তাদের পূর্বে নূহের সম্প্রদায় এবং তাদের পরের সম্প্রদায়গুলো অস্বীকার করেছে; এবং প্রত্যেক সম্প্রদায় এ ইচ্ছা করেছে যে, তারা আপন আপন রসূলকে আবদ্ধ করে নেবে এবং মিথ্যা সহকারে বিতর্ক করেছে, এ উদ্দেশ্যে যে, তা দ্বারা সত্যকে ব্যর্থ করে দেবে। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি অতঃপর কেমন হলো আমার শাস্তি!
যারা আরশ বহন করে এবং যারা সেটার চতুর্পার্শ্বে রয়েছে তারা আপন রবের প্রশংসা সহকারে তার পবিত্রতা ঘোষণা করে, এবং তাঁর উপর ঈমান আনে, আর মুসলমানদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে-‘হে আমাদের রব! তোমার দয়া ও জ্ঞান সবকিছুকেই পরিবেষ্টিত করে রেখেছে। সুতরাং তাদেরকে ক্ষমা করো, যারা তাওবা করেছে এবং তোমার পথ অনুসরণ করেছে এবং তাদেরকে দোযখের শাস্তি থেকে রক্ষা করে নাও।
হে আমাদের রব! এবং তাদেরকে বসবাসের বাগানসমূহে প্রবেশ করাও যেগুলোর প্রতিশ্রুতি তুমি তাদেরকে দিয়েছো এবং তাদের পিতৃপুরুষগণ, স্ত্রীগণ এবং সন্তানগণের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ, তাদেরকেও। নিশ্চয় তুমিই সম্মান ও প্রজ্ঞাময়;
এবং তাদেরকে পাপসমূহের কুফল থেকে রক্ষা করো। এবং যাকে তুমি ওই দিন পাপসমূহের কুফল থেকে রক্ষা করবে, তবে নিঃসন্দেহে তুমি তার প্রতি দয়া করেছো এবং এটাই মহা সাফল্য’।
নিশ্চয় যেসব লোক কুফর করেছে তাদেরকে আহ্বান করা হবে, ‘অবশ্যই তোমাদের প্রতি আল্লাহ্র অসন্তুষ্টি তদপেক্ষা ও বহুগুণ বেশি, যেমন তোমরা আজ নিজেদের সত্তার প্রতি অসন্তুষ্ট, যখন তোমাদেরকে ঈমানের প্রতি আহ্বান করা হতো, তখন তোমরা কুফর করতে’।
(তারা) বলবে, ‘হে আমাদের রব! তুমি আমাদেরকে দু’বার মৃতে পরিণত করেছো এবং দু’বার জীবিত করেছো এখন আমরা আমাদের পাপসমূহ স্বীকার করেছি। সুতরাং আগুন থেকে বের হবার ও পথ আছে কি?’
এটা এ জন্য হলো যে, যখন এক আল্লাহ্কে আহ্বান করা হতো তখন তোমরা কুফর করতে এবং যদি তার কোন শরীক স্থির করা হতো তবে তোমরা তা মেনে নিতে। সুতরাং নির্দেশ প্রদানের ক্ষমতা আল্লাহ্রই রয়েছে, যিনি সর্বাপেক্ষা উচ্চ, মহান।
সমুচ্চ মর্যাদাদাতা, আরশের অধিপতি, ঈমানের প্রাণ, ওহী প্রেরণ করেন আপন নির্দেশে আপন বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি চান এ জন্য যে, তিনি সাক্ষাতের দিন সম্পর্কে সতর্ক করবেন;
এবং তাদেরকে সতর্ক করো ওই সন্নিকটে আগমনকারী বিপদসঙ্কুল দিন সম্পর্কে যখন হৃদয় কণ্ঠাগত হবে দুঃখ-কষ্টে ভরা। এবং যালিমদের না কোন বন্ধু আছে, না এমন কোন সুপারিশকারী, যার সুপারিশ গ্রাহ্য হবে।
তবে কি তারা পৃথিবী-পৃষ্ঠে ভ্রমণ করে নি? তা হলে দেখতো কেমন পরিণতি হয়েছে তাদের পূর্ববর্তীদের। তাদের ক্ষমতা ও যমীনের মধ্যে তারা যে সব নিদর্শন রেখে গেছে তা এদের চেয়েও অধিকতর। অতঃপর আল্লাহ্ তাদেরকে তাদের পাপগুলোর উপর পাকড়াও করেছেন এবং আল্লাহ্ থেকে তাদেরকে রক্ষা করার কেউ নেই।
