তিনিই, যিনি আস্মানগুলো ও যমীনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশের উপর ‘ইস্তিওয়া’ (اِستوٰى) ফরমায়েছেন (সমাসীন হয়েছেন) যেমনই তাঁর জন্য শোভা পায়। তিনি জানেন যা যমীনের ভিতরে প্রবেশ করে এবং যা তা থেকে বহির্গত হয়; আর যা আস্মান থেকে অবতীর্ণ হয় এবং যা তাতে আরোহণ করে। আর তিনি তোমাদের সাথে আছেন তোমরা যেখানেই থাকো না কেন। এবং আল্লাহ্ তোমাদের কর্ম দেখছেন।
আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের উপর ঈমান আনো এবং তাঁর পথে তারই কিছু ব্যয় করো, যার মধ্যে তোমাদেরকে অন্যান্যদের স্থলাভিষিক্ত করেছেন। সুতরাং যেসব লোক তোমাদের মধ্য থেকে ঈমান এনেছে এবং তাঁর পথে ব্যয় করেছে, তাদের জন্য মহা প্রতিদান রয়েছে।
এবং তোমাদের কি হয়েছে যে, আল্লাহ্র উপর ঈমান আনছো না? অথচ এ রসূল তোমাদেরকে আহ্বান করছেন যে, ‘আপন রবের উপর ঈমান আনো! এবং নিশ্চয় তিনি তোমাদের নিকট থেকে পূর্বেই অঙ্গীকার নিয়েছেন। যদি তোমাদের নিশ্চিত বিশ্বাস থাকে।
তিনিই, যিনি আপন বান্দার উপর সুস্পষ্ট নিদর্শনাদি অবতীর্ণ করেন, যাতে তোমাদেরকে অন্ধকাররাশি থেকে আলোর দিকে নিয়ে যান। এবং নিশ্চয় নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের উপর দয়ার্দ্র, দয়ালু।
এবং তোমাদের কি হলো যে, আল্লাহ্র পথে ব্যয় করছো না? অথচ আস্মানগুলো ও যমীনের মধ্যে সবকিছুর ‘ওয়ারিস’ (মালিক) আল্লাহ্ই। তোমাদের মধ্যে সমান নয় ওই সব লোক, যারা মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় ও জিহাদ করেছে; তারা মর্যাদায় ওই সব লোক অপেক্ষা বড়, যারা বিজয়ের পর ব্যয় ও জিহাদ করেছে এবং তাদের সবার সাথে আল্লাহ্ জান্নাতের ওয়াদা করেছেন এবং আল্লাহ্ তোমাদের কৃত কর্মগুলো সম্পর্কে অবহিত আছেন।
যে দিন আপনি ঈমানদার পুরুষগণ ও ঈমানদার নারীদেরকে দেখবেন যে, তাদের আলো রয়েছে তাদের সম্মুখে ও তাদের ডানে, ছুটাছুটি করছে। তাদের উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছে, ‘আজ তোমাদের সর্বাপেক্ষা খুশির বার্তা হচ্ছে ওই সব জান্নাত, যেগুলোর পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহমান। তোমরা সেখানে স্থায়ীভাবে থাকো। এটাই হচ্ছে মহা সাফল্য।
যেদিন মুনাফিক্ব পুরুষ ও মুনাফিক্ব নারীরা মুসলমানদেরকে বলবে, ‘আমাদের দিকে একবার তাকাও! যাতে আমরা তোমাদের নূর থেকে কিছু অংশ নিই’। তাদেরকে বলা হবে, ‘তোমাদের পেছনের দিকে ফিরে যাও, সেখানে আলো অন্বেষণ করো’। তারা ফিরে যাবে। তখনই তাদের মধ্যখানে একটা প্রাচীর খাড়া করে দেওয়া হবে, যাতে একটি দরজা থাকবে এবং সেটা ভিতরের দিকে রহমত এবং সেটার বাইরের দিকে শাস্তি।
মুনাফিক্বগণ মুসলমানদেরকে ডেকে বলবে, ‘আমরা কি তোমাদের সাথে ছিলাম না?’ তারা বলবে, ‘কেন নয়! (হাঁ,) কিন্তু তোমরা তো নিজেদের আত্নাগুলোকে ফিতনার মধ্যে নিক্ষেপ করেছো এবং মুসলমানদের অনিষ্টের দিকে তাকিয়ে থাকতে এবং সন্দেহ করতে; আর মিথ্যা লিপ্সা তোমাদেরকে ধোকা দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ্র আদেশ এসে পড়েছে। এবং তোমাদেরকে আল্লাহ্র নির্দেশ সম্বন্ধে ওই বড় প্রতাঁরক প্রতারিত করে রেখেছে’।
‘সুতরাং আজ না তোমাদের নিকট থেকে মুক্তিপণ গ্রহণ করা হবে এবং না প্রকাশ্য কাফিরদের নিকট থেকে। তোমাদের ঠিকানা হচ্ছে আগুন। তা তোমাদের সাথী এবং কতই মন্দ পরিণতি!
