হে মাহবূব, একটা কিতাব আপনার প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে, যেন আপনার মনে এটা সম্পর্কে কোন সংকোচ না থাকে; এ জন্য যে আপনি তা দ্বারা সতর্ক করবেন এবং তা মুসলমানদের জন্য উপদেশ।
হে লোকেরা, সেটার উপরই চলো, যা তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের নিকট থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেটাকে ছেড়ে দিয়ে অন্য হুকুমদাতাদের অনুসরণ করো না। তোমরা কম খুবই বুঝে থাকো।
এবং যাদের পাল্লা হাল্কা হবে, তারাই হচ্ছে ওই সব লোক, যারা নিজেদের সত্তাকে ক্ষতির মধ্যে ফেলেছে ওই সব সীমালঙ্ঘনের পরিণাম স্বরূপ যা আমার আয়াতসমূহের মধ্যে করতো।
এবং নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর তোমাদের নমূনা তৈরী করেছি, তাঁরপর আমি ফিরিশতাদেরকে বলেছি, ‘আদমকে সাজদা করো’।তখন তাদের সকলেই সাজদারত হলো, কিন্তু ইবলীস; সে সাজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হলো না।
(তিনি) বললেন, “কোন বস্তু তোমাকে নিবৃত্ত করলো যে, তুমি সাজ্দা করলে না, যখন আমি তোমাকে নির্দেশ দিয়েছিলাম?’ (সে) বললো, ‘আমি তাঁর চেয়ে শ্রেষ্ঠ, আপনি আমাকে আগুন হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন’।
এবং হে আদম! তুমি এবং তোমার সঙ্গিনী জান্নাতে বসবাস করো। অতঃপর তা থেকে যেখানে ইচ্ছা আহার করো এবং এ বৃক্ষের নিকটে যেও না! গেলে সীমা অতিক্রমকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
অতঃপর শয়তান তাদের মনে এ আশঙ্কার সঞ্চার করলো যাতে তাদের সম্মুখে অনাবৃত করে দেয় তাদের লজ্জার বস্তুগুলো, যা তাদের থেকে গোপন ছিলো এবং বললো, ‘তোমাদেরকে তোমাদের রব এ বৃক্ষ থেকে এ জন্যই নিষেধ করেছেন যে, তোমরা উভয়ে ফিরিশ্তা হয়ে যাবে অথবা চিরজীবী (হয়ে যাবে);
অতঃপর সে তাদেরকে প্রতাঁরণার মাধ্যমে নামিয়ে আনলো, তাঁরপর যখন তারা ওই বৃক্ষ ফলের আস্বাদ গ্রহণ করলো, তখন তাদের সম্মুখে তাদের লজ্জার বস্তুগুলো প্রকাশ হয়ে পড়লো এবং নিজেদের শরীরকে জান্নাতের পাতা দ্বারা আবৃত করতে লাগলো; আর তাদেরকে তাদের রব বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে ওই বৃক্ষ থেকে নিষেধ করি নি?’ আর একথাও কি বলি নি যে, ‘শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্র?’
তারা উভয়ে আরয করলো, ‘হে আমাদের রব! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি’। সুতরাং যদি তুমি আমাদেরকে ক্ষমা না করো এবং আমাদের প্রতি দয়া না করো, তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবো’।
হে আদম সন্তানগণ! নিশ্চয় আমি তোমাদের প্রতি এক পোশাক এমনই অবতাঁরণ করেছি, যা দ্বারা তোমাদের লজ্জার বস্তুগুলো গোপন করবে এবং একটি এমনও যে, তোমাদের শোভা হবে; এবং তাক্বওয়ার পোশাক- সেটাই সর্বোকৃষ্ট। এটা আল্লাহ্র নিদর্শনগুলোর অন্যতম; যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।
হে আদম সন্তানগণ; সাবধান! তোমাদেরকে শয়তান যেন ফিত্নার মধ্যে না ফেলে যেভাবে তোমাদের মাতা-পিতাকে বেহেশ্ত থেকে বের করেছে, নামিয়ে ফেলেছে তাদের পোশাক, যাতে তাদের লজ্জার বস্তুগুলোর প্রতি তাদের দৃষ্টি পড়ে। নিশ্চয় সে নিজে এবং তাঁর দল তোমাদেরকে সেখান থেকে দেখতে পায়; যেখানে তোমরা তাদেরকে দেখতে পাও না; নিশ্চয় আমি শয়তানদেরকে তাদেরই বন্ধু করেছি যারা ঈমান আনে না।
এবং যখন তারা কোন অশ্লীল আচরণ করে, তখন বলে, আমরা এর উপর আমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে পেয়েছি এবং আল্লাহও আমাদেরকে এর নির্দেশ দিয়েছেন। আপনি বলুন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ্ অশ্লীল আচরণের নির্দেশ দেন না। তোমরা কি আল্লাহ্ সম্বন্ধে এমন কিছু বলছো, তোমাদের নিকট যার কোন খবর নেই’?