এটা এ জন্য যে, তাদের নিকট তাদের রসূলগণ সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে এসেছে অতঃপর তারা কুফর করতো। সুতরাং আল্লাহ্ তাদেরকে পাকড়াও করেছেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ শক্তিশালী, কঠোর শাস্তিদাতা।
অতঃপর যখন সে তাদের প্রতি আমার নিকট থেকে সত্য নিয়ে এসেছে, তখন বললো, ‘যারা তার উপর ঈমান এনেছে তাদের পুত্র সন্তানদেরকে হত্যা করো এবং নারীদেরকে জীবিত রাখো!’ আর কাফিরদের ষড়যন্ত্রতো নয়, কিন্তু উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরা ফিরা করা মাত্র।
এবং ফির’আউন বললো, ‘আমাকে ছেড়ে দাও আমি মূসাকে হত্যা করবো এবং সে আপন রবকে আহ্বান করুক! আমি আশঙ্কা করছি যে, সে তোমাদের ধর্মে পরিবর্তন ঘটাবে অথবা যমীনের মধ্যে সন্ত্রাস ছড়াবে।
এবং ফির’আউনী সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে এক মুসলিম ব্যক্তি, যে আপন ঈমানকে গোপন রাখতো বললো, ‘তোমরা একজন লোককে কি এজন্যই হত্যা করছো যে, তিনি বলেন- আমার রব আল্লাহ্; অথচ নিশ্চয় তিনি সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ তোমাদের নিকট তোমাদের রবের নিকট থেকে নিয়ে এসেছেন? এবং যদি এ কথা মনে করা হয় যে, তিনি ভুল বলছেন, তবে তার ভুল বলার অশুভ পরিণাম তাঁরই উপর বর্তাবে, আর যদি তিনি সত্যবাদী হন, তবে তোমাদেরকেও স্পর্শ করবে এমন কিছু, যার প্রতিশ্রুতি তিনি তোমাদেরকে দিচ্ছেন’। নিশ্চয় আল্লাহ্ পথ প্রদান করেন না তাকেই, যে সীমা লঙ্ঘনকারী, মহা মিথ্যাবাদী।
হে আমার সম্প্রদায়! আজ বাদশাহী তোমাদেরই; তোমরাই এই ভূমিতে আধিপত্য রাখো। তবে আল্লাহ্র শাস্তি থেকে আমাদেরকে কে রক্ষা করবে, যদি আমাদের উপর এসে পড়ে? ফির’আউন বললো, ‘আমিতো তোমাদেরকে তা-ই বুঝাই, যা আমার বুঝে আসে। আর আমি তোমাদেরকে তা-ই বলি, যা মঙ্গলেরই পথ’।
এবং নিশ্চয় এর পূর্বে তোমাদের নিকট ইয়ূসূফ সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে এসেছে; অতঃপর তোমরা তার আনীত বিষয়ে সন্দেহের মধ্যেই ছিলে। শেষ পর্যন্তই যখন তিনি ইন্তিকাল করেছেন, তখন তোমরা বলছো, ‘এখন অবশ্যই আল্লাহ্ কোন রসূল প্রেরণ করবেন না’। আল্লাহ্ এভাবে পথভ্রষ্ট করেন তাকেই, যে সীমালঙ্ঘনকারী, সন্দেহ পোষণকারী।
ওই সব লোক, যারা আল্লাহ্র আয়াতসমূহ সম্পর্কে ঝগড়া করে, এমন কোন দলীল প্রমাণ ছাড়াই, যা তারা লাভ করেছে; কতই কঠোর ঘৃণার কথা আল্লাহ্র নিকট এবং ঈমানদারদের নিকট! আল্লাহ্হ এভাবেই মোহর করে দেন। অহঙ্কারী ও অবাধ্য ব্যক্তির সমগ্র অন্তরের উপর।
কি ধরণের রাস্তা? আসমান সমূহের রাস্তা। অতঃপর মূসার খোদাকে উকি মেরে দেখবো এবং নিশ্চয় আমার ধারণায় তো সে মিথ্যাবাদী’। এবং এভাবে ফির’আউনের দৃষ্টিতে তার মন্দকাজকে সুশোভিত করে দেখানো হয়েছে এবং তাকে সরল পথ থেকে বিরত রাখা হয়েছে। আর ফির’আউনের ষড়যন্ত্র ধ্বংস হবারই ছিলো।
