আলিফ লা----ম রা-। এই একটি কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি মানুষকে অন্ধকাররাশি থেকে আলোর মধ্যে নিয়ে আসেন তাদের রবের নির্দেশক্রমে- তাঁরই পথের দিকে, যিনি মহা সম্মানিত, সমস্ত প্রশংসার অধিকারী;
এবং আমি প্রত্যেক রসূলকে তাঁর স্বজাতির ভাষাভাষী করে প্রেরণ করেছি যেন সে তাদেরকে পরিষ্কারভাবে বলে দেয়; অতঃপর আল্লাহ্ পথভ্রষ্ট করেন যাকে চান এবং তিনি সৎপথ দেখান যাকে চান এবং তিনিই সম্মানিত, প্রজ্ঞাময়।
এবং নিশ্চয় আমি মূসাকে আমার নিদর্শনাদি সহকারে প্রেরণ করেছি, ‘আপন সম্প্রদায়কে অন্ধকাররাশি থেকে আলোতে নিয়ে এসো এবং তাদেরকে আল্লাহ্র দিনসমূহ স্মরণ করিয়ে দাও!’ নিশ্চয় সেটার মধ্যে নিদর্শনাদি রয়েছে প্রত্যেক বড় ধৈর্যশীল, কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য।
এবং যখন মূসা আপন সম্প্রদায়কে বললো, ‘স্মরণ করো তোমাদের উপর আল্লাহ্র অনুগ্রহকে, যখন তিনি তোমাদেরকে ফির’আউনী সম্প্রদায়ের কবল থেকে মুক্তি দিয়েছেন, যারা তোমাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তি দিতো এবং তোমাদের পুত্রদের যবেহ করতো তোমাদের কন্যাদের জীবিত রাখতো; এবং এ’তে তোমাদের রবের মহা অনুগ্রহ হয়েছে।
তোমাদের নিকট কি ওই সব লোকের সংবাদগুলো আসে নি, যারা তোমাদের পূর্বে ছিলো নূহের সম্প্রদায়, ‘আদ ও সামূদ সম্প্রদায় এবং যারা তাদের পরবর্তীতে হয়েছে? তাদেরকে আল্লাহ্ই জানেন। তাদের নিকট তাদের রসূল স্পষ্ট নিদর্শনাদি নিয়ে এসেছেন অতঃপর তারা আপন হাতগুলো আপন মুখের দিকেই নিয়ে গেলো; আর বললো ‘আমরা অস্বীকারকারী হই সেটার, যা কিছু তোমাদের হাতে প্রেরণ করা হয়েছে এবং যে পথের দিকে আমাদেরকে আহ্বান করছো, তাঁতে আমাদের মনে এই সন্দেহ্ রয়েছে যে, তা বক্তব্যকে স্পষ্ট হতে দেয় না।
তাদের রসূলগণ বললো, ‘আল্লাহ্ সম্বন্ধে কি কোন সন্দেহ আছে? আসমান ও যমীনের স্রষ্টা। তোমাদেরকে আহ্বান করেন যেন তোমাদের কিছু পাপ মার্জনা করেন এবং মৃত্যুর নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তোমাদের জীবন শাস্তিবিহীন অবস্থায় অতিবাহিত করান’। তারা বললো, ‘তোমরা তো আমাদের মতোই মানুষ। তোমরা তো চাচ্ছো আমাদেরকে তা থেকে বিরত রাখতে, যার আমাদের পিতৃপুরুষগণ পূজা করতো। এখন আমাদের নিকট কোন সুস্পষ্ট সনদ নিয়ে এসো’।
তাদের রসূলগণ তাদেরকে বললো, ‘আমরা হই তো তোমাদের মতো মানুষ, কিন্তু আল্লাহ্ আপন বান্দাদের মধ্যে যারই প্রতি চান অনুগ্রহ করেন। আর আমাদের কাজ নয় যে, আমরা তোমাদের নিকট কোন সনদ নিয়ে আসবো, কিন্তু আল্লাহ্রই নির্দেশক্রমে। এবং আল্লাহ্রই উপর মুসলমানদের নির্ভর করা উচিত।
এবং আমাদের কী হয়েছে যে, আল্লাহ্র উপর নির্ভর করবো না? তিনি তো আমাদের পথগুলো আমাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছেন এবং তোমরা আমাদেরকে যেই কষ্ট দিচ্ছো, আমরা অবশ্যই সেটার উপর ধৈর্যধারণ করবো। এবং আল্লাহ্রই উপর নির্ভরকারীদের নির্ভর করা উচিত।