আপনি বলুন, ‘আমার রব ন্যায় বিচারের নির্দেশ দিয়েছেন; এবং নিজেদের চেহারা সোজা করো প্রত্যেক নামাযের সময় এবং তাঁর ঈবাদত করো শুধু তাঁরই বান্দা হয়ে; তিনি যেভাবে তোমাদেরকে প্রথমে সৃষ্টি করেছেন সেভাবেই তোমরা ফিরে আসবে’।
একদলকে তিনি সৎপথ প্রদর্শন করেছেন এবং এক দলের ভ্রান্তি প্রমাণিত হয়েছে। তারা আল্লাহ্কে ছেড়ে শয়তানদেরকে তাদের অভিভাবক করেছে আর তারা এটাই মনে করে যে, তারা সৎপথে রয়েছে।
হে আদম সন্তানগণ! স্বীয় সুন্দর পোশাক পরিধান করো যখন মসজিদে যাও এবং আহার করো ও পান করো আর সীমাতিক্রম করো না। নিঃসন্দেহে, সীমাতিক্রমকারীদের তিনি পছন্দ করেন না।
আপনি বলুন, ‘কে নিষিদ্ধ করেছে আল্লাহ্র সেই শোভার বস্তুকে যা তিনি আপন বান্দাদের জন্য বের করেছেন এবং পবিত্র জীবিকাকে’? আপনি বলুন, ‘সেগুলো দুনিয়ার মধ্যে ঈমানদারদের জন্য আর ক্বিয়ামতের দিনে বিশেষ করে তাদেরই জন্য’। আমি এভাবে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করি।
আপনি বলুন, আমার রব তো নিষিদ্ধ করেছেন- প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীল বিষয়গুলো আর পাপ ও অসংগত সীমালংঘন এবং কোনো কিছুকে আল্লাহ্র শরীক করা- যার কোন সনদ তিনি অবতীর্ণ করেন নি এবং আল্লাহ্ সম্বন্ধে এমন কিছু বলা, যে সম্পর্কে তোমরা জ্ঞান রাখো না।
হে আদম সন্তানগণ! যদি তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য থেকে কোন রসূল আসেন, আমার নিদর্শনসমূহ পাঠ করেন, তখন যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে এবং নিজেদের সংশোধন করে, তবে তাদের না আছে কোন ভয় এবং না কোন দুঃখ।
সুতরাং তাঁর চেয়ে বড় যালিম কে, যে আল্লাহ্ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করেছে, কিংবা তাঁর নিদর্শনগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে? তাদের নিকট তাদের ভাগ্যের লিখন পৌঁছবেই যতক্ষণ না তাদের নিকট আমার প্রেরিত ফিরিশ্তারা তাদের প্রাণ হননের জন্য আসবে; তখন তাদের উদ্দেশে বলবে, ‘কোথায় রয়েছে তারা, যাদের তোমরা আল্লাহ্ ব্যতীত পূজা করতে?’ তারা বলবে, ‘তারা আমাদের নিকট থেকে হারিয়ে গেছে’ এবং তারা নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে যে, তারা কাফির ছিলো।
আল্লাহ্ তাদেরকে বলবেন, ‘তোমাদের পূর্বে জিন্ ও মানুষের যেই অন্যান্য দল আগুনের মধ্যে প্রবেশ করেছে তাদের মধ্যে যাও! যখনই একটা দল প্রবেশ করবে, তখন অপর দলকে অভিসম্পাত করবে; অবশেষে, যখন সবাই ওটাতে গিয়ে পড়বে তখন তাদের পরবর্তীগণ পূর্ববর্তীগন সম্পর্কে বলবে, ‘হে আমাদের রব! এরাই আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিলো। সুতরাং তাদেরকে আগুনের দ্বিগুণ শাস্তি প্রদান করো’। (আল্লাহ্) বলবেন, ‘সবার জন্য দ্বিগুণ রয়েছে, কিন্তু তোমরা অবগত নও’।
ওই সব লোক, যারা আমার নিদর্শনগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে এবং সেগুলোর মোকাবেলায় অহঙ্কার করেছে, তাদের জন্য আসমানের দরজাগুলো খোলা হবে না এবং না তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে যতক্ষণ সূচের ছিদ্রপথে উট প্রবেশ করবে না আর অপরাধীদেরকে আমি এরূপে প্রতিফল দিয়ে থাকি।
এবং ওই সব লোক, যারা ঈমান এনেছে এবং সাধ্য মতো সৎকাজ করেছে, আমি কাউকেও তাঁর সাধ্যতীত ভার অর্পণ করি না। তারা জান্নাতবাসী, তারা সেটার মধ্যে স্থায়ীভাবে থাকবে।
এবং আমি তাদের বক্ষ থেকে হিংসা বিদ্বেষকে টেনে বের করে নিয়েছি; তাদের জন্য নিম্নদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত হবে এবং বলবে, ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্রই, যিনি আমাদেরকে এটার পথ দেখিয়েছেন; এবং আমরা পথ পেতাম না যদি আল্লাহ্ না দেখাতেন। নিঃসন্দেহে, আমাদের রবের রসূলগণ সত্য বাণী এনেছেন’। এবং ঘোষণা হলো, ‘এ জান্নাত তোমরা ‘উত্তরাধিকার’ (স্বরূপ) পেয়েছো তোমাদের কৃতকর্ম গুলোর প্রতিদান (হিসেবে)’।
এবং জান্নাতীবাসীগণ দোযখ বাসীদেরকে ডেকে বলবে, ‘যে সত্য প্রতিশ্রুতি আমাদেরকে আমাদের রব দিয়েছিলেন তা তো আমরা পেয়েছি। সুতরাং তোমরাও কি পেয়েছো যা তোমাদের প্রতিপালক সত্য প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দিয়েছিলেন?’ তারা বলবে, ‘হাঁ’ এবং মধ্যখানে ঘোষণাকারী ঘোষণা করে দিলো, ‘আল্লাহ্র লা’নত যালিমদের উপর;
এবং জান্নাত ও দোযখের মধ্যখানে একটা পর্দা আছে; এবং ‘আ’রাফ’ এ কিছু লোক থাকবে, যারা উভয় দললে তাদের চিহ্নগুলো দ্বারা চিনবে এবং তারা জান্নাতবাসীদেরকে সম্বোধন করে বলবে, ‘শাস্তি (বর্ষিত) হোক তোমাদের উপর’। এরা জান্নাতে প্রবেশ করে নি, অথচ সেটার আকাঙ্খা রাখে।
এবং আ’রাফবাসীগণ কিছু সংখ্যক লোককে, যাদেরকে তাদের চিহ্নসমূহ দ্বারা চিনবে, সম্বোধন করে বলবে, ‘তোমাদের কি কাজে আসলো তোমাদের দল এবং যে অহঙ্কার তোমরা করতে’?
এরা কি ওই সব লোক, যাদের সম্বন্ধে তোমরা শপথ করে বলতে, ‘আল্লাহ্ তাদের প্রতি তাঁর কোন দয়াই প্রদর্শন করবেন না?’ তাদেরকেই বলা হলো, ‘জান্নাতে প্রবেশ করো! তোমাদের না আছে কোন ভয়, না আছে কোন দুঃখ’।
এবং দোযখবাসীরা জান্নাতবাসীদেরকে সম্বোধন করে বলবে, ‘আমাদেরকে তোমাদের পানির কিছু ছিটে-ফোটা দাও, অথবা ওই খাদ্য থেকে, যা আল্লাহ্ তোমাদেরকে প্রদান করেছেন’। বলবে ‘নিশ্চয় আল্লাহ্ এ দু’টিকে কাফিরদের উপর হারাম করেছেন;
