হে মানবজাতি! নিজ রবকে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তারই থেকে তার জোড়া (সঙ্গীনী) সৃষ্টি করেছেন আর এ দু’জন থেকে বহু নর-নারী বিস্তার করেছেন। এবং আল্লাহ্কে ভয় করো, যাঁর নাম নিয়ে যাচ্ঞা করো আর আত্মীয়তার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখো। নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্বদা তোমাদেরকে দেখছেন।
আর এতিমদেরকে তাদের ধন-সম্পদ সর্মপন করো এবং পবিত্রের পরিবর্তে অপবিত্র গ্রহণ করো না আর তাদের ধন-সম্পদ তোমাদের ধন-সম্পদের সাথে মিশিয়ে গ্রাস করো না। নিঃসন্দেহে, এটা মহাপাপ।
এবং যদি তোমাদের এ আশংকা হয় যে, এতিম মেয়েদের ক্ষেত্রে সুবিচার করবে না; তবে বিবাহ করে নাও যেসব নারী তোমাদের ভালো লাগে-দুই দুই, তিন তিন, চারচার। অতঃপর যদি তোমরা আশংকা করো যে, দু’জন স্ত্রীকে সমানভাবে রাখতে পারবে না, তবে একজনকেই করো অথবা দাসীদেরকে, যাদের তোমরা অধিকারী হও। এটা এরই অধিক নিকট যে, তোমাদের দ্বারা অত্যাচার হবে না।
এবং নির্বোধদেরকে তাদের সম্পদ অর্পণ করো না, যা তোমাদের নিকট আছে, যেগুলোকে আল্লাহ্ তোমাদের উপজীবিকা করেছেন এবং তাদেরকে তা থেকে খাওয়াও ও পরিধান করাও এবং তাদের সাথে সদালাপ করো।
এবং এতীমদের পরীক্ষা করতে থাকো, এ পর্যন্ত যে, তারা বিয়ের উপযুক্ত হবে। অতঃপর যদি তোমরা তাদের বোধশক্তি ঠিক দেখো, তবে তাদের ধন সম্পদ তাদেরকে অর্পন করে দাও এবং সেগুলো খেওনা সীমা অতিক্রম করে এবং এ তাড়াহুড়ায় যে, তারা বড়হয়ে যায় কিনা। আর যার প্রয়োজন হয় না সে যেন নিবৃত্ত থাকে। এবং যে অভাবী হয় সেযেন সংগত পরিমাণ খায়। অতঃপর যখন তোমরা তাদের ধন-সম্পদ তাদের হাতে অর্পণ করোতখন তাদের উপর সাক্ষী করে নাও! এবং আল্লাহ্ যথেষ্ট হিসাব গ্রহণের ক্ষেত্রে।
পুরুষদের জন্য অংশ আছে তা থেকেই, যা ছেড়ে গেছে মাতা-পিতা এবং নিকটাত্মীয়রা আর নারীদের জন্য অংশ আছে তা থেকেই, যা ছেড়ে গেছে মাতাপিতা এবং নিকটাত্মীয়তা; পরিত্যক্ত সম্পত্তি অল্প হোক কিংবা বেশী, অংশ হচ্ছে নির্দ্ধারিত।
এবং যেন ভয় করে ঐসব লোক, যদি তারা নিজেদের পরে অক্ষম সন্তানদের ছেড়ে যেতো, তবে তারা তাদের সম্পর্কে কেমন উদ্বিগ্ন হতো! সুতরাং তারা যেন আল্লাহ্কে ভয় করে এবং সরল কথা বলে।
আল্লাহ্ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে; পুত্রের অংশ দু’কন্যার সমান; অতঃপর যদি শুধু কন্যাগণ হয়, যদিও হয় দু’এর অধিক, তবে তাদের জন্য ত্যাজ্য সম্পদের দু’তৃতীয়াংশ। আর যদি একটি মাত্র কন্যা হয়, তবেতার (সম্পত্তির) অর্ধেক; এবং মৃতের মাতা পিতা; প্রত্যেকের জন্য তার ত্যাজ্য সম্পত্তি থেকে একষষ্ঠাংশ যদি মৃতের সন্তান থাকে। যদি তার সন্তান না থাকে এবং মাতাপিতা রেখে যায়, তবে মায়ের জন্য সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ। অতঃপর যদি তার কতিপয় ভাই-বোন থাকে, তবে মায়ের জন্য এক ষষ্ঠাংশ তার ঐ অসীয়ত পূর্ণ করার পর, যা সে করে গেছে ও ঋণ পরিশোধ করার পর। তোমাদের পিতা ও তোমাদের পুত্রগণ, তোমরা কী জানো তাদের মধ্যে কে তোমাদের মধ্যে অধিক কাজে আসবে? এ অংশ নির্ধারিত আল্লাহ্রই পক্ষ থেকে। নিশ্চয় আল্লাহ্ জ্ঞানময়, প্রজ্ঞাময়।
এবং তোমাদের স্ত্রীগণ যা ছেড়ে যায় তা থেকে তোমাদের জন্য অর্দ্ধেক-যদি তাদের সন্তান না থাকে। অতঃপর যদি তাদের সন্তান থাকে, তবে তাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে তোমাদের জন্য এক চতুর্থাংশ যেই ওসীয়ত তারা করে গেছে তা এবং ঋণ বের করে নেয়ার পর। আর তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির মধ্যে স্ত্রীদের জন্য এক চতুর্থাংশ যদি তোমাদের সন্তান না থাকে। অতঃপর যদি তোমাদের সন্তান থাকে, তবে তাদের জন্য তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে এক অষ্টমাংশ যে ওসীয়ত তোমরা করে যাও তা এবং ঋণ বের করে নেয়ার পর। আর যদি এমন কোন পুরুষ অথবা নারীর পরিত্যক্ত সম্পত্তি বন্টন করা হয়, যে মাতাপিতা, সন্তান-সন্ততি কাউকেও রেখে যায়নি এবং মায়ের দিক থেকে তার ভাই অথবা বোন থাকে, তবে তাদের মধ্যে প্রত্যেকের জন্য এক ষষ্ঠাংশ। অতঃপর যদি ঐ ভাই-বোন একাধিক হয়, তবে সবাই এ তৃতীয়াংশের মধ্যে অংশীদার হবে মৃত ব্যত্তির ওসীয়ত ও ঋণ বের করে নেয়ার পর, যার মধ্যে সে কারো ক্ষতি না করে থাকে। এটা আল্লাহ্র নির্দেশ এবং আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সহনশীল।
এগুলো আল্লাহ্র নির্দ্ধারিত সীমা। আর যে নির্দেশ মান্য করে আল্লাহ্ ও আল্লাহ্র রসূলের, আল্লাহ্ তাদেরকে এমন বাগানসমূহ নিয়ে যাবেন, যেগুলোর নিম্মদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত, সর্বদা তাতে থাকবে। আর এটাই হচ্ছে মহাসাফল্য।
আর যে আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের অবাধ্য হয় এবং তাঁর সমস্ত সীমা লংঘন করে আল্লাহ্ তাকে আগুনের মধ্যে প্রবেশ করাবেন, যার মধ্যে সর্বদা থাকবে। আর তার জন্য রয়েছে লাঞ্ছনার শাস্তি।
এবং তোমাদের নারীদের মধ্যে যারা ব্যভিচার করে তাদের বিরুদ্ধে বিশেষতঃ তোমাদের নিজেদের মধ্যেকার চারজন পুরুষের সাক্ষ্য গ্রহণ করো। অতঃপর যদি তারা সাক্ষ্য দেয়, তবে সেসব নারীকে ঘরে আবদ্ধ রাখো, যে পর্যন্ত না তাদেরকে মৃত্যু উঠিয়ে নেয় কিংবা আল্লাহ্ তাদের জন্য কোন সুরাহা বের করেন।
এবং তোমাদের মধ্যে যেই নারী-পুরুষ এমন অপকর্ম করে, তাদেরকে কষ্ট দাও। অতঃপর যদি তারা তাওবা করে নেয় এবং সৎ হয়ে যায় তবে তাদের রেহাই দাও। নিশ্চয় আল্লাহ্ মহা তাওবা কবূলকারী, দয়ালু।
সেই তাওবা, যা কবুল করা আল্লাহ্ আপন অনুগ্রহক্রমে অপরিহার্য করে নিয়েছেন, তা তাদের জন্যেই , যারা না জেনে মন্দ কাজ করে বসেছে, তারপর সত্ত্বর তাওবা করে নেয়, এমন লোকদের প্রতি আল্লাহ্ স্বীয় দয়া সহকারে প্রত্যাবর্তন করেন; এবং আল্লাহ্ জ্ঞানময়, প্রজ্ঞাময়।
এবং সেই তাওবা তাদের জন্য নয়, যারা গুনাহসমূহে লিপ্ত থাকে, এ পর্যন্ত যে, যখন তাদের মধ্যে কারো নিকট মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলে, ‘এখন আমি তাওবা করলাম’ এবং না তাদের জন্য যারা কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। তাদের জন্য আমি বেদনাদায়ক শাস্তি তৈরী করে রেখেছি।
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য হালাল নয় যে, নারীদের উত্তরাধিকারী হয়ে যাবে জোর পূর্বক; এবং স্ত্রীগণকে বাধা দিওনা এ উদ্দেশ্যে যে, যে মহর তাদের কে দিয়েছিলে তা থেকে কিছু নিয়ে নেবে, কিন্তু এমতাবস্থায় যে,তারা প্রকাশ্য ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে যায় এবং তাদের সাথে সৎভাবে জীবন-যাপন করো। অতঃপর যদি তারা তোমাদের অপছন্দ হয়, তবে এটা সন্নিকটে যে, কোন বস্তু তোমাদের নিকট অপছন্দনীয় হয় আর আল্লাহ্ সেটার মধ্যে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন।
আর যদি তোমরা এক স্ত্রীর পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করতে চাও এবং তাকে প্রচুর অর্থও দিয়ে থাকো তবুও তা থেকে কিছু ফেরত নিওনা। তোমরা কি সেটা ফেরত নেবে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে এবং প্রকাশ্য পাপাচার দ্বারা?
