তিনিই, যার জন্য আসমানসমূহ ও যমীনের বাদশাহী এবং তিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেন নি এবং তার সাম্রাজ্যের মধ্যে কোন অংশীদার নেই, তিনি প্রত্যেক বস্তু সৃষ্টি করে সঠীক পরিমাণে রেখেছেন।
এবং লোকেরা তিনি ব্যতীত অন্যান্য খোদা স্থির করে নিয়েছে, যারা কিছু সৃষ্টি করে না এবং নিজেরাই সৃষ্ট হয়েছে আর নিজেরাই নিজেদের প্রাণের উপকার-অপকারের মালিক নয় এবং না মৃত্যুবরণ করার ক্ষমতা রাখে, না বেচের থাকার এবং না উঠার।
এবং কাফিরগণ বললো, ‘এ’তো নয়, কিন্তু এক মিথ্যাপবাদ, যা তারা রচনা করে নিয়েছেন এবং এ ব্যাপারে অন্যান্য লোকেরা তাকে সাহায্য করেছে। নিঃসন্দেহে তারা যুল্ম ও মিথ্যায় উপনীত হয়েছে।
অথবা অদৃশ্য থেকে কোন ধন ভাণ্ডার তিনি প্রাপ্ত হতেন কিংবা তার কোন বাগান থাকতো, যা থেকে আহার করতেন?’ এবং যালিমগণ বললো, ‘তোমরা তো অনুসরণ করছো না, কিন্তু একজন এমন ব্যক্তির যার উপর যাদু করা হয়েছে’।
মহা মঙ্গলময় তিনিই, যদি তিনি চান তবে আপনার জন্য তদপেক্ষা বহু উৎকৃষ্ট করে দিতে পারেন জান্নাতসমূহকে, যেগুলোর পাদদেশে নহরসমূহ প্রবহমান এবং আপনার জন্য উচু উচু প্রাসাদ করতে পারেন।
আর যেদিন একত্র করবেন তাদেরকে এবং তারা আল্লাহ্ ব্যতীত যাদের পূজা করতো তাদেরকে, অতঃপর উক্ত সব উপাস্যকে বলবেন, ‘তোমরাই কি পথভ্রষ্ট করেছিলে আমার এ বান্দাদেরকে, না এরা নিজেরাই পথ ভুলে গিয়েছে’?
তারা আরয করবে, ‘পবিত্রতা তোমরাই! আমাদের জন্য শোভা পেতো না তোমাকে ব্যতীত অন্য কাউকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করা ; কিন্তু তুমি তাদেরকে ও তাদের পিতৃপুরুষদেরকে ভোগ বিলাসের সুযোগ দিয়েছো, শেষ পর্যন্ত তারা তোমার স্মরণ ভুলে গেছে; এবং এসব ছিলোই ধ্বংসশীল।
অতঃপর এখন উপাস্যগুলো তোমাদের উক্তিকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। সুতরাং এখন তোমরা না শাস্তি প্রতিরোধ করতে পারো, না নিজেদের সাহায্য করতে পারো এবং তোমাদের মধ্যে যে যালিম তাকে আমি মহাশাস্তির আস্বাদ করাবো।
এবং আমি আপনার পূর্বে যতো রসূল প্রেরণ করেছিসবাই তো এমনই ছিলো-আহার করতো, হাট-বাজারে চলাফেরা করতো এবং আমি তোমাদের মধ্যে এককে অপরের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ করেছি। আর হে মানবকূল! তোমরা কি ধৈর্য ধারণ করবে? এবং হে মাহবূব! আপনার রব দেখছেন।
এবং তারা বললো, যারা আমার সাক্ষাতের আশা রাখে না, ‘আমাদের প্রতি ফিরিশ্তা কেন অবতারণ করা হলো না? অথবা আমরা স্বয়ং আমাদের রবকে দেখতাম!’ নিশ্চয় তারা আপন অন্তরে বড়ই অহঙ্কার করেছে এবং গুরুতর অবাধ্যতায় এসেছে।
এবং যা কিছু তারা কাজ করেছিলো। আমি ইচ্ছা করে সেগুলোকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধূলিকণার বিক্ষিপ্ত অণু-পরমাণু করে দিয়েছি, যা ভেন্টিলেটরের মধ্য দিয়ে পতিত আলোকরশ্মিতে দৃষ্টিগোচর হয়।
এবং কাফিরগণ বললো, ‘ক্বোরআন তার উপর একবারে কেন অবতারণ করা হলো না?’ আমি এভাবেই ক্রমশ? সেটা অবতীর্ণ করেছি এ জন্য যে, তা’দ্বারা আপনার হৃদয়কে মজবুত করবো এবং আমি সেটাকে থেমে থেমে পাঠ করেছি।
এবং নূহের সম্প্রদায়কে, যখন তারা রসূলগণকে অস্বীকার করেছে, আমি তাদেরকে নিমজ্জিত করেছি এবং তাদেরকে মানবজাতির জন্য নিদর্শন করেছি আর আমি যালিমদের জন্য বেদনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।
এবং নিশ্চয় এরা অতিক্রম করে এসেছে ওই জনপদকে যার উপর অকল্যানের বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছিলো, তবে কি তারা সেটা দেখতো না? বরং তাদের মধ্যে জীবিত হয়ে ওঠার আশাই ছিলো না।
এরই উপক্রম ছিলো যে, আমাদেরকে তিনি আমাদের উপাস্যগুলো থেকে দূরে সরিয়ে দিতেন, যদি আমরা সেগুলোর উপর অটল না থাকতাম; এবং তারা এখন জানতে চায় যেদিন শাস্তি দেখবে, কে পথভ্রষ্ট ছিলো!