যারা তাদের দ্বীনকে ক্রীড়া কৌতুক বানিয়ে নিয়েছে এবং পার্থিব জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছে। সুতরাং আজ আমি তাদেরকে পরিত্যাগ করবো যেমনি তারা এ দিনের সাক্ষাতের ধারণা পরিত্যাগের করেছিলো এবং যেমনি আমার নিদর্শনগুলোকে অস্বীকার করছিলো।
তারা কিসের পথ দেখছে? কিন্তু সেটারই যে, এ কিতাবের বর্ণিত পরিনাম সম্মুখে আসবে। যেদিন ওটার বর্ণিত পরিণাম সংঘটিত হবে, সেদিন বলে উঠবে ওই সব লোক, যারা ওটার কথা পূর্বে ভুলে গিয়েছিলো, ‘নিশ্চয় আমাদের রবের রসূলগণ সত্য বাণী নিয়ে এসেছিলেন; সুতরাং আমাদের কি কোন সুপারিশকারী আছে, যারা আমাদের পক্ষে সুপারিশ করবে? অথবা আমাদেরকে কি পুনরায় ফিরে যেতে দেওয়া হবে, যেন আমরা পূর্বের কৃতকর্মের বিপরীত কাজ করি? নিঃসন্দেহে তারা নিজেদের প্রাণকে ক্ষতির মধ্যে নিক্ষেপ করেছে এবং তাদের নিকট হারিয়ে গেছে যা অপবাদ তারা রচনা করতো।
নিশ্চয় তোমাদের রব আল্লাহ্, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর আরশের উপরে ইস্তিওয়া ফরমান (‘সমাসীন’ হন), যেমনি তাঁর জন্য শোভা পায়; রাত দিনকে একটাকে অপরটা দ্বারা আচ্ছাদিত করেন, যাতে সেটার পেছনে দ্রুত সংলগ্ন হয়ে আসে এবং সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজি সৃষ্টি করেছেন, সবই তাঁর নির্দেশ মেনে চলতে বাধ্য। শুনো! তাঁরই হাতে রয়েছে সৃষ্টি করা এবং নির্দেশ দেওয়া। আল্লাহ্ বড়ই বরকতময়, যিনি রব সমগ্র সৃষ্টি জগতের।
এবং যমীনের মধ্যে ফ্যাসাদ ছড়িয়ো না তাঁতে শাস্তি প্রতিষ্ঠার পর এবং তাঁর নিকট দো’আ প্রার্থনা করো ভীত ও আশাবাদী হয়ে। নিশ্চয় আল্লাহ্র দয়া সৎকর্মপরায়ণদের নিকটবর্তী।
এবং তিনিই হন, যিনি বায়ুসমূহ প্রেরণ করেন তাঁর দয়ার প্রাক্কালে সুসংবাদ শুনানোর জন্য; শেষ পর্যন্ত, যখন সেগুলো ভারী বাদল বহন করে নিয়ে আসে তখন আমি সেটাকে কোন নির্জীব শহরের দিকে চালনা করি; অতঃপর তা থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করি, তাঁরপর তা দ্বারা বিভিন্ন প্রকারের ফল উৎপন্ন করি। অনুরূপভাবে, আমি মৃতদেরকে বের করবো; যাতে তোমরা উপদেশ মান্য করো।
এবং যা উৎকৃষ্ট জমি হয়, সেটার সবুজজাত (ফসল) আল্লাহ্র নির্দেশেই উৎপন্ন হয় এবং যা নিকৃষ্ট, সেটার মধ্যে উৎপন্ন হয় না, কিন্তু অল্প, অতিকষ্টের বিনিময়ে। আমি এরূপে বিভিন্নভাবে নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করি তাদের জন্য, যারা অকৃতজ্ঞ।
নিশ্চয় আমি নূহকে তাঁর সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরণ করেছি, অতঃপর সে বললো, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ্র ইবাদত করো, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন উপাস্য নেই। নিশ্চয় আমি তোমাদের উপর মহা দিনের শাস্তির আশঙ্কা করেছি’।
এবং তোমাদের কি এর উপর বিস্ময় হয়েছে যে, ‘তোমাদের নিকট তোমাদের রবের নিকট থেকে একটা উপদেশ এসেছে তোমাদের মধ্য থেকে এজন পুরুষের মাধ্যমে, যাতে তিনি তোমাদেরকে সতর্ক করেন এবং তোমরা ভয় করো আর যাতে তোমাদের উপর দয়া হয়?’
অতঃপর তারা তাকে অস্বীকার করেছে। তাঁরপর আমি তাকে ও যারা তাঁর সাথে কিশ্তীতে ছিলো তাদেরকে রক্ষা করেছি; এবং আহার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের নিমজ্জিত করেছি। নিশ্চয় তারা ছিলো এক অন্ধ সম্প্রদায়।
এবং ‘আদ’এর প্রতি তাদের ভ্রাতৃ সম্পর্ক থেকে হূদকে প্রেরণ করেছি। বললো, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ্র ইবাদত করো! তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন উপাস্য নেই। তবে, তোমাদের কি ভয় নেই?’
এবং তোমাদের কি এটার উপর বিস্ময় হয়েছে যে, তোমাদের কাছে তোমাদের রবের নিক থেকে একটা উপদেশ এসেছে তোমাদের মধ্য থেকে একজন পুরুষের মাধ্যমে এ জন্য যে, তোমাদেরকে সতর্ক করবে? এবং স্মরণ করো, যখন তিনি তোমাদেরকে স্থলাভিষিক্ত করেছেনে এবং তোমাদের গড়নের মধ্যে প্রশস্ততা বৃদ্ধি করেছেন। সুতরাং আল্লাহ্র নি’মাতগুলো স্মরন করো, যাতে তোমাদের মঙ্গল হয়’।
(তারা) বললো, ‘তুমি কি আমাদের নিকট এ উদ্দেশ্যে এসেছো যে, আমরা এক আল্লাহ্রই ইবাদত করবো এবং আমাদের পূর্বপুরুষগণ যাদের ইবাদত করতো তাদেরকে ছেড়ে দেবো? সুতরাং নিয়ে এসো (সেটা) যার প্রতিশ্রুতি আমাদেরকে দিচ্ছো, যদি তুমি সত্যবাদী হও’।
বললো, ‘নিশ্চয় তোমাদের উপর তোমাদের রবের শাস্তি এবং ক্রোধ পতিত হয়ে গেছে; তবে কি তোমরা আমার সাথে শুধু ওই সব নাম সম্বন্ধে বিতর্কে লিপ্ত হচ্ছো যেগুলো তোমরা এবং তোমাদের পিতৃপুরুষ রচনা করে রেখেছো, আল্লাহ্ সেগুলোর কোন সনদ অবতাঁরণ করেন নি? সুতরাং তোমরা প্রতীক্ষা করো, আমিও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষা করছি’।
অতঃপর আমি তাকে এবং তাঁর সঙ্গীদেরকে স্বীয় এক মহা দয়া পূর্বক উদ্ধার করেছি এবং যারা আমার নিদর্শনগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতো তাদেরকে নির্মূল করেছি আর তারা ঈমান আনয়নকারী ছিলো না।
এবং ‘সামূদ’ (সম্প্রদায়) এর প্রতি তাদের ভ্রাতৃ সম্পর্ক থেকে ‘সালিহ’-কে প্রেরণ করেছি। বললো, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহ্র ইবাদত করো, যিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন উপাস্য নেই। নিশ্চয়, তোমাদের কাছে তোমাদের রবের নিকট থেকে উজ্জ্বল নিদর্শন এসেছে, এটা ‘আল্লাহ্র উট্নী’, তোমাদের জন্য নিদর্শন। সুতরাং ওটাকে ছেড়ে দাও, যাতে আল্লাহ্র যমীনের মধ্যে চরে খায় এবং সেটার গায়ে মন্দভাবে হাত লাগাবে না, যার ফলে তোমাদের উপর বেদনাদায়ক শাস্তি আসবে’।
