মানবজাতিকে সৎ পথ প্রদর্শনের জন্য; এবং ফয়সালা অবতারণ করেছেন। নিশ্চয় ঐ সব লোক, যারা আল্লাহ্র আয়াতসমূহকে অস্বীকারকারী হয়েছে তাদের জন্য কঠোর শাস্তি রয়েছে এবং আল্লাহ্ মহা পরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী।
তিনিই হন যিনি আপনার উপর এ কিতাব অবতারণ করেছেন, এ কতেক আয়াত সুস্পষ্ট অর্থবোধক; সেগুলো কিতাবের মূল এবং অন্যগুলো হচ্ছে ঐ সব আয়াত, যেগুলোর মধ্যে একাধিক অর্থের সম্ভাবনা রয়েছে। ঐসব লোক, যাদের অন্তরসমূহে বক্রতা রয়েছে, তারা একাধিক অর্থের সম্ভাবনাময় আয়াতগুলোর পেছনে পড়ে পথভ্রষ্টতা চাওয়ার ও এর ব্যাখা তালাশ করার উদ্দেশ্যে এবং এর সঠিক ব্যাখা আল্লাহ্রই জানা আছে। আর পরিপক্ক জ্ঞান-সম্পন্ন লোকেরা বলে, ‘আমরা সেটার উপর ঈমান এনেছি; সবই আমাদের রবের নিকট থেকে’ এবং উপদেশ গ্রহণ করেনা কিন্তু বোধ শক্তিসম্পন্নরা।
হে রব আমাদের! নিঃসন্দেহে তুমি সমস্ত মানুষকে একত্রে সমাবেশকারী সেদিনের জন্য, যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই। নিঃসন্দেহে, আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি পরিবর্তিত হয় না।
নিশ্চয় ঐসব লোক, যারা কাফির হয়েছে, তাদের ধন-সম্পদ ও তাদের সন্তান-সন্ততি আল্লাহ্ থেকে তাদেরকে যৎসামান্যও রক্ষা করতে পারবে না এবং তারাই হচ্ছে দোযখের ইন্ধন।
যেমন ফিরআউনের অনুসারীরা ও তাদের পূর্ববর্তীদের রীতি। তারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। অতঃপর আল্লাহ্ তাদের গুনাহ্র উপর তাদেরকে পাকড়াও করেছেন এবং আল্লাহ্র শাস্তি কঠিন।
নিশ্চয় তোমাদের জন্য নিদর্শন ছিলো দু’ দলের মধ্যে, যারা পরষ্পর মুখোমুখি হয়েছিলো। একদল আল্লাহ্র পথে যুদ্ধ করছিলো এবং অন্যদল কাফির তাদেরকে চোখ-দেখায় নিজেদের অপেক্ষা দ্বিগুণ মনে করতো; এবং আল্লাহ্ স্বীয় সাহায্য দ্বারা শক্তি দান করেন যাকে ইচ্ছা করেন। নিশ্চয় এর মধ্যে বিবেকবানদের জন্য অবশ্যই চাক্ষুষ শিক্ষা রয়েছে।
মানুষের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে এসব প্রবৃত্তির মায়া-মহব্বত-নারীগণ, পুত্রগণ, উপরে-নীচে রাশি রাশি স্বর্ণ রৌপ্য, চিহ্নিত অশ্বরাজি, গবাদি পশু এবং ক্ষেত-খামার। এসব হচ্ছে ইহ-জীবনের পুঁজি এবং আল্লাহ্ হন, যাঁর নিকট উত্তম আশ্রয়স্থল রয়েছে।
(হে হাবীব!) আপনি বলুন, আমি কি তোমাদেরকে এগুলো অপেক্ষা উৎকৃষ্টতর বস্তুর কথা বলে দেবো? খোদাভীরুদের জন্য তাদের রবের নিকট জান্নাতসমূহ রয়েছে, যেগুলোর পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত; (তারা) সেগুলোর মধ্যে স্থায়ীভাবে থাকবে এবং পবিত্র স্ত্রীগণ ও আল্লাহ্র সন্তুষ্টি (রয়েছে); আর আল্লাহ্ বান্দাদেরকে দেখেন।
আল্লাহ্ সাক্ষ্য প্রদান করেছেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই আর ফিরিশ্তাগণ এবং জ্ঞানীগণ ও ন্যায়নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে। তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত নেই, মহা মর্যাদাবান, প্রজ্ঞাময়।
নিঃসন্দেহে আল্লাহ্র নিকট ইসলামই (একমাত্র) ধর্ম; এবং পরষ্পর বিরোধে পড়েনি কিতাবীরা কিন্তু এর পরে যে, তাদের নিকট জ্ঞান এসেছে; নিজেদের অন্তরের বিদ্বেষবশতঃ; এবং যারা আল্লাহ্র আয়াতসমূহকে অস্বীকারকারী হয়, তবে নিশ্চয় আল্লাহ্ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।
অতঃপর হে মাহবুব! যদি তারা আপনার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়, তবে বলে দিন, ‘আমি আপন চেহারা আল্লাহ্র সামনে অবনত করেছি এবং যারা আমার অনুসারী হয়েছে, আর কিতাবী সম্প্রদায় ও পড়াবিহীন লোকদেরকে বলে দিন, ‘তোমরা কি গর্দান অবনত করেছো?’ সুতরাং তারা যদি গর্দান অবনত করে থাকে, তবেই তো সঠিক পথ পেয়ে গেছে। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে (হে হাবীব!) আপনার কর্তব্য তো এই নির্দেশ পৌঁছিয়ে দেয়া মাত্র। এবং আল্লাহ্ বান্দাদেরকে দেখছেন।
ঐসব লোক, যারা আল্লাহ্র আয়াতসমূহকে অস্বীকারকারী হয় এবং পয়গাম্বরগণকে অন্যায়ভাবে শহীদ করে, আর ন্যায়পরায়ণতার নির্দেশদাতারদেরকে হত্যাকরে, তাদেরকে সুসংবাদ দিন বেদনাদায়ক শাস্তির!