টীকা- এভাবে যে, তাকে ছেড়ে দেবে, অপর মহিলাকে বিয়ে করবে।
হারাম করা হয়েছে তোমাদের উপর তোমাদের মাতাগণ, কন্যাগণ, বোনগণ, ফুফুগণ, খালাগণ, ভ্রাতুষ্পত্রীগণ, ভাগ্নীগণ, তোমাদের ঐ সব মাতা যারা (তোমাদেরকে) দুধ পান করিয়েছে; দুধ-বোনগণ, তোমাদের স্ত্রীদের মাতাগণ, তাদের ঐসব কন্যা যারা তোমাদের কোলে (লালন-পালনে) রয়েছে- ঐসব স্ত্রী থেকে, যাদের সাথে তোমরা সহবাস করেছো। অতঃপর যদিতোমরা তাদের সাথে সহবাস না করে থাকো, তবে তাদের কন্যাদের বিবাহ করার মধ্যে কোন ক্ষতি নেই, তোমাদের ঔরসজাত পুত্রের স্ত্রীগণ, এবং দু’বোনকে একত্রিত করা; কিন্তু যা হয়ে গেছে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, দয়ালু।
এবং হারাম সধবা নারীরা কিন্তু (হালাল) কাফিরদের ঐ সব স্ত্রী, যারা তোমাদের অধিকারে এসে যায়; এটা আল্লাহ্র লিপিবদ্ধ (বিধান) তোমাদের উপর; এবং এসব ছাড়া যারা অবশিষ্ট আছে তারা তোমাদের জন্য হালাল (এ শর্তে) যে, নিজেদের অর্থের বিনিময়ে তালাশ করো (বিবাহ) বন্ধনে আনতে, যৌন কামনা চরিতার্থ করার জন্য নয়। সুতরাং যেসব নারীকে বিবাহাধীনে আনতে চাও তাদের নির্দ্ধারিত মহর তাদেরকে অর্পণ করো এবং মহর নির্দ্ধারণের পর যদি তোমাদের পরষ্পরের মধ্যে কোন সন্তুষ্টি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় তবে তাতে গুনাহ্ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ্ জ্ঞানময়, প্রজ্ঞাময়।
এবং তোমাদের মধ্যে সামর্থ্য না থাকার কারণে যাদের বিবাহ বন্ধনে স্বাধীনা ঈমানদার নারী না থাকে তবে তাদেরকেই বিবাহ করো, যারা তোমাদের হাতের মালিকানাধীন রয়েছে-ঈমানদার দাসীগণ এবং আল্লাহ্ তোমাদের ঈমান সম্বন্ধে ভাল জানেন। তোমাদের মধ্যে একে অপর থেকে। সুতরাং তাদেরকেই বিবাহ করো তাদের মালিকদের অনুমতি সাপেক্ষে এবং রীতি মাফিক তাদের মহর তাদেরকে অর্পণ করো এমতাবস্থায় যে, তারা বিবাহ বন্ধনে আসবে-না যৌন-উম্মাদনা চরিতার্থ-কারীনী হয়ে, না উপ-পতি গ্রহণকারীণীরুপে। যখন তারা বিবাহ বন্ধনে এসে যায় অতঃপর ব্যভিচার করে তবে তাদের উপর ঐ শাস্তির অর্ধেক (বর্তাবে) যা স্বাধীনা নারীদের উপর বর্তায়। এটা তারই জন্য যে তোমাদের মধ্যে ব্যভিচারের আশংকা করে। এবং ধৈর্যধারণ করা তোমাদের জন্য উত্তম। আর আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, দয়ালু।
আল্লাহ্ চান আপন বিধানাবলী তোমাদের জন্য বর্ণনা করতে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি বলে দিতে আর তোমাদের প্রতি আপন করুনা সহকারে প্রর্ত্যাবর্তন করতে। এবং আল্লাহ্ জ্ঞানময়, প্রজ্ঞাময়।
এবং আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি আপন কৃপা সহকারে প্রর্ত্যাবর্তন করতে চান এবং যারা আপন প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তারা চায় যেন তোমরা সরল পথ থেকে বিস্তর পৃথক হয়ে যাও।
হে ঈমানদারগণ! পরষ্পরের মধ্যে একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না; কিন্তু কোন ব্যবসা তোমাদের পারষ্পরিক সম্মতিতে হলে (বৈধ হবে)। এবং নিজেদের প্রাণগুলোকে হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি দয়াবান।
যদি কবীরাহ্ গুনাহ্গুলো বিরত থাকো, যেগুলো তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তবে তোমাদের অন্যান্য গুনাহ্ আমি ক্ষমা করে দেবো এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাবো।
এবং সেটার লালসা করো না, যা দ্বারা আল্লাহ্ তোমাদের মধ্য থেকে একে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। পুরুষদের জন্য তাদের উপার্জন থেকে অংশ রয়েছে এবং নারীদের জন্য তাদের উপার্জন থেকে অংশ রয়েছে আর আল্লাহ্র নিকট থেকে তাঁর অনুগ্রহ চাও। নিশ্চয় আল্লাহ্ সবকিছু জানেন।
এবং প্রত্যেকটি সম্পত্তির জন্য উত্তরাধিকারী করে দিয়েছি –যা কিছু রেখে যায় মাতা পিতা এবং নিকটাত্মীয়গণ আর ঐসব লোক, যাদের সাথে তোমাদের অঙ্গীকার সম্পন্ন হয়েছে তাদেরকে তাদের অংশ অর্পণ করো। নিশ্চয় প্রত্যেক কিছু আল্লাহ্র সম্মুখে রয়েছে।
পুরুষ নারীদের উপর কর্তা এ জন্য যে, আল্লাহ্ তাদের মধ্যে একে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং এ জন্য যে, পুরুষগণ তাদের উপর ধন-সম্পদ ব্যয় করেছে। সুতরাং পূণ্যবর্তী স্ত্রীগণ আদব সম্পন্না, স্বামীগণের পিছনে হিফাজতে রাখে যেভাবে আল্লাহ্ হিফাযত করার হুকুম দিয়েছেন এবং যে সমস্ত স্ত্রীর অবাধ্যতা সম্পর্কে তোমাদের আশংকা হয় তবে তাদেরকে বুঝাও, তাদের থেকে পৃথক হয়ে শয়ন করো এবং তাদেরকে প্রহার করো। অতঃপর যদি তারা তোমাদের আনুগত্যে এসে যায় তবে তাদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত কোন পথ অন্বেষণ করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ মহান, শ্রেষ্ঠ।
এবং যদি তোমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়ার আশংকা হয় তবে একজন সালীস বর-পক্ষ থেকে প্রেরণ করো আর একজন সালীস স্ত্রী-পক্ষ থেকে, তারা উভয়ে যদি সমঝোতা করাতে চায়, তবে আল্লাহ্ তাদের মধ্যে মিল করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সবিশেষ অবহিত।
এবং আল্লাহ্র বন্দেগী করো আর কাউকে তাঁর শরীক দাঁড় করাবে না; এবং মাতা -পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করো আর আত্মীয়-স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, করটের সঙ্গী, পথচারী এবং স্বীয় দাস-দাসীদের সাথেও। নিশ্চয়ই আল্লাহ্র পছন্দ হয় না কোন দাম্ভিক, আত্ম-গৌরবকারী।
