোমাদের সামনে শপথগুলো করছে যেন তোমরা তাদের প্রতি তুষ্ট হও; সুতরাং যদি তোমরা তাদের প্রতি তুষ্ট হয়ে যাও, তবে নিশ্চয় আল্লাহ্ তো ফাসিক্ব লোকদেরপ্রতি তুষ্ট হবেন না।
মরুবাসীগণ কুফর ও মুনাফিক্বীর মধ্যে কঠোরতর এবং এরই উপযোগী যে, আল্লাহ্ যে নির্দেশ আপন রসূলের উপর অবতীর্ণ করেন তা সম্পর্কে অজ্ঞ থাকবে এবং আল্লাহ্ জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময়।
এবং কিছু সংখ্যক মরুবাসী হচ্ছে তারাই, যারা যা কিছু আল্লাহ্র পথে ব্যয় করে তাকে অর্থদণ্ড বলে মনে করে আর তোমাদের উপর ভাগ্য-বিপর্যয় আসার প্রতীক্ষায় থাকে; তাদের উপরই রয়েছে মন্দ ভাগ্য চক্র; এবং আল্লাহ্ শ্রোতা জ্ঞাতা।
এবং কিছু সংখ্যক গ্রাম্য লোক হচ্ছে তারাই, যারা আল্লাহ্ ও ক্বিয়ামতের উপর ঈমান আখে এবং যা কিছু ব্যয় করে তাকে আল্লাহ্র নৈকট্যসমূহ এবং রসূলের নিকট দো’আসমূহ লাভ করার উপায় মনে করে । হ্যাঁ হ্যাঁ, তা তাদের জন্য (আল্লাহ্র) সান্নিধ্য লাভের উপায় । আল্লাহ্ অতি সত্ত্বর তাদেরকে নিজ রহমতের মধ্যে দাখিল করবেন । নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, দয়ালু।
এবং সবার মধ্যে অগ্রগামী প্রথম মুহাজির ও আনসার আর যারা সৎকর্মের সাথে তাদের অনুসারী হয়েছে, আল্লাহ্ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহ্র প্রতি সন্তুষ্ট; আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন বাগানসমূহ (জান্নাতসমূহ), যেগুলোর নিম্নদেশে নহরসমূহ প্রবহমান। তারা সদা সর্বদা সেগুলোর মধ্যে অবস্থান করবে। এটাই হচ্ছে মহা সাফল্য।
এবং তোমাদের আশপাশের কিছু সংখ্যক মরুবাসী মুনাফিক্ব আর কিছু সংখ্যক মদীনাবাস্বী; তাদের স্বভাবই হয়ে গেছে মুনাফিক্বী। আপনি তাদেরকে জানেন না, আমি তাদের জানি। অতি সত্বর আমি তাদেরকে দু’বার শাস্তি দেবো। অতঃপর মহাশাস্তির দিকে তারা প্রত্যাবর্তিত হবে।
এবং অপর কতেক লোক রয়েছে, যারা নিজেদের গুনাহসমূহ স্বীকার করেছে আর মিশ্রিত করেছে একটা কাজ ভালো এবং অপরটা মন্দ। এ কথা নিকটে যে, আল্লাহ্ তাদের তাওবা কবূল করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, দয়ালু।
হে মাহবূব! তাদের সম্পদ থেকে যাকাত সংগ্রহ করুন, যা দ্বারা আপনি তাদেরকে পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র করবেন এবং তাদের জন্য মঙ্গলের জন্য দো’আ করুন। নিশ্চয় আপনার দো’আ তাদের অন্তরসমূহের প্রশান্তি এবং আল্লাহ্ শ্রোতা জ্ঞাতা।
তাদের কি খবর নেই যে, আল্লাহ্ই তার বান্দাদের তাওবা কবূল করেন এবং সাদক্বাহসমূহ নিজেই স্বীয় ক্বুদরতের হাতে গ্রহণ করেন; আর এ’যে আল্লাহ্ তাওবা গ্রহণকারী, দয়ালু।
এবং আপনি বলুন, ‘কাজ করো। এখন তোমাদের কাজ দেখবেন আল্লাহ্ ও তার রসূল এবং মুসলমানগণ। আর অবিলম্বে তোমরা তারই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে, যিনি অদৃশ্য ও দৃশ্য সবই জানেন। অতঃপর তিনি তোমাদের কর্ম তোমাদেরকে জানিয়ে দেবেন।