(হে হাবীব!) আপনি কি তাদেরকে দেখেন নি, যারা কিতাবের একটা অংশপ্রাপ্ত হয়েছে? আল্লাহ্র কিতাবের প্রতি আহবান করা হচ্ছে যেন সেটা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়, অতঃপর তাদের মধ্যেকার একটা দল তা থেকে পরান্মুখ হয়ে ফিরে যায়।
এ দুঃসাহস তাদের এ জন্য হলো যে, তারা বলে, ‘অবশ্যই আমাদেরকে আগুন স্পর্শ করবে না, কিন্তু (হাতে গোনা) দিন কতেক’ এবং তাদের ধর্মের মধ্যে তাদেরকে ধোকা দিয়েছিলো সেই মিথ্যা, যা তারা রচনা করছিলো।
সুতরাং কেমন হবে, যখন আমি তাদেরকে একত্রিত করবো ওই দিনের জন্য, যাতে সন্দেহ নেই এবং প্রত্যেককে তার উপার্জন পূর্ণ মাত্রায় প্রদান করা হবে; আর তাদের উপর যুলুম করা হবে না।
এরূপ আরয করো, ‘হে আল্লাহ্, বিশ্ব-রাজ্যের মালিক! তুমি যাকে চাও সম্রাজ্য প্রদান করো এবং যার থেকে চাও সাম্রাজ্য ছিনিয়ে নাও। আর যাকে চাও সম্মান প্রদান করো এবং যাকে চাও লাঞ্চনা দাও। সমস্ত কল্যাণ তোমারই হাতে। নিঃসন্দেহে তুমি সব কিছু করতে পারো।
তুমি দিনের অংশ রাতের মধ্যে প্রবিষ্ট করো এবং রাতের অংশ দিনের মধ্যে প্রবিষ্ট করো। আর মৃত থেকে জীবিত বের করো এবং জীবিত থেকে মৃত বের করো। আর যাকে চাও অগণিত দান করো।
মুসলমান কাফিরদেরকে যেন আপন বন্ধু না বানিয়ে নেয় মুসলমানগণ ব্যতীত। আর যে ব্যক্তি এরূপ করবে, আল্লাহ্র সাথে তার কোন সম্পর্ক রইলো না; কিন্তু এ যে, তোমরা তাদেরকে কিছুটা শঙ্কা করবে; এবং আল্লাহ্ তোমাদেরকে আপন ক্রোধ সম্পর্কে ভয় প্রদর্শন করছেন; আর আল্লাহ্রই প্রতি প্রর্ত্যাবর্তন করতে হবে।
(হে হাবীব!) আপনি বলে দিন, ‘যদি তোমরা আপন অন্তরের কথা গোপন করো কিংবা প্রকাশ করো-আল্লাহ্ সবই জানেন; এবং জানেন যা কিছু আসমান সমূহে রয়েছে আর যা কিছু যমীনে রয়েছে; এবং প্রত্যেক কিছুর উপর আল্লাহ্র ক্ষমতা রয়েছে।
যে দিন প্রত্যেকে, যেই ভাল কাজ করেছে তা উপস্থিত পাবে এবং যে কোন মন্দ কাজ করেছে (তাও উপস্থিত পাবে), সেদিন কামনা করবে, ‘হায়! যদি আমার এবং সেটার মাঝখানে দূর ব্যবধান থাকতো!’ এবং আল্লাহ্ তোমাদেরকে আপন শাস্তি থেকে ভয় প্রদর্শন করছেন; আর আল্লাহ্ বান্দাদের প্রতি দয়ার্দ্র।
হে মাহবুব! আপনি বলে দিন, ‘হে মানবকুল, যদি তোমরা আল্লাহ্কে ভালবেসে থাকো তবে আমার অনুসারী হয়ে যাও, আল্লাহ্ তোমাদেরকে ভালবাসেন এবং আল্লাহ্ তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করবেন; আর আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, দয়ালু।’
যখন ইমরানের স্ত্রী আরয করলো, ‘হে আমার রব, আমি তোমার জন্য মান্নত করেছি যা আমার গর্ভে রয়েছে যে, একান্ত তোমারই সেবায় থাকবে। সুতরাং তুমি আমার নিকট থেকে কবুল করে নাও। নিঃসন্দেহে, তুমিই শ্রোতা, জ্ঞাতা।’
অতঃপর যখন তাকে প্রসব করলো, তখন বললো, ‘হে রব আমার! এতো আমি কন্যা প্রসব করলাম।’ এবং আল্লাহ্র সম্যক জানা আছে যা সে প্রসব করেছে। আর ওই পুত্র সন্তান, যা সে চেয়েছিলো, এ কন্যা সন্তানের মতো নয়।’ এবং আমি তার নাম মরিয়ম রাখলাম। আর তাকে এবং তার বংশধরকে তোমার আশ্রয়ে দিচ্ছি বিতাড়িত শয়তান থেকে।’
অতঃপর তাকে তার রব উত্তমরূপে কবূল করলেন এবং তাকে উত্তমরূপে প্রতিপালন করলেন আর তাকে যাকারিয়ার তত্ত্বাবধানে দিলেন। যখন যাকারিয়া তার নিকটতার নামায পড়ার স্থানে যেতো তখন তার নিকট নতুন রিয্ক্ব পেতো। বললো, ‘হে মরিয়ম! এটা তোমার নিকট কোত্থেকে আসলো?’ বললো, ‘সেটা আল্লাহ্র নিকট থেকে।’ নিশ্চয়, আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা অগণিত দান করেন।
তখন ফিরিশ্তাগণ তাকে সাড়া দিলো এবং সে আপন নামাযের স্থানে দণ্ডায়মান অবস্থায় নামায পড়ছিলো, ‘নিশ্চয়, আল্লাহ্ আপনাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন ইয়াহ্য়ার, যে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে একটা কলেমার সত্যায়ন করবে এবং সরদার ও সব সময়ের জন্য নারীদের থেকে বিরত থাকবে এবং নবী, আমার খাস বান্দাদের মধ্য থেকে।’
আরয করলেন, ‘হে আমার রব! আমার জন্য কোন নির্দশন করে দিন!’ এরশাদ করলেন, ‘তোমার নিদর্শন এই যে, তিনদিন পর্যন্ত তুমি লোকজনের সাথে কথাবার্তা বলবে না, কিন্তু ইঙ্গিতে-ইশারায় এবং আপন রবকে খুব স্মরণ করো; আর বিকেলেও প্রভাতে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করো।’
এবং যখন ফিরিশ্তাগণ বললো, ‘হে মরিয়ম! নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাকে মনোনীত করে নিয়েছেন, খুব পবিত্র করেছেন এবং আজকার সমগ্র বিশ্বের নারীদের থেকে তোমাকে মনোনীত করেছেন।’
এগুলো অদৃশ্যের সংবাদ, যেগুলো আমি গোপনভাবে আপনাকে বলে থাকি এবং আপনি তাদের নিকট ছিলেন না যখন তারা তাদের কলমগুলো দ্বারা লটারী টানছিলো (এ বিষয়ে) যে, মরিয়ম কার লালন-পালনের দায়িত্বে থাকবে! আর আপনি তাদের নিকট ছিলেন না যখন তারা বাদানুবাদ করছিলো।
এবং স্মরণ করুন! যখন ফিরিশ্তারা মরিয়মকে বললো, ‘হে মরিয়ম! আল্লাহ্ তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন তাঁর নিকট থেকে একটা কলেমার, যার নাম হচ্ছে মসীহ্ ঈসা, মরিয়মের পুত্র, মর্যাদাবান হবে দুনিয়া ও আখিরাতে এবং নৈকট্যপ্রাপ্ত;
বললো, ‘হে আমার রব! আমার সন্তান কোত্থেকে হবে? আমাকে তোকোন পুরুষ স্পর্শ করেনি।’ এরশাদ করলেন, ‘আল্লাহ্ এভাবেই সৃষ্টি করেন যা ইচ্ছা করেন। যখন কোন কাজের হুকুম করেন তখন তাকে এটাই বলে থাকেন, ‘হয়ে যাও!’ সেটা তৎক্ষণাৎ হয়ে যায়।’
আর রসূল হবে বনী ইস্রাইলের প্রতি, এ কথার ঘোষণা দিয়ে যে, ‘আমি তোমাদের নিকট একটা নিদর্শন নিয়ে এসেছি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যে, আমি তোমাদের জন্য মাটি দ্বারা পাখী সদৃশ আকৃতি গঠন করে থাকি, অতঃপর সেটার মধ্যে ফুৎকার করি। তখন সেটা তৎক্ষণাৎ পাখী হয়ে যায় আল্লাহ্র নির্দেশে এবং আমি নিরাময় করি জন্মান্ধ ও সাদা দাগসম্পন্ন (কুষ্ঠ রোগী)-কে আর আমি মৃতকে জীবিত করি আল্লাহ্র নির্দেশে; এবং তোমাদেরকে বলে দিই, যা তোমরা আহার করো আর যা নিজ নিজ ঘরে জমাকরে রাখো। নিশ্চয়ই এসব কথার মধ্যে তোমাদের জন্য মহান নিদর্শন রয়েছে যদি তোমরা ঈমান রাখো।
এবং সত্যায়নকারীরুপে এসেছি আমার পূর্বেকার কিতাব তাওরীতের, আর এজন্য যে, হালাল করবো তোমাদের জন্য এমন কিছু বস্তুকে যেগুলো তোমাদের ওপর হারাম ছিল এবং আমি তোমাদের নিকট তোমাদের রবের নিকট থেকে নিদর্শন নিয়ে এসেছি। সুতরাং আল্লাহ্কে ভয় করো এবং আমার হুকুম মান্য করো!