এবং কাফিরগণ তাদের রসূলগণকে বললো, ‘আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে আমাদের ভূমি থেকে বের করে দেবো। অথবা তোমরা আমাদের দ্বীনের প্রতি ফিরে এসো। অতঃপর তাদের প্রতি তাদের রব ওহী প্রেরণ করেছেন, ‘আমি অবশ্যই যালিমদেরকে বিনাশ করবো’।
এবং নিশ্চয় আমি তাদের পর তোমাদেরকে পৃথিবীতে বসবাস করাবো। এটা তাঁরই জন্য, যে আমার সম্মুখে দাড়ানোর ভয় রাখে এবং আমি যে শাস্তির নির্দেশ শুনিয়েছি সেটারও ভয় রাখে’।
অতি কষ্টে তা থেকে অল্প অল্প করে গলাধঃকরণ করবে এবং গলার নীচে অবতাঁরণ করানোর আশায় থাকবে না এবং তাঁর নিকট চতুর্দিক থেকে মৃত্যু আসবে আর সে মরবে না; এবং তাঁর পেছনে কঠিন শাস্তি।
আপন রবকে অস্বীকারকারীদের অবস্থা এমন যে, তাদের কর্মসমূহ হচ্ছে, ভস্ম সদৃশ, যার উপর দিয়ে বাতাসের প্রচণ্ড ঝাপটা এলো ঝড়ের দিনে। সমস্ত উপার্জন থেকে কিছুই হাতে এলো না; এটাই হচ্ছে দূরের পথভ্রষ্টতা।
তুমি কি লক্ষ্য করো নি যে, আল্লাহ্ আসমান ও যমীনকে সত্য সহকারে সৃষ্টি করেছেন? যদি তিনি ইচ্ছা করেন তবে তোমাদেরকে নিয়ে যাবেন; আর একটি নতুন সৃষ্টিকে নিয়ে আসবেন।
এবং সবই আল্লাহ্র নিকট প্রকাশ্যভাবে উপস্থিত হবে; তখন যারা দুর্বল ছিলো (তারা) অহঙ্কারীদেরকে বলবে, ‘আমরা তোমাদের অনুসারী ছিলাম, সুতরাং তোমাদের দ্বারা কি এটা সম্ভব হবে যে, আল্লাহ্র শাস্তি থেকে কিছু আমাদের থেকে সরিয়ে নেবে?’ (তারা) বলবে, ‘আল্লাহ্ আমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করলে আমরা তোমাদেরকেও করতাম। আমাদের জন্য একই কথা-চাই অস্থির হই কিংবা ধৈর্যশীল হয়ে থাকি; আমাদের কোথাও আশ্রয় নেই’।
এবং শয়তান বলবে যখন মীমাংসা হয়ে যাবে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদেরকে সত্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং আমি তোমাদেরকে যেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তা তোমাদের সাথে রক্ষা করিনি এবং তোমাদের উপর আমার কোন আধিপত্য ছিলো না, কিন্তু এতটুকুই যে, আমি তোমাদেরকে আহ্বান করেছিলাম, তোমরা আমার আহ্বানে সাড়া দিয়েছো। সুতরাং তোমরা আমাকে দোষারোপ করো না, তোমরা নিজেদেরকে দোষারোপ করো। না আমি তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারবো, না তোমরা আমাকে সাহায্য করতে পারবে। ওই যে তোমরা পূর্বে আমাকে শরীক স্থির করেছিলে, আমি তাঁতে অত্যন্ত অসন্তুষ্ট’। নিশ্চয় যালিমদের জন্য বেদনাদায়ক শাস্তি রয়েছে।
এবং ওই সব লোক, যারা ঈমান এনেছে এবং সৎ কাজ করেছে তাদেরকে বাগানসমূহে প্রবেশ করানো হবে, যেগুলোর পাদদেশে নহরসমূহ প্রবহমান; সর্বদা সেগুলোর মধ্যে অবস্থান করবে আপন রবের নির্দেশে। সেখানে তাদের সাক্ষাতের সময়কার অভিবাদন হবে ‘সালাম’।