যারা নিজেরা কৃপণতা করে এবং অন্যান্যদেরকে ও কৃপণতা করার জন্য বলে আর আল্লাহ্ তা’আলা যা তাদেরকে নিজ অনুগ্রহ থেকে দিয়েছেন তা গোপন করে; এবং কাফিরদের জন্য আমি লাঞ্ছনার শাস্তি প্রস্তুত রেখেছি।
ঐ দিন কামনা করবে ঐ সব লোক, যারা কুফর করেছে এবং রাসূলের অবাধ্য হয়েছে- ‘আহা! যদি তাদেরকে মাটির মধ্যে ধ্বসিয়ে মিশিয়ে ফেলা হতো!’ এবং কোন কথাই আল্লাহ্ থেকে গোপন করতে পারবে না।
হে ঈমানদারগণ, নেশাগ্রস্থ অবস্থায় নামাযের নিকট যেওনা যতক্ষণ পর্যন্ত এতটুকু হুশ না হয় যে, যা বলো তা বুঝতে পারো এবং না অপবিত্র অবস্থায় গোসল ব্যতিরেকে, কিন্তু মুসাফিরীর মধ্যে স্বতন্ত্রবিধান এবং যদি তোমরা পীড়িত হও কিংবা সফরে থাকো অথবা তোমাদের মধ্যে কেউ শৌচকর্ম সমাধা করে এসেছো, কিংবা তোমরা স্ত্রীদেরকে স্পর্শ করেছো আর পানি পাওনি, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করো, সুতরাং আপন মুখমন্ডল এবং হাতগুলোর উপর মসেহ্ করো। নিশ্চয় আল্লাহ্ পাপ মোচনকারী, ক্ষমাশীল।
কিছু সংখ্যক ইহুদী বাণীগুলোকে সেগুলোর স্থান থেকে পরিবর্তন করে এবং বলে, ‘আমরা শুনেছি ও অমান্য করেছি এবং আপনি শুনুন, না শুনানোর মত! এবং ‘রা’ইনা’ বলে জিহ্বাগুলো ঘুরিয়ে আর দ্বীনের প্রতি বিদ্রুপ করার জন্য। এবং যদি তারা বলতো, ‘আমরা শুনেছি ও মেনে নিয়েছি এবং হুযুর, আমাদের কথা শুনুন! এবং হুযুর, আমাদের প্রতি লক্ষ্য করুন!’ তবে তাদের জন্য মঙ্গল ও সরলতার বৃদ্ধি হতো। কিন্তু তাদের উপর তো আল্লাহ্ লা’নত করেছেন তাদের কুফরের কারণে। সুতরাং দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করে না কিন্তু অল্প সংখ্যক লোক।
হে কিতাবীগণ! ঈমান আনো সেটার উপর, যা আমি অবতারণ করেছি তোমাদের সঙ্গেকার কিতাব এর সত্যায়নকারীরুপে এর পূর্বে যে, আমি বিকৃত করে দেবো কিন্তু চেহারাকে; অতঃপর সেগুলো ঘুরিয়ে দেবো সেগুলোর পিঠের দিকে, অথবা তাদেরকে অভিশম্পাত করবো যেমন অভিশম্পাত করেছি শনিবার পালনকারীদেরকে এবং আল্লাহ্র নির্দেশ কার্যকারী হয়েই থাকে।
নিশ্চয় আল্লাহ্তাঁর সাথে কুফর (শির্ক) করার অপরাধ ক্ষমা করেন না যে এবং কুফরের নিম্ন পর্যায়ের যা কিছু আছে তা যাকে চান ক্ষমা করে দেন; এবং যে খোদার শরীক স্থির করেছে সে মহা পাপের তুফান গড়েছে।
আপনি কি তাদের দেখেন নি যারা নিজেরাই নিজেদের পবিত্রতা বর্ণনা করে? বরং আল্লাহ্ যাকে চান পবিত্র করেন এবং তাদের প্রতি যুলুম হবে না খোরমা-বীজের আঁশ পরিমাণও।
আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা কিতাবের একটা অংশ লাভ করেছে, (তারা) ঈমান আনছে বোত ও শয়তানের উপর? এবং কাফিরদের সম্পর্কে বলে, ‘এরা মুসলমানদের অপেক্ষা অধিকতর সঠিক পথের উপর রয়েছে।’
অথবা মানুষের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে সেটারই উপর, যা আল্লাহ্ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহ থেকে দিয়েছেন? সুতরাং আমি তো ইব্রাহীমের বংশধরগণকে কিতাব ও হিকমত দান করেছি এবং তাদেরকে বিশাল রাজ্য দান করেছি।
যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে অনতিবিলম্বে আমি তাদেরকে আগুনে প্রবেশ করাবো। যখন তাদের চামড়া দগ্ধ হয়ে যাবে তখন আমি তাদেরকে সেগুলোর স্থলে অন্য চামড়া বদলে দেবো, যাতে শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করে। নিশ্চয় আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
এবং যেসব লোক ঈমান এনেছে ও সৎ কাজ করেছে অনতিবিলম্বে আমি তাদেরকে বাগানসমূহে নিয়ে যাবো, যেগুলোর পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত; (তারা) সেগুলোতে স্থায়ীভাবে থাকবে। তাদের জন্য সেখানে পবিত্র স্ত্রীরা রয়েছে এবং আমি তাদেরকে সেখানেই প্রবেশ করাবো যেখানে শুধু ছায়া আর ছায়া হবে।
নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদেরকে নির্দেশ দেন- যেন আমানসমূহ যাদের, তাদেরকে অর্পণ করো এবং এরই যে, যখন তোমরা মানুষের মধ্যে ফয়সালা করো তখন ন্যায়পরায়ণতার সাথে ফয়সালা করো। নিশ্চয়ই, আল্লাহ্ তোমাদেরকে কতোই উৎকৃষ্ট উপদেশ দেন! নিশ্চয় আল্লাহ্ সব শুনেন, দেখেন।
হে ঈমানদারগণ, নির্দেশ মান্য করো আল্লাহ্র এবং নির্দেশ মান্য করো রসূলের আর তাদেরই, যারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। অতঃপর যদি তোমাদের মধ্যে কোন বিষয়ে মতভেদ ঘটে, তবে সেটাকে আল্লাহ্ ও রসূলের সম্মুখে রুজু করো, যদি আল্লাহ্ ও ক্বিয়ামতের উপর ঈমান রাখো। এটা উত্তম এবং এর পরিণাম সবচেয়ে উৎকৃষ্ট।
আপনি কি তাদেরকে দেখেন নি, যাদের দাবী হচ্ছে যে, তারা ঈমান এনেছে সেটারই উপর, যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেটার উপর, যা আপনার পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে, অতঃপর শয়তানকে তাদের সালীস বানাতে চায় এবং তাদের প্রতি নির্দেশতো এ ছিলো যেন তাকে মোটেই মান্য না করে। আর ইবলীস তাদেরকে দূরে পথভ্রষ্ট করতে চায়।
কেমন হবে যখন তাদের উপর কোন মুসীবত এসে পড়বে সেটারই পরিণাম স্বরুপ, যা তাদের হস্তসমূহ অগ্রে প্রেরণ করেছে? অতঃপর হে মাহবুব! আপনার নিকট হাযির হয়ে আল্লাহ্র শপথ করে (বলে), ‘আমাদের উদ্দেশ্যে তো ছিলো কল্যাণ এবং সম্প্রীতিই।’
এবং কোন রসূল প্রেরণ করিনি কিন্তু এ জন্য যে, আল্লাহ্র নির্দেশেতাঁর আনুগত্য করা হবে; আর যদি কখনো তারা নিজেদের আত্মার প্রতি যুলুম করে তখন, হে মাহবুব! (তারা) আপনার দরবারে হাযির হয়, অতঃপর আল্লাহ্র নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করে, আর রসূল তাদের পক্ষে সুপারিশ করেন, তবে অবশ্যই আল্লাহ্কে অত্যন্ত তাওবা কবূলকারী, দয়ালু পাবে।