অতঃপর যখন ঈসা তাদের মধ্যে কুফর পেলো তখন বললো, ‘কারা আমার সাহায্যকারী আল্লাহ্র প্রতি?’ সাহায্যকারীরা (হাওয়ারী) বললো, ‘আমরা খোদার দ্বীনের সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহ্র উপর ঈমান এনেছি এবং আপনি সাক্ষী থাকুন যে, আমরা মুসলমান।’
হে আমাদের রব! আমরা সেটার উপর ঈমান এনেছি, যা তুমি অবতারণ করেছো এবং রসূলের অনুসারী হয়েছি। সুতরাং আমাদেরকে সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য প্রদানকারীদের মধ্যে লিপিবদ্ধ করো।’
স্মরণ করুন! যখন আল্লাহ্ বলেন, ‘হে ঈসা! আমি তোমাকে পরিপূর্ণ বয়সে পৌঁছাবো, আমার প্রতি তোমাকে উঠিয়ে নেবো, তোমাকে কাফিরদের থেকে পবিত্র করে দেবো এবং তোমার অনুসারীদেরকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত তোমার অস্বীকারকারীদের উপর বিজয় দান করবো।’ অতঃপর তোমরা সবাই আমার প্রতি ফিরে আসবে। অতঃপর আমি তোমাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেবো যে বিষয়ে তোমরা মতবিরোধ করছো।
অতঃপর, হে মাহবুব! যে ব্যক্তি আপনার সাথে ঈসা সম্পর্কে বিতর্ক করে এর পরে যে, আপনার নিকট জ্ঞান (ওহী) এসেছে, তবে তাদেরকে বলে দিন, ‘এসো, আমরা ডেকে নিই আমাদের পুত্রদেরকে ও তোমাদের পুত্রদেরকে এবং আমাদের নারীদেরকে ও তোমাদের নারীদেরকে এবং আমাদের নিজেদেরকে ও তোমাদের নিজেদেরকে! অতঃপর ‘মুবাহালাহ্’ করি। তারপর মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহ্র লা’নত দিই।’
(হে হাবীব!) আপনি বলুন! ‘হে কিতাবীরা! এমন কলেমার প্রতি এসো, যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে এক সমান। (তা) এই যে, আমরা যেন ইবাদত না করি কিন্তু আল্লাহ্রই এবং কাউকেও তাঁর শরীক না করি আর আমাদের মধ্যে কেউ অপরকে রবও না বানিয়ে নিই, আল্লাহ্ ব্যতীত।’ অতঃপর যদি তারা না মানে, তবে বলে দাও, ‘তোমরা সাক্ষী থাকো যে, আমরা মুসলমান।’
শুনছো, এ যে তোমরা! সেই বিষয়ে ঝগড়া করেছো, যার সম্পর্কে তোমাদের জ্ঞান ছিলো। সুতরাং সে বিষয়ে কেন ঝগড়া করছো, যে বিষয়ে তোমাদের জ্ঞান নেই? এবং আল্লাহ্ জানেন আর তোমরা জানো না।
কিতাবীদের একটা দল আন্তরিকভাবে এ কামনা করে যে, যে কোন প্রকারে তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করে ছাড়বে। আর তারা নিজেরাই নিজেদেরকে পথভ্রষ্ট করে এবং তাদের অনুভূতি নেই।
এবং বিশ্বাস করো না, কিন্তু তাকে, যে তোমাদের ধর্মের অনুসারী হবে।’ (হে হাবীব!) আপনি বলুন, ‘আল্লাহ্র হিদায়তই হিদায়ত।’ (বিশ্বাস কিছুতেই করোনা) এতে যে, কাউকে প্রদান করা হবে যেমন তোমাদেরকে প্রদান করা হয়েছে কিংবা কেউ তোমাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ দাঁড় করাতে পারবে তোমাদের রবের নিকট।’ আপনি বলে দিন, ‘অনুগ্রহ তো আল্লাহ্রই হাতে; যাকে চান প্রদান করেন।’ আর প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।
এবং কিতাবীদের মধ্যে কিছু এমন লোক রয়েছে যে, যদি তুমি তার নিকট বিপুল সম্পদ আমানত রাখো, তবে সে তা তোমাকে ফিরিয়ে দেবে। আর তাদের মধ্যে কিছু এমন লোকও রয়েছে যে, যদি একটা স্বর্ণমুদ্রা তার নিকট আমানত রাখো, তবে সে তাও তোমাকে ফেরৎ দেবেনা কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি তার মাথার উপর দন্ডায়মান থাকো (তার পেছনে লেগে থাকো)। এটা এজন্য যে, তারা বলে, ‘নিরক্ষর লোকদের মামলায় আমাদের উপরকোন জবাবদিহিতা নেই।’ আর তারা আল্লাহ্ সম্পর্কে জেনে বুঝে মিথ্যা রচনা করে।
ঐসব লোক, যারা আল্লাহ্র অঙ্গীকার এবং নিজেদের শপথের পরিবর্তে হীনমূল্য গ্রহন করে, পরকালে তাদের কোন অংশ নেই এবং আল্লাহ্ নাতাদের সাথে কথা বলবেন, না তাদের প্রতিদৃষ্টিপাত করবেন ক্বিয়ামতের দিন এবং না তাদেরকে পবিত্র করবেন। আর তাদের জন্য যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি রয়েছে।
এবং তাদের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে, যারা জিহ্বা ঘুরিয়ে কিতাবের সাথে মিল করে দেয়, যাতে তোমরা বুঝো যে, সেটাও কিতাবের মধ্যে আছে, অথচ সেটা কিতাবের মধ্যে নেই। এবং তারা বলে, ‘এটা আল্লাহ্র নিকট থেকে;’ অথচ সেটা আল্লাহ্র নিকট থেকে নয়। আর আল্লাহ্ সম্পর্কে জেনেশুনে (তারা) মিথ্যা রচনা করে।
কোন মানুষের এ অধিকার নেই যে, আল্লাহ্ তাকে কিতাব, হুকুম এবং পয়গাম্বরী প্রদান করবেন; অতঃপর সে মানুষকে বলবে, ‘আল্লাহ্কে ছেড়ে আমার বান্দা হয়ে যাও।’ হাঁ এটা বলবে, ‘আল্লাহ্ ওয়ালা হয়ে যাও!’ এ কারণে যে, তোমরা কিতাব শিক্ষাদান করো এবং এ কারণে যে, তোমরা অধ্যায়ন করে থাকো।