এবং কিছু লোককে স্থগিত রাখা হয়েছে আল্লাহ্র নির্দেশের প্রতীক্ষায়- তিনি হয়তো তাদেরকে শাস্তি দেবেন অথবা তাদের তাওবা কবূল করবেন; এবং আল্লাহ্ জ্ঞানময়, প্রজ্ঞাময়।
এবং ওই সব লোক, যারা মসজিদ নির্মাণ করেছে ক্ষতি সাধনের জন্য, কুফরের কারণে এবং মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্য আর তারই প্রতীক্ষায়, যে ব্যক্তি পূর্ব থেকেই আল্লাহ্ ও তার রসূলের বিরোধী; এবং তারা অবশ্যই বহু শপথ করবে, ‘আমরা তো কল্যাণই চেয়েছি’। আর আল্লাহ্ (এ মর্মে) সাক্ষী যে, তারা নিঃসন্দেহে মিথ্যাবাদী।
ওই মসজিদের মধ্যে আপনি কখনো দাড়াবেন না। নিশ্চয় ওই মসজিদ, যার ভিত্তি প্রথম দিন থেকেই পরহেয্গারীর উপর রাখা হয়েছে, তা এরই উপযুক্ত যে, আপনি তাঁতে দাড়াবেন এবং সেটার মধ্যে এমন সব লোক রয়েছে, যারা খুব পবিত্র হতে চায় আর পবিত্র লোকেরা আল্লাহ্র নিকট প্রিয়।
তবে কি যে ব্যক্তি নিজ ঘরের ভিত্তি স্থাপন করেছে আল্লাহ্র ভয় ও তার সন্তুষ্টির উপর সে-ই উত্তম, না ওই ব্যক্তি, যে তার ঘরের ভিত্তি স্থাপন করেছে এক গভীর গর্তের কিনারায়, ফলে তা তাকে নিয়ে জাহান্নামের আগুনে ধ্বসে পড়েছে? এবং আল্লাহ্ যালিমদেরকে পথ প্রদান করেন না।
ওই ঘর যা তারা নির্মাণ করেছে, তা তাদের অন্তরে সমসময় সন্দেহের কারণ হয়ে থাকবে যে পর্যন্ত না তাদের অন্তর খণ্ড বিখণ্ড হয়ে যায়; এবং আল্লাহ্ জ্ঞানময়, প্রজ্ঞাময়।
নিশ্চয় আল্লাহ্ মুসলমানদের নিকট থেকে তাদের সম্পদ ও জীবন খরিদ করে নিয়েছেন এর বিনিময়ে যে, তাদের জন্য জান্নাত রয়েছে। তারা আল্লাহ্র পথে যুদ্ধ করবে অতঃপর তারা হত্যা করবে এবং নিহত হবে। তার বদান্যতার দায়িত্বে সত্য প্রতিশ্রুতি তাওরাত, ইন্জীল ও ক্বোরআনে; এবং আল্লাহ্র চেয়ে বেশি অঙ্গীকার পূরণকারী কে আছে? সুতরাং তোমরা আনন্দ উদ্যাপন করো নিজেদের ব্যবসার জন্য, যা তোমরা তার সাথে করেছো এবং এটাই মহা সাফল্য।
নবী ও মু’মিনদের জন্য সঙ্গত নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করবে যদিও হয় তারা আত্নীয় স্বজন যখন তাদের সামনে সুস্পষ্ট হলো যে, ওই সব লোক জাহান্নামী।
ইব্রাহীমের আপন পিতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা, তা’তো ছিলো না, কিন্তু একটা ওয়াদার কারণে, যা সে তার সাথে করেছিলো। অতঃপর যখন ইব্রাহীমের নিকট সুস্পষ্ট হলো যে, সে আল্লাহ্র শত্রু, তখন তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলো। নিশ্চয়, ইব্রাহীম অতি ক্রন্দনকারী, সহনশীল।
এবং আল্লাহ্র জন্য শোভা পায় না যে, তিনি কোন সম্প্রদায়কে হিদায়াত করে পথভ্রষ্ট করবেন যতক্ষণ পর্যন্ত তাদেরকে স্পষ্টভাবে বলে দেবেন না কোন বস্তু থেকে তাদেরকে বাচতে হবে। নিশ্চয়, আল্লাহ্ সবকিছু জানেন।
নিশ্চয় আল্লাহ্র রহমতগুলো ধাবিত হলো এ অদৃশ্যের সংবাদদাতা এবং ওই মুহাজিরগণ ও আনসারের প্রতি, যারা সংকটকালে তার সাথে ছিলো এর পরে যে, তাদের মধ্যে কিছু লোকের অন্তর ফিরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিলো; অতঃপর তাদের প্রতি রহমত সহকারে দৃষ্টিপাত করলেন। নিশ্চয় তিনি তাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ার্দ্র, দয়ালু।