এবং স্মরণ করো, যখন তিনি তোমাদেরকে ‘আদ (সম্প্রদায়) এর স্থলাভিষিক্ত করেছেন এবং রাজ্যের মধ্যে স্থান দিয়েছেন-নরম জমিতে প্রাসাদ তৈরী করছো এবং পাহাড় কেটে বাসগৃহ নির্মাণ করছো। সুতরাং আল্লাহ্র অনুগ্রহগুলোকে স্মরণ করো; এবং পৃথিবীতে ফ্যাসাদকারী হয়ে বিচরণ করো না।
তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যে দাম্ভিকগণ দুর্বল মুসলমানদেরকে বললো, ‘তোমরা কি জানো যে, সালিহ তাঁর রবের রসূল? (তারা) বললো, ‘যা কিছু নিয়ে তাঁকে প্রেরণ করা হয়েছে আমরা তাঁর উপর ঈমান রাখি’।
অতঃপর তারা উট্নীর গোছগুলো কেটে ফেললো এবং আপন রবের নির্দেশের প্রতি অবাধ্যতা প্রদর্শন করলো আর বললো, ‘হে সালিহ! আমাদের উপর নিয়ে এসো যেটার তুমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছো যদি তুমি রসূল হও’।
অতঃপর সালিহ তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো এবং বললো, ‘হে আমার সম্প্রদায়, নিশ্চয় আমি তোমাদের নিকট আমার রবের ‘রিসালাত’ পৌঁছিয়ে দিয়েছি এবং তোমাদের মঙ্গল কামনা করেছি; কিন্তু তোমরা হিতাকাঙ্খীদের কল্যাণ পছন্দই করো না’।
এবং মাদ্য়ানবাসীদের প্রতি তাদের ভ্রাতৃ সম্পর্ক থেকে শো’আয়বকে প্রেরণ করেছি। বললো, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহ্র ইবাদত করো, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন উপাস্য নেই। নিশ্চয় তোমাদের কাছে তোমাদের রবের নিকট থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণ এসেছে। সুতরাং (তোমরা) মাপ ও ওজন পরিপূর্ণভাবে করো এবং লোকদের পণ্যসমূহ কম দিও না আর যমীনের মধ্যে শৃংখলা প্রতিষ্ঠার পর ফ্যাসাদ ছড়িয়ো না; এটা তোমাদের জন্য কল্যাণই, যদি ঈমান আনো’।
এবং প্রত্যেক পথের উপর এভাবে বসো না যে, পথিকদেরকে ভয় প্রদর্শন করবে, আল্লাহ্র পথে তাদেরকে বাধা দেবে যারা তাঁর উপর ঈমান এনেছে এবং সেটার মধ্যে বক্রতা অনুসন্ধান করবে। আর স্মরণ করো, যখন তোমরা সংখ্যায় কম ছিলে, আল্লাহ্ তখন তোমাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছেন; এবং দেখো, ফ্যাসাদকারীদের পরিণাম কীরূপ হয়েছে!
এবং যদি তোমাদের মধ্যে একটা দল সেটার উপর ঈমান আনে, যা নিয়ে আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে, আর একটা দল তা মানে নি, তবে ধৈর্যধারণ করে থাকো, যতক্ষণ না আল্লাহ্ আমাদের মধ্যে মীমাংসা করবেন এবং আল্লাহ্র মীমাংসা সবচেয়ে উত্তম।
তাঁর সম্প্রদায়ের দাম্ভিক প্রধানগণ বললো, ‘হে শো’আয়ব! শপথ ( এ কথার উপর) যে, আমরা তোমাকে এবং তোমার সাথী মুসলমানদেরকে আমাদের জনপদ থেকে বের করে দেবো অথবা তোমরা আমাদের ধর্মে এসে যাও’। বললো, ‘যদিও আমরা ঘৃণা করি তবুও কি?
অবশ্যই আমরা তো আল্লাহ্র প্রতি মিথ্যা আরোপ করবো যদি তোমাদের দ্বীনে এসে যাই এরপর যে, আল্লাহ্ আমাদেরকে তা থেকে রক্ষা করেছেন এবং আমাদের মধ্যে কারো কাজ নয় যে, তোমাদের ধর্মে আসবো, কিন্তু আল্লাহ্ চাইলে, যিনি আমাদের রব। আমাদের রবের জ্ঞান সব কিছুকে আয়ত্ব করে আছে। আমরা আল্লাহ্রই উপর নির্ভর করেছি। হে আমাদের রব! আমাদের এবং আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে ন্যায্য ফয়সালা করে দাও এবং তোমার ফয়সালাই সর্বাপেক্ষা উত্তম।
অতঃপর শো’আয়ব তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো এবং বললো, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের নিকট আমার রবের (প্রেরিত) বাণী পৌঁছিয়েছি এবং তোমাদের মঙ্গলের জন্য উপদেশ দিয়েছি; সুতরাং (আমি) কি করে সমবেদনা প্রকাশ করি কাফিরদের জন্য?’
এবং আমি কোন জনপদের মধ্যে কোন নবীকে প্রেরন করিনি, কিন্তু (করলে) সেটার অধিবাসীদেরকে অভাব-অনটন ও দুঃখ-কষ্টের মধ্যে লিপ্ত করেছি, যতে তারা কোন প্রকারে আহাজারি করে।
অতঃপর আমি অকল্যাণের স্থানকে কল্যাণে বদলে দিয়েছি; অবশেষে তারা প্রাচুর্যের অধিকারী হয়ে গেলো আর বললো, ‘নিশ্চয় আমাদের পূর্ব পুরুষদের নিকটও দুঃখ আর সুখ পৌঁছেছিলো’। অতঃপর আমি তাদেরকে আকস্মিকভাবে তাদের অজ্ঞাতসারে পাকড়াও করেছি।
এবং যদি জনপদগুলোর অধিবাসিগণ ঈমান আনতো আর ভয় করতো,তবে অবশ্যই আমি তাদের জন্য আসমান ও যমীন থেকে বরকতসমূহের দ্বার উন্মুক্ত করে দিতাম; কিন্তু তারা তো অস্বীকার করেছে। সুতরাং আমি তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের জন্য পাকড়াও করেছি।
এবং ওই সব লোক, যারা যমীনের মালিকদের পর সেটার উত্তরাধিকারী হয়েছে, তারা কি এতটুকুও হিদায়তও লাভ করে নি যে, আমি চাইলে তাদের নিকট তাদের পাপের দরুন বিপদ পৌঁছাই? এবং আমি তাদের অন্তরগুলোর উপর মোহর করে দিই, যাতে তারা কিছুই শুনতে না পায়।
এসব হচ্ছে কতগুলো জনপদ, যেগুলোর কিছু বৃতান্ত আমি আপনাকে শুনাচ্ছি;এবং নিশ্চয় তাদের নিকট তাদের রসুল স্পষ্ট প্রমাণসমূহ নিয়ে এসেছেন। অতঃপর তারা এর উপযোগী হয় নি যে, তারা সেটার উপর ঈমান আনবে যাকে প্রথমে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিলো। আল্লাহ্ এভাবে কাফিরদের হৃদয়গুলোর উপর মোহর করে দেন।
অতঃপর আমি মূসাকে তাদের পর আমার নিদর্শনসমূহ সহকারে ফির’আউন ও তাঁর রাজন্যবর্গের প্রতি প্রেরণ করেছি; অতঃপর তারা সেই নিদর্শনগুলোর প্রতি অবিচার করেছে। সুতরাং দেখো, কী পরিণাম হয়েছে ফ্যাসাদকারীদের!