এবং স্মরণ করুন! যখন আল্লাহ্ নবীগণের নিকট থেকে তাদের অঙ্গীকার নিয়েছিলেন, ‘আমি তোমাদেরকে যে কিতাব ও হিকমত প্রদান করবো, অতঃপর তাশরীফ আনবেন তোমাদের নিকট রসূল, যিনি তোমাদের কিতাবগুলোর সত্যায়ন করবেন, তখন তোমরা নিশ্চয় নিশ্চয় তাঁর উপর ঈমান আনবে এবং নিশ্চয় নিশ্চয় তাঁকে সাহায্য করবে। এরশাদ করলেন, ‘তোমরা কি স্বীকার করলে এবং এ সম্পর্কে আমার গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করলে?’ সবাই আরয করলো, ‘আমরা স্বীকার করলাম।’ এরশাদ করলেন, ‘তবে (তোমরা) একে অপরের উপর সাক্ষী হয়ে যাও এবং আমি নিজেই তোমাদের সাথে সাক্ষীদের মধ্যে রইলাম।’
তবে কি (তারা) আল্লাহ্র দ্বীন ব্যতীত অন্য দ্বীন চায়? এবং তাঁরই সম্মুখে গর্দান অবনত করেছে যে কেউ আসমানসমূহ ও যমীনে রয়েছে স্বেচ্ছায় ও বাধ্যহয়ে এবং তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করবে।
এমনই বলো, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহ্র উপর এবং সেটার উপর, যা আমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে ইব্রাহীম, ইসমাইল, ইসহাক্ব, ইয়া’কূব এবং তাঁদের পুত্রগণের উপর; আর যা কিছু অর্জিত হয়েছে মুসা, ঈসা এবং নবীগণের, তাঁদের রবের নিকট থেকে। আমরা তাঁদের মধ্যে কারো উপর ঈমানের ক্ষেত্রে তারতম্য করিনা; এবং আমরা তাঁরই সম্মুখে গর্দান অবনত করেছি।’
কিরূপে আল্লাহ্ এমন সম্প্রদায়ের হিদায়ত চাইবেন, যারা ঈমান এনে কাফির হয়ে গেছে এবং সাক্ষ্য দিয়েছিলো যে, রসূল সত্য; আর তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শনাদি এসেছিলো? এবং আল্লাহ্ অত্যাচারী-দেরকে হিদায়ত করেন না।
ঐসব লোক, যারা কাফির হয়েছে এবং কাফির হয়েই মৃত্যুবরণ করেছে, তাদের মধ্যে কারো পক্ষ থেকে পৃথিবী ভর্তি স্বর্ণও কখনো কবূল করা হবে না যদিও তারা নিজেদের মুক্তির জন্য প্রদান করে। তাদের জন্য বেদনাদায়ক শাস্তি রয়েছে এবং তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।
যাবতীয় খাদ্য বনী ইস্রাইলের জন্য হালাল ছিলো কিন্তু ঐ খাদ্য যা ইয়া’কূব নিজের উপর হারাম করে নিয়েছিলো তাওরীত অবতীর্ণ হবার পূর্বে। আপনি বলুন, ‘তাওরীত এনে পাঠ করো যদি সত্যবাদী হও।’
সেটার মধ্যে সুস্পষ্ট নিদর্শনাদি রয়েছে- ইব্রাহিমের দাঁড়াবার স্থান এবং যে ব্যক্তি সেটার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে সে নিরাপত্তার মধ্যে থাকে; এবং আল্লাহ্রই জন্য মানবকুলের উপর সেই ঘরের হজ্জ্ করা (ফরয) যে সেটা পর্যন্ত যেতে পারে। আর যে অস্বীকারকারী হয়, তবে আল্লাহ্ সমগ্র জাহান থেকে বে-পরোয়া।
আপনি বলুন, ‘হে কিতাবীরা! কেন আল্লাহ্র পথে বাধা দিচ্ছো তাকে, যে ঈমান এনেছে? সেটাকে বক্র করতে চাচ্ছো, অথচ তোমরা নিজেরাই এর উপর সাক্ষী রয়েছো? এবং আল্লাহ্ তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে গাফিল নন।’
এবং তোমরা কিভাবে কুফর করবে? অথচ তোমাদের উপর আল্লাহ্র আয়াতসমূহ পাঠ করা হচ্ছে এবং তোমাদের মধ্যে তাঁর রসূল তাশরীফ এনেছেন। আর যে আল্লাহ্র আশ্রয় নিয়েছে, তবে নিশ্চয় তাকে সোজা রাস্তা দেখানো হয়েছে।
এবং আল্লাহ্র রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো সবাই মিলে। আর পরষ্পর বিছিন্ন হয়ো না এবং নিজেদের উপর আল্লাহ্র অনুগ্রহকে স্মরণ করো যখন তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ছিলো, তিনি তোমাদের অন্তরগুলোতে সম্প্রীতি সৃষ্টি করে দিয়েছেন। সুতরাং তাঁর অনুগ্রহক্রমে, তোমরা পরষ্পর ভ্রাতৃত্ব-বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেছো এবং তোমরা দোযখের একটা গর্তের প্রান্তে ছিলে। তখন তিনি তোমাদেরকে তা থেকে রক্ষা করেছেন। আল্লাহ্ তোমাদের নিকট এভাবেই স্বীয় নিদর্শনাদি বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা হিদায়ত পাও।
এবং তোমাদের মধ্যে একটা দল এমন হওয়া উচিত যারা কল্যাণের প্রতি আহ্বান জানাবে, ভাল কাজের নির্দেশ দেবে এবং মন্দ থেকে নিষেধ করবে। আর এসব লোকই লক্ষ্যস্থলে পৌঁছাবে।
এবং তাদের মতো হয়ো না, যারা পরষ্পর বিছিন্ন হয়ে পড়েছে আর তাদের মধ্যে মতবিরোধ হয়ে গেছে, এরপর যে, সুস্পষ্ট নিদর্শনাদি তাদের নিকট এসে গেছে। আর তাদের জন্য কঠিন শাস্তি অবধারিত।
যেদিন কিছু চেহারা উজ্জ্বল হবে এবং কিছু মুখ কালো হবে। কাজেই, যাদের মুখ কালো হয়েছে, ‘তোমরা কি ঈমান এনে কাফির হয়েছো?’ সুতরাং এখন আযাবের স্বাদ গ্রহন করো স্বীয় কুফরের বিনিময় স্বরূপ।