যে মন্দ কাজ করে, সে প্রতিফল পাবে না, কিন্তু (পাবে) ততটুকুই। আর যে সৎকর্ম করে পুরুষ হোক কিংবা নারী এবং সে যদি হয় মুসলমান, তবে তারা জান্নাতে প্রবিষ্ট হবে। সেখানে অগণিত রিয্ক্ব পাবে।
আমাকে ডাকছো যেন আমি আল্লাহ্কে অস্বীকার করি এবং এমন কিছুকে তার শরীক দাড় করাই, যা আমার জ্ঞানে নেই। আর আমি তোমাদেরকে ওই মহা সম্মানিত, অতিশয় ক্ষমাশীলদের প্রতি আহ্বান করছি।
নিজে নিজেই প্রমাণিত হলো যে, যার প্রতি আমাকে আহ্বান করছো, তাকে ডাকা কোন কাজের নয় দুনিয়াতে, না আখিরাতে আর এই আমার প্রত্যাবর্তন আল্লাহ্ দিকেই আর এও যে, সীমালঙ্ঘনকারীরাই হচ্ছে দোযখী।
অতঃপর শীঘ্রই ওই সময় আসছে, যার সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে বলছি; সেটাকে তোমরা স্মরণ করবে এবং আমি আপন কর্ম আল্লাহ্র দিকে সোপর্দ করছি। নিশ্চয় আল্লাহ্ বান্দাদেরকে দেখছেন।
আগুন, যার উপর তাদেরকে সকাল ও সন্ধ্যায় উপস্থিত করা হয়। এবং যেদিন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে সেদিন নির্দেশ দেওয়া হবে ‘ফির’আউনের অনুসারীদের কঠিনতর শাস্তিতে প্রবিষ্ট করো’।
এবং যখন তারা আগুনের মধ্যে পরস্পর বিতর্কে লিপ্ত হবে, তখন দুর্বলরা তাদেরকে বলবে, যারা বড় সেজে বসতো, ‘আমরা তোমাদের অনুসারী ছিলাম সুতরাং তোমরা কি আমাদের নিকট থেকে আগুনের কিছু অংশ হ্রাস করে নেবে?’
তারা বলবে, ‘তোমাদের রসূলগণ কি তোমাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ আনতেন না?’ তারা বলবে, ‘কেন নয়?’ বলবে, ‘সুতরাং তোমরাই প্রার্থনাকরো!’ এবং কাফিরদের প্রার্থনা নয়, কিন্তু উদ্দেশ্যহীনভাবে (ব্যর্থ হয়ে) ফেরার জন্যই।
সুতরাং হে মাহবূব! আপনি ধৈর্য ধারণ করুন। নিশ্চয় আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি সত্য এবং আপন লোকদের গুণাহর ক্ষমা প্রার্থনা করুন। আর আপন রবের প্রশংসা সহকারে সকালে ও সন্ধ্যায় তার পবিত্রতা ঘোষণা করুন।
ওই সব লোক, যারা আল্লাহ্র আয়াতসমূহ সম্পর্কে বিতর্ক করে এমন কোন দলীল ছাড়াই, যা তারা পেয়েছে, তাদের অন্তরে নেই, কিন্তু (আছে) এমন এক অহঙ্কারের উন্মাদনা, যা পর্যন্ত তারা পৌঁছবে না। সুতরাং তোমরা আল্লাহ্র আশ্রয় প্রার্থনা করো। নিশ্চয় তিনি শুনেন, দেখেন।
এবং তোমাদের রব বলেছেন, আমার নিকট প্রার্থনা করো, আমি গ্রহণ করবো। নিশ্চয় ওই সব লোক, যারা আমার ইবাদত থেকে অহঙ্কারে বিমুখ হয়, তারা অবিলম্বে জাহান্নামে যাবে লাঞ্ছিত হয়ে।
আল্লাহ্, যিনি তোমাদের জন্য রাত সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা সেটার মধ্যে আরাম পাও এবং দিন সৃষ্টি করেছেন চক্ষুগুলো খোলার জন্য। নিশ্চয় আল্লাহ্ মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল; কিন্তু বহু মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।
আল্লাহ্, যিনি তোমাদের জন্য যমীনকে স্থির করেছেন আর আসমানকে ছাদ; এবং তোমাদের আকৃতি গঠন করেছেন। সুতরাং তোমাদের আকৃতিগুলোকে উৎকৃষ্ট করেছেন। আর তোমাদেরকে পবিত্র বস্তুসমূহ জীবিকারূপে দিয়েছেন। তিনিই হন আল্লাহ্, তোমাদের রব। সুতরাং বড়ই মঙ্গলময় হন আল্লাহ্, রব সমগ্র জাহানের।