আমার জন্য এটাই শোভা পায় যে, আল্লাহ্ সম্বন্ধে শুধু সত্য কথাই বলবো। আমি তোমাদের সবার নিকট তোমাদের রবের পক্ষ থেকে নিদর্শন নিয়ে এসেছি; সুতরাং বনী ইস্রাঈলকে আমার সাথে ছেড়ে দাও’।
ফির’আউন বললো, ‘আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেওয়ার পূর্বেই কি তোমরা তাঁর উপর ঈমান নিয়ে এসেছো? এ’তো মহা চক্রান্ত, যা তোমরা সবাই শহরের মধ্যে বিস্তৃত করেছো, যাতে শহরবাসীদেরকে তা থেকে বের করে দিতে পারো। সুতরাং এখনই জেনে নেবে।
এবং তোমার নিকট আমাদের কি মন্দ লেগেছে? এটাই নয় কি যে, আমরা আমাদের রবের নিদর্শনগুলোর উপর ঈমান এনেছি, যখন সেগুলো আমাদের নিকট এসেছে? হে আমাদের রব! আমাদের উপর ধৈর্য ঢেলে দাও এবং আমাদেরকে মুসলমানরূপে উঠাও’।
এবং ফির’আউনের সম্প্রদায়ের প্রধানগণ বললো, ‘তুমি কি মূসা ও তাঁর সম্প্রদায়কে এ জন্যই ছেড়ে দিচ্ছো যে, তারা যমীনে ফ্যাসাদ ছড়াবে এবং মূসা তোমাকে ও তোমার স্থাপিত দেবতাগুলোকে বর্জন করবে? (সে) বললো, ‘এখন আমরা তাদের পুত্রদেরকে হত্যা করবো এবং তাদের কন্যাদেরকে জীবিত রাখবো। আর আমরা নিশ্চয় তাদের উপর প্রতাপশালী’।
মূসা তাঁর সম্প্রদায়কে বললো, ‘আল্লার সাহায্য প্রার্থনা করো এবং ধৈর্য ধারণ করো। নিশ্চয় যমীনের মালিক আল্লাহ্; স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যাকে চান উত্তরাধিকারী করেন এবং শেষ ময়দান পরহেয্গারদের হাতে’।
অতঃপর যখন তারা কোন কল্যাণ লাভ করতো, তখন বলতো, ‘এটা আমাদের প্রাপ্য’; আর যখন কোন অকল্যাণ পৌঁছতো তখন মূসা ও তাঁর সঙ্গীদেরকে অমঙ্গলের জন্য দায়ী করতো; শুনে নাও! তাদের অদৃষ্টের অশুভ পরিণাম তো আল্লাহ্রই নিকট রয়েছে; কিন্তু তাদের মধ্যে অধিকাংশই অবগত নয়।
এবং (তারা) বললো, ‘তুমি যে কোন নিদর্শনই নিয়ে আমাদের নিকট আসবে না কেন, যাতে আমাদের উপর তা দ্বারা যাদু করতে পারো, আমরা কোন প্রকারেই তোমার উপর ঈমান আনয়নকারী নই’।
অতঃপর আমি প্রেরণ করেছি তাদের উপর প্লাবন, পঙ্গপাল, ঘুণ (অথবা উকূন বা ক্ষুদ্র কীট বিশেষ), ব্যাঙ এবং রক্ত। পৃথক পৃথক নিদর্শনসমূহ; তবুও তারা অহংকার করলো এবং তারা অপরাধী সম্প্রদায় ছিলো।
এবং যখন তাদের উপর শাস্তি আসতো, (তখন তারা) বলতো, ‘হে মূসা! আমাদের জন্য তোমার রবের নিকট প্রার্থনা করো! তোমার সাথে তাঁর যে অঙ্গীকার রয়েছে তদনুযায়ী। নিশ্চয়, যদি তুমি আমাদের উপর থেকে শাস্তি অপসারিত করে নাও, তবে আমরা অবশ্যই তোমার উপর ঈমান আনবো এবং বনী ইস্রাঈলকে তোমার সাথে যেতে দেবো’।
সুতরাং আমি তাদের নিকট থেকে প্রতিশোধ নিয়েছি। অতঃপর তাদেরকে সমুদ্রে নিমজ্জিত করেছি, এ জন্য যে, (তারা) আমার নিদর্শনগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতো এবং সেগুলো সম্পর্কে অনবগত ছিলো।
এবং আমি ওই সম্প্রদায়কে, যাদেরকে দমিয়ে রাখা হয়েছিলো, ওই ভূ-খণ্ডের পূর্ব পশ্চিমের মালিক করেছি, যা’তে আমি বরকত রেখেছি; এবং তোমার রবের উত্তম প্রতিশ্রুতি বনী ইস্রাঈলের উপর পূর্ণ হয়েছে; তাদের ধৈর্যের প্রতিদান স্বরূপ; আর আমি ধ্বংস করে দিয়েছি যা কিছু ফির’আউন ও তাঁর সম্প্রদায় গড়তো এবং যেসব প্রাসাদ তারা নির্মাণ করতো।
এবং আমি বনী-ইস্রাঈলকে সমুদ্র পার করিয়ে দিয়েছি; অতঃপর তাদের এমন এক সম্প্রদায়ের আগমন ঘটলো, যারা আপন আপন প্রতিমার সামনে আসন পেতে বসেছিলো। বললো, ‘হে মূসা! আমাদের জন্য একটা এমন খোদা বানিয়ে দাও, যেমন তাদের জন্য এতগুলো খোদা রয়েছে’।বললো, ‘তোমরা নিশ্চয় একটা মূর্খ সম্প্রদায়।
এবং স্মরণ করো, যখন আমি তোমাদেরকে ফির’আউনের অনুসারীদের হাত থেকে উদ্ধার করেছি, যারা তোমাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তি দিতো; তোমাদের পূত্র সন্তানদেরকে হত্যা করতো এবং তোমাদের কন্যাদেরকে জীবিত রাখতো। আর সেটার মধ্যে তোমাদের রবের মহা অনুগ্রহ রয়েছে।
এবং আমি মূসার সাথে ত্রিশ রাতের ওয়াদা করেছি এবং সেগুলোর মধ্যে আরো দশটা বৃদ্ধি করে পূর্ণ করেছি; সুতরাং তাঁর রবের ওয়াদা পূর্ণ চল্লিশ রাতেরই হলো; এবং মূসা তাঁর ভাই হারূনকে বললো, ‘আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে আমার প্রতিনিধিরূপে থাকবে এবং সংশোধন করবে, আর ফ্যাসাদসৃষ্টিকারীদের পথকে দখল দিও না’।
এবং যখন মূসা আমার ওয়াদার পর হাযির হলো এবং তাঁর সাথে তাঁর রব কথা বললেন, (তখন) আরয করলেন, ‘হে আমার রব! আমাকে আপন দর্শন দাও! আমি তোমাকে দেখবো’। (তিনি) বললেন, ‘তুমি আমাকে কখনো দেখতে পারবে না; বরং এ পাহাড়ের প্রতি দেখো। এটা যদি স্বস্থানে স্থির থাকে, তবে তুমি অবিলম্বে আমাকে দেখে নেবে’। অতঃপর যখন তাঁর রব পাহাড়ের উপর আপন নূর বিচ্ছুরিত করলেন, তখন তা সেটাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিলো, আর মূসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে গেলো। অতঃপর যখন জ্ঞান ফিরে এলো (তখন) বললো, ‘পবিত্রতা তোমার, আমি তোমারই প্রতি প্রত্যাবর্তন করলাম এবং আমি সবার মধ্যে প্রথম মুসলমান।’