তোমরা হলে শ্রেষ্ঠতম ঐসব উম্মতের মধ্যে, যাদের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে মানবজাতির মধ্যে; সৎকাজের নির্দেশ দিচ্ছো এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করছো, আর আল্লাহ্র উপর ঈমান রাখছো। এবং যদি কিতাবী (সম্প্রদায়) ঈমান আনতো তবে এটা তাদের জন্য কল্যাণকর ছিলো। তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক মুসলমান রয়েছে এবং অধিকাংশ কাফির।
তারা তোমাদের কোন ক্ষতি সাধন করবে না, কিন্তু এ কষ্ট দেয়া; আর যদি(তারা) তোমাদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়, তবে তোমাদের সম্মুখ থেকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে, অতঃপর তাদেরকে কোন সাহায্য করা যাবে না।
তাদের জন্য অবধারিত হয়েছে লাঞ্ছনা; (তারা) যেখানেই থাকুক না কেন নিরাপত্তা পাবে না কিন্তু আল্লাহ্র রজ্জু ও মানুষের রজ্জু দ্বারা এবং (তারা) আল্লাহ্র ক্রোধের পাত্র হয়েছে। আর তাদের উপর অবধারিত হয়েছে পরমুখাপেক্ষিতা, এটা এ জন্য যে, তারা আল্লাহ্র আয়াতগুলোর প্রতি কুফর করতো এবং পয়গাম্বগণকে অন্যায়ভাবে শহীদ করে। এটা এ জন্যই যে, (তারা) নির্দেশ অমান্যকারী এবং অবাধ্য ছিলো।
সবাই এক ধরনের নয়। কিতাবীদের মধ্যে কিছু লোক এমনও আছে যে, তারা সত্যের উপর অবিচলিত; (তারা) আল্লাহ্র আয়াতসমূহ পাঠ করে রাতের মুহুর্তগুলোতে এবং তারা সাজদারত হয়।
ঐসব লোক, যারা কাফির হয়েছে, তাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তাদেরকে আল্লাহ্র (শাস্তি থেকে) সামান্যটুকুও রক্ষা করবে না এবং তারা জাহান্নামী। তাদেরকে সেটার মধ্যে সর্বদা থাকতে হবে।
তারা এ পার্থিব জীবনের ব্যয় করে, তার দৃষ্টান্ত ঐ বায়ুর ন্যায়, যার মধ্যে তুষার থাকে; তা এমন এক গোত্রের ক্ষেতের উপর বর্ধিত হয়েছে, যারা নিজেদেরই ক্ষতি সাধন করতো। তখন তা (ওই বায়ু) সেটাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়ে গেছে এবং আল্লাহ্ তাদের উপর যুলুম করেন নি; হাঁ তারাই নিজেদের আত্মার উপর যুলুম করে থাকে।
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের আপন ব্যতীত অপর কাউকেও নিজেদের অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের ক্ষতি সাধনে কোনরুপ ত্রুটিকরে না। তাদের কামনা হচ্ছে-যত কষ্টই আছে তোমাদের নিকট পৌঁছুক! শত্রুতা তাদের কথাবার্তা থেকে স্পষ্টরুপে প্রকাশ পেয়েছে এবং তারা যা অন্তরে গোপন রেখেছে তা আরো জঘন্য। আমি (আল্লাহ্) তোমাদেরকে নিদর্শনসমূহ বিস্তারিতভাবে শুনিয়ে দিয়েছি যদি তোমাদের বিবেক-বুদ্ধি থাকে।
ওহে, তোমরা শুনছো! তোমরা তো তাদেরকে চাও, অথচ তারা তোমাদেরকে চায়না এবং অবস্থা এ যে, তোমরা সব কিতাবের উপর ঈমান এনে থাকো। আর তারা যখন তোমাদের সাথে সাক্ষাৎ করে তখন বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি।’ আর যখন পৃথক হয় তখন তোমাদের উপর আক্রোশে আঙ্গুল চিবায়। আপনি বলে দিন, ‘মরে যাও নিজেদের আক্রোশে!’ আল্লাহ্ ভালোই জানেন অন্তরগুলোর কথা।
যদি তোমাদের কোন কল্যাণ সাধিত হয় তবে তাদের খারাপ লাগে, আর তোমাদের ক্ষতি সাধিত হলে তারা তাতে খুশী হয় এবং যদি তোমরা ধৈর্য ও পরহেয্গারী অবলম্বন করে থাকো, তবে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কোন ক্ষতি করবে না। নিশ্চয় তাদের সমস্ত কাজ আল্লাহ্র আয়ত্বে রয়েছে।
এবং স্মরণ করুন হে মাহবুব! যখন আপনি প্রত্যুষে আপনার বাসস্থান থেকে বের হয়েছিলেন মুসলমানদেরকে যুদ্ধের মোর্চাসমূহে সজ্জিত করার নিমিত্ত এবং আল্লাহ্ শুনেন, জানেন।
হাঁ। কেন হবে না! যদি তোমরা ধৈর্য ও পরহেয্গারী অবলম্বন করো এবং কাফির ঐ মুহুর্তেই তোমাদের উপর হামলা করে বসে তখন তোমাদের রব তোমাদের সাহায্যার্থে পাঁচ হাজার চিহ্নধারী ফিরিশ্তা প্রেরণ করবেন।
এবং এ বিজয় আল্লাহ্ দান করেন নি, কিন্তু তোমাদের খুশীর জন্যই এবং এজন্যই যে, তা দ্বারা তোমাদের অন্তর শান্তনা পাবে; এবং সাহায্য নেই, কিন্তু (আছে) মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহ্র নিকটই;
এবং ঐসব লোক, যখন তারা কোন অশ্লীলতা কিংবা স্বীয় আত্মার প্রতি যুলুম করে তখন তারা আল্লাহ্কে স্মরণ করে স্বীয় গুনাহ্র ক্ষমা প্রার্থনা করে; এবং আল্লাহ্ ব্যতীত গুনাহ কে ক্ষমা করবে? আর তারা জেনেশুনে নিজেদের কৃত অপরাধের প্রতি পুনঃপুনঃ অগ্রসর হয় না।
এমন ব্যক্তিবর্গের প্রতিদান হচ্ছে তাদের রবের ক্ষমা এবং (এমন) জান্নাতসমূহ যেগুলোর পাদদেশে নহরসমূহ প্রবহমান। (তারা) এগুলোর মধ্যে সর্বদা থাকবে এবং সৎকর্মকারীদের জন্য কতোই উত্তম পুরষ্কার রয়েছে!