হে মাহবূব! আপনি কি আপন রবকে দেখেন নি, তিনি কীভাবে সম্প্রসারিত করেছেন ছায়াকে? এবং তিনি যদি ইচ্ছা করতেন, তবে সেটাকে স্থির করে দিতেন; অতঃপর আমি সূর্যকে সেটার উপর দলীল করেছি;
এবং তিনিই হন, যিনি দু’টি সমুদ্রকে মিলিতভাবে প্রবাহিত করেছেন- এটা মিষ্ট, অতি মধুর এবং এটা লোনা, অতি তিক্ত; এবং উভয়ের মধ্যখানে এক অন্তরায় রেখেছেন আর এক বাধা-প্রদানের অন্তরাল।
এএবং আপনি নির্ভর করুন ওই চিরজীবী সত্তার উপর, যিনি কখনো মৃত্যুবরণ করবেন না এবং তার প্রশংসা করতে করতে তার পবিত্রতা ঘোষণা করুন আর তিনিই যথেষ্ট, আপন বান্দাদের পাপসমূহ সম্পর্কে অবহিত;
যিনি আসমান ও যমীন এবং যা কিছু ছয়ে দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর আরশের উপর ‘ইস্তিওয়া’ করেছেন (সমাসীন হন) যেভাবে তার জন্য শোভা পায়; তিনি বড়ই দয়াবান; সুতরাং তিনি অবগতজনকে তার প্রশংসা জিজ্ঞাসা করো।
এবং যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘রাহমানকে সাজদা করো’। তখন তারা বলে,‘রাহমান কি? আমরা কি সাজদা করে নেবো যাকে আপনি সাজদা করতে বলেন? এবং এ নির্দেশ তাদের বিমুখতাকে আরো বৃদ্ধি করেছে।
এবং ওই সব লোক, যারা আল্লাহ্র সাথে অন্য কোন উপাস্যের পূজা করে না এবং ওই প্রাণকে, যার রক্তপাত আল্লাহ্ হারাম করে দিয়েছেন, অন্যায়ভাবে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না; আর যে এ কাজ করবে সে শাস্তি পাবে।
কিন্তু যে ব্যক্তি তাওবা করবে এবং ঈমান আনবে আর সৎকাজ করবে তবে এমন লোকদের মন্দকাজগুলোকে আল্লাহ্ সৎকর্মসমূহে পরিবর্তিত করে দেবেন; এবং আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, দয়ালু।
এবং যারা আরয করে, ‘হে আমাদের রব! আমাদেরকে দান করো- আমাদের স্ত্রীগণ এবং আমাদের সন্তান-সন্ততি থেকে চক্ষুসমূহের শান্তি এবং আমাদেরকে পরহেয্গারদের আদর্শ করুন!
তারা জান্নাতের সর্বাপেক্ষা উচ্চ প্রাসাদ পুরস্কারস্বরূপ লাভ করবে তাদের ধৈর্যের প্রতিদান স্বরূপ এবং সেখানে অভিবাদন ও সালাম সহকারে তাদের অভ্যর্থনা করা হবে।
আপনি বলুন, ‘তোমাদের কোন মর্যাদা নেই আমার রবের নিকট যদি তোমরা তার ইবাদত না করো; অতঃপর তোমরা তো অস্বীকার করেছিলে সুতরাং এখন হবে ওই শাস্তি যা জড়িয়ে থাকবে’।