(তিনি) বললেন, ‘হে মূসা! আমি তোমাকে লোকদের থেকে মনোনীত করে নিয়েছি স্বীয় রিসালাত (এর বাণী সমূহ) এবং স্বীয় বাক্যালাপ করে যা আমি তোমাকে দান করেছি এবং কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হও’।
এবং আমি তাঁর জন্য ফলকসমূহে লিখে দিয়েছি প্রত্যেক কিছুর উপদেশ আর প্রত্যেক জিনিষের বিশদ বিবরণ; (এবং বললেন, ‘হে মূসা!) সেটা শক্তভাবে ধরো এবং স্বীয় সম্প্রদায়কে নির্দেশ দাও যেন সেটার উত্তম কথাগুলো গ্রহণ করে নেয়। শীঘ্রি আমি তোমাদেরকে দেখাবো নির্দেশ অমান্যকারীদের ঘর।
এবং আমি আমার নিদর্শনসমূহ থেকে তাদের ফিরিয়ে দেবো, যারা পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে নিজেদের অহঙ্কার প্রকাশ করতে চায় আর যদি তারা সমস্ত নিদর্শনও দেখে নেয় তবুও তারা সেগুলোর উপর ঈমান আনবে না; এবং যদি হিদায়তের পথও দেখে নেয় তবুও তাঁতে চলা পছন্দ করবে না আর ভ্রান্তির পথ দেখলে সেটা দিয়ে চলার জন্য উপস্থিত হয়ে যাবে। এটা এ কারণে যে, তারা আমার নিদর্শনগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে এবং সেগুলো সম্বন্ধে গাফিল হয়ে থাকে।
এবং যারা আমার নিদর্শনসমূহ ও আখিরাতের সাক্ষাতকে অস্বীকার করলো তাদের সমস্ত কৃতকর্ম নিষ্ফল হয়ে গেলো। তারা কী প্রতিফল পাবে? কিন্তু তাই (পাবে), যা তারা করতো’।
এবং মূসার পর তাঁর সম্প্রদায় তাদের অলংকারাদি দ্বারা এক গো-বৎস গড়ে বসলো, এক প্রাণহীন দেহ, গাভীর মতো আওয়াজ করতো। তারা কি দেখলো না যে, তা তাদের সাথে না কথা বলছে এবং না তাদেরকে কোন পথ দেখাচ্ছে? তারা সেটাকে গ্রহণ করেছে আর তারা ছিলো যালিম।
এবং যখন তারা অনুতপ্ত হলো এবং বুঝতে পারল যে, তারা বিপথগামী হয়েছে; তখন বললো, ‘যদি আমাদের রব আমাদের উপর দয়া না করেন এবং আমাদেরকে ক্ষমা না করেন, তবে আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো।
এবং যখন মূসা স্বীয় সম্প্রদায়ের নিকট প্রত্যাবর্তন করলো রাগে পরিপূর্ণ ও ক্ষুব্ধাবস্থায়, বললো, ‘তোমরা আমার পরে আমার কতই নিকৃষ্ট প্রতিনিধিত্ব করেছো! তোমরা কি তোমাদের রবের নির্দেশের পূর্বে ত্বরা করলে?’ এবং ফলকগুলো ফেলে দিলো আর আপন ভাইয়ের মাথার চুল ধরে নিজের দিকে টানতে লাগলো। বললো, ‘হে আমার সহোদর! সম্প্রদায়ের লোকেরা আমাকে দুর্বল মনে করেছে এবং আমাকে হত্যা করার উপক্রম হয়েছিলো। সুতরাং তুমি আমার উপর শত্রুদেরকে হাসিয়ো না এবং আমাকে যালিমদের অন্তুর্ভুক্ত করো না’।
নিশ্চয় ওই সব লোক, যারা গো-বৎসকে গ্রহণ করে বসেছে, অবিলম্বে তাদের উপর রবের ক্রোধ ও লাঞ্ছনা আপতিত হবে পার্থিব জীবনে; এবং আমি এভাবে প্রতিফল দিয়ে থাকি মিথ্যা রচনাকারীদেরকে।
এবং মূসা আপন সম্প্রদায় থেকে সত্তরজন লোক্কে আমার প্রতিশ্রুতির জন্য মনোনীত করলো। অতঃপর যখন তাদেরকে ভুমিকম্প পেয়ে বসলো, তখন মূসা আরয করলো, ‘হে আমার রব! তুমি ইচ্ছা করলে তো পুর্বেই তাদেরকে ও আমাকে ধ্বংস করে দিতে পারতে; তুমি কি আমাদেরকে ওই কাজের জন্য ধ্বংস করবে, যা আমাদের নির্বোধ লোকেরা করেছে? ওটা তো নয়, কিন্তু তোমার পরীক্ষা করা। তুমি তা দ্বারা বিপথগামী করো যাকে চাও এবং সৎপথে পরিচালিত করো যাকে ইচ্ছা করো। তুমি আমাদের মুনিব; সুতরাং আমাদেরকে ক্ষমা করো এবইং আমাদের উপর দয়া করো। আর তুমিই সর্বশ্রেষ্ঠ ক্ষমাশীল।
আর আমাদের জন্য এ দুনিয়ায় কল্যাণ লিপিবদ্ধ করো এবং আখিরাতে, নিশ্চয় আমরা তোমার প্রতি প্রত্যাবর্তন করেছি।’ বললেন, ‘আমার শাস্তি আমি যাকে চাই দিয়ে থাকি, আর আমার দয়া প্রতিটি বস্তুকে ঘিরে রয়েছে; সুতরাং অবিলম্বে আমি নি’মাতসমূহ তাদের জন্যই লিপিবদ্ধ করে দেবো, যারা ভয় করে, যাকাত দেয় এবং যারা আমার নিদর্শনসমুহের উপর ঈমান আনে।
ওই সব লোক, যারা দাসত্ব করবে এ পড়াবিহীন অদৃশ্যের সংবাদদাতা রসূলের, যাঁকে লিপিবদ্ধ পাবে নিজেদের নিকট তাওরীত ও ইন্জীলের মধ্যে; তিনি তাদেরকে সৎকর্মের নির্দেশ দেবেন এবং অসৎ কাজে বাধা দেবেন, আর পবিত্র বস্তুগুলো তাদের জন্য হালাল করবেন এবং অপবিত্র বস্তুসমূহ তাদের উপর হারাম করবেন; আর তাদের উপর থেকে ওই কঠিন কষ্টের বোঝা ও গলার শৃংখল যা তাদের উপর ছিলো, নামিয়ে অপসারিত করবেন। সুতরাং ওই সব লোক, যারা তাঁর উপর ঈমান আনে, তাকে সম্মান করে,তাকে সাহায্য করে এবং ওই নূরের অনুসরণ করে, যা তাঁর সাথে অবতীর্ণ হয়েছে তারাই সফলকাম হয়েছে।