যদি তোমাদের নিকট কোন কষ্ট পৌঁছে, তবে তারাও তো অনুরূপ কষ্ট পেয়েছিলো এবং এ দিনগুলো হলো এমনই যে, সেগুলোতে আমি মানুষের জন্য পর্যায়ক্রমিক আবর্তন রেখেছি এবং এ জন্য যে, আল্লাহ্ পরিচয় করিয়ে দেবেন ঈমানদারদের। আর তোমাদের মধ্য থেকে কিছু লোককে শাহাদাতের মর্যাদা দান করবেন; এবং আল্লাহ্ ভালবাসেন না অত্যাচারীদেরকে।
এবং মুহাম্মদ তো একজন রসূল। তাঁর পূর্বে আরো রসূল গত হয়েছেন। সুতরাং যদি তিনি ইন্তিকাল করেন কিংবা শহীদ হন, তবে কি তোমরা উল্টো পায়ে ফিরে যাবে? আর যে উল্টো পায়ে ফিরে যাবে সে আল্লাহ্র কোন ক্ষতি করবে না এবং অনতিবিলম্বে আল্লাহ্ কৃতজ্ঞদেরকে পুরষ্কার দেবেন।
এবং কেউ আল্লাহ্র হুকুম ব্যতীত মৃত্যুবরণ করতে পারে না, সবার সময় লিপিবদ্ধ রয়েছে। এবং যে ব্যক্তি দুনিয়ার পুরষ্কার চায়, আমি তা থেকে তাকে প্রদানকরি এবং যে পরকালের পুরষ্কার চায়, আমি তা থেকে তাকে প্রদান করি আর অবিলম্বে আমি কৃতজ্ঞদেরকে পুরষ্কার দান করবো।
এবং কতো নবীই জিহাদ করেছেন, তাদের সাথে অনেক আল্লাহ্ ওয়ালা ছিলো। তারা এতে হীনবল হয়ে পড়ে নি ঐসব মুসীবতের দরুন, যেগুলো আল্লাহ্র পথে তাদের নিকট পৌঁছেছিলো; এবং না দুর্বল হয়েছে আর না দমিত হয়েছে। এবং ধৈর্যশীলগণ আল্লাহ্র নিকট প্রিয়ভাজন।
এবং তারা কিছুই বলতো না এ প্রার্থনা ব্যতীত, ‘হে আমাদের রব! ক্ষমা করো আমাদের গুনাহ্ এবং যেসব সীমালংঘন আমরা আমাদের কাজের মধ্যে করেছি আর আমাদের পথ অবিচল করো এবং আমাদেরকে এ কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাহায্য করো।’
অনতিবিলম্বে আমি কাফিরদের অন্তরে আতঙ্কের সঞ্চার করবো; কারণ, তারা আল্লাহ্র (এমন) অংশীদার দাঁড় করিয়েছে যার উপর তিনি কোন বুঝ-শক্তি অবতীর্ণ করেন নি এবং তাদের ঠিকানা দোযখ এবং কতোই নিকৃষ্ট ঠিকানা অন্যায়কারীদের!
এবং নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদেরকে তাঁর প্রতিশ্রুতি সত্য করেই দেখিয়েছেন যখন তোমরা তাঁরই নির্দেশক্রমে কাফিরদেরকে হত্যা করেছিলে, এমনকি যখন তোমরা ভীরুতা প্রকাশ করেছো এবং হুকুমের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি করেছো আর আদেশ অমান্য করেছো এরপর যে, আল্লাহ্ তোমাদেরকে দেখিয়েছেন তোমাদের আনন্দের বস্তু। তোমাদের মধ্যে কেউ দুনিয়া চাইতো এবং তোমাদের মধ্যে কেউ আখিরাত কামনা করতো; অতঃপর তোমাদের মুখ তাদের দিক থেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য; এবং নিশ্চয় তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন; আর আল্লাহ্ মুসলমানদের প্রতি অনুগ্রহশীল।
যখন তোমরা মুখ তুলে চলে যাচ্ছিলে এবং পেছনে ফিরে কারো দিকে তাকাচ্ছিলে না আর অপর দলের মধ্য থেকে আমার রসূল তোমাদেরকে আহ্বান করছিলেন; অতঃপর তোমাদেরকে দুঃখের পরিবর্তে দুঃখ দিয়েছেন; আর ক্ষমার বার্তা এ জন্যই শুনিয়েছেন যেন যা হাতছাড়া হয়েছে ও যে বিপদ এসে পড়েছে তজ্জন্য (তোমরা) দুঃখ বোধ না করো এবং তোমাদের কার্যাদি সম্পর্কে আল্লাহ্ অবহিত।
অতঃপর তোমাদের প্রতি দুঃখের পর শান্তির তন্দ্রা অবতারণ করেছেন, যা তোমাদের একদলকে আচ্ছন্ন করেছিলো এবং অন্য দল স্বীয় প্রাণ রক্ষার চিন্তায় পড়েছিলো, আল্লাহ্ সম্পর্কে অমূলক ধারণা করতো জাহেলিয়াতের ধারণার মতো। তারা বলতো, ‘আমাদেরও কি এ কাজে কোনরূপ ইখতিয়ার আছে?’ আপনি বলে দিন, ‘ইখতিয়ার তো সবই আল্লাহ্র।’ (তারা) নিজেদের অন্তরে গোপন রাখে যা তোমাদের নিকট প্রকাশ করে না। (তারা) বলে, ‘যদি আমাদের কোন ইখতিয়ার থাকতো তবে আমরা এখানে নিহত হতাম না।’ আপনি বলে দিন, ‘যদি তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান করতে, তবুও যাদের নিহত হওয়া লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে তারা স্বীয় নিহত হওয়ার স্থান পর্যন্ত বের হয়ে আসতো।’ এবং এজন্য যে, আল্লাহ্ তোমাদের অন্তরের কথা পরীক্ষা করবেন এবং যা কিছু তোমাদের অন্তরসমূহে রয়েছে তা প্রকাশ করে দেবেন আর আল্লাহ্ অন্তরগুলোর কথা জানেন।
নিশ্চয় তোমাদের মধ্য থেকে যারা ফিরে গেছে, যেদিন উভয় পক্ষের সৈন্যরা মুখোমুখি হয়েছিলো, শয়তানই তাদের পদঙ্খলন ঘটিয়েছে তাদের কোন কৃতকর্মের কারণে; এবং নিশ্চয় আল্লাহ্ তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমাপরায়ণ, সহনশীল।
হে ঈমানদারগণ! ঐ কাফিরদের মতো হয়ো না, যারা তাদের ভাইদের সম্পর্কে বলেছে, যখন তারা সফর কিংবা জিহাদে গেছে,’ (তারা) যদি আমাদের নিকট থাকতো তবে নামারা যেতো, এবং না নিহত হতো।’ এ জন্য যে, আল্লাহ্ তাদের অন্তরে এর আফসোস (বদ্ধমূল করে) রাখবেন। আর আল্লাহ্ জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান; এবং আল্লাহ্ তোমাদের কর্ম দেখছেন।
অতঃপর কেমনই আল্লাহ্র কিছু দয়া হয়েছে যে, হে মাহবুব! আপনি তাদের জন্য কোমল-হৃদয় হয়েছেন। আর যদি আপনি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতেন তবে তারা নিশ্চয় আপনার আশপাশ থেকে পেরেশান হয়ে যেত। সুতরাং আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য সুপারিশ করুন আর কার্যাদিতে তাদের সাথে পরামর্শ করুন! এবং যখন কোন কাজের ইচ্ছা পাকাপোক্ত করবেন তখন আল্লাহ্র উপর নির্ভর করুন। নিঃসন্দেহে, নির্ভরকারীরা আল্লাহ্র প্রিয়ভাজন।
যদি আল্লাহ্ তোমাদের সাহায্য করেন, তবে কেউ তোমাদের উপর জয়ী হতে পারবেনা আর যদি তিনি তোমাদের পরিত্যাগ করেন, তবে এমন কে আছে, যে এরপর তোমাদের সাহায্য করবে? এবং মুসলমানদের আল্লাহ্রই উপর ভরসা থাকা চাই।
এবং কোন নবীর প্রতি এ ধারণা হতে পারেনা যে, তিনি কিছু গোপন রাখবেন। এবং যে ব্যক্তি কিছু গোপন রাখবে, সে ক্বিয়ামতের দিন স্বীয় গোপন করা বস্তু নিয়ে আসবে। তারপর প্রত্যেককে তার উপার্জন পূর্ণমাত্রায় দেয়া হবে এবং তাদের উপর যুলুম হবে না।
তবে কি যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অনুযায়ী চলেছে, সে তারই মতো হবে, যে আল্লাহ্র ক্রোধের পাত্র হয়েছে এবং তার ঠিকানা জাহান্নাম? এবং তা কতোই নিকৃষ্ট জায়গা প্রর্ত্যাবর্তনের!