আপনি বলুন, ‘আমাকে নিষেধ করা হয়েছে সেগুলোর পূজা করতে, যেগুলোর তোমরা আল্লাহ্ ব্যতীত পূজা করছো যখন আমার নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ আমার রবের নিকট থেকে এসেছে। আর আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন রব্বুল আলামীনের সম্মুখে আত্নসমর্পণ করি।
তিনিই হন, যিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন অতঃপর পানির ফোঁটা থেকে, অতঃপর রক্তপিণ্ড থেকে অতঃপর তোমাদেরকে বের করেন শিশুরূপে। অতঃপর তোমাদেরকে স্থায়ী রাখেন যেন আপন যৌবনে উপনীত হও, অতঃপর এ জন্য যে, বৃদ্ধ হও এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে পূর্বেই উঠিয়ে নেওয়া হয়। আর একটা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত পৌঁছবে, এবং এ জন্য যে, তোমরা অনুধাবন করতে পারবে।
আল্লাহ্র মোকাবেলায়?’ তারা বলবে, ‘সেগুলোতো আমাদের নিকট থেকে হারিয়ে গেছে; বরং আমরা ইতোপূর্বে কিছুর পূজাই করতাম না’। আল্লাহ্ এভাবেই পথভ্রষ্ট করেন কাফিরদেরকে।
সুতরাং আপনি ধৈর্যধারণ করুন! নিশ্চয় আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি সত্য। অতএব, যদি আমি আপনাকে দেখিয়ে দিই এমন কিছু বস্তু, যার প্রতিশ্রুতি তাদেরকে প্রদান করি, অথবা আপনাকে পূর্বেই ওফাত দিই- উভয় অবস্থাতেই তাদেরকে আমার দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
এবং নিশ্চয় আমি আপনার পূর্বে কত সংখ্যক রসূল প্রেরণ করেছি, যাদের মধ্যে কারো কারো অবস্থাদি আপনার নিকট বর্ণনা করেছি এবং কারো কারো অবস্থাদি বর্ণনা করি নি এবং কোন রসূলের জন্য শোভা পায় না যে, কোন নিদর্শন নিয়ে আসবেন আল্লাহ্র নির্দেশে ব্যতিরেকে। অতঃপর যখন আল্লাহ্র নির্দেশ আসবে তখন সত্য মীমাংসাই করে দেওয়া হবে এবং মিথাশ্রয়ীদের সেখানেই ক্ষতি।
এবং তোমাদের জন্য সেগুলোর মধ্যে কতই উপকার রয়েছে এবং এ জন্যই যেন তোমরা সেগুলোর পিঠের উপর আপন অন্তরের উদ্দেশ্যাবলীতে পৌঁছতে পারো এবং সেগুলোর উপর ও নৌযানগুলোর উপর আরোহণ করো।
তারা কি যমীনে ভ্রমণ করে নি? তাহলে দেখতো তাদের পূর্ববর্তীদের কেমন পরিণতি হয়েছে। তারা তাদের চেয়ে অধিক ছিলো এবং তাদের শক্তিও। আর পৃথিবীতে নিদর্শনসমূহও তাদের চেয়ে বেশি। সুতরাং তা তাদের কি কাজে আসলো, যা তারা উপার্জন করেছে?
সুতরাং যখন তাদের নিকট তাদের রসূলগণ সুস্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে আসলেন, তখন তারা তা নিয়েই উল্লাসিত ছিলো, যা তাদের নিকট পার্থিব জ্ঞান ছিলো আর তাদেরই উপর উলটে পড়লো যা নিয়ে তারা ঠাট্টা বিদ্রূপ করতো।
সুতরাং তাদের ঈমান তাদের কোন কাজে আসে নি যখন তারা আমার শাস্তি দেখে নিলো। আল্লাহ্র এ বিধান, যা তার বান্দাদের মধ্যে চলে এসেছে এবং সেখানে কাফিরগণ ক্ষতির মধ্যেই রয়েছে।