মানুষের জন্য এটা কি আশ্চর্যের বিষয় হলো যে, আমি তাদের মধ্য থেকে একজন পুরুষকে ওহী প্রেরণ করেছি, ‘মানুষকে সতর্ক করুন এবং ঈমানদারগণকে সুসংবাদ দিন যে, তাদের জন্য তাদের রবের নিকট সত্যের মর্যাদা রয়েছে। কাফিরগণ বললো, ‘নিশ্চয় এ’তো এক সুস্পষ্ট যাদুকর’।
নিশ্চয় তোমাদের রব আল্লাহ্, যিনি আসমান ও যমীন ছয় দিনের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশের উপর ‘ইস্তিওয়া’ ফরমায়েছেন (সমাসীন হন, যেমনি তার মর্যাদার উপযোগী হয়,) কর্মের ব্যবস্থাপনা করেন। কোন সুপারিশকারী নেই, কিন্তু তারই অনুমতি লাভ করার পর। তিনিই হন আল্লাহ্, তোমাদের রব; সুতরাং তার ইবাদত করো। তবুও কি তোমরা ধ্যান দিচ্ছো না ?
তারই দিকে তোমাদের সবাইকে ফিরে যেতে হবে; আল্লাহ্র সত্য প্রতিশ্রুতি। নিশ্চয় তিনি প্রথমবার সৃষ্টি করেন, অতঃপর বিলীন হবার পর পুনরায় সৃষ্টি করবেন; এ জন্য যে, ওই সব লোককে, যারা ঈমান এনেছে এবং সৎ কাজ করেছে, ন্যায়ের সাথে পুরস্কার দেবেন; আর কাফিরদের জন্য রয়েছে পান করার নিমিত্ত অত্যুষ্ণ পানি এবং বেদনাদায়ক শাস্তি, পরিণাম স্বরূপ তাদের কুফরের।
তিনিই হন, যিনি সূর্যকে তেজষ্কর করেছেন এবং চাদকে জ্যোতির্ময়। আর সেটার জন্য ‘মানযিলগুলো’ নির্দেষ্ট করেছেন, যাতে তোমরা বছরগুলোর গণনা ও হিসাব জানতে পারো।আল্লাহ্ সেটা সৃষ্টি করেন নি, কিন্তু সত্য সহকারে। তিনি নিদর্শনগুলো বিশদভাবে বর্ণনা করেন জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য।
নিশ্চয় ওই সব লোক, যারা আমার সাক্ষাতের আশা রাখে না আর পার্থিব জীবনকে পছন্দ করে বসেছে এবং সেটাতেই নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে, আর ওই সব লোক, যারা আমার আয়াতগুলো থেকে বিমুখ রয়েছে;
তাঁতে তাদের প্রার্থনা এ-ই হবে, ‘হে আল্লাহ্! তোমারই পবিত্রতা’। এবং তাদের সাক্ষাতের সময় অভিবাদনের প্রথম কথা হবে ‘সালাম’; আর তাদের প্রার্থনার সমাপ্তি হবে এ-ই ‘সমস্ত প্রশংসাই আল্লাহ্র জন্য, যিনি সমগ্র বিশ্বজগের প্রতিপালক’।
এবং যদি আল্লাহ্ মানুষের উপর অমঙ্গল এমনই তাড়াতাড়ি প্রেরণ করতেন যেমন তারা তাদের কল্যাণকে ত্বরান্বিত করতে চায়, তবে তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়ে যেতো। সুতরাং আমি তাদেরকে ছেড়ে দিই যারা আমার সাথে সাক্ষাতের আশা রাখে না, যেন তারা তাদের অবাধ্যতার মধ্যে দিশেহারা হয়ে ঘুরপাক খেতে থাকে।
এবং যখন মানুষকে দুঃখ দৈন্য স্পর্শ করে তখন আমাকে ডাকে-শুয়ে, বসে এবং দাঁড়িয়ে। অতঃপর যখন আমি তার দুঃখ-দৈন্য দূরীভূত করে দিই তখন এমনিভাবে চলে যায় যেন কখনো কোন দুঃখ দৈন্য স্পর্শ করার কারণে আমাকে ডাকেই নি। এমনিভাবে সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে তাদের কৃতকর্ম সুশোভিত করে দেখানো হয়েছে।