আপনি বলুন, ‘হে মানবকুল! আমি তোমাদের সবার প্রতি ওই আল্লাহ্র রসূল যে, আসমান ও যমীনের বাদশাহী একমাত্র তাঁরই; তিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই; তিনিই জীবিত করেন ও মৃত্যু ঘটান; সুতরাং ঈমান আনো আল্লাহ্ এবং তাঁর পড়া-বিহীন, অদৃশ্যের সংবাদদাতা রসূলের উপর, যিনি আল্লাহ্ ও তাঁর বাণীসমূহের উপর ঈমান আনেন এবং তাঁরই গোলামী করো, তবেই তোমরা পথ পাবে’।
এবং আমি তাদেরকে বারটা গোত্রে, তথা দলে বিভক্ত করেছি আর আমি ওহী প্রেরণ করেছি মূসার প্রতি, যখন তাঁর নিকট তাঁর সম্প্রদায় পানি চেয়েছে, ‘এ পাথরের উপর লাঠি দ্বারা আঘাত করো’। অতঃপর তা থেকে বারটা প্রস্রবণ ফেটে বের হলো। প্রত্যেক গোত্র নিজ নিজ ঘাট চিনে নিলো; এবং আমি তাদের উপর মেঘকে ছায়া বিস্তারকারী করেছি, আর তাদের উপর ‘মান্ন্ ও সাল্ওয়া’ অবতাঁরণ করেছি। ‘খাও! আমার প্রদত্ত পবিত্র বস্তুসমূহ’। এবং তারা আমার কোন ক্ষতি করে নি, কিন্তু নিজেদের আত্নারই ক্ষতি করছিলো।
এবং স্মরণ করো! যখন তাদেরকে বলা হলো, ‘এ শহরে বসবাস করো এবং এর মধ্যে যেখানে ইচ্ছা আহার করো আর বলো, ‘গুনাহ্ ঝরে যাক’! এবং দরজায় সাজ্দাবনত হয়ে প্রবেশ করো। আমি তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দেবো। অবিলম্বে সৎকর্মপরায়ণদেরকে অধিক দান করবো’।
অতঃপর তাদের মধ্যে যালিমগণ বাক্য বদলে দিলো সেটারই বিপরীত, যা বলার জন্য তাদের প্রতি নির্দেশ ছিলো। সুতরাং আমি তাদের উপর আসমান থেকে শাস্তি প্রেরণ করলাম তাদের যুল্মের বদলাস্বরূপ।
এবং তাদেরকে জিজ্ঞাসা করুন ওই জনপদের অবস্থা, যা সমুদ্রতীরে অবস্থিত ছিলো, যখন তারা শনিবার সম্বন্ধে সীমালঙ্ঘন করতো; যখন শনিবারে তাদের মাছগুলো পানির উপর সাতাঁর কেটে তাদের সামনে আসতো; এবং যেদিন শনিবার হতো না সেদিন আসতো না। এভাবে আমি তাদেরকে পরীক্ষা করতাম, তাদের নির্দেশ অমান্য করার কারণে।
এবং যখন তাদের মধ্য থেকে একদল বললো, ‘কেন সদুপদেশ দিচ্ছো ওই সব লোককে, যাদেরকে আল্লাহ্ ধ্বংসাকারী কিংবা কঠোর শাস্তিদাতা?’ তারা বললো, ‘তোমাদের রবের নিকট ওযররূপে পেশ করার জন্য এবং হয় তো তাদের ভয় হবে’।
অতঃপর যখন তারা ভুলে গেলো যে উপদেশ তাদেরকে দেওয়া হয়েছিলো, তখন আমি উদ্ধার করেছি ওই সব লোককে, যারা অসৎকর্ম থেকে নিবৃত্ত করতো এবং যালিমদেরকে মহা শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করেছি তাদের নির্দেশ অমান্য করার বদলাস্বরূপ।
এবং যখন আপনার রব নির্দেশ শুনিয়ে দিলেন যে, অবশ্যই তিনি ক্বিয়ামতের দিন পর্যন্ত তাদের এমন সব লোককে প্রেরণ করতে থাকবেন, যারা তাদেরকে কঠিন শাস্তি ভোগাতে থাকবে। নিঃসন্দেহে, আপনার রব শীঘ্রই শাস্তিদাতা এবং নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।
এবং তাদেরকে আমি দুনিয়ায় বিভক্ত করেছি দলে দলে। তাদের মধ্যে কতেক সৎকর্মপরায়ণ এবং কতেক অন্যরূপ। আর আমি তাদেরকে মঙ্গল ও অমঙ্গল দ্বারা পরীক্ষা করেছি, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে।
অতঃপর তাদের স্থলে তাদের পরে, ওই অযোগ্য উত্ত- পুরুষ এসেছে, যারা কিতাবের উত্তরাধিকারী হয়েছে; (তারা) এ দুনিয়ার সামগ্রী গ্রহণ করে এবং বলে, ‘এখন আমাদেরকে ক্ষমা করা হবে’ আর যদি অনুরূপ সামগ্রী তাদের নিকট আরো আসে তবে তারা তাও গ্রহণ করে। তাদের নিকট থেকে কি কিতাবের মধ্যে এ মর্মে অঙ্গীকার নেয়া হয় নি যে, তারা আল্লাহ্র দিকে সম্পৃক্ত করবে না, কিন্তু সত্যকে? এবং তারা তা পড়েছে; আর নিশ্চয় পরকালীন ঘরই শ্রেয় খোদাভীরুদের জন্য। সুতরাং তোমাদের কি বিবেক নেই?
এবং যখন আমি পর্বতকে তাদের ঊর্ধ্বে স্থাপন করেছি, ওটা ছিলো যেন এক ছায়াদানকারী এবং তারা মনে করলো যে, ওটা তাদের উপর পতিত হবে; ‘গ্রহণ করো দৃঢ়ভাবে যা আমি তোমাদেরকে দিয়েছি এবং স্মরণ করো যা তাঁতে রয়েছে, যাতে তোমরা তাক্বওয়ার অধিকারী হও’।
আর হে মাহবূব, স্মরণ করুন! যখন আপনার রব আদম সন্তানদের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের বংশধরগণকে বের করেছেন এবং তাদের নিজেদের উপর নিজেদেরকে সাক্ষী করেছেন- ‘আমি কি তোমাদের রব নই’? সবাই বললো, ‘কেন নন? (নিশ্চয়) আমরা সাক্ষী হলাম’। (এ স্বীকৃতি গ্রহণ এ জন্য) যে, তোমরা যেন ক্বিয়ামতের দিন না বলো-‘আমরা তো সে বিষয়ে অবগত ছিলাম না;’
কিংবা তোমরা যেন একথা না বলো- ‘শির্ক তো পূর্বে আমাদের পূর্ব-পুরুষগণ করেছে; ;আর আমরা তো তাদের পরবর্তী বংশধর ছিলাম; তবে কি তুমি আমাদেরকে ওই কৃতকর্মের কারণে ধ্বংস করবে, যা বাতিল পন্থীগণ করেছে’?