নিশ্চয় আল্লাহ্র মহান অনুগ্রহ হয়েছে মুসলমানদের উপর যে, তাদের মধ্যে তাদেরই মধ্য থেকে একজন রসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন এবং তাদেরকে পবিত্র করেন আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দান করেন এবং তারা নিশ্চয় এর পূর্বে স্পষ্ট গোমরাহীতে ছিলো।
যখন তোমাদের নিকট কোন মুসীবত পৌঁছে; অথচ তোমরা এর দ্বিগুণ পৌঁছিয়েছো, তখন কি তোমরা এ কথা বলতে থাকবে যে, ‘এটা কোত্থেকে এসেছে?’ (হে হাবীব!) আপনি বলে দিন, ‘সেটা তোমাদেরই তরফ থেকে এসেছে।’ নিশ্চয় আল্লাহ্ সব কিছু করতে পারেন।
এবং এ জন্য যে, পরিচয় করিয়ে দেবেন তাদের, যারা মুনাফিক হয়েছে আর তাদেরকে বলা হয়েছে, ‘এসো! আল্লাহ্র পথে যুদ্ধ করো কিংবা শত্রুদেরকে হটিয়ে দাও।’ (তারা) বললো, ‘যদি আমরা লড়াই হবে জানতাম, তবে অবশ্যই তোমাদের সাথে থাকতাম।’ আর সেদিন তারা বাহ্যিক ঈমানের চেয়ে প্রকাশ্য কুফরের অধিকতর নিকটে ছিলো। (তারা) নিজ মুখে তাই বলে, যা অন্তরে নেই এবং আল্লাহ্র জানা আছে যা তারা গোপন করছে।
ওই সব লোক, যারা আপন ভাইদের সম্পর্কে বলেছে অথচ নিজেরা যুদ্ধ থেকে বিরত ছিলো, ‘তারা যদি আমাদের কথা মানতো, তবে নিহত হতো না।’ আপনি বলে দিন, ‘তবে তোমরা তোমাদের মৃত্যুকে ঠেকাও যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’
তারা উৎফুল্ল এরই উপর, যা আল্লাহ্ তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহক্রমে দান করেছেন এবং আনন্দ উদযাপন করছে তাদের পরবর্তীদের জন্য, যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হয় নি, এজন্য যে, তাদের না কোন আশংকা আছে এবং না কোন দুঃখ।
ঐসব লোক, যারা আল্লাহ্ ও রসূলের আহ্বানে সাড়া দিয়ে হাযির হয়েছে এরপর যে, তারা যখমপ্রাপ্ত হয়েছিলো; তাদের মধ্যেকার নেক্কার ও পরহেয্গারদের জন্য মহা সাওয়াব রয়েছে।
ঐসব লোক, যাদেরকে লোকেরা বলেছে, ‘লোকেরা তোমাদের বিরুদ্ধে দলবদ্ধ হয়েছে; সুতরাং তাদেরকে ভয় করো।’ অতঃপর তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পেয়েছে আর(তারা) বললো, ‘আল্লাহ্ই আমাদের জন্য যথেষ্ট।’ এবং (তিনি) কতোই উত্তম কর্মব্যবস্থাপক!
অতঃপর তারা ফিরে গেলো আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও করুণা সহকারে যে, তাদেরকে কোন অনিষ্ট স্পর্শ করেনি; এবং (তারা) আল্লাহ্র সন্তুষ্টির উপর চলেছে। আর আল্লাহ্ মহা অনুগ্রহশীল।
হে মাহবুব! আপনি তাদের জন্য কোন দুঃখ করবেন না যারা কুফরের উপর দৌঁড়াচ্ছে। তারা আল্লাহ্র কোন ক্ষতি করতে পারবে না এবং আল্লাহ্ চান যে, পরকালে তাদের জন্য কোন অংশ রাখবেন না আর তাদের জন্য মহা শাস্তি রয়েছে।
এবং কখনো কাফিরদের এ ধারণায় থাকা উচিৎ নয় যে, আমি তাদেরকে যেই অবকাশ দিই তা তাদের জন্য কিছু মঙ্গল। আমি তো এ জন্যই তাদেরকে অবকাশ দিই, যাতে গুনাহ্ আরো বৃদ্ধি পায় এবং তাদের জন্য লাঞ্চনার শাস্তি রয়েছে।
আল্লাহ্ মুসলমানদেরকে এ অবস্থায় ছাড়বার নন, যে অবস্থায় তোমরা রয়েছো যে পর্যন্ত না পৃথক করবেন অপবিত্রকে পবিত্র থেকে এবং আল্লাহ্র শান এ নয় যে, হে সর্বসাধারণ! তোমাদেরকে অদৃশ্যের জ্ঞান দিয়ে দেবেন। হাঁ, আল্লাহ্ নির্বাচিত করে নেন তার রসূলগণের মধ্য থেকে যাঁকে চান। সুতরাং ঈমান আনো আল্লাহ্ও তাঁর রসূলগণের উপর; এবং যদি তোমরা ঈমান আনো আর পরহেয্গারী অবলম্বন করো, তবে তোমাদের জন্য মহা প্রতিদান রয়েছে।
এবং যারা কার্পণ্য করে ঐ জিনিষের মধ্যে, যা আল্লাহ্ তাদেরকে আপন করুণায় দান করেছেন, তারা কখনো যেন সেটাকে নিজের জন্য মঙ্গলজনক মনে না করে; বরং সেটা তাদের জন্য অকল্যাণকর। তারা যেসব সম্পদের মধ্যে কার্পণ্য করেছিলো অদূর ভবিষ্যতে, ক্বিয়ামতের দিন সেগুলো তাদের গলার শৃংখল হবে এবং আল্লাহ্ই স্বত্বাধিকারী আসমানসমূহ ও যমীনের আর আল্লাহ্ তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবগত।
নিশ্চয় আল্লাহ্ শুনেছেন(তাদের উক্তি), যারা বলেছে, ‘আল্লাহ্ অভাবগ্রস্থ এবং আমরা অভাবমুক্ত।’ এখন আমি লিখে রাখবো তাদের উক্তি এবং নবীগণকে তাদের অন্যায়ভাবে শহীদ করার কথাও, আর বলবো, ‘ভোগ করো আগুনের শাস্তি।’
ঐসব লোক, যারা বলে, ‘আল্লাহ্ আমাদের নিকট থেকে অঙ্গীকার নিয়েছেন যেন আমরা কোন রসূলের উপর ঈমান না আনি যতক্ষণ না তিনি এমন ক্বোরবানীর হুকুম নিয়ে আসেন, যাকে আগুন গ্রাস করে;’ আপনি বলুন, ‘আমার পূর্বে অনেক রসূল তোমাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শনাদি এবং ঐ হুকুম নিয়ে এসেছেন, যা তোমরা বলছো। অতঃপর তোমরা কেন তাঁদেরকে শহীদ করেছো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও?’