এবং নিশ্চয় আমি তোমাদের পূর্বে বহু মানবগোষ্ঠীকে ধ্বংস করেছি যখন তারা সীমালঙ্গন করেছে আর তাদের রসূলগণ তাদের নিকট স্পষ্ট দলীলাদি নিয়ে এসেছেন; এবং তারা এমনই ছিলো না যে, ঈমান আনবে। আমি এভাবে প্রতিফল দিয়ে থাকি অপরাধীদেরকে।
এবং যখন তাদের নিকট আমার সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ পাঠ করা হয়, তখন যারা আমার সাথে সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না, তারা বলতে থাকে, ‘এটা ব্যতীত অন্য একটা ক্বোরআন নিয়ে আসুন অথবা সেটাকে বদলিয়ে ফেলুন’। আপনি বলুন, ‘আমার জন্য শোভা পায় না যে, আমি তা নিজ পক্ষ থেকে বদলিয়ে ফেলবো। আমি তো সেটারই অনুসারী, যা আমার প্রতি ওহী করা হয়; আমি যদি আপন রবের নির্দেশ অমান্য করি, তবে আমার নিকট মহা দিবসের আযাবের ভয় রয়েছে’।
আপনি বলুন, ‘যদি আল্লাহ্ চাইতেন, তবে আমি সেটা তোমাদের নিকট পাঠ করতাম না, না তিনি তোমাদেরকে এ বিষয়ে অবহিত করতেন। অতঃপর আমি এর পূর্বে তোমাদের মধ্যে স্বীয় একটা আয়ুষ্কাল অতিবাহিত করেছি; সুতরাং তোমাদের কি বিবেক নেই’?
এবং আল্লাহ্ ব্যতীত এমন বস্তুর পূজা করে, যা তাদের না কোন ক্ষতি করে, না উপকার। আর বলে, ‘এগুলো হচ্ছে-আল্লাহ্র নিকট আমাদের সুপারিশকারী’। আপনি বলুন, ‘তোমরা কি আল্লাহ্কে ওই কথা বলছো, যা তার জ্ঞানে না আসমানসমূহে আছে, না যমীনের মধ্যে’? তিনি পবিত্র এবং ঊর্ধ্বে তাদের শির্ক থেকে।
এবং মানুষ একই জাতি (উম্মত) ছিলো। অতঃপর পরস্পর ভিন্ন হয়েছে; আর যদি আপনার নিকট থেকে একটা কথার ফয়সালা না হয়ে থাকতো, তবে এখানেই তাদের মতভেদসমূহের মীমাংসা তাদের মধ্যে হয়ে যেতো।
এবং তার বলে, ‘তার উপর তারই রবের নিকট থেকে কোন নিদর্শন কেন অবতীর্ণ হয় নি’? আপনি বলুন, ‘অদৃশ্য তো আল্লাহ্র জন্য, এখন তোমরা প্রতীক্ষা করো। আমিও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষা করছি’।
এবং যখন আমি মানুষকে অনুগ্রহের আস্বাদ দিই কোন দুঃখ-দৈন্যের পর, যা তাদেরকে স্পর্শ করেছিলো, তখনই তারা আমার নিদর্শনগুলোর সাথে প্রতারণা করে, আপনি বলুন, ‘আল্লাহ্র গোপন ব্যবস্থাপনা সবচেয়ে বেশী তাড়াতাড়ি (কার্যকর) হয়ে যায়।’ নিশ্চয় আমার ফিরিশ্তাগণ তোমাদের প্রতারণা লিপিবদ্ধ করছে।
তিনিই হন, যিনি তোমাদেরকে স্থলে ও জলে ভ্রমণ করান; এমনকি তোমরা যখন জাহাজে আরোহী হও এবং সেগুলো অনুকূল বাতাসে তাদেরকে নিয়ে চলতে থাকে আর তারা তাঁতে আনন্দিত হলো, তখন সেগুলোর উপর ঝড়ের ঝাপটা এলো এবং চতুর্দিক থেকে তরঙ্গ এসে তাদেরকে ঘিরে ফেললো আর তারা একথা বুঝতে পারলো যে, ‘তারা অবরুদ্ধ হয়ে গেছে;’ তখন তারা আল্লাহ্কে ডাকে একান্ত তারই নিষ্ঠাবান বান্দা হয়ে (এ বলে), ‘যদি তুমি আমাদেরকে এটা থেকে রক্ষা করো, তবে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞ হবো’।
অতঃপর যখন আল্লাহ্ তাদেরকে পরিত্রাণ দেন, তখনই তারা পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে সীমাতিক্রম করতে থাকে। হে মানবকূল! তোমাদের সীমাতিক্রম করা তোমাদের নিজেদেরই ক্ষতি। পার্থিব জীবনে সুখ ভোগ করে নাও! অতঃপর তোমাদেরকে আমার দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দেবো যা তোমাদের কৃতকর্ম ছিলো।
পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত তো এমনই, যেমন ওই পানি, যা আমি আসমান থেকে বর্ষণ করেছি, যা দ্বারা ভূমিজ উদ্ভিদসমূহ-সবই ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদগত হলো, যা কিছু মানুষ ও গবাদি পশু আহার করে; শেষ পর্যন্ত যখন ভূমি তার শোভা ধারণ করলো এবং অতীব সজ্জিত হলো, আর সেটার মালিকগণ মনে করলো যে, ‘এগুলো তাদের আয়ত্বে এসে গেছে;তখন আমার নির্দেশ সেটার প্রতি এসে পড়লো রাতে অথবা দিনে, অতঃপর আমি সেটকে এমনভাবে নির্মূল করে দিয়েছি, যেন তা গতকাল ছিলোই না। আমি এভাবেই নিদর্শনাবলী বিশদভাবে বর্ণনা করি চিন্তাশীলদের জন্য।
সৎকর্মপরায়ণদের জন্য মঙ্গল রয়েছে এবং তদপেক্ষাও বেশী আর তাদের মুখমণ্ডলকে না কালিমা আচ্ছন্ন করবে না লাঞ্ছনা; তারাই জান্নাতের অধিবাসী, তারা তাঁতে স্থায়ীভাবে থাকবে।
এবং যারা মন্দ অর্জন করেছে, সুতরাং মদের প্রতিফল অনুরূপই; আর তাদেরকে লাঞ্ছনা ছেয়ে বসবে, তাদেরকে আল্লাহ্র শাস্তি হতে রক্ষা করার কেউ হবে না; যেন তাদের চেহারাগুলোকে অন্ধকার রাতের টুকরাগুলো দ্বারা আচ্ছাদিত করা হয়েছে; তারাই দোযখবাসী, তারা তাঁতে সর্বদা থাকবে।
এবং যেদিন আমি তাদের সবাইকে উঠাবো, অতঃপর মুশরিকদেরকে বলবো, ‘নিজ নিজ স্থানে অবস্থান করো তোমরা ও তোমাদের শরীকগণ; সুতরাং আমি তাদেরকে মুসলমানদের থেকে পৃথক করে দেবো এবং তাদের শরীকগণ তাদেরকে বলবে, ‘তোমরা আমাদেরকে কখন পূজা করছিলে?
এখানে প্রত্যেক ব্যক্তি যাচাই করে নেবে যে সে পুর্বে প্রেরণ করেছে এবং (তাদেরকে) আল্লাহ্রই প্রতিফিরিয়ে আনা হবে, যিনি তাদের প্রকৃত অভিভাবক। আর তাদের সমস্ত মনগড়া কথাবার্তা তাদের নিকট থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
আপনি বলুন, ‘তোমাদেরকে কে জীবিকা দেন আসমান ও যমীন থেকে, অথবা কে মালিক কান ও চোখগুলোর এবং কে নির্গত করেন জীবিতকে মৃত থেকে, আর বের করেন মৃতকে জীবিত থেকে এবং কে সমস্ত কাজের ব্যবস্থাপনা করেন?’ তারা এখন বলবে, ‘আল্লাহ্’। সুতরাং আপনি বলুন, ‘তবে কেন ভয় করছো না?’