সুতরাং হে মাহবুব! আপনার রবের শপথ, তারা মুসলমান হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত পরষ্পরের ঝগড়ার ক্ষেত্রে আপনাকে বিচারক মানবে না অতঃপর যা কিছু আপনি নির্দেশ করবেন, তাদের অন্তরসমূহে সে সম্পর্কে কোন দ্বিধা পাবে না এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নেবে।
এবং যদি আমি তাদের উপর ফরয করতাম, ‘তোমরা নিজেরা নিজেদেরকে হত্যাকরে ফেলো কিংবা আপন ঘরবাড়ী ত্যাগ করে বের হয়ে যাও’তবে তাদের মধ্যে কম-সংখ্যকলোকই এমন করতো। এবং যে কথার তাদেরকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে যদি তারা তা পালন করতো, তবে তাতে তাদের মঙ্গল ছিলো আর ঈমানের উপর খুব প্রতিষ্ঠিত থাকা (এর পরিচায়ক ছিলো)।
এবং যে আল্লাহ্ ও রসূলের হুকুম মান্য করে, তবে সে তাঁদের সঙ্গ লাভকরবে যাদের উপর আল্লাহ্ অনুগ্রহ করেছেন-অর্থাৎ নবীগণ, সিদ্দীক্বগণ (সত্যনিষ্ঠগণ), শহীদ এবং সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিগণ। এরা কতই উত্তম সঙ্গী।
এবং তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে, যারা অবশ্যই দেরী (গড়িমসি) করবে। অতঃপর যদি তোমাদের উপর কোন মুসীবত এসে পড়ে তবে বলে, ‘আমার উপর আল্লাহ্র অনুগ্রহ ছিলো যে, আমি তাদের সাথে উপস্থিত ছিলাম না।’
আর যদি তোমরা আল্লাহ্র অনুগ্রহ লাভ করো তবে অবশ্যই (এমনভাবে) বলে যেন তোমাদের ও তাদের মধ্যে কোন বন্ধুত্বই ছিলো না, (এ কথা) ‘আহা ! যদি আমি তাদের সাথে থাকতাম তবে (আমিও) বিরাট সাফল্য লাভ করতাম।’
সুতরাং তাদের আল্লাহ্র পথে যুদ্ধ করা উচিৎ, যারা পার্থিব জীবন বিক্রয় করে আখিরাতকে গ্রহণ করে এবং যে আল্লাহ্র পথে যুদ্ধ করে অতঃপর নিহত হয় কিংবা বিজয়ী হয়, তবে অবিলম্বে আমি তাকে মহা পুরষ্কার দেবো।
আর তোমাদের কী হলো যে, যুদ্ধ করছোনা আল্লাহ্র পথে এবং দুর্বলনর-নারী ও শিশুদের জন্য? যারা এ প্রার্থনা করছে, ‘হে আমাদের রব! আমাদেরকে এ বস্তী থেকে বের করো, যার অধিবাসীরা অত্যাচারী এবং আমাদেরকে তোমার নিকট থেকে কোন ত্রাণকর্তা দাও এবং আমাদেরকে তোমার নিকট থেকে কোন সাহায্যকারী প্রদান করো।’
আপনি কি তাদেরকে দেখেন নি যাদেরকে বলা হয়েছে, ‘নিজেদের হস্ত সংবরণ করো, নাময কায়েম রাখো এবং যাকাত দাও।’ অতঃপর যখন তাদের উপর জিহাদ ফরয করা হলো তখন তাদের কেউ কেউ মানুষকে এমনভাবে ভয় করতে লাগলো যেমন আল্লাহ্কে ভয় করে অথবা তদপেক্ষাও বেশী। এবং বললো, ‘হে আমাদেররব! তুমি আমদের উপর জিহাদ কেন ফরয করে দিলে? আরো কিছু কাল যদি আমাদেরকে জীবিত থাকতে দেয়া হতো!’(হে হাবীব) আপনি বলেদিন, ‘পার্থিব ভোগ সামান্য এবং ভীতিসম্পন্নদের জন্য পরকাল উত্তম আর তোমাদের উপর সুতা পরিমাণ যুলুমও হবে না।
তোমরা যেখানে থাকো না কেন মৃত্যু তোমাদেরকে পেয়ে বসবে যদিও সুদৃঢ়দুর্গ সমূহে অবস্থান করো এবং তাদের নিকট যদি কোন কল্যাণ পৌঁছে, তবে বলে, ‘এটা আল্লাহ্র নিকট থেকে’ আর তাদের নিকট যদি কোন ক্ষতি পৌঁছে তবে বলে, ‘এটা হুযুরের দিক থেকে এসেছে।’ আপনি বলুন ! ‘সবকিছু আল্লাহ্র নিকট থেকেই’। কাজেই, ঐসব লোকের কী হলো ? তারা কোন কথা বুঝছে বলে মনে হয় না।
হে শ্রোতা! তোমার নিকট যা কল্যাণ পৌঁছে তা আল্লাহ্র নিকট থেকে এবং যে অকল্যাণ পৌঁছে তা তোমার নিজের তরফ থেকেই। এবং হে মাহবুব! আমি আপনাকে সমস্ত মানুষের জন্য রসূলরুপে প্রেরণ করেছি। এবং আল্লাহ্ যথেষ্ট সাক্ষীরুপে।
যে ব্যক্তি রসূলের নির্দেশ মান্য করেছে, নিঃসন্দেহে সে আল্লাহ্র নির্দেশ মান্য করেছে এবং যে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তবে আমি আপনাকে তাদেরকে রক্ষা করার জন্য প্রেরণ করিনি।
এবং বলে, ‘আমরা নির্দেশ মান্য করেছি।’ অতঃপর যখন আপনার নিকট থেকে বের হয়ে যায় তখন তাদের মধ্যে একদল যা বলে দিয়েছিলো রাতে তার বিপরীত পরিকল্পনা করে এবং আল্লাহ্ লিখে রাখেন তাদের রাতের পরিকল্পনাসমূহ। সুতরাং হে মাহবুব! আপনি তাদেরকে উপেক্ষা করুন এবং আল্লাহ্র উপর ভরসা রাখুন। আর আল্লাহ্ যথেষ্ট কার্য সমাধানের জন্য।
এবং যখন তাদের (অবুঝ ও দূর্বল মুসলমানদের) নিকটপ্রশান্তি অথবা শংকার কোন বার্তা আসতো তখন (তারা) সেটা প্রচার করে বেড়াতো আর যদি সেক্ষেত্রে (তারা) সেটা (প্রচার না করে) রসূল এবং নিজেদের ক্ষমতাসম্পন্ন লোকদের গোচরে আনতো তবে নিশ্চয় তাঁদের নিকট থেকে সেটার বাস্তবতা জানতে পারতো, যারা পরবর্তী (তথ্যানুসন্ধানের জন্য) প্রচেষ্টা চালায়; এবং যদি তোমাদের উপর আল্লাহ্র অনুগ্রহ এবং তাঁর দয়া না হতো, তবে অবশ্যই তোমরা শয়তানের অনুসরণ আরম্ভ করতে, অল্প সংখ্যক লোক ব্যতীত।
সুতরাং হে মাহবুব! আল্লাহ্র পথে যুদ্ধ করুন। আপনাকে কষ্ট দেয়া হবেনা, কিন্তু নিজেরই কাজের জন্য এবং মুসলমানদেরকে উদ্বুদ্ধ করুন! এটা দূরে নয় যে, আল্লাহ্ কাফিরদের প্রচন্ডতা প্রতিহত করবেন আর আল্লাহ্র শক্তি সর্বাধিক প্রবল এবং তাঁর শাস্তি সর্বাধিক কঠোর।
যে ব্যক্তি ভাল সুপারিশ করে তার জন্য সেটার মধ্যে অংশ রয়েছে এবং যে মন্দ সুপারিশ করে তার জন্য সেটার মধ্য থেকে অংশ রয়েছে আর আল্লাহ্ প্রত্যেক কিছুর উপর শক্তিমান।
এবং যখন তোমাদেরকে কেউ কোন বচন দ্বারা সালাম করে, তবে তোমরা তা অপেক্ষা উত্তম বচন তার জবাবে বলো, কিংবা অনুরুপই বলে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ্ প্রত্যেক কিছুর হিসাব গ্রহণকারী।
আল্লাহ্, তিনি ব্যতীত কারো ইবাদত নেই এবং তিনি নিশ্চয় তোমাদেরকে একত্র করবেন ক্বিয়ামতের দিন, যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই, আর আল্লাহ্ অপেক্ষা কার কথা অধিক সত্য?