ঈমানদারদের জন্য কি এখনো ওই সময় আসেনি যে, তাদের অন্তর ঝুকে পড়বে আল্লাহ্র স্মরণ ও ওই সত্যের জন্য, যা অবতীর্ণ হয়েছে? এবং তাদের মতো হয়ো না, যাদেরকে পূর্বে কিতাব দেওয়া হয়েছে, অতঃপর তাদের সময়সীমা দীর্ঘায়িত হয়েছে। সুতরাং তাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেছে এবং তাদের মধ্যে অনেকে ফাসিক্ব।
নিশ্চয় সাদক্বাহদাতা পুরুষ ও সাদকাহদাত্রী নারীগণ এবং তারাই, যারা আল্লাহ্কে উত্তম কর্জ দিয়েছে, তাদের জন্য দ্বিগুণ রয়েছে এবং তাদের জন্য সম্মানজনক প্রতিদান রয়েছে।
এবং তারাই, যারা আল্লাহ্ ও তাঁর সমস্ত রসূলের উপর ঈমান এনেছে তারাই হচ্ছে পূর্ণ সত্যবাদী এবং অন্যান্যদের উপর সাক্ষী আপন রবের নিকট। তাদের জন্য তাদের পুরস্কার এবং তাদের আলো রয়েছে। আর যারা কুফর করেছে এবং আমার আয়াতগুলোকে অস্বীকার করেছে তারা দোযখবাসী।
জেনে রাখো, দুনিয়ার যিন্দেগী তো নয়, কিন্তু খেলাধুলা, সাজসজ্জা, তোমাদের পরস্পরের মধ্যে গর্ব প্রদর্শন করা এবং সম্পদ ও সন্তান সন্ততিতে একে অপরের চেয়ে অধিক চাওয়া মাত্র; তা ওই বৃষ্টির ন্যায় যার উৎপন্ন শস্য কৃষকদেরকে চমৎকৃত করেছে, অতঃপর শুষ্ক হয়ে গেছে, ফলে তুমি সেটাকে হলদে বর্ণের দেখতে পেয়েছো, অতঃপর তা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে। আর আখিরাতে কঠিন শাস্তি রয়েছে এবং আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা ও তাঁর সন্তুষ্টি। এবং পার্থিব জীবন তো নয়, কিন্তু ধোকার সামগ্রী।
অগ্রবর্তী হয়ে চলো আপন রবের ক্ষমা এবং ওই জান্নাতের দিকে, যার প্রশস্ততা হচ্ছে যেমন আস্মান ও যমীনের (সম্মিলিত) বিস্তৃতি; প্রস্তুত রাখা হয়েছে তাদের জন্য, যারা আল্লাহ্ ও তাঁর সমস্ত রসূলের উপর ঈমান এনেছে। এটা আল্লাহ্র অনুগ্রহ যাকে চান দান করেন। এবং আল্লাহ্ মহা অনুগ্রহশীল।
পৌঁছে না কোন মুসীবত পৃথিবীতে এবং না তোমাদের নিজেদের প্রাণগুলোতে, কিন্তু তা একটা কিতাবের মধ্যে রয়েছে, এরই পূর্বে যে, সেটাকে আমি সৃষ্টি করি। নিশ্চয় এটা আল্লাহ্র জন্য সহজ;
এ জন্য যে, দুঃখ না করো সেটার উপর, যা হাতছাড়া হয় এবং খুশী না হও সেটার উপর, যা তোমাদেরকে প্রদান করেছেন। এবং আল্লাহ্ পছন্দ করেন না কোন দাম্ভিক, অহঙ্কারীকে;