আপনি বলুন, ‘তোমাদের শরীকদের মধ্যে কি কেউ এমনও আছে, যে প্রথমবার সৃষ্টি করেন, অতঃপর ধ্বংস হবার পর পুনর্বার সৃষ্টি করবেন । সুতরাং কোথায় উল্টো পথের দিকে ফিরে যাচ্ছো’?
আপনি বলুন, ‘তোমাদের শরীকদের মধ্যে কি কেউ এমনও আছে যে সত্যের পথ দেখাবে?’ আপনি বলুন, ‘আল্লাহ্ সত্যের পথ দেখান। সুতরাং যিনি সত্যের পথ দেখাবেন, তার নির্দেশ অনুযায়ী চলা উচিত, না তারই, যে নিজেই পথ পায় না যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে পথ দেখানো হয় না? সুতরাং তোমাদের কী হয়েছে? কীরূপ সিদ্ধান্ত দিচ্ছো?’
এবং এ ক্বোরআনের ক্ষেত্রে একথা শোভা পায় না যে, সেটাকে কেউ নিজ পক্ষ থেকে রচনা করে নেবে, আল্লাহ্র অবতারণ করা ব্যতীত; হ্যাঁ, সেটা পূর্ববর্তী কিতাবগুলোর সত্যায়ন এবং লওহ এর মধ্যে যা কিছু লেখা আছে সব কিছুরই বিশদ ব্যাখ্যা; সেটাতে কোন সন্দেহ নেই (সেটা) বিশ্বপ্রতিপালকের পক্ষ থেকে।
তারা কি একথা বলে, ‘তিনি ওটা রচনা করছেন? আপনি বলুন, ‘সুতরাং সেটার মতো একটা সূরা নিয়ে এসো এবং আল্লাহ্কে ছেড়ে যাদেরকে পাওয়া যায় সবাইকে ডেকে নিয়ে এসো যদি তোমরা সত্যবাদী হও’।
বরং সেটাকেই মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে যার জ্ঞান তারা আয়ত্ব করতে পারে নি এবং এখনো তারা সেটার পরিণাম দেখে নি। এভাবেই তাদের পূর্ববর্তীগণ অস্বীকার করেছিলো; সুতরাং দেখো যালিমদের কেমন পরিণাম হয়েছে!
এবং যদি তারা আপনাকে অস্বীকার করে, তবে আপনি বলে দিন, ‘আমার জন্য আমার কর্ম এবং তোমাদের জন্য তোমাদের কর্ম। আমার কর্মের সাথে তোমাদের সম্পর্কে নেই আর তোমাদের কর্মের সাথে আমার সম্পর্ক নেই’।
এবং যেদিন তাদেরকে উঠাবেন, (সেদিন তাদের মন হবে) যেন তারা পৃথিবীতে ছিলোই না; কিন্তু (ছিলো মাত্র) এ দিনের একটা মুহূর্তকাল; তারা পরস্পরের মধ্যে পরিচয় করবে, সম্পূর্ণ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে ওই সব লোক, যারা আল্লাহ্র সাথে সাক্ষাৎ করাকে অস্বীকার করেছে এবং তারা হিদায়তের উপর ছিলো না।
এবং যদি (হে হাবীব!) আমি আপনাকে দেখিয়ে দিই কিছু তা থেকেই, যা তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি অথবা আপনাকে প্রথমেই নিজের নিকট ডেকে নিই, যে কোন অবস্থাতেই তাদেরকে আমার দিকে ফিরে আসতে হবে। অতঃপর আল্লাহ্ সাক্ষী তাদের কার্যাদির উপর।
এবং প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে একজন রসূল হয়েছেন; যখন তাদের রসূল তাদের নিকট আসতেন, তখনই তাদের উপর ন্যায়ভাবে মীমাংসা করে দেওয়া হতো এবং তাদের উপর যুল্ম হতো না।