সুতরাং তোমাদের কী হলো যে, মুনাফিকদের সম্বন্ধে দু’দল হয়ে গেছো? এবং আল্লাহ্ তাদেরকে কুঁজো করে দিয়েছেন তাদের কৃতকর্মের কারণে। তোমরা কি এটা চাও যে, তাকেই সৎপথ প্রদর্শন করবে যাকে আল্লাহ্ পথভ্রষ্ট করেছেন? এবং যাকে আল্লাহ্ পথভ্রষ্ট করেন, তবে তুমি কখনো তার জন্য পথ পাবে না।
তারা তো এটা কামনা করে যে, কোন মতে তোমরাও কাফির হয়ে যাও, যেমন তারা কাফির হয়েছে যাতে তোমরা সবাই এক সমান হয়ে যাও। সুতারাং তাদের মধ্যে থেকে কাউকে স্বীয় বন্ধুরুপে গ্রহণ করো না যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ্র পথে ঘর বাড়ি পরিত্যাগ করবে না। অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তাদেরকে গ্রেফতার করো এবং যেখানে পাও হত্যা করো, আর তাদের মধ্যে থেকে কাউকেও না বন্ধুরুপে গ্রহণ করো, না সাহায্যকারীরূপে।
কিন্তু ঐ সব (লোককে হত্যা করো না) যারা এমন সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্ক রাখে, যাদের সাথে তোমরা অঙ্গীকারবদ্ধ অথবা তোমাদের নিকট এমনভাবে আসলো যে, তাদের অন্তরসমূহে সাহস ছিলো না-তোমাদের সাথে যুদ্ধ করার অথবা আপন সম্প্রদায়ের সাথে যুদ্ধ করার। আর আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে অবশ্যই তাদেরকে তোমাদের উপর ক্ষমতা দিতেন। তখন তারা নিশ্চয় তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতো। অতঃপর যদি তারা তোমাদের নিকট থেকে চলে যায় এবং যুদ্ধ না করে ও শান্তি প্রস্তাব করে, তবে আল্লাহ্ তোমাদের জন্য তাদের বিরুদ্ধে কোন পথ রাখেন নি।
এখন তোমরা আরো এমন কিছু লোক পাবে, যারা এটা চায় যে, তোমাদের নিকট থেকেও নিরাপদে থাকবে এবং নিজেদের সম্প্রদায়ের নিকট থেকেও নিরাপদে থাকবে। যখনই তাদের সম্প্রদায় তাদেরকে ফ্যাসাদ এর দিকে ফেরায় তখন তারা সেটার উপর কুঁজো হয়ে পতিত হয়; অতঃপর যদি তারা তোমাদের নিকট থেকে চলে না যায় এবং সন্ধির গর্দান অবনত না করে ও আপন হাত সংবরণ না করে, তবে তাদেরকে গ্রেফতার করো এবং যেখানে পাও হত্যা করো। আর এরাই হচ্ছে তারা, যাদের বিরুদ্ধে আমি তোমাদেরকে সুস্পষ্ট ইখ্তিয়ার দিয়েছি।
এবং মুসলমানের জন্য এটা শোভা পায় না যে, মুসলমানদেরকে হত্যা করবে; কিন্তু হাত লক্ষ্যচ্যুত হলে (তা’স্বতন্ত্র); এবং যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে না জেনে হত্যা করে, তবে তার উপর একটা মুসলিম ক্রীতদাস আযাদ করা (অপরিহার্য) এবং রক্তপণ, যা নিহতের লোকজনকে অর্পণ করা হবে, যদি না তারা ক্ষমা করে দেয়; অতঃপর যদি সে ঐ সম্প্রদায় থেকে হয়, যারা তোমাদের শত্রু এবং নিজে হয় মুসলমান, তবে একজন মুসলিম ক্রীতদাস আযাদ করা (অপরিহার্য) এবং যদি সে এমন সম্প্রদায়ভূক্ত হয় যে, তোমাদের মধ্যে এবং তাদের মধ্যে চুক্তি রয়েছে তবে, তার লোকজনকে রক্তপণ অর্পন করা হবে এবং একজন মুসলিম ক্রীতদাস আযাদ করা (অপরিহার্য), সুতরাং যার সামর্থ্য নেই সে লাগাতার দু’মাস রোযা রাখবে। এটা হচ্ছে আল্লাহ্র নিকট তার তাওবা, এবং আল্লাহ্ জ্ঞানময়, প্রজ্ঞাময়।
আর যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে জেনে বুঝে হত্যা করে, তবে তার বদলা জাহান্নাম, দীর্ঘদিন তাতে থাকবে এবং আল্লাহ্ তার উপর রুষ্ট হয়েছেন আর তাকে অভিশম্পাত করেছেন। আর তার জন্য তৈরী রেখেছেন মহা শাস্তি।
হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা জিহাদে যাত্রা করো তখন বাচাই করে নাও এবং যে তোমাদেরকে সালাম করে তাকে এটা বলো না, ‘তুমি মুসলমান নও।’ তোমরা ইহ-জীবনের সামগ্রী কামনা করছো। সুতরাং আল্লাহ্র নিকট প্রচুর অনায়াসলভ্য সম্পদ (গনীমত) রয়েছে। পূর্বে তোমরাও এরুপ ছিলো। অতঃপর আল্লাহ্ তোমাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন। সুতরাং তোমাদের উপর যাচাই করা অপরিহার্য। নিশ্চয় আল্লাহ্র নিকট তোমাদের কার্যাদির খবর রয়েছে।
মুসলমানদের মধ্যে, যারা বিনা ওযরে জিহাদ থেকে বিরত থাকে এবং যারা আল্লাহ্র পথে স্বীয় প্রাণ ও ধন-সম্পদ দ্বারা জিহাদ করে তারা সমান নয়। আল্লাহ্ স্বীয় ধন সম্পদ এবং প্রাণ দ্বারা জিহাদকারীদের মর্যাদাকে যারা যুদ্ধ থেকে বিরত থাকে তাদের চেয়ে বড় করেছেন, এবং আল্লাহ্ সকলের সাথে কল্যাণের ওয়াদা করেছেন; আর আল্লাহ্ জিহাদকারীদেরকে, যারা যুদ্ধ থেকে বিরত থাকে তাদের উপর মহা পুরষ্কার দ্বারা শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন।
ঐসব লোক, যাদের প্রাণ ফিরিশ্তারা বের করেন, এমতাবস্থায় যে, তারা নিজেদের উপর অত্যাচার করতো, তাদেরকে ফিরিশ্তারা বলে, ‘তোমরা কী অবস্থায় ছিলে?’ তারা বলে, ‘আমরা পৃথিবীতে দুর্বল ছিলাম।’ তারা বলে, ‘আল্লাহ্র যমীন কি প্রশস্ত ছিলো না যে, তোমরা তাতে হিজরত করতে?’ সুতরাং এমন লোকদের ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম এবং অতীব মন্দ জায়গা ফিরে যাবার;
আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্র পথে ঘরবাড়ি ত্যাগ করে বের হবে সে পৃথিবীতে বহু আশ্রয়স্থল এবং অবকাশ পাবে; আর যে ব্যক্তি আপন ঘর থেকে বের হয়েছে আল্লাহ্ ও রসূলের প্রতি হিজরতকারী হয়ে, অতঃপর তাকে মৃত্যু পেয়ে বসেছে, তবে তার পুরষ্কার আল্লাহ্র দায়িত্বে এসে গেছে। এবং আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, দয়ালু।
এবং যখন তোমরা যমীনে সফর করো তখন তোমাদের এ’তে গুনাহ নেই যে, কোন কোন নামায ‘ক্বসর’ করে পড়বে; যদি তোমাদের আশংকা হয় যে, কাফির তোমাদেরকে কষ্ট দেবে। নিশ্চয় কাফিরগণ তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
এবং হে মাহবুব! যখন আপনি তাদের মধ্যে বিদ্যমান থাকেন, অতঃপর নামাযে তাদের ইমামত করেন, তখন উচিৎ যেন তাদের মধ্যে থেকে একটা দল আপনার সঙ্গে থাকে এবং তারা (অপর দল) নিজেদের হাতীয়ার নিয়ে প্রস্তুত থাকে। অতঃপর যখন তারা (যারা সাথে নামায আরম্ভ করেছে) সাজদা করে নেয় তখন তারা হটে দিয়ে তোমাদের পেছনেএসে যাবে। আর এখন দ্বিতীয় দল আসবে, যারা তখনো পর্যন্ত নামাযে শরীক ছিলো না, এখন তারা আপনার মুক্তাদী হবে এবং উচিৎ যেন স্বীয় আশ্রয় এবং হাতিয়ার নিয়ে অবস্থান করে, কাফিদের কামনা হচ্ছে যে, কখনো তোমরা নিজেদের অস্ত্রশস্ত্র এবং আসবাবপত্র থেকে অসর্তক হয়ে যাবে, তখনই তারা তোমাদের উপর একবারে ঝাঁপিয়ে পড়বে। আর বৃষ্টির কারণে যদি তোমাদের কষ্ট হয় কিংবা (তোমরা) পীড়িত হও তবে স্বীয় অস্ত্রশস্ত্র খুলে রাখার মধ্যে তোমাদের ক্ষতি নেই এবং আশ্রয় নিয়ে অবস্থান করো। নিশ্চয় আল্লাহ্ কাফিরদের জন্য লাঞ্ছনার শাস্তি তৈরী করে রেখেছেন।
অতঃপর যখন তোমরা নামায পড়ে নাও তখন আল্লাহ্র স্মরণ করো দন্ডায়মান হয়ে ও উপবিষ্ট হয়ে এবং করটসমূহের উপর শুয়ে। অতঃপর যখন নিরাপদ হয়ে যাও তখন বিধি মোতাবেক নামায কায়েম করো। নিঃসন্দেহে নামায মুসলমানদের জন্য সময় নির্দ্ধারিত ফরয।
এবং কাফিরদের তালাশ করার বেলায় আলস্য করো না। যদি তোমরা ক্লেশ পেয়ে থাকো, তবে তারাও ক্লেশ পায় যেমনি তোমরা পাও। আর তোমরা আল্লাহ্র নিকট থেকে ঐ আশা রাখো যা তারা রাখে না। এবং আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
হে মাহবুব! নিশ্চয় আমি আপনার প্রতি সত্য কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি লোকদের মধ্যে ফয়সালা করেন যেভাবে আল্লাহ্ আপনাকে দেখিয়েছেন;আরপ্রতারণাকারীদের পক্ষ থেকে বিতর্ক করবেন না।
লোকদের নিকট থেকে গোপন থাকে এবং আল্লাহ্র নিকট গোপন থাকে না আর আল্লাহ্ তাদের নিকটেই আছেন যখন অন্তরে সে কথার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, যা আল্লাহ্র নিকট অপছন্দনীয় এবং আল্লাহ্ তাদের কার্যাদিকে পরিবেষ্টন করে আছেন।
শুনছো, এই যে তোমরা! পার্থিব জীবনে তোমরা তো তাদের পক্ষ থেকে ঝগড়া করেছো। সুতরাং কে তাদের পক্ষ থেকে ঝগড়া করবে আল্লাহ্র সাথে ক্বিয়ামতের দিনে কিংবা কে তাদের মধ্যস্থতাকারী হবে?
এবং হে মাহবূব! যদি আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও দয়া আপনার উপর না থাকতো তবে তাদের মধ্যেকার কিছু লোক এটা চাচ্ছে যে, আপনাকে ধোঁকা দেবে; এবং তারা নিজেরা নিজেদেরকেই পথভ্রষ্ট করছে।আর আপনার কোন ক্ষতি করবে না এবং আল্লাহ্ আপনার উপর কিতাব ও হিকমত অবতীর্ণ করেছেন আর আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা কিছু আপনি জানতেন না এবং আপনার উপর আল্লাহ্র মহা অনুগ্রহ রয়েছে।
তাদের অধিকাংশ পরামর্শের মধ্যে কোন মঙ্গল নেই, কিন্তু যে ব্যক্তি নির্দেশ দেয়- দান-খয়রাত কিংবা ভালো কথা অথবা মানুষের মধ্যে সন্ধি স্থাপনের এবং যে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি চাওয়ার উদ্দেশ্যে এমন (কাজ) করে, তাকে অবিলম্বে আমি মহা প্রতিদান দেবো।
এবং যে ব্যক্তি রসূলের বিরোধিতা করে এর পর যে, সঠিক পথ তার সম্মুখে সুস্পষ্ট হয়েছে এবং মুসলমানদের পথ থেকে আলাদা পথে চলে, আমি তাকে তার অবস্থার উপর ছেড়ে দেবো এবং তাকে দোযখে প্রবেশ করাবো; আর (তা) প্রত্যাবর্তন করার কতোই মন্দ স্থান!
আল্লাহ্ এটা ক্ষমা করেন না যে, তার কোন শরীক দাঁড় করানো হবে এবং এর নিম্নপর্যায়ে যা কিছু আছে তা যাকে চান ক্ষমা করে দেন; আর যে আল্লাহ্র শরীক দাঁড় করায় সে দূরের পথভ্রষ্টতার মধ্যে পতিত হয়েছে।
শপথ রইলো, আমি নিশ্চয় তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে ছাড়বো এবং নিশ্চয় তাদের মধ্যে বাসনা সৃষ্টি করবো। আর অবশ্যই তাদেরকে নির্দেশ দেবো, অতঃপর তারা চতুষ্পদ পশুর কর্ণচ্ছেদ করবে এবং নিশ্চয়ই তাদেরকে বলবো, অতঃপর তারা আল্লাহ্র সৃষ্ট বস্তুগুলোকে বিকৃত করবে এবং যে আল্লাহ্কে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করছে সে সুস্পষ্ট ক্ষতির মধ্যে পতিত হয়েছে।
এবং যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, অবিলম্বে আমি তাদেরকে বাগানসমূহে নিয়ে যাবো, যে গুলোর পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত, সদা সর্বদা তারা সেগুলোর মধ্যে থাকবে। আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি সত্য; এবং আল্লাহ্ অপেক্ষা কার কথা অধিক সত্য?