এবং সেই তিন জনের প্রতি, যাদেরকে মওকূফ রাখা হয়েছিলো এ পর্যন্ত যে, যখন পৃথিবী এতো বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য তা সংকুচিত হয়ে গেলো এবং তাদের জীবন তাদের জন্য দুর্বিষহ হলো আর তাদের মনে এ বিশ্বাস বদ্ধমূল হলো যে, আল্লাহ্র নিকট থেকে অন্য কোথাও আশ্রয়স্থল নেই, কিন্তু (আছে) তারই নিকট। অতঃপর তাদের কবূল করেন যেন তারা তাওবাকারী হয়ে থাকে। নিশ্চয় আল্লাহ্ তাওবা কবুলকারী, দয়ালু।
মদীনাবাসী ও তাদের পার্শ্ববর্তী মরুবাসীদের জন্য সঙ্গত ছিলো না যে, আল্লাহ্র রসূল থেকে পেছনে বসে থাকবে এবং না এও যে, তার জীবনের চেয়ে নিজেদের জীবনকে প্রিয় মনে করবে। এটা এ জন্য যে, তাদেরকে যে পিপাসা অথবা কষ্ট কিংবা ক্ষুধা আল্লাহ্র পথে স্পর্শ করে এবং যেখানে তারা এমন স্থানে পা রাখে, যা কাফিরদের ক্রোধ উদ্রেক করে এবং যা কিছু কোন শত্রুর ক্ষতি করে এসব কিছুর পরিবর্তে তাদের জন্য সৎকর্ম লিপিবদ্ধ করা হয়; নিশ্চয়, আল্লাহ্ সৎকর্মপরায়ণদের শ্রমফল বিনষ্ট করেন না।
এবং তারা যা কিছু ব্যয় করে ছোট অথবা বড় এবং যে প্রণালী (প্রান্তর)-ই অতিক্রম করে, সবই তাদের অনুকূলে লিপিবদ্ধ করা হয় যাতে আল্লাহ্ তাদের সবচেয়ে ভালো কাজগুলোর পুরস্কার তাদেরকে প্রদান করেন।
এবং মুসলমানদের থেকে এটা তো হতেই পারে না যে, সবাই একসাথে বের হবে; সুতরাং কেন এমন হলো না যে, তাদের প্রত্যেক দল থেকে একটা দল বের হতো, যারা ধর্মের বুঝ (জ্ঞান) অর্জন করতো এবং ফিরে এসে নিজ সম্প্রদায়কে সতর্ক করতো; এ আশায় যে, তারা সতর্ক হবে।
হে ঈমানদারগণ! জিহাদ করো ওই সব কাফিরের সাথে, যারা তোমাদের নিকটবর্তী; এবং উচিত যেন তারা তোমাদের মধ্যে কঠোরতা পায়; আর জেনে রেখো যে, আল্লাহ্ পরহেয্গারদের সাথে আছেন।
এবং যখনই কোন সূরা অবতীর্ন হয়, তখন তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলতে থাকে, ‘তা তোমাদের মধ্যে কার ঈমানে উন্নতি দিয়েছে ? সুতরাং ওই সব লোক, যারা ঈমানদার তাদের ঈমানকে তা উন্নতি দিয়েছে এবং তারা খুশি উদ্যাপন করছে।
এবং যখনই কোন সূরা অবতীর্ণ হয়, তখন তারা একে অপরের দিকে তাকাতে থাকে, ‘কেউ তোমাদেরকে লক্ষ্য করছে না তো? অতঃপর ফিরে যায়। আল্লাহ্ তাদের অন্তর পাল্টিয়ে দিয়েছেন। কারণ, তারা বোধশক্তিহীন লোক।
নিশ্চয় তোমাদের নিকট তাশরীফ এনেছেন তোমাদের মধ্য থেকে ওই রসূল, যার নিকট তোমাদের কষ্টে পড়া কষ্টদায়ক, তোমাদের কল্যাণ অতিমাত্রায় কামনাকারী, মুসলমানদের উপর পূর্ণ দয়ার্দ্র, দয়ালু।
অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে আপনি বলে দিন, ‘আমার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট। তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত নেই। আমি তারই উপর ভরসা করেছি এবং তিনি মহান আরশের অধিপতি’।