এবং হে মাহবূব! তাদেরকে ওই ব্যক্তির বৃত্তান্ত শুনান, যাকে আমি আমার নিদর্শনাদি দিয়েছি, অতঃপর সে ওইগুলো থেকে পরিষ্কারভাবে বের হয়ে গেছে। তখন শয়তান তাঁর পেছনে লাগলো অতঃপর সে বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলো।
এবং আমি ইচ্ছা করলে নিদর্শনসমূহের কারণে তাকে উঠিয়ে নিতাম; কিন্তু সে তো যমীনকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে এব স্বীয় কু-প্রবৃত্তির অনুসারী হয়েছে; সুতরাং তাঁর অবস্থা কুকুরের ন্যায়-তুমি তাঁর উপর হামলা করলে সেটা জিহবা বের করে দেয় এবং ছেড়ে দিলেও জিহ্বা বের করে দেয়। এ অবস্থা হচ্ছে তাদেরই, যারা আমার নিদর্শনগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আপনি উপদেশ শুনান, যাতে তারা চিন্তা করে।
এবং নিশ্চয় আমি জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি বহু জিন্ ও মানবকে; তারা এমনসব হৃদয় ধারণ করে, যেগুলোর মধ্যে বোধ-শক্তি নেই, তাদের এমনসব চক্ষু রয়েছে, যেগুলো দ্বারা তারা দেখে না এবং তাদের এমনসব কান রয়েছে, যেগুলো দ্বারা তারা শুনে না; তারা চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় বরং সেগুলো অপেক্ষাও অধিক ভ্রান্ত; তারাই আলস্যের মধ্যে পড়ে রয়েছে।
এবং আল্লাহ্রই রয়েছে বহু উত্তম নাম;সুতরাং তোমরা তাকে ওই সব নামে ডাকো; এবং ওই সব লোককে বর্জন করো, যারা তাঁর নামগুলোর মধ্যে সত্যের সীমা থেকে বেরিয়ে যায়। এবং তারা শীঘ্রই তাদের কৃতকর্মের ফল পাবে।
তারা কি লক্ষ্য করে নি আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্বের মধ্যে এবং যে বস্তু আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন তার মধ্যে আর এটার মধ্যেও যে, সম্ভবতঃ তাদের প্রতিশ্রুতি নিকটবর্তী হয়ে গেছে? সুতরাং এরপর আর কোন কথার উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে’
(তারা) আপনাকে ক্বিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছে যে, তা কখন সংঘটিত হবে। আপনি বলুন, ‘সেটার জ্ঞান তো আমার রবের নিকট রয়েছে। সেটাকে তিনিই সেটার নির্ধারিত সময়ে প্রকাশ করবেন; তা গুরুতর হয়ে আছে আসমনাসমূহ ও যমীনের মধ্যে; তোমাদের উপর আসবে না, কিন্তু আকস্মিকভাবে’। আপনাকে এভাবে জিজ্ঞাসা করছে যেন আপনি সেটাকেখুব ভালভাবে অনুসন্ধান করে রেখেছেন। আপনি বলুন, ‘সেটার জ্ঞান তো আল্লাহ্রই নিকট রয়েছে;’ কিন্তু অনেক লোক জানে না।
আপনি বলুন, ‘আমি আমার নিজের ভাল-মন্দের খোদ-মুখতাঁর (স্বাধীন) নই, কিন্তু আল্লাহ্ যা ইচ্ছা করেন এবং যদি আমি অদৃশ্যকে জেনে নিতাম, তবে এমনই হতো যেন, আমি প্রভূত কল্যাণই সংগ্রহ করে নিয়েছি এবং আমাকে কোন অনিষ্টই স্পর্শ করে নি। আমি তো এ ভয় ও খুশীর সংবাদদাতা হই তাদেরকেই, যারা ঈমান রাখে’।
তিনিই, যিনি তোমাদেরকে একটা মাত্র ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন, এবং সেটা থেকেই তাঁর সঙ্গীনী সৃষ্টি করেছেন যেন তাঁর নিকট থেকে শান্তি পায়। অতঃপর যখন পুরুষ তাকে ছেয়ে ফেলেছে, তখন সে এক লঘু গর্ভধারণ করেছে এবং সেটা নিয়েই সে চলাফেরা করেছে। অতঃপর যখন গর্ভ ভারী হয়ে পড়লো, তখন তারা উভয়ে আপন রবের নিকট প্রার্থনা করলো, ‘অবশ্যই যদি তুমি আমাদেরকে যেমনি চাই তেমনি সন্তান দান করো, তবে আমরা নিঃসন্দেহে কৃতজ্ঞ হবো’।
অতঃপর যখন তিনি তাদেরকে যেমনই উচিত তেমনি সন্তান দান করলেন, তখন তারা তাঁর দানের মধ্যে তাঁর শরীক দাঁড় করালো; কিন্তু, তাদের শির্ক হতে আল্লাহ্ বহু ঊর্ধ্বে।
নিশ্চয় যাদের তোমরা আল্লাহ্ ব্যতীত উপাসনা করছো, তারা তমাদের মতো বান্দা’ সুতরাং তোমরা তাদেরকে আহ্বান করো, অতঃপর তারা তোমাদের ডাকে সাড়া দিক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও!
তাদের কি পা আছে, যা দ্বারা তারা চলাফেরা করে? কিংবা তাদের কি হাত আছে, যা দিয়ে তারা ধরে? কিংবা তাদের কি চোখ আছে, যা দিয়ে তারা দেখে? কিংবা তাদের কি কান আছে, যা দিয়ে তারা শোনে? আপনি বলুন, ‘তোমারা তোমাদের শরীকদের ডাকো আর (তখন) আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করো এবং আমাকে অবকাশ দিও না।
এবং হে মাহবূব! আপনি যখন তাদের নিকট কোন নিদর্শন উপস্থিত করেন না, তখন তারা বলে, ‘আপনি হৃদয় থেকে কেন একটা গড়ে নেন নি?’ আপনি বলুন, ‘আমি তো সেটারই অনুসরণ করি, যা আমার প্রতি আমার রবের নিকট থেকে ‘ওহী’ আসে। এটা তোমাদের রবের নিকট থেকে চোখ খুলে দেওয়া এবং হিদায়ত ও রহমত মুসলমানদের জন্য।