কাজ না তোমাদের খেয়াল-খুশী অনুসারে এবং না কিতাবীদের কামনা অনুসারে।যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে (সে) তার প্রতিফল পাবে এবং আল্লাহ্ ব্যতীত নিজের জন্য না কোন অভিভাবক পাবে, না কোন সাহায্যকারী।
এবং ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা কার দ্বীন উত্তম, যে আপন চেহারা আল্লাহ্র জন্য ঝুকিয়ে দিয়েছে এবং সে হয় সৎকর্মপরায়ণ ও ইব্রাহীমের দ্বীনের অনুসরণ করেছে, যে প্রত্যেক প্রকার বাতিল থেকে পৃথক ছিলো? এবং আল্লাহ্ ইব্রাহীমকে আপন ঘনিষ্ট বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন।
এবং আপনার নিকট নারীদের সম্পর্কে ‘ফত্ওয়া’ জিজ্ঞাসা করছে।আপনি বলে দিন, ‘আল্লাহ্ তোমাদেরকে তাদের সম্পর্কে ফত্ওয়া দিচ্ছেন; এবং তাও (বলে দিচ্ছেন) যা তোমাদের নিকট কুরআনের মধ্যে পাঠ করা হয় ঐ এতিম কন্যাদের সম্পর্কে, যাদেরকে তোমরা প্রদান করছো না যা তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে এবং তাদেরকে বিবাহাধীণ আনতেও বিমুখ থাকছো আর দুর্বল শিশুদের সম্বন্ধে; এবং এটাও যে, এতিমদের প্রতি ন্যায়বিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকো; এবং তোমরা যেই সৎকর্ম করো, আল্লাহ্ সে সম্বন্ধে অবহিত রয়েছেন।
এবং যদি কোন নারী আপন স্বামীর দুর্ব্যবহার অথবা উপেক্ষার আশঙ্কা করে, তবে তাদের জন্য এতে গুনাহ্ নেই যে, পরস্পরের মধ্যে আপোষ-নিষ্পত্তি করে নেবে আর আপোষ-নিষ্পত্তি উত্তম এবং অন্তরসমূহ লোভ-লিপ্সার ফাঁদে আটক রয়েছে; আর যদি তোমরা সৎকর্ম ও খোদাভীরুতা অবলম্বন করো, তবে তোমাদের কর্মগুলো সম্পর্কে আল্লাহ্ খবর রাখেন।
এবং তোমরা কখনোস্ত্রীদেরকে সমানভাবে রাখতেপারবে না, যতোই ইচ্ছা করো না কেন, তখন এমন যেন না হয় যে, এক স্ত্রীর দিকে সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড়বে যার দরুন অপর স্ত্রীকে ঝুলানো অবস্থায় রেখে দেবে; এবং যদি তোমরা সৎকর্ম ও খোদাভীরুতা অবলম্বন করো, তবে নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, দয়ালু।
এবং যদি তারা উভয়ে পরস্পর পৃথক হয়ে যায়, তবে আল্লাহ্ তার প্রাচুর্য দ্বারা তোমাদের প্রত্যেককে অপরের দিক থেকে অভাবমুক্ত করে দেবেন এবং আল্লাহ্ প্রাচুর্যময়, প্রজ্ঞাময়।
আরআল্লাহ্রই যা কিছু আসমানসমূহে রয়েছে এবং যা কিছু যমীনে; আর নিশ্চয়ই আমি তাকীদ দিয়েছি তাদেরকে, যাদেরকে তোমাদের পূর্বে কিতাব দেওয়া হয়েছে এবং তোমাদেরকেও; যেন (তোমরা) আল্লাহ্কে ভয় করতে থাকো আর যদি কুফর করো,তবে নিঃসন্দেহে আল্লাহ্রই যা কিছু আসমানসমূহে রয়েছে আর যা কিছু রয়েছে যমীনে; এবং আল্লাহ্ অভাবমুক্ত, যাবতীয় প্রশংসাভাজন।
হে ঈমানদারগণ! ন্যায়বিচারের উপর দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাও আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে সাক্ষ্য প্রদানকারী অবস্থায়, যদিও তাতে তোমাদের নিজেদের ক্ষতি হয় অথবা মাতাপিতার কিংবা আত্নীয়-স্বজনের; যার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দাও সে বিত্তবান হোক কিংবা বিত্তহীন, সর্বাবস্থায় আল্লাহ্রই সেটার সর্বাধিক ইখতিয়ার রয়েছে। সুতরাং প্রবৃত্তির অনুগামী হয়ো না যাতে সত্য থেকে আলাদা হয়ে পড়ো; এবং যদি তোমরা হেরফের করো অথবা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে আল্লাহ্র নিকট তোমাদের কর্মগুলোর খবর রয়েছে।
হে ঈমানদারগণ! ঈমান রাখো আল্লাহ্ ও আল্লাহ্র রসূলের উপর এবং সেই কিতাবের উপর, যা আপন সেই রসূলের উপর অবতীর্ণ করেছেন আর ঐ কিতাবের উপর যা পূর্বে অবতীর্ণ করেছেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্কে এবং তার ফেরেশতাকুল, কিতাবসমূহ, রসূলগণ এবং ক্বিয়ামতকে অমান্য করে, সে অবশ্যই দূরের পথভ্রষ্টতার মধ্যে পড়েছে।
নিশ্চয় ঐ সব লোক, যারা ঈমান এনেছে, এরপর কাফির হয়েছে, অতঃপর ঈমান এনেছে, এরপর কাফির হয়েছে, অতঃপর কুফরের মধ্যে আরো অগ্রসর হয়েছে, আল্লাহ্ তাদেরকে না কখনো ক্ষমা করবেন, না তাদেরকে সৎপথ দেখাবেন।
এবং নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি কিতাবের মধ্যে অবতীর্ণ করেছেন যে, যখন তোমরা আল্লাহ্র আয়াতসমূহ সম্পর্কে শুনবে যে, সেগুলোকে প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে এবং সেগুলোর প্রতি বিদ্রূপ করা হচ্ছে, তবে ঐ সব লোকের সাথে বসো না, যতক্ষণ না তারা অন্য কথায় লিপ্ত হয়। অন্যথায় তোমরাও তাদের মতো হবে। নিঃসন্দেহে, আল্লাহ্ মুনাফিক্ব এবং কাফির সবাইকে জাহান্নামের মধ্যে একত্রিত করবেন।
ঐ সব লোক, যারা তোমাদের (শুভা-শুভ) অবস্থার প্রতীক্ষা করে, তবে যদি আল্লাহ্র পক্ষ থেকে তোমাদের বিজয় লাভ হয়, তাহলে তারা বলে, ‘আমরা কি তোমাদের সাথে ছিলাম না?’ আর ভাগ্য (বিজয়) যদি কাফিরদের অনুকূলে হয়, তবে তাদেরকে বলে, ‘তোমাদের উপর কি আমাদের ক্ষমতা ছিলো না? এবং আমরা তোমাদেরকে মুসলমানদের হাত থেকে রক্ষা করেছি। সুতরাং আল্লাহ্ তোমাদের সবার মধ্যে ক্বিয়ামত দিবসের ফয়সালা করে দেবেন; এবং আল্লাহ্ কাফিরদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে কোন পথ (করে) দেবেন না।
নিশ্চয় মুনাফিক্ব লোকেরা নিজের ধারণায়, আল্লাহ্কে প্রতারিত করতে চায়; বস্তুত তিনিই তাদেরকে অন্যমনস্ক করে মারবেন; আর যখন নামাযে দাঁড়ায় তখন মনভোলা অবস্থায়, মানুষকে দেখায় (মাত্র) এবং আল্লাহ্কে স্মরণ করে না কিন্তু অল্প সংখ্যক লোক।
হে ঈমানদাররা! কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না মুসলমানদের ব্যতীত। তোমরা কি এটা চাও যে, নিজেদের বিরুদ্ধে আল্লাহ্র জন্য সুস্পষ্ট প্রমাণ স্থির করে নেবে?
কিন্তু ঐ সব লোক, যারা তাওবা করেছে এবং সংশোধন করেছে আর আল্লাহ্র রজ্জুকে আকড়ে ধরেছে এবং নিজেদের দ্বীনকে শুধু আল্লাহ্রই উদ্দেশ্যে করে নিয়েছে, তবে এরা মুসলমানদের সাথে রয়েছে আর অবিলম্বে আল্লাহ্ মুসলমানদের মহা পুরস্কার দেবেন।
এবং (নিশ্চয়) যারা আল্লাহ্ ও তার রসূলগণকে অমান্য করে এবং চায় যে, আল্লাহ্ থেকে তার রসূলগণকে পৃথক করে নেবে, এবং বলে, ‘আমরা কতেকের উপর ঈমান আনি এবং কতেককে অস্বীকার করি’, আর এটা চায় যে, ঈমান ও কুফরের মাঝখানে অন্য একটা পথ বের করে নেবে;
এবং ঐ সব লোক, যারা আল্লাহ্ ও তার রসূলগণের উপর ঈমান এনেছে আর তাদের মধ্যে কারো উপর ঈমান আনার ক্ষেত্রে পার্থক্য করে না, অবিলম্বে আল্লাহ্ তাদেরকে তাদের প্রতিদান দেবেন; এবং আল্লাহ্ ক্ষমাশীল দয়ালু।