ওই সমস্ত লোক, যারা নিজেরাই কার্পণ্য করে এবং অন্যান্যদেরকেও কার্পণ্য করতে বলে আর যারা মুখ ফিরিয়ে নেয়; তবে নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ই অভাবমুক্ত, সমস্ত প্রশংসায় প্রশংসিত।
নিশ্চয় আমি আপন রসূলগণকে প্রমাণাদি সহকারে প্রেরণ করেছি এবং তাদের সাথে কিতাব ও ন্যায় বিচারের পরিমাপযন্ত্র অবতীর্ণ করেছি, যাতে লোকেরা ন্যায় বিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আমি লোহা অবতীর্ণ করেছি, যাতে ভীষণ শক্তি ও মানবকুলের উপকারসমূহ রয়েছে। এবং এ জন্য যে, আল্লাহ্ দেখবেন তাকেই, যে না দেখে তাঁকে ও তাঁর রসূলগণকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমতাবান, পরাক্রমশালী।
এবং নিশ্চয় আমি নূহ ও ইব্রাহীমকে প্রেরণ করেছি এবং তাদের সন্তানদের মধ্যে নুবূয়ত ও কিতাব রেখেছি। সুতরাং তাদের মধ্যে কেউ সঠিক পথের উপর এসেছে এবং তাদের মধ্যে অনেকে ফাসিক্ব।
অতপর আমি তাদের পেছনে ও পথের উপর স্বীয় অন্যান্য রসূলকে প্রেরণ করেছি এবং তাদের পেছনে মরিয়ম-তনয় ঈসাকে প্রেরণ করেছি এবং তাকে ইন্জীল দান করেছি; আর তাঁর অনুসারীদের অন্তরে নম্রতা ও দয়া রেখেছি। এবং বৈরাগী হওয়া- এ বিষয়টা তো তারা ধর্মের মধ্যে নিজেদের নিকট থেকে আবিষ্কার করেছে, আমি তাদের উপর বিধিবদ্ধ করি না; হাঁ এ ‘নব আবিষ্কার’ ( ) তারা আল্লাহ্র সন্তুষ্টি চাওয়ার জন্য করেছিলো, অতঃপর সেটাও পালন করা কর্তব্য ছিলো। সুতরাং তাদের মধ্যে কার ঈমানদারদেকে আমি তাদের পুরস্কার দান করেছি। এবং তাদের মধ্যে অনেকেই ফাসিক্ব।
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ্কে ভয় করো এবং তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আনো। তিনি আপন করুণায় দু’টি অংশ তোমাদেরকে দান করবেন। এবং তোমাদের জন্য জ্যোতি সৃষ্টি করবেন যার মধ্যে তোমরা চলবে এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, দয়ালু;
এটা এ জন্য যে, কিতাবধারী কাফিরগণ জেনে নেবে যে, আল্লাহ্র অনুগ্রহের উপর তাদের কোন ক্ষমতা নেই এবং এও যে, অনুগ্রহ আল্লাহ্রই হাতে, দান করেন যাকে চান! এবং আল্লাহ্ বড় অনুগ্রহশীল।