আমার ওই সব বান্দাকে বলুন, যারা ঈমান এনেছে, যেন তারা নামায কায়েম রাখে এবং আমার প্রদত্ত সম্পদ থেকে কিছু আমার পথে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে ওই দিন আসার পূর্বে, যেদিন না সওদাগরী হবে, না বন্ধুত্ব।
আল্লাহ্ তিনিই, যিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, এবং আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেছেন; অতঃপর তা দ্বারা কিছু ফলমূল তোমাদের জীবিকার জন্য উৎপাদন করেছেন; এবং তোমাদের জন্য নৌযানকে তোমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন করে দিয়েছেন, যাতে তাঁর নির্দেশে সমুদ্রে বিচরণ করে; এবং তোমাদের জন্য নদীগুলোকে নিয়ন্ত্রাণাধীন করেছেন;
এবং তোমাদেরকে অনেক কিছু মৌখিক প্রার্থনার উপর প্রদান করেছেন এবং যদি আল্লাহ্র অনুগ্রহগুলো গণনা করো, তবে সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। নিশ্চয়, মানুষ বড় যালিম, বড়ই অকৃতজ্ঞ।
হে আমার রব! নিশ্চয়, প্রতিমাগুলো বহু লোককে পথভ্রষ্ট করেছে; সুতরাং যে আমার সঙ্গ অবলম্বন করেছে সে তো আমার; এবং যে আমার কথা অমান্য করেছে, তবে নিশ্চয় তুমি ক্ষমাশীল, দয়ালু।
হে আমার রব! আমি আমার কিছু বংশধরকে এমন এক উপত্যকায় বসবাস করালাম, যা’তে ক্ষেত হয় না- তোমার সম্মানিত ঘরের নিকট; হে আমাদের রব! এ জন্য যে, তারা নামায ক্বায়েম রাখবে। অতঃপর তুমি কিছু লোকের হৃদয়কে তাদের দিকে অনুরাগী করে দাও এবং তাদেরকে কিছু ফলমূল খেতে দাও, হয়তো তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে।
এবং কখনো আল্লাহ্কে অনবহিত মনে করো না যালিমদের কার্যকলাপ সম্পর্কে। তাদেরকে অবকাশ দিচ্ছেন না, কিন্তু এমন দিনের জন্য, যে দিন চোখগুলো বিস্ফারিত (স্থির) হয়ে থাকবে;
এবং মানুষকে ওই দিন সম্পর্কে সতর্ক করুন। যখন তাদের উপর শাস্তি আসবে তখন যালিমগণ বলবে, ‘হে আমাদের রব! কিছুকালের জন্য আমাদেরকে অবকাশ দাও যেন আমরা তোমার আহ্বানে সাড়া দিই এবং রসূলগণের গোলামী করি’। তবে কি তোমরা পূর্বে শপথ করে বলতে না,‘আমাদেরকে দুনিয়া থেকে কোথাও সরে যেতে হবে না?’
এবং তোমরা তাদের ঘরগুলোতে বসবাস করতে, যারা নিজেদের অনিষ্ট করেছিলো এবং তোমাদের নিকট খুব স্পষ্ট হয়েছে- আমি তাদের সাথে কেমন করেছি এবং আমি তোমাদেরকে দৃষ্টান্তসমূহ দিয়েই বলে দিয়েছি।
এবং নিশ্চয় তারা নিজেদের সাধ্যমত চক্রান্ত করেছে আর তাদের চক্রান্ত আল্লাহ্র আয়ত্বাধীন রয়েছে; এবং তাদের চক্রান্ত কিছুটা এমন ছিলো না যে, তাতে পর্বতমালা টলে যেতো।
এটা মানুষের নিকট নির্দেশ পৌছানো এবং এজন্য যে, এটা দ্বারা তাদেরকে সতর্ক করা হবে এবং এ জন্য যে, তারা এ কথা জেনে নেবে যে, তিনি একমাত্র উপাস্য হন; এবং এজন্য যে, বোধশক্তিসম্পন্নরা উপদেশ মান্য করবে।