হে মাহবূব! কিতাবী সম্প্রদায় আপনার নিকট দাবী করছে, যেন (আপনি) তাদের প্রতি আসমান থেকে একটা কিতাব অবতরণ করিয়ে দেন; তবে তারা তো মূসার নিকট এটা অপেক্ষাও বড় দাবী করেছে। সুতরাং তারা বলেছে, ‘আমাদেরকে প্রকাশ্যে আল্লাহ্ দেখাও।’ তখন তাদেরকে বজ্রাঘাত পেয়ে বসলো তাদের পাপরাশির কারণে; অতঃপর গো-বৎসকে (উপাস্যরূপে) গ্রহণ করে বসেছে এরপর যে, স্পষ্ট প্রমাণাদি তাদের নিকট এসেছে। তখন আমি ক্ষমা করে দিয়েছি; এবং আমি মূসাকে স্পষ্ট বিজয় দান করেছি।
অতঃপর আমি তাদের ঊর্ধ্বে ‘তূর’ (পাহাড়)কে উত্তোলন করেছি তাদের নিকট থেকে অঙ্গীকার নেওয়ার জন্য; এবং তাদেরকে বলেছি, ‘প্রবেশদ্বার দিয়ে সাজদারত অবস্থায় প্রবেশ করো’ এবং তাদেরকে বলেছি, ‘শনিবারে সীমালংঘন করো না’; আর তাদের নিকট থেকে আমি দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়েছি।
তখন তাদের কেমন অঙ্গীকার-ভঙ্গের কারণেই আমি তাদের উপর অভিসম্পাত করেছি! এবং এ কারণেও যে, তারা আল্লাহ্র আয়াতকে অস্বীকার করেছে এবং নবীগণকে অন্যায়ভাবে শহীদ করতো এবং তাদের এ উক্তির কারণেও- ‘আমাদের হৃদয়ের উপর আচ্ছাদন রয়েছে;’ বরং আল্লাহ্ তাদের কুফরের কারণেই তাদের হৃদয়গুলোর উপর মোহর চেপে দিয়েছেন। সুতরাং ঈমান আনে না, কিন্তু অল্প সংখ্যকই।
এবং তাদের এ উক্তির কারণে, ‘আমরা আল্লাহ্র রসূল মরিয়ম তনয় ঈসা মসীহ্কে শহীদ করেছি’ আর প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে এটাই যে, তারা তাকে না হত্যা করেছে এবং না তাকে ক্রুশবিদ্ধ করেছে; বরং তাদের জন্য তারই সদৃশ একটা তৈরী করে দেয়া হয়েছে; এবং ঐ সব লোক, যারা তার সম্পর্কে মতভেদ করছে নিশ্চয় তারা তার ব্যাপারে সন্দেহের মধ্যে পড়ে রয়েছে; তাদের এ সম্পর্কে কোন খবরই নেই, কিন্তু এ ধারণারই অনুসরণ মাত্র; এবং নিঃসন্দেহে তারা তাকে হত্যা করেনি;
অতঃপর ইহুদীদের বড় যুল্মের কারণে আমি ঐ কতেক পবিত্র বস্তু, যেগুলো তাদের জন্য হালাল ছিলো, তাদের উপর হারাম করে দিয়েছি; এবং এ কারণে যে, তারা অনেককে আল্লাহ্র পথে বাধা দিয়েছে;
এবং এ কারণে যে, তারা সুদ গ্রহণ করতো; অথচ তা তাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো; এবং লোকের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করে বসতো; আর তাদের মধ্যে যারা কাফির হয়েছে, আমি তাদের জন্য বেদনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।
হাঁ, তাদের মধ্যে যারা জ্ঞানে পরিপক্ক এবং ঈমানদার, তারা ঈমান আনে সেটার উপর যা, হে মাহবূব! আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং যা আপনার পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে আর নামায প্রতিষ্ঠাকারীগণ, যাকাত প্রদানকারীগণ এবং আল্লাহ্ ও ক্বিয়ামতের উপর ঈমান আনয়নকারীগণ। এমন লোকদেরকে আমি অবিলম্বে বড় সাওয়াব দান করবো।
নিঃসন্দেহে, হে মাহবূব! আমি আপনার প্রতি ওহী প্রেরণ করেছি, যেমন ওহী নূহ ও তার পরবর্তী নবীগণের প্রতি প্রেরণ করেছি; এবং আমি ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক্ব, ইয়া’ক্বূব ও তাদের পুত্রগণ; আর ঈসা, আইয়ূব, ইয়ূনুস, হারূন এবং সুলায়মানের প্রতি ওহী প্রেরণ করেছি; এবং আমি দাঊদকে যাবূর দান করেছি।
এবং ঐ রসূলগণকে (প্রেরণ করেছি) যাদের উল্লেখ আমি আপনার নিকট পূর্বে করেছি আর ঐ সব রসূলকে যাদের উল্লেখ আপনার নিকট করিনি। আর আল্লাহ্ মূসার সাথে প্রকৃত অর্থে কথা বলেছেন।
রসূলগণকে (প্রেরণ করেছি) সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী করে, যাতে রসূলগণের পরে আল্লাহ্র নিকট মানুষের কোন অভিযোগের অবকাশ না থাকে; এবং আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
কিন্তু, হে মাহবূব! আল্লাহ্ সেটারই সাক্ষী, যা তিনি আপনার প্রতি অবতারণ করেছেন। তিনি তা স্বীয় জ্ঞান থেকে অবতীর্ণ করেছেন; আর ফিরিশ্তারাও সাক্ষী রয়েছে; এবং আল্লাহ্র সাক্ষ্যই যথেষ্ট।
হে মানবজাতি! তোমাদের নিকট এ রসূল সত্য সহকারে তোমাদের রবের নিকট থেকে শুভাগমন করেছেন; সুতরাং ঈমান আনো তোমাদের কল্যাণার্থে; এবং তোমরা যদি কুফর করো, তবে নিশ্চয় আল্লাহ্রই যা কিছু আসমানসমূহ ও যমীনের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে; আর আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
হে কিতাবীগণ, স্বীয় দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহ্ সম্বন্ধে বলো না, কিন্তু সত্যকথা। মসীহ ঈসা, মার্য়াম-তনয় আল্লাহ্র রসূলই এবং তার একটা ‘কলেমা’, যা তিনি মরিয়মের নিকট প্রেরণ করেছেন আর তারই নিকট থেকে একটা ‘রূহ’। সুতরাং আল্লাহ্ ও তার রসূলগণের উপর ঈমান আনো; এবং ‘তিন’ বলো না; বিরত থাকো স্বীয় কল্যাণার্থে। আল্লাহ্ তো একমাত্র খোদা। পবিত্রতা তারই এ থেকে যে, ‘তার কোন সন্তান থাকবে’; তারই সম্পদ যা কিছু আসমানসমূহে রয়েছে এবং যা কিছু রয়েছে যমীনে। আর আল্লাহ্ই যথেষ্ট কর্মবিধানে।
মসীহ ‘আল্লাহ্র বান্দা হওয়া’কে বিন্দুমাত্র ঘৃণা করে না এবং না ঘনিষ্ট ফিরিশ্তাগণ; আর যে আল্লাহ্র ‘বান্দা হওয়া’কে ঘৃণা করে ও অহংকার করে, তবে অনতিবিলম্বে তিনি তাদের সবাইকে নিজের দিকে একত্র করবেন।
সুতরাং ঐ সব লোক, যারা ঈমান এনেছে এবং ভালোকাজ করেছে তিনি তাদের কর্মের প্রতিদান তাদেরকে পূর্ণরূপে প্রদান করবেন এবং নিজ করুণায় তাদেরকে বেশী দেবেন; আর ঐ সব লোক, যারা ঘৃণা ও অহংকার করেছিলো তাদেরকে বেদনাদায়ক শাস্তি প্রদান করবেন; এবং আল্লাহ্ ব্যতীত নিজেদের জন্য না কোন অভিভাবক পাবে, না সহায়ক।
সুতরাং ঐ সব লোক, যারা আল্লাহ্র উপর ঈমান এনেছে এবং তার রজ্জুকে আকড়ে ধরেছে, অদূর ভবিষ্যতে (আল্লাহ্) তাদেরকে স্বীয় দয়া ও অনুগ্রহের মধ্যে দাখিল করবেন এবং তাদেরকে তার দিকে সরল পথ দেখাবেন।
হে মাহবূব! আপনার নিকট ‘ফতোয়া’ জিজ্ঞাসা করছে। সুতরাং আপনি বলে দিন! ‘আল্লাহ্ তোমাদেরকে পিতা ও সন্তানবিহীন ব্যক্তি সম্বন্ধে ‘ফতোয়া’ দিচ্ছেন- যদি এমন কোন পুরুষ লোকান্তর হয়, যে নিঃসন্তান হয় এবং তার এক বোন থাকে তবে পরিত্যক্ত সম্পত্তির মধ্যে তার বোনের জন্য অর্ধাংশ; এবং পুরুষ তার বোনের উত্তরাধিকারী হবে যদি বোনের সন্তান না থাকে। অতঃপর, যদি দু’বোন থাকে তবে পরিত্যক্ত সম্পত্তির মধ্যে তাদের জন্য দু’তৃতীয়াংশ। আর যদি ভাই বোন উভয়ই থাকে- পুরুষও, নারীও, তবে পুরুষের অংশ দু’নারীর মধ্যে সমান। আল্লাহ্ তোমাদের জন্য পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করেন, যাতে কিছুতেই তোমরা পথভ্রষ্ট না হও এবং আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে অবহিত।