আপনি বলুন, ‘আমি নিজের ভাল-মন্দের (সত্তাগতভাবে) ক্ষমতা রাখি না, কিন্তু যা আল্লাহ্ ইচ্ছা করেন। প্রত্যেক দলে একটা প্রতিশ্রুতি রয়েছে; যখন তাদের প্রতিশ্রুতি আসবে তখন একটা মুহূর্ত না পেছনে হটবে, না সামনে বাড়বে।
এবং যদি প্রত্যেক অত্যাচারী সত্তা পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছুর মালিক হতো, তবে অবশ্যই সে নিজ সত্তাকে মুক্ত করার জন্য (তা) দিয়ে দিতো এবং অন্তরে চুপে চুপে লজ্জিত হবে যখন শাস্তি দেখবে; আর তাদের মধ্যে ন্যায়ভাবে মীমাংসা করে দেওয়া হবে; এবং তাদের উপর যুল্ম হবে না।
শুনে নাও! ‘নিশ্চয় আল্লাহ্রই, যা কিছু আসমানসমূহের মধ্যে রয়েছে এবং যমীনে’। শুনে নাও! নিশ্চয় আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি সত্য; কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকের নিকট খবর নেই’।
আপনি বলুন, ‘হ্যাঁ, বলোতো, যা আল্লাহ্ তোমাদের জন্য রিয্ক্ব অবতারণ করেছেন, তাঁতে তোমরা নিজেদের পক্ষ থেকে হারাম ও হালাল স্থির করে নিয়েছো?’ আপনি বলুন, ‘আল্লাহ্ কি তোমাদেরকে সেটার অনুমতি দিয়েছেন, না তোমরা আল্লাহ্র প্রতি মিথ্যা রচনা করছো’?
এবং যারা আল্লাহ্ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে, ক্বিয়ামতে তাদের কী অবস্থা হবে সে সম্পর্কে তাদের কী ধারণা? নিশ্চয় আল্লাহ্ মানুষের উপর অনুগ্রহ করেন; কিন্তু তাদের অধিকাংশই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।
এবং আপনি যে কোন কর্মে রত হোন ও তার পক্ষ থেকে কিছু ক্বোরআন পাঠ করুন এবং তোমরা যে কোন কাজ করো, আমি তোমাদের উপর সাক্ষী থাকি, যখন তোমরা সেটা আরম্ভ করো। আর আপনার রবের নিকট থেকে কোন অণু-পরিমাণ বস্তুও অগোচর নয়-পৃথিবীতে, না আসমানের মধ্যে; এবং না তদপেক্ষা বৃহত্তর, কোন বস্তুই নেই, যা এক সুস্পষ্ট কিতাবের মধ্যে নেই।
শুনে নাও! নিশ্চয় আল্লাহ্রই মালিকানাধীন যা কিছু আসমানগুলোতে রয়েছে এবং যা কিছু যমীনের মধ্যে; এবং কিসের পেছনে যাচ্ছে ওই সব লোক, যারা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাউকে শরীকরূপে ডাকছে? তারা তো অনুসরণ করছে না, কিন্তু অনুমানের এবং তারা তো নয়, কিন্তু শুধু কল্পনার ঘোড়া দৌড়াচ্ছে।
তিনিই হন যিনি তোমাদের জন্য রাত সৃষ্টি করেছেন, যাতে সেটার মধ্যে তোমরা শান্তি পাও এবং দিন সৃষ্টি করেছেন তোমাদের চোখ খুলতে; নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাদি রয়েছে শ্রবণকারীদের জন্য।
(তারা) বললো, ‘আল্লাহ্ নিজের জন্য সন্তান গ্রহন করেছেন; পবিত্রতা তারই। তিনিই অভাবমুক্ত। তারই, যা কিছু আসমানসমূহে রয়েছে এবং যা কিছু যমীনে (রয়েছে)।তোমাদের নিকট সেটার কোন সনদ নেই। তোমরা কি আল্লাহ্ সম্বন্ধে ওই কথা রচনা করছো যে বিষয়ে তোমাদের জ্ঞান নেই?