অতঃপর হে মাহবুব! যদি তারা আপনাকে অস্বীকার করে, তবে আপনার পূর্ববর্তী রসূলগণকেও অস্বীকার করা হয়েছে, যারা স্পষ্ট নিদর্শনাদি, সহীফা সমূহ এবং দীপ্তিমান কিতাব নিয়ে এসেছিলো।
প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এবং তোমাদের কর্মফল তো ক্বিয়ামতের দিনই পূর্ণ মাত্রায় মিলবে। সুতরাং যাকে আগুন থেকে রক্ষা করে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে, সে উদ্দেশ্যস্থলে পৌঁছেছে এবং পার্থিব জীবনতো এ ধোকারই সম্পদ।
নিশ্চয় নিশ্চয় তোমাদের পরীক্ষা হবে তোমাদের ধনৈঃশ্বর্য এবং তোমাদের প্রাণসমূহের ক্ষেত্রে। আর নিশ্চয় নিশ্চয় তোমরা পূর্ববর্তী কিতাবীগণ ও মুশরিকদের থেকে বহু কিছু মন্দ শুনবে আর তোমরা যদি ধৈর্য ধারণ করো এবং বাঁচতে থাকো, তবে এটা হচ্ছে বড়ই সাহসের কাজ।
এবং স্মরণ করুন, যখন আল্লাহ্ অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন তাদের নিকট থেকে, যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে (এ মর্মে) যে, ‘তোমরা নিশ্চয় সেটা মানুষের নিকট স্পষ্টভাবে বর্ণনা করবে এবং গোপন করবে না।’ অতঃপর তারা সেটাকে আপন পৃষ্ঠপেছনে নিক্ষেপ করেছে এবং সেটার পরিবর্তে হীন মূল্য গ্রহণ করেছে। সুতরাং কতোই মন্দ খরিদ্দারী!
কখনো ধারণা করবেন না তাদেরকে, যারা সন্তুষ্ট হয় আপন কৃতকর্মের উপর এবং চায় যে, কাজ করা ছাড়াই তাদের প্রশংসা কারা হোক; এমন লোকদেরকে শাস্তি থেকে কখনো দূরে মনে করবেন না এবং তাদের জন্য বেদনাদায়ক শাস্তি রয়েছে।
যারা আল্লাহ্র স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে এবং করটের উপর শুয়ে আর আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টির মধ্যে গভীর চিন্তা-ভাবনা করে; হে আমাদের রব! তুমি এটা নিরর্থক সৃষ্টি করোনি; পবিত্রতা তোমারই, সুতরাং আমাদেরকে দোযখের শাস্তি থেকে রক্ষা করো।
হে আমাদের রব! আমরা এক আহ্বানকারীকে (এরূপ আহ্বান করতে) শুনেছি, যিনি ঈমান আনার জন্য আহ্বান করেন, ‘আপন রবের উপর ঈমান আনো।’ সুতরাং আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের রব! সুতরাং আমাদের গুনাহ্ ক্ষমা করে দাও এবং আমাদের মন্দ কাজগুলো নিশ্চিহু করে দাও! আর আমাদের মৃত্যু নেক্কারদের সাথে করো।
হে রব আমাদের! এবং আমাদেরকে সেটা প্রদান করো, যার ওয়াদা তুমি আমাদের সাথে আপন রসূলগণের মাধ্যমে করেছো; এবং আমাদেরকে ক্বিয়ামতের দিন অপমানিত করো না। নিঃসন্দেহে, তুমি ওয়াদা ভঙ্গ করো না।
অতঃপর তাদের প্রার্থনা কবূল করেছেন তাদের রব (আর বললেন), ‘আমি তোমাদের মধ্যেকার কর্মনিষ্ঠ ব্যক্তিদের পরিশ্রম নিষ্ফল করি না সে পুরুষ হোক, কিংবা নারী। তোমরা পরষ্পর এক। সুতারাং ঐসব লোক, যারা হিজরত করেছে, নিজেদের ঘর থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে, আমার রাস্তায় নির্যাতিত হয়েছে এবং যুদ্ধ করেছে ও নিহত হয়েছে, আমি নিশ্চয় তাদের সমস্ত পাপ মোচন করবো এবং নিশ্চয় তাদেরকে এমন বাগানসমূহে নিয়ে যাবো, যেগুলোর পাদদেশে নহর সমূহ প্রবহমান; আল্লাহ্র নিকটকার পুরষ্কার স্বরুপ এবং আল্লাহ্রই নিকট উত্তম পুরষ্কার রয়েছে।’
কিন্তু ঐসব লোক, যারা স্বীয় রবকে ভয় করে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতসমূহ, যেগুলোর নিম্মদেশে নহরসমূহ প্রবহমান, (তারা) সর্বদা সেগুলোর মধ্যে থাকবে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে আতিথ্যস্বরুপ এবং যা আল্লাহ্র নিকট রয়েছে তা সৎকর্ম পরায়ণদের জন্য সর্বাপেক্ষা শ্রেয়।
এবং নিশ্চয় কিছু সংখ্যক কিতাবী এমন রয়েছে, যারা আল্লাহ্র উপর ঈমান আনে আর সেটার উপরও, যা তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, তাদের অন্তর আল্লাহ্র সম্মুখে বিনয়াবনত, আল্লাহ্র আয়াতসমূহের পরিবর্তে হীনমূল্য গ্রহণ করে না। এরা ঐসব লোক, যাদের সাওয়াব তাদের রবের নিকট রয়েছে; এবং আল্লাহ্ সহসা হিসাব গ্রহণকারী।
হে ঈমানদারগণ! ধৈর্যধারণ করো এবং ধৈর্যে শত্রুদের চেয়ে এগিয়ে থাকো আর সীমান্তে ইসলামী রাষ্টের রক্ষণাবেক্ষন করো এবং আল্লাহ্কে ভয় করতে থাকো এ আশায় যে, কৃতকার্য হবে।