দুনিয়ার মধ্যে কিছু সুখ সম্ভোগ করাই। অতঃপর আমার দিকেই তাদেরকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। অতঃপর আমি তাদেরকে কঠোর শাস্তির আস্বাদ গ্রহণ করাবো তাদের কুফরের প্রতিফল স্বরূপ।
এবং তাদেরকে নূহের বৃত্তান্ত পাঠ করে শুনান; যখন সে আপন সম্প্রদায়কে বলেছে,‘হে আমার সম্প্রদায়! যদি তোমাদের নিকট দুর্বিষহ হয় আমার দণ্ডায়মান হওয়া এবং আল্লাহ্র নিদর্শনসমূহ স্মরণ করিয়ে দেওয়া, তবে আমি আল্লাহ্রই উপর নির্ভর করেছি। সুতরাং তোমরা সম্মিলিত হয়ে কাজ করো এবং নিজেদের মিথ্যা উপাস্যগুলো সহকারে তোমাদের কাজ পাকাপাকি করে নাও। পরে যেন তোমাদের কাজের মধ্যে তোমাদের কোন সংশয় না থাকে। অতঃপর (তোমাদের পক্ষে) যা সম্ভবপর হয় আমার সম্বন্ধে করে নাও! এবং আমাকে অবকাশ দিও না।
অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে আমি তোমাদের নিকট কোন পারিশ্রমিক চাই না। আমার পারিশ্রমিক তো নেই কিন্তু আল্লাহ্র নিকটই; আর আমার প্রতি নির্দেশ রয়েছে যেন আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত থাকি’।
অতঃপর তার তাকে অস্বীকার করেছে।এরপর আমি তাকে ও যারা তার সাথে কিশ্তীতে ছিলো তাদেরকে উদ্ধার করেছি এবং আমি তাদেরকে স্থলাভিষিক্ত করেছি। আর যারা আমার নিদর্শনগুলোকে অস্বীকার করেছেন তাদেরকে আমি নিমজ্জিত করেছি। সুতরাং দেখো! যাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে তাদের পরিণাম কী হলো?
অতঃপর তারা তাকে অস্বীকার করেছে।এরপর আমি তাকে ও যারা তার সাথে কিশ্তীতে ছিলো তাদেরকে উদ্ধার করেছি এবং আমি তাদেরকে স্থলাভিষিক্ত করেছি। আর যারা আমার নিদর্শনগুলোকে অস্বীকার করেছেন তাদেরকে আমি নিমজ্জিত করেছি। সুতরাং দেখো! যাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে তাদের পরিণাম কী হলো?
অতঃপর তাদের পরে আমি মূসা ও হারূনকে ফির’আউন ও তার পরিষদবর্গের প্রতি আমার নিদর্শনাদি সহকারে প্রেরণ করেছি। এরপর তারা অহঙ্কার করেছে এবং তারা অপরাধী লোক ছিলো।
(তারা) বললো, ‘তুমি কি আমাদের নিকট এজন্য এসেছো যে, আমাদেরকে তা থেকে ফিরিয়ে দেবে, যার উপর আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে পেয়েছি এবং পৃথিবীতে তোমরা দু’জনেরই প্রভাব প্রতিপত্তি থাকবে? আর আমরা তোমাদের উপর ঈমান আনয়নকারী নই’।
অতঃপর যখন তারা নিক্ষেপ করলো, তখন মূসা বললো, ‘তোমরা এই যা যা এনেছো, তা যাদু। এখন আল্লাহ্ তা অসার করে দেবেন। আল্লাহ্ ফ্যাসাদসৃষ্টিকারীদের কর্ম সার্থক করেন না।
অতঃপর মূসার উপর ঈমান আনে নি কিন্তু (এনেছে) তার সম্প্রদায়ের বংশধরের কিছু সংখ্যক লোক, ফির’আউন ও তার পরিষদবর্গকে এ ভয় করে যে, কখনো তাদেরকে বিচ্যুত হবার উপর বাধ্য করবে কিনা এবং নিশ্চয় ফির’আউন যমীনের উপর অহঙ্কারী ছিলো আর নিশ্চয় সে সীমা অতিক্রম করেছে।
এবং আমি মূসা ও তার ভাইয়ের প্রতি ওহী প্রেরণ করেছি ‘মিশরে আপন সম্প্রদায় এর জন্য গৃহসমূহ নির্মাণ করো ও নিজেদের ঘরগুলোকে নামাযের স্থান করো এবং নামায কায়েম রাখো; আর মুসলমানদেরকে সুসংবাদ শুনাও।
এবং মূসা আরয করলো, ‘হে আমাদের রব! তুমি ফিরআ’উন ও তার রাজন্যবর্গকে শোভা ও সম্পদ পার্থিব জীবনে দান করেছো। হে আমাদের রব! এ জন্য যে, তারা তোমার পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। হে আমাদের রব! তাদের সম্পদ বিনষ্ট করে দাও এবং তাদের হৃদয় কঠোর করে দাও যেন ঈমান না আনে যতক্ষণ পর্যন্ত বেদনাদায়ক শাস্তি না দেখে।
এবং আমি বনী ইস্রাঈলকে সমুদ্রের তীরে নিয়ে গিয়েছি। অতঃপর ফির’আউন ও তার সৈন্যবাহিনী তাদের পিছু ধাওয়া করেছে অবাধ্যতা ও যুল্মবশতঃ। শেষ পর্যন্ত যখন তাকে নিমজ্জন পেয়ে বসলো, তখন বললো ‘আমি ঈমান এনেছি (এ মর্মে) যে, কোন সত্য উপাস্য নেই তিনি ব্যতীত, যার উপর বনী ইস্রাঈল ঈমান এনেছে এবং আমি মুসলমান’।
এবং নিশ্চয় আমি বনী ইস্রাঈলকে সম্মানের স্থান দিয়েছি আর তাদেরকে পবিত্র জীবিকা দান করেছি; অতঃপর (তারা) বিভেদের মধ্যে পড়েনি কিন্তু জ্ঞান আসার পর; নিঃসন্দেহে আপনার রব ক্বিয়ামতের দিনে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেবেন যে বিষয়ে তারা ঝগড়া করতো।
এবং হে শ্রোতা! যদি তোমার কোন সন্দেহ থাকে তাঁতে, যা আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, তবে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করে দেখো, যারা তোমার পূর্বে কিতাব পাঠকারী রয়েছে; নিশ্চয়, তোমার কাছে তোমার রবের নিকট থেকে সত্য এসেছে। সুতরাং তুমি কখনো সন্দেহপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।
তবে এমন কোন জনপদ নেই (যারা আমার আযাব দেখে) ঈমান এনেছে অতঃপর সেই ঈমান তাদের কাজে এসেছে, কিন্তু একমাত্র ইয়ূনুসের সম্প্রদায়। যখন (তারা) ঈমান আনলো, তখন আমি তাদের থেকে লাঞ্ছনার শাস্তি পার্থিব জীবনে অপসারিত করে দিয়েছি এবং একটা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত তাদেরকে ভোগ করতে দিয়েছি।
অতঃপর তাদের কিসের প্রতীক্ষা রয়েছে? কিন্তু ওই সব লোকেরই দিনগুলোর মতো, যারা তাদের পূর্বে চলে গেছে। আপনি বলুন, ‘সুতরাং তোমরা প্রতীক্ষা করো, আমিও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষায় রয়েছি’।
আপনি বলুন, ‘হে মানবকুল, যদি তোমরা আমার দ্বীনের নিকট দিয়ে কোন সংশয়ের মধ্যে থাকো, তবে আমি তো ওইগুলোর ইবাদত করবো না, আল্লাহ্ ব্যতীত যেগুলোর তোমরা পূজা করছো। হ্যাঁ (আমি) ওই আল্লাহ্র ইবাদত করি, যিনি তোমাদের প্রাণ বের করবেন; আর আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন আমি ঈমানদারদের অন্তর্ভুক্ত হই’।
‘এবং আল্লাহ্ যদি তোমাকে কোন দুঃখ-কষ্ট দেন, তবে তিনি ব্যতীত সেটা মোচনকারী কেউ নেই। আর যদি তোমার মঙ্গল চান, তবে তার অনুগ্রহকে প্রতিহত করার কেউ নেই। তাকেই প্রদান করেন আপন বান্দাদের মধ্যে যাকে চান। এবং তিনিই ক্ষমাশীল, দয়ালু’।
আপনি বলুন, ‘হে লোকেরা! তোমাদের নিকট তোমাদের রবের নিকট থেকে সত্য এসেছে। সুতরাং যে সরল পথে এসেছে সে স্বীয় মঙ্গলের জন্যই সৎপথে এসেছে; আর যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে নিজের অমঙ্গলের জন্যই পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং আমি তোমাদের কর্মবিধায